দ্য ডার্ক সাইড অফ লাইফ মুম্বই সিটি
এককথায় অত্যন্ত খাজা বই। গল্পের প্লট কনভিন্সিং নয়, হলিউড সিনেমা
‘CRUSH’ এবং বলিউড সিনেমা ‘মেট্রো – লাইফ ইন আ সিটি’ আর তার সাথে আরোও কয়েকটা সিনেমার
গল্প মিলিয়ে জগাখিচুড়ি করে বানানো। চিত্রনাট্য অতি দুর্বল। ডায়লগ শুনলে হাসি পাবে।
অভিনয় কহতব্য নয়, দেখে মনে হয় যেন সিরিয়াল বা নব্বইয়ের দশকের সিনেমা দেখছি। মনে রাখার
মতন গান একটাও নেই, জুবিনের গাওয়া Awargi বাদে (বস্তুত আমি যখন এই লেখাটা লিখছি, তখনও
পাশে গানটা বেজেই চলেছে), অত্যধিক দুর্বল পরিচালনা। লক্ষণীয় ভুল এডিটিং। এককথায় সিনেমাটা
দেখতে বসলে একটা সময় বোর হয়ে যেতে হবে, তারপর টেনে টেনে দেখে শেষ করে হাফ ছাড়তে হবে।
তবুও এই সিনেমাটার কথা লিখতে বসলাম কেন? তার একটা কারণ আছে। আমার মনে হয়, কারণটা এই
মুহুর্তে দাঁড়িয়ে বেশ বিপজ্জনক, এবং শুধু তাই নয় ভারতের নিরিখে বেশ উদ্বেগজনক।
তার আগে কয়েকটা নাম বলি, সিনেমাটার
শুরুতেই যে নামগুলো ছবিসমেত দেখানো হয়েছে। নামগুলো হলঃ ললিত শেঠ, জিয়া খান, প্রত্যুষা
ব্যানার্জি, মুরুগাণাচারি, পওয়নদ্বীপ সিং কোহলি, গুরু দত্ত, ভিভেকা বাবাজী। আমি দুজন
বাদে আর কাউকে চিনতাম না। যারা পেজ থ্রি-র খবরাখবর রাখেন তারা নিশ্চই জানবেন। এদের
মধ্যে একটা বড় মিল আছে। কি? দাড়ান আরেকটা নাম যোগ করলেই এক ঝটকায় বলে দেবেন মিল কোথায়।
সুশান্ত সিং রাজপুত। ঠিক ধরেছেন, এরা প্রত্যেকেই আত্মহত্যা করেছিলেন। যখন এই সিনেমা
রিলিজ করেছে, তখনও সুশান্ত নিজের সাথে লড়ছেন। আর মেরেকেটে দুই বছর লড়ার ক্ষমতা তার
থাকবে। তারপর সব শেষ।
আত্মহত্যায় ভারত অনেক এগিয়ে। ডিপ্রেশান
অন্যতম প্রধান কারণ। করোনার সময়ে এই আত্মহত্যা এবং ডিপ্রেশনের প্রভাব অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে
সকলের সামনে আসে। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল তার অনেক আগে থেকেই হয়ে আছে। অনেক অনেক গিট্টু
পেকে আছে মানুষের মনের ভেতরে। পাশের মানুষের কাছে তার খবর নেই। লাগামছাড়া আত্মহত্যা
রুখতে অনেক স্টেপ নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে শৈশব বিপন্ন;
যৌবন ছন্নছাড়া; প্রৌঢ়ত্ব সম্পর্কের সামাজিক জটিলতায় ফেসে গেছে; আর বার্ধক্য একাকীত্বের
দেওয়ালে মাথা কুটে মরছে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে এই বিষয়ের ওপর যত বেশি সিনেমা আসে ততই
মঙ্গল।
এখানেই পরিচালকের প্রচেষ্টা। অনেকগুলো
গল্পকে একসাথে বলতে চেয়েছেন --- উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিণতি; লোভের ফল; একাকীত্বের ধাক্কা;
বৈবাহিক সম্পর্কে টানাপোড়েন; সাথে মুসলিম হেনস্থার ফ্রাস্ট্রেশান --- যেখানে চরিত্রগুলোর
সবাই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল বা বাধ্য হয়েছিল। আর এতগুলো সংবেদনশীল গল্পকে প্যারালাল
বলতে চাইলেন পরিচালক। কিন্তু সেটা বলতে গেলে তো যথেষ্ট রকমের ক্ষমতা থাকতে হবে? সেটাই
পরিচালক দেখাতে পারেন নি বলে সিনেমাটার কথা অনেকেই জানতেও পারল না। পুরো কাজটাই ডুবে
গেল।
ট্রেলার দেখে মনে যে আশা জেগেছিল,
সিনেমা শুরু হওয়ার পনেরো মিনিটের মধ্যেই তা হতাশায় পরিণত হল। যত সময় গড়ায় তত মনে ফ্রাস্ট্রেশান
জাগতে শুরু করে। শেষ হওয়ার পর একটা বিরাট দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবি, বাঁচলাম।
তবুও... আত্মহত্যা বা ডিপ্রেশানের
বর্তমান পরিণতি সম্পর্কে আঁচ করতে হলে সিনেমাটা দেখতে পারেন। কারণ বলিউড বর্তমানে অনেক
হটকে সিনেমা বানাচ্ছে, তার বিষয় গভীরতাও চোখে পড়ার মতো। এটা সেইসব সিনেমাগুলোর অরণ্যে
হারিয়ে যাবে। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এই প্রচেষ্টা, তা সার্থক হলে আমার ভাল লাগবে। অন্তত
চেষ্টা তো করেছিলেন তারিখ খান। এইখানেই তার সেই ব্যর্থ প্রচেষ্টার একটা বড়সড় প্রশংসা
প্রাপ্য।
Comments
Post a Comment