অন্ধকারে একা...
এক-একটা মুহুর্ত আসে যখন সময় স্থির হয়ে আমার চারপাশ ঘিরে আমাকে
চেপে ধরে। জলের মধ্যে থাকার মতো। আশেপাশের শব্দগুলো তখন ক্ষীয়মান। আশেপাশের মানুষেরা
ধোঁয়াশা। আমি নিজেই ধোঁয়াশা। আমার মন আনমনা। সে কি ভাবছে সে নিজেই জানে না। প্রতিকূল
পরিস্থিতি আমায় চেপে ধরে। সে চাপ বাড়েও না, কমেও না। একই রকমভাবে রয়ে যায়। আমার ঘুমে,
আমার জেগে থাকায়, আমার আনন্দে, আমার দুঃখে সে আমার পাশে পাশে চলতে থাকে, চলতেই থাকে,
সঙ্গ ছাড়ে না।
এইসব মুহুর্তেরা কখনোও কোন অভিযোগ
করে না। কেবল আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কোন কথা বলে না, কিন্তু বেবাক
তাকিয়ে থাকে। এমন বোবা নির্বিবাদীর সঙ্গ যাপন করা যে কি যন্ত্রণার! হয়তো বাইরে থেকে
বোঝার উপায় নেই, হয়তো ভিতরে কোন উচ্ছ্বাস আসে না। আস্তে আস্তে সব স্তিমিত হয়ে আসতে
চায়। আস্তে আস্তে ক্লান্তি নামে আমার অঙ্গ জুড়ে।
রাত্রিবেলায় ঘরে যখন আমার সাথে আমি
একা, তখন চুপ করে বসে থাকি। আমার ‘আমি’ও কেমন যেন চুপচাপ। সে আমার পাশাপাশি আমার সঙ্গে
বসে থাকে। তার মুখেও কোন কথা নেই। সে কাঁদতে চায়। আছড়ে পিছড়ে কাদতে চায়। কেন চায় সে
নিজেও জানে না। আসলে সে হাল্কা হতে চায়। কিন্তু ভারটাই বা কীসের? অভাব তো কোন কিছুরই
নেই! চরম দুঃখ নয়, পরম শোক নয়, ব্যর্থতার হতাশা নয়। শুধুমাত্র একটাই বোধ সারা শরীরের
রোমকূপ জুড়ে বয়ে চলে --- আমি একা।
অথচ দিন চলে। যেমনভাবে প্রতিদিন চলে।
যেমনভাবে আমরা পাশের মানুষদের সাথে ঠাট্টা করি, মষ্করা করি, হাসি, ঝগড়া করি, অভিমান
করি, কাজ করি --- সব চলে। বইয়ের পাতা উলটে উলটে এগোই। অক্ষরেরা জীবন্ত হয় না; গানের
পর গান সুরের পশরা নিয়ে চলে যায়, সুরের মাধুর্য থাকে না, সিনেমার চরিত্রেরা নাচে-কাঁদে-হাসে-গায়,
আমি অনড়; আমি আর আমার একাকীত্ব --- অনড় হয়ে বসে থাকে।
এর থেকে পরিত্রাণের পথ কি? কোনভাবেই
কি নেই? আমার নিজেকে unwanted লাগে। যখন এমনটা হয় তখনই কি মানুষ নেশা করে? আত্মহত্যা
করে? এই প্রকান্ড শূণ্যতার হাত থেকে রেহাই পেতে গেলে এমনটাই করা আবশ্যক?
আমার মনে হয় --- না। আমিও তখন মুহুর্ত’র
চোখে চোখ রাখি। মাঝে মাঝে আনমনা হলেও চোখে চোখ রাখা ছাড়া আর তো কোন উপায় পাই না। জপ-তপ-ধ্যান-মনসংযোগ
এসব সময় কাটানোর চেষ্টা মাত্র। গোঁয়ার বাঙালের মতো একাকীত্ব তাতে যায় না। আমি আমার
একাকীত্বকে সম্পূর্ণ আমাকে অধিকার করতে দিই। নিশ্চেষ্ট হয়ে তাকে দেখি, তাকে দেখি, তাকে
দেখেই যাই। আমি আর আমার একাকীত্ব --- দুজনে মুখোমুখি...
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ জ য়ী তা
Comments
Post a Comment