তিনটে পিঁপড়ে

 



এক সুন্দর রৌদ্রকরোজ্জ্বল দুপুরে মাঠে (গাছের ছায়ায়) ঘুমন্ত এক মানুষের নাকের ওপর তিনটে পিঁপড়ে মুখোমুখি হল। প্রত্যেকে নিজেদের প্রথা অনুযায়ী পরস্পরকে অভিবাদন জানাল। অতঃপর তাদের কথপোকথন শুরু হল।

প্রথম পিঁপড়ে বলল, এই পাহাড় আর ওই সমতলভূমি আমার দেখা সবচেয়ে নিস্ফলা অঞ্চল। আমি সারাটা দিন ধরে খাওয়ার খুঁজলাম বটে, কিন্তু এককণাও শষ্য মিলল না!

দ্বিতীয় পিঁপড়ে বলল, আমিও কিচ্ছু পেলাম না। যদিও আমি তন্নতন্ন করে প্রত্যেকটা ফাটল আর বনের ফাঁকফোকরে হানা দিয়েছিলাম। আমার মতে, এটাই হল সেই, আমাদের জাতে যাকে বলে নরম চলন্ত ভূমি, যেখানে একদানা খাবার মিলবে না।

এতক্ষণে তৃতীয় পিঁপড়েটা মাথা তুলে বলল, আরে ভাই! আমরা পরম পিঁপড়ের নাকের ওপর দাঁড়িয়ে আছি! সেই মহান এবং অসীম পিপীলিকা, যার শরীর অপার, যাকে দেখা যায় না। যার ছায়া অসীম, সে ছায়াকে আমরা সম্যকরূপে ধারণাও করতে পারি না। যার বাণী এতই উচ্চ এবং মন্দ্রিল, যে আমরা শুনতে পাই না; এবং যিনি সর্বত্র বিরাজমান!

যখন তৃতীয় পিঁপড়েটা অপর দুজনকে এই মহাবাণী শোনাচ্ছিল, তারা তখন পরস্পরের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিল আর মুচকি মুচকি হাসছিল। কথা শেষ হওয়া মাত্রই দুইজনে এবার সচকিত উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ল।

আর ঠিক এই সময় মানুষটা ঘুমঘোরে নড়েচড়ে উঠল, এবং ঘুমের আবেশেই সে তার হাত দিয়ে নাক চুলকে নিল।

এবং তিনটে পিঁপড়ে চোখের নিমেষে পিষে গেল।

 

-----------

 

[খলিল জিবরান- এর The Madman গ্রন্থ থেকে...]

 

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে