Posts

Showing posts from April, 2022

কৃত্তিবাস এপ্রিল ১৫

Image
  ১। “ফেসবুকে বেরোক আর ছাপার অক্ষরে বেরোক, সাহিত্য মানে সাহিত্যই। ফেসবুকে ভালো লেখাও হয়, ট্রাশও হয়। আগে ফেসবুক ছিল না, তখনও ছাপার অক্ষরে ট্র্যাশ বেরোত।” ২। “শুরুটা সকলকেই কোথাও না কোথাও থেকে করতে হয়। আমাদের আগের প্রজন্ম লিটল ম্যাগাজিন থেকে করেছিলেন, আমরা ফেসবুক থেকে করছি।” ৩। “বর্তমানে সবার বাড়ীতে কম্পিউটার, তখন আমি একা যদি টাইপ রাইটার নিয়ে খটখট করি সেটা যেমন অস্বাভাবিক লাগবে; তেমনই ফেসবুকের যুগে এটাই যখন প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে জনসংযোগের, তখন আমি ফেসবুকের লেখা পড়ি না বলাটাও হাস্যকর হয়।”     ১৫ই এপ্রিল কৃত্তিবাসের পাক্ষিক সংখ্যার প্রথম নিবেদন – নূতন সাহিত্য না বটতলা? বিষয়টা যথেষ্ট গোলমেলে। উপরোক্ত তিনটে মন্তব্যে পরিস্কার যে এই বিষয়টা নিয়ে বেশ ঝড় বইয়ে দিয়েছে এবারের পত্রিকাটি। যে নিক্তিতে এটা মাপার চেষ্টা করা হয়েছে সেটায় অংশগ্রহণ করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, অমর মিত্র, কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভাস রায়চৌধুরী, সমরেশ মজুমদার, আবুল বাশার, হিমবন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এমনকি শংকর। নিক্তির উল্টোদিকে দেবারতি মুখোপাধ্যায়, অর্পিতা সরকার, অভীক সরকার, মৌমিতা ঘোষ, পল্ল

ত্রিভঙ্গ

Image
  রেণুকা সাহানে এক জবরদস্থ বিষয় পাকড়েছেন। দিদা, মা, মেয়ে --- তিন প্রজন্মের সম্পর্কের টানাপোড়েন। এমন নয় যে এই বিষয়বস্তুটার মধ্যে নতুনত্ব আছে। আমরা তো ‘ঊনিশে এপ্রিল’ বা ‘তিতলি’ দেখেছি। কিম্বা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের বেশ কিছু উপন্যাস পড়েছি। সিনেমাটার মধ্যেও যে অপরূপ গভীরতা বা টানটান গল্প বলার ভঙ্গিমা আছে তা নয়। বরং পুরোটাই বেশ প্রেডিক্টেব্‌ল। সিনেমা শুরু হওয়ার আধঘন্টার মধ্যেই আমি জানি কি হতে চলেছে। কিন্তু... তনভী আজমী, কাজল এবং মিথিলা পালকরের অভিনয়সমৃদ্ধ এই সিনেমাটা আমাকে একটা বিষয় নিয়ে ভাবাল। সেটা বলি।   একজন শিল্পীর জীবন কেমন হয়? বিশেষত সে যদি জিনিয়াস হয়? আমরা জানি একজন শিল্পীর সবচেয়ে বড় সম্বল তার হৃদয়। ইংরাজীতে যাকে আমরা 'সেন্সিবিলিটি' বলি। সেটা থাকতেই হয়। তার ভক্তেরা কিম্বা একজন সাধারণ মানুষও যদি তার সামনে আসে, তাহলে যেটায় দুই পক্ষ সবচেয়ে বেশি অনুভব করে তা হল মানবিক আত্মীয়তা। এখানেই একজন অতি সাধারণ মানুষও শিল্পীর কাছে এলে একটা টান অনুভব করে, আপন বলে মনে করে। ফলে তার সৃষ্টি মানুষটার কাছে মনে হয় এ যেন তারই কথা বলছে। তাকেই অনুভব করে লিখেছে। এটাই তো শিল্পের গুণ। একটা সৃষ্টি

জন্ডিস কেস

Image
“এই বইটা পড়েছিস?” সানী আমার কোলে ধপ্‌ করে বইটা ফেলে দিল। এই সানীর কথা আগেই বলেছি ‘ছেলেরা কাঁদে না’ লেখায়। তো সেই সানী বইটা আমার কোলে আলগোছে ফেলে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ‘ঈ ঈ ঈ ঈ ঈ...!!! এই বইটা কোত্থেকে পেলি?’ “আরে পল্টাদার দিদির কাছ থেকে...” শ্রীময়ীদি ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেছে। এখন একটা কলেজে পড়ায়। বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনেছি। যাওয়ার আগে দানছত্র খুলে দিল না কি? “আরে না রে বাবা। তুই রামচন্দর না কার একটা বই পড়ে আমাদের উদ্ধার করছিলি, তো মনে হল এই বইটা তোর কাজে লাগতে পারে। শ্রীময়ীদি বলল, প্রধন্যাকে বলিস খলিল জিবরানের বইটা বদলে যদি পারে তাহলে যেন দেয়। ‘প্রফেট’টা পড়েই ফেরত দেবে।” আমি দিলাম। বেশ আনন্দ করেই দিলাম। আমি মূলত স্বাধীনতা উত্তর ভারতের ইতিহাসে চোখ বোলাতে গিয়ে জিবরানে আটকে গেছি। এই পরম সময়ে হাতে এল এই বাংলা অনুবাদ। রাত্রে খুজে পেতে ইংরাজীটা নামিয়ে নেব। পাব কি না? নিশ্চই পাব। একটু ব্রেক হোক না এবার। খলিলের ব্রেক ইতিহাসে, ইতিহাসের ব্রেক খলিলে। এদের মাঝখানে ব্রেক দরকার হলে অন্য কোন বই ভাবা যাবে। ব্রেকের ব্রেকের ব্রেক... সানী চলে গেল। রাত্রে হঠাৎ একটা কথা মনে হতেই গা শিউরে উঠল।

টুকরো টুকরো 'আমি'রা

Image
  “There is neither religion nor science beyond beauty”   সমুদ্রতীরে ছোট ছোট বালির দানাকে কি আমরা দেখেছি? এতই ছোট যে এক-একটি দানাকে আমরা ভাল করে খেয়ালও করি না, যতক্ষণ না আমাদের চোখে ঢোকে। এমন দানাকে যখন সমুদ্রের ফেনা ধুইয়ে দিয়ে যায়, তখন কি চকচকই না করে ওঠে! সুর্যোদয়, কিম্বা সূর্যাস্তের সময় তার ক্ষণিক উজ্জ্বলতা মোহিত করে দেয়। জীবনে চলার পথে কোন এক ক্ষণে এমনিভাবেই অনন্ত সমুদ্রের ভাবরাশি আমাদেরকে ধুইয়ে দিয়ে যায়। বোধের আলোকে আমরা তখন চকচক করে উঠি। খলিল জিবরান বলে ওঠেন --- ধর্ম বা বিজ্ঞান, কোনটাই সৌন্দর্যের সামনে দাড়াতে পারে না --- “There is neither religion nor science beyond beauty” খলিল জিবরান সৌন্দর্য দেখতে পেয়েছিলেন। আলো-অন্ধকারের উর্ধ্বে উঠে সেই সৌন্দর্যকে ব্যাক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। বলেছিলেন, “Give me silence and I will outdate the night”। আমাকে বলেছিলেন, “You are blind and I am deaf and dumb, so let us touch hands and understand”। আমি খলিল জিব্রানকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিলাম। উনি আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আমায় টেনে নিলেন একদম বুকের কাছে। আমি ওনার ম্যারি হাসকেল। আমার কানের কাছে ঠো

RAPE, দুটি সিনেমা ও কিছু প্রশ্ন

Image
Rape বা ধর্ষণ --- শব্দটা উচ্চারণ করলেই মনে যা ভেসে আসে তা হল, এক বা একাধিক মানুষ মিলে অন্য একজন অনিচ্ছুক মানুষের সঙ্গে মূলত যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হচ্ছে। সমাজের স্বাভাবিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে এই 'অন্য একজন' বললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর মুখ মনে আসে। যদিও বর্তমানে এর জটিলতা অনেক বেশি। ভারতবর্ষে NCRB –র তথ্যানুযায়ী, প্রতি ষোল মিনিটে একজন মহিলা ধর্ষণের শিকার। সত্যি কথা বলতে কি, প্রায় প্রত্যেক মহিলাই জীবনের কোন সময়ে এক বা একাধিকবার যৌন হেনস্থা বা মলেস্টেশানের শিকার হয়েছেন বা হন। যে ভারতবর্ষ মেয়েদের ‘মায়ের জাত’ বলে পূজা করে, তার সন্তানদের এই আচরণের তথ্য দেখলে মনে হয় দেশটা হিপোক্রিটের দেশ। আরোও আছে, এইটুকু পড়ে অনেকে যারা মেয়েদের এহেন দুর্দশাতে চোখে জল আসছে বলে মনে করছেন এবং একটা সহানুভূতির ‘চুক্‌চুক্‌’ শব্দ সারা হৃদয় জুড়ে ধ্বনিত হচ্ছে, তাদের কজন মেয়েদের দিকে অন্য নজরে তাকাননি বলতে পারবেন? খবরের কাগজে, কিম্বা নিউজ মিডিয়ায় যেভাবে যৌন হেনস্থার খবর দেওয়া হয় তাতে করে বোঝা যায় যে, এই বিষয়ের TRP কতটা উচ্চগামী। খুন আর ধর্ষন --- এই দুটোতে মানুষ যে পরিমান কৌতুহল অনুভব করে তা আর কোন কিছুতেই নয়। OTP

তিনটে পিঁপড়ে

Image
  এক সুন্দর রৌদ্রকরোজ্জ্বল দুপুরে মাঠে (গাছের ছায়ায়) ঘুমন্ত এক মানুষের নাকের ওপর তিনটে পিঁপড়ে মুখোমুখি হল। প্রত্যেকে নিজেদের প্রথা অনুযায়ী পরস্পরকে অভিবাদন জানাল। অতঃপর তাদের কথপোকথন শুরু হল। প্রথম পিঁপড়ে বলল, এই পাহাড় আর ওই সমতলভূমি আমার দেখা সবচেয়ে নিস্ফলা অঞ্চল। আমি সারাটা দিন ধরে খাওয়ার খুঁজলাম বটে, কিন্তু এককণাও শষ্য মিলল না! দ্বিতীয় পিঁপড়ে বলল, আমিও কিচ্ছু পেলাম না। যদিও আমি তন্নতন্ন করে প্রত্যেকটা ফাটল আর বনের ফাঁকফোকরে হানা দিয়েছিলাম। আমার মতে, এটাই হল সেই, আমাদের জাতে যাকে বলে নরম চলন্ত ভূমি, যেখানে একদানা খাবার মিলবে না। এতক্ষণে তৃতীয় পিঁপড়েটা মাথা তুলে বলল, আরে ভাই! আমরা পরম পিঁপড়ের নাকের ওপর দাঁড়িয়ে আছি! সেই মহান এবং অসীম পিপীলিকা, যার শরীর অপার, যাকে দেখা যায় না। যার ছায়া অসীম, সে ছায়াকে আমরা সম্যকরূপে ধারণাও করতে পারি না। যার বাণী এতই উচ্চ এবং মন্দ্রিল, যে আমরা শুনতে পাই না; এবং যিনি সর্বত্র বিরাজমান! যখন তৃতীয় পিঁপড়েটা অপর দুজনকে এই মহাবাণী শোনাচ্ছিল, তারা তখন পরস্পরের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিল আর মুচকি মুচকি হাসছিল। কথা শেষ হওয়া মাত্রই দুইজনে এবার সচকিত উচ্চহাসিতে

দ্য ডার্ক সাইড অফ লাইফ মুম্বই সিটি

Image
এককথায় অত্যন্ত খাজা বই। গল্পের প্লট কনভিন্সিং নয়, হলিউড সিনেমা ‘CRUSH’ এবং বলিউড সিনেমা ‘মেট্রো – লাইফ ইন আ সিটি’ আর তার সাথে আরোও কয়েকটা সিনেমার গল্প মিলিয়ে জগাখিচুড়ি করে বানানো। চিত্রনাট্য অতি দুর্বল। ডায়লগ শুনলে হাসি পাবে। অভিনয় কহতব্য নয়, দেখে মনে হয় যেন সিরিয়াল বা নব্বইয়ের দশকের সিনেমা দেখছি। মনে রাখার মতন গান একটাও নেই, জুবিনের গাওয়া Awargi বাদে (বস্তুত আমি যখন এই লেখাটা লিখছি, তখনও পাশে গানটা বেজেই চলেছে), অত্যধিক দুর্বল পরিচালনা। লক্ষণীয় ভুল এডিটিং। এককথায় সিনেমাটা দেখতে বসলে একটা সময় বোর হয়ে যেতে হবে, তারপর টেনে টেনে দেখে শেষ করে হাফ ছাড়তে হবে। তবুও এই সিনেমাটার কথা লিখতে বসলাম কেন? তার একটা কারণ আছে। আমার মনে হয়, কারণটা এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে বেশ বিপজ্জনক, এবং শুধু তাই নয় ভারতের নিরিখে বেশ উদ্বেগজনক। তার আগে কয়েকটা নাম বলি, সিনেমাটার শুরুতেই যে নামগুলো ছবিসমেত দেখানো হয়েছে। নামগুলো হলঃ ললিত শেঠ, জিয়া খান, প্রত্যুষা ব্যানার্জি, মুরুগাণাচারি, পওয়নদ্বীপ সিং কোহলি, গুরু দত্ত, ভিভেকা বাবাজী। আমি দুজন বাদে আর কাউকে চিনতাম না। যারা পেজ থ্রি-র খবরাখবর রাখেন তারা নিশ্চই জানবেন। এদের মধ

কারোর জন্যে

Image
  “জানি না কেন হঠাৎ কোনও কারণ নেই, কিছু নেই, কারও কারও জন্য খুব অন্যরকম লাগে অন্য রকম লাগে, কোনও কারণ নেই, তারপরও বুকের মধ্যে চিনচিনে কষ্ট হতে থাকে, কারুকে খুব দেখতে ইচ্ছে হয়,...”   তসলিমা নাসরিন একদম সত্যি কথাটাই বলেছেন। কবি তিনি। মানুষের মনের কথা তো জানবেনই। তবে এ কথাটা একটা ছেলের পক্ষে বলা যতটা সহজ, একটা মেয়ের পক্ষে বলা ততটাই কঠিন। একটা নিখাদ ভাল লাগার বোধকে বহুগামীতার জালে আটকে, রোষদৃষ্টি দিয়ে শাসন করে সমাজে পবিত্র বিবাহের উপযুক্ত করার চেষ্টা চালানো হয়। তবুও মেয়েদেরও ভাল লাগে। আমারও ভাল লাগে। এই ভাল লাগাটার মধ্যে কোন কামনা নেই। স্রেফ ভালো লাগে। সব ভাল লাগাই কি চাহিদা? যার শিশু ভাল লাগে সে কি তাই বলে শিশুটিকে কুক্ষিগত করতে চায়? না তো। তেমন করেই হঠাৎ পথের মাঝে দেখা হওয়া একটি মানুষকেই বা আমি কুক্ষিগত করতে চাইব কেন? ভাল লাগার শেষ ভাল লাগাতেই। তার আগেও নেই, পিছেও নেই। কল্পনা এই ভাল লাগাটার একটা রং দেয়। সে তো কারোর বাধ্য নয়। সে সেই হঠাৎ পছন্দের মানুষটার সাথে অনেক কিছু করে। তার সাথে কথা বলে, গল্প করে, বেড়াতে যায়; সে আমার অব্যক্ত বেদনাকে বুঝে নিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দেয়, তার

দ্য ম্যাডম্যান

Image
  ভুল আমি একটাই করেছিলাম। সেটা হল বইটাকে উল্টেপাল্টে দেখা। এখন প্রশ্ন হল এই বইটাই বা কেন? উত্তর হল JOICO পাবলিশার্স মনে হয় তার সবচেয়ে জঘণ্য প্রচ্ছদটি করেছে। বইটা উল্টেপাল্টে দেখেও প্রচ্ছদকর্তার নাম পেলাম না। কাগজের পাতারও বলিহারী যাই। সব মিলিয়ে আমার মুখ এমনিতেই বেঁকে গিয়েছিল। আনমনে পাতা উল্টাচ্ছিলাম। ‘প্রফেট’ আগে পড়েছি। অনেক বছর আগে। কেমন লেগেছিল বলা মুশকিল। ভাল লাগেনি বোধহয়। অপ্রধান কারণ, মূর্খতা। প্রধান কারণ, আমার ইংরাজীর দৌড়। আজও যে ইংরাজীতে খুব একটা ভাল তা বলতে পারি না, তবে খানিকটা গুঁতোগাঁতা খেয়ে আগের থেকে চলনসই। ভাবলাম ‘প্রফেট’ ছাড়া অন্যগুলোতে চোখ বোলাই। পাতা খুলল – The Madman, একটা লেখা, দুটো লেখা, আমি পড়ি, আমি হারিয়ে যাই। আস্তে আস্তে কখন বিকেল হয়, সন্ধ্যে নামে। তারপর দেখি পাতাগুলো আর দেখা যাচ্ছে না। আমি লাইট জ্বালাই। ‘ম্যাডম্যান’ পড়তে আমার দুদিন লাগল। আমি এখনও বইটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি নি। কি তার লেখা! কী গভীর অনুভূতি! দুটো লাইনের মধ্যে কতো কতো কথা বলা আছে! মন স্তব্ধ হয়ে পড়ে, পড়ে, পড়েই চলে। খলিল জিবরান আমার কাছে বিস্ময়। রবীন্দ্রনাথ, তলস্তয়ের পর এই প্রথম কেউ গভীর অনুভূতির ম

গল্পতরু’র অল্পকথা

Image
  প্রচ্ছদের যে গল্পতরু দন্ডায়মান, সূচীপত্রে সেই তরুই মাটিতে ধূলিশয্যা নিয়েছে দেখলাম। এটা কি কোন ইঙ্গিত? অভিজিৎ তরফদার, তিলোত্তমা মজুমদার, অনিতা অগ্নিহোত্রী, সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, সুকুমার রুজ, হামিরুদ্দিন মিদ্যা, মৌমিতা, সাদিক হোসেন, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সান্যাল এবং প্রচেত গুপ্ত। বড়ো বড়ো এগারোটি নাম। ছোট ছোট এগারোটি গল্প। একত্রে নাম - 'গল্পতরু'। এবারের রোববারের নিবেদন সংবাদ প্রতিদিনের তরফ থেকে। পড়তে পড়তে মনে পড়ে যাচ্ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়েরর কথা। কোথাও যেন বলেছিলেন, অথবা লিখেছিলেন, বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পের মণিমুক্তো রবীন্দ্রনাথের পরেও অনেক আছে। বাংলা সাহিত্য সবচেয়ে বড়ো উপহার দিয়েছে ছোটগল্পের মধ্যে দিয়ে। সুনীলের সেই কথা তখন বিশ্বাস করি নি। তারাশঙ্কর-বিভূতিভূষণ-মাণিক-সমরেশের পর আর কেউ আছে না কি? কল্লোল যুগ আমার নাক কেটে নিয়েছিল। সুনীল-শীর্ষেন্দু-সঞ্জীব-তারাপদ --- এরা কম কেউকেটা না কি? কিন্তু, এই পত্রিকাটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, কোথাও যেন আমার নাকটা আবার জুড়ছে। একটু একটু করে। গল্পের সেই ধার-ভার কি কোথাও অস্তাচলে? সে ‘খুন’ গল্পই হোক, কিম্বা ‘আক্রমণ’? ‘নদীর মান

অন্ধকারে একা...

Image
  এক-একটা মুহুর্ত আসে যখন সময় স্থির হয়ে আমার চারপাশ ঘিরে আমাকে চেপে ধরে। জলের মধ্যে থাকার মতো। আশেপাশের শব্দগুলো তখন ক্ষীয়মান। আশেপাশের মানুষেরা ধোঁয়াশা। আমি নিজেই ধোঁয়াশা। আমার মন আনমনা। সে কি ভাবছে সে নিজেই জানে না। প্রতিকূল পরিস্থিতি আমায় চেপে ধরে। সে চাপ বাড়েও না, কমেও না। একই রকমভাবে রয়ে যায়। আমার ঘুমে, আমার জেগে থাকায়, আমার আনন্দে, আমার দুঃখে সে আমার পাশে পাশে চলতে থাকে, চলতেই থাকে, সঙ্গ ছাড়ে না। এইসব মুহুর্তেরা কখনোও কোন অভিযোগ করে না। কেবল আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কোন কথা বলে না, কিন্তু বেবাক তাকিয়ে থাকে। এমন বোবা নির্বিবাদীর সঙ্গ যাপন করা যে কি যন্ত্রণার! হয়তো বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই, হয়তো ভিতরে কোন উচ্ছ্বাস আসে না। আস্তে আস্তে সব স্তিমিত হয়ে আসতে চায়। আস্তে আস্তে ক্লান্তি নামে আমার অঙ্গ জুড়ে। রাত্রিবেলায় ঘরে যখন আমার সাথে আমি একা, তখন চুপ করে বসে থাকি। আমার ‘আমি’ও কেমন যেন চুপচাপ। সে আমার পাশাপাশি আমার সঙ্গে বসে থাকে। তার মুখেও কোন কথা নেই। সে কাঁদতে চায়। আছড়ে পিছড়ে কাদতে চায়। কেন চায় সে নিজেও জানে না। আসলে সে হাল্কা হতে চায়। কিন্তু ভারটাই বা কীসের? অভাব

এবং হুমায়ুন

Image
  আমার জীবনে হতে গোনা কয়েকজন লেখক আছেন, যাদেরকে এড়িয়ে যেতে চাই। তার মধ্যে হুমায়ুন আহমেদ একজন। হুমায়ুন আহমেদকে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ চিনেছে অনেক দেরীতে। শুনেছি সুনীলের উদ্যোগে তার উপন্যাস টানা দশ বছর ধরে দেশের শারদীয়ায় বেরিয়েছিল। কিন্তু এপার বাংলায় তেমন সমাদর পায় নি। PDF এর রমরমা শুরু না হলে এখনও কয়জন চিনত সন্দেহ আছে। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবৎ হুমায়ুন আহমেদের চাহিদা তুঙ্গে। শুনেছি তার হিমু আর মিশির আলী সমগ্র, গল্প সমগ্র কলেজ স্ট্রীটের অলিতে গলিতে পাওয়া যায়। আমি একটা সময় হুমায়ুন আহমেদ পড়তে শুরু করি। অবস্থা এত খারাপের দিকে গিয়ে দাঁড়ায় যে একসময় আমার কাজই ছিল রোজ রাত্রে খেয়ে উঠে একটা উপন্যাস শেষ করে তবে ঘুমাতে যাওয়া। মাস দেড়েক পর যখন ক্ষান্ত দিলাম, বুঝতে পারলাম হুমায়ুনের একটা কিছু স্বত্ত্বা বা স্টাইল আমার মধ্যে ঢুকে কোথাও অবচেতনে গেড়ে বসে গেছে। সেদিন থেকে আমি জানি, আমি লিখতে পারব। তার আগে লেখা তো দূর, লেখার কথা ভাববারও সাহস দেখাইনি। ছোট ছোট উপন্যাস। ছোট ছোট বাক্য। অত্যন্ত সরল বাক্য কিন্তু বিন্যাস কি মায়াময়! লেখার পাঞ্চলাইনে কীভাবে চিরন্তনী অনুভূতিগুলো ঢুকিয়ে দেওয়া যায় তা হুমায়ুন আহমেদ শ

পয়লা বৈশাখ

Image
  “শুভ পয়লা বৈশাখ” আমার এবারের পয়লার একটা ইতিহাস আছে। সেটা বলি। দিন তিনেক আগের কথা। মাঝে মাঝে হঠাৎ করে আমার এডভেঞ্চার করতে ইচ্ছা করে। শুদ্ধ বাংলায় যাকে বলে ‘বদমাইশি’। তো পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আমার জন্যে একটা শাড়ী কেনা হয়েছে বাড়ীতে, মা কিনেছে, আমি জানি। দেখেওছি। দারুন সুন্দর। কিন্তু, এতে কি মন ভরে? মোটেই না। এতএব আমার হতভাগাকে একটা পাঞ্জাবী ধরিয়ে দিয়ে শিশুসুলভ প্রশ্ন করলাম, আমার জন্যে কি কিনেছ? সে আমতা আমতা করতে লাগল। সে কিছুই কেনেনি। বেমালুম ভুলে গেছে। ছেলেদের অসম্ভব ভালো ক্ষমতা হল মাঝে মাঝে তীব্রভাবে অসামাজিক হয়ে যাওয়া। এতএব তার মাসুল তাকে দিতেই হবে, এটা আমাদের মেয়েদের জন্মগত অধিকার। এই অধিকার আমি প্রয়োগ করলাম। অতঃপর সে জনপ্রিয় অনলাইন সাইটে গিয়ে ‘BUY’ অপশনটায় ক্লিক করতে করতে বিড়বিড় করে বলল, আবার এইসব ছাইপাশ গিলবি, নিজের চোখ আর আমার মাথা খাবি। সেদিনই সন্ধ্যেবেলায় ফিরে এসে বাবার ঘরে উঁকি দিলাম। এখানে উদারতা নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্নতা নেই। বেশ কিছু অর্থ আমদানী হল অনায়াসেই। অতঃপর ভাইয়ের ঘরে। এইবার সবচেয়ে কঠিন মরুভূমিতে এসেছি। এখানে রুক্ষতার চুড়ান্ত। কোনরকম নারীঘটিত অস্ত্র খাটবে না। তবুও, অর

নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড

Image
  ‘স্ববিরোধী চিন্তা’ এই শব্দজোড়া আমায় তাড়া করে বেড়ায়। যেখানেই যাই, যা-ই ভাবি, কিম্বা যা কিছুই পড়ি না কেন এই শব্দদুটো আমায় মাঝে মাঝেই চমকে দিয়ে যায়। কখনও মনে হয়, শব্দজোড়া ‘হিপোক্রিট’ হওয়ার আঁতুড়ঘর, আবার কখনও মনে হয় ‘আনবায়াসড’ চিন্তাভাবনা করার অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। কেমন ব্যাপারটা একটু খতিয়ে দেখা যাক। সোশাল নেটওয়ার্ক একটা খোলা পাতার মতো। সেখানে যে কাউকে যা খুশি বলার অধিকার আছে। আমরা একে ব্যক্তি স্বাধীনতা বলছি। এখানে আমরা এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি যে, দেখেছি, একটা পোস্টের প্রেক্ষিতে পোস্টদাতাকে হয়তো ‘দেশদ্রোহী’ থেকে শুরু করে ‘দালাল’ তকমা দেওয়া হল। তাকে লাইফ থ্রেট দেওয়া হল। অত্যন্ত অশালীন ভাষায় অপমান করা হল। এবার যে বা যারা এমন করল তাদের টাইম লাইনে একটু ঘুরে আসুন। দেখবেন, তাদের কেউ কেউ হয়তো তার পরম প্রিয় জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনীর সাথে রেস্তোঁরাতে জন্মদিন পালন উৎসবের ছবি দিয়েছে; অথবা পরের পোস্টে অত্যন্ত শালীন সুন্দর ভাষায় তার নিজের চিন্তাধারাকে ব্যক্ত করছে। সব মিলিয়ে ‘ফিল গুড’ দেওয়াল। অর্থাৎ, দুটো ক্ষেত্রে একটি অপরটিকে কনট্রাডিক্ট করছে। অথচ ব্যাক্তি একই। এবার রবীন্দ্রনাথের উদাহরণ নেওয়া

রোববার এপ্রিল ৯

Image
১। একটা থাপ্পড় সবসময় বোধহয় শুধুমাত্র আঘাত নয়। এতে জড়িয়ে থাকতে পারে চূড়ান্ত অসন্মান, অবমাননা। কখনও থাপ্পড়টা খেলেই বোঝা যায় পায়ের তলায় জমি কতটা ঝুরঝুরে। থাপ্পড়ই হয়তো সাহায্য করে নিজেকে আবিষ্কার করতে। জোগায় রুখে দাড়ানোর সাহস। ২। কে কতটা আগ্রাসী বা মারণোন্মুখ হবে তা, এতএব, শুধুই হরমোন-নির্ধারিত নয়। ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান ও শিক্ষার ওপরেও তা নির্ভর করে। ৩। সমাজমাধ্যমে বাচিকভাবে ধর্ষণের হুমকি পায় মেয়েরা। কিন্তু ওই নিঃশর্ত বাক্‌স্বাধীনতার অজুহাত দেখিয়েই ধর্ষণ সম্পর্কে রগরগে আলোচনা করা গ্রুপ ফেসবুকে ছাড়পত্র পায়। ৪। পুরুষ-পীড়ন চিত্রও অচেনা নয়। তারাও মানসিকভাবে বিদ্ধ্বস্ত হয়। ... নারীবাদ মানে পুরুষবিদ্বেষ নয়, পুরুষতন্ত্রের প্রতি প্রতিবাদ। এরকমই টুকরো টুকরো আলোচনা নিয়ে এবারের প্রতিদিন রোববার। লিখেছেন অতনু বিশ্বাস, শতাব্দী দাশ, বিষ্ণুপ্রিয়া চৌধুরী, রিংকা চক্রবর্তী। পড়তে পড়তে মনে পড়ে যাচ্ছিল বিগত কিছু ঘটনার কথা। আমাদের মধ্যে থাপ্পড় মারার একটা চল উঠেছে। আগেপিছে কিছু না ভেবেচিন্তেই চড় মেরে দেওয়া। উল্টোদিকের মানুষটার বক্তব্যকে বিচার ব্যাতিরেকেই তাকে আক্রমণ করা। যেন আমরা জানি, আমরাই সঠিক। তাকে

গাঁধী উত্তর ভারতবর্ষ

Image
কিছু কিছু বই মনে বিস্ময় জাগায়। বিস্ময় এই কারণে যে বইটার মধ্যে দিয়ে গেলে নিজের চিন্তাধারা একটা নতুন দিকে বাঁক নেয়। একটা উত্তরণ ঘটায়। বইটা তখন একটা অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়। ‘গাঁধী উত্তর ভারতবর্ষ’ বা ‘India After Gandhi’ সেইরকমেরই একটা বই। প্রথমেই বলে নিই, এই বইটা মহাত্মা গান্ধী’র ওপর নয়। তাই যে সব তামাম বাঙালী বইয়ের নামটা দেখেই তেড়েমেড়ে আসবেন জাতির জনকের ওপর দুকলম লিখে নিজের তথাকথিত বিদ্যা জাহির করার জন্যে তারা দয়া করে এই লেখাটা এড়িয়ে যান। রামচন্দ্র গুহ একটা করে কলাম প্রতি শনিবার করে টেলিগ্রাফে লেখেন। আমি গোগ্রাসে পড়ি। অসম্ভব ভাল লাগে। তার গান্ধীপ্রীতি সর্বজনবিদিত। গান্ধীজিকে নিয়ে লেখা জীবনীটা আদৌ বাংলায় অনুবাদ হবে কি না জানি না। হওয়ার সম্ভবনাও খুব কম। তবে কৌতুহলীরা ওটাও পড়তে পারেন। নেতাজী প্রীতির সানগ্লাস পরা না থাকলে আলো পাবেন অনেক। নেহেরুর ওপরেও ভালরকম টান আছে তার। একটু কংগ্রেস ঘেষা বোঝাই যায়। সমস্যা হল সেই একদেশদর্শিতা দিয়ে ইতিহাস লেখা যায় না। যদিও আজ পর্যন্ত আনবায়াসড কোন ইতিহাস লেখা হয়েছে কি না জানা নেই। রামচন্দ্র গুহ যতটা সম্ভব আনবায়াসড হয়েই স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতবর্ষের ইতিহাস লিখত