দ্য ম্যাডম্যান

 



ভুল আমি একটাই করেছিলাম। সেটা হল বইটাকে উল্টেপাল্টে দেখা। এখন প্রশ্ন হল এই বইটাই বা কেন? উত্তর হল JOICO পাবলিশার্স মনে হয় তার সবচেয়ে জঘণ্য প্রচ্ছদটি করেছে। বইটা উল্টেপাল্টে দেখেও প্রচ্ছদকর্তার নাম পেলাম না। কাগজের পাতারও বলিহারী যাই। সব মিলিয়ে আমার মুখ এমনিতেই বেঁকে গিয়েছিল।

আনমনে পাতা উল্টাচ্ছিলাম। ‘প্রফেট’ আগে পড়েছি। অনেক বছর আগে। কেমন লেগেছিল বলা মুশকিল। ভাল লাগেনি বোধহয়। অপ্রধান কারণ, মূর্খতা। প্রধান কারণ, আমার ইংরাজীর দৌড়। আজও যে ইংরাজীতে খুব একটা ভাল তা বলতে পারি না, তবে খানিকটা গুঁতোগাঁতা খেয়ে আগের থেকে চলনসই। ভাবলাম ‘প্রফেট’ ছাড়া অন্যগুলোতে চোখ বোলাই। পাতা খুলল – The Madman, একটা লেখা, দুটো লেখা, আমি পড়ি, আমি হারিয়ে যাই। আস্তে আস্তে কখন বিকেল হয়, সন্ধ্যে নামে। তারপর দেখি পাতাগুলো আর দেখা যাচ্ছে না। আমি লাইট জ্বালাই।

‘ম্যাডম্যান’ পড়তে আমার দুদিন লাগল। আমি এখনও বইটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি নি। কি তার লেখা! কী গভীর অনুভূতি! দুটো লাইনের মধ্যে কতো কতো কথা বলা আছে! মন স্তব্ধ হয়ে পড়ে, পড়ে, পড়েই চলে। খলিল জিবরান আমার কাছে বিস্ময়। রবীন্দ্রনাথ, তলস্তয়ের পর এই প্রথম কেউ গভীর অনুভূতির মধ্যে দিয়ে আমাকে হাতছানি দিচ্ছে। আমি এড়িয়ে চলতে চাইছি, কিন্তু জানি, আমি পারব না।

একটা লেখা অনুবাদ করার লোভ সামলাতে পারলাম না। আমার প্রথম অনুবাদ। জানি ভাল হয় নি। কিন্তু যদি কেউ ‘প্রফেট’ বাদে খলিল জিবরানের অন্য কোন লেখা পড়তে চান, তাহলে বলব, অবশ্যই ‘দ্য ম্যাডম্যান’ পড়ুন। তারই একটা আপাত ব্যার্থ স্যাম্পেল দেওয়ার চেষ্টা করলামঃ

 

****************

 

যখন আমার দুঃখ জন্মেছিল

খলিল জিবরান

======================

যখন আমার মধ্যে দুঃখ জন্মাল, আমি তাকে সযত্নে লালন করলাম। এবং কোমলভাবে তাকে দেখতেই থাকলাম।

এবং দুঃখ আমার মধ্যে তেমনভাবেই বেড়ে উঠল, যেমনভাবে জীবন বেড়ে ওঠে, শক্তিশালী, সুন্দর এবং বিস্ময়ের আনন্দে।

আমরা পরস্পরকে ভালোবাসলাম, আমার দুঃখ এবং আমি, এবং আমরা আমাদের চারপাশের জগৎটাকেও ভালোবাসলাম; দুঃখের ছিল কোমল হৃদয় আর আমার ছিল দুঃখের প্রতি মমতা।

যখন আমরা কথা বলতাম, আমার দুঃখ এবং আমি, দিনগুলো যেন উড়ে যেত, রাতগুলো কেটে যেত মধুর স্বপ্নবন্ধনে। দুঃখের ছিল অসাধারণ বাকপটুত্ব। আর আমার ছিল দুঃখের সাথে একাত্ব হওয়ার ক্ষমতা।

যখন আমরা গান গাইতাম, আমার দুঃখ এবং আমি, আমাদের প্রতিবেশীরা তাদের জানলার সামনে বসে থাকত এবং শুনত। আমদের গান ছিল সমুদ্রের মতই গভীর, আমাদের সুর ছিল অদ্ভুত স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।

যখন আমরা হাটতে বেরোতাম, আমার দুঃখ এবং আমি, লোকেরা আমাদের দিকে পরম স্নেহময় চোখে তাকিয়ে থাকত, কথা বলত অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সাথে। অনেকেই আমাদের ঈর্ষা করত। কারণ, দুঃখ খুব পবিত্র জিনিস আর আমি দুঃখের জন্যে গর্ববোধ করতাম।

কিন্তু আমার দুঃখও একদিন চলে গেল। যেমনভাবে জীবন একদিন শেষ হয়। একাকী আমাকে ফেলে রেখে গেল উদ্বিগ্নতা আর দুশ্চিন্তায়।

এখন আমার কথা আমারই কানে কর্কশ ঠেকে।

এবং আমার গান আমার প্রতিবেশীরা শুনতে চায় না আর।

এবং রাস্তায় হাটলে কেউ আমার দিকে ফিরেও তাকায় না আর।

একমাত্র ঘুমের মধ্যে আমি যেন কার করুণাভরা গলার আওয়াজ পাই, কে যেন বলে, ওই দেখো দেখো, একটা লোক শুয়ে আছে, ওর দুঃখটা মরে গেছে গো!

 

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে