পয়লা বৈশাখ

 



“শুভ পয়লা বৈশাখ”

আমার এবারের পয়লার একটা ইতিহাস আছে। সেটা বলি। দিন তিনেক আগের কথা। মাঝে মাঝে হঠাৎ করে আমার এডভেঞ্চার করতে ইচ্ছা করে। শুদ্ধ বাংলায় যাকে বলে ‘বদমাইশি’। তো পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আমার জন্যে একটা শাড়ী কেনা হয়েছে বাড়ীতে, মা কিনেছে, আমি জানি। দেখেওছি। দারুন সুন্দর। কিন্তু, এতে কি মন ভরে? মোটেই না।

এতএব আমার হতভাগাকে একটা পাঞ্জাবী ধরিয়ে দিয়ে শিশুসুলভ প্রশ্ন করলাম, আমার জন্যে কি কিনেছ? সে আমতা আমতা করতে লাগল। সে কিছুই কেনেনি। বেমালুম ভুলে গেছে। ছেলেদের অসম্ভব ভালো ক্ষমতা হল মাঝে মাঝে তীব্রভাবে অসামাজিক হয়ে যাওয়া। এতএব তার মাসুল তাকে দিতেই হবে, এটা আমাদের মেয়েদের জন্মগত অধিকার। এই অধিকার আমি প্রয়োগ করলাম। অতঃপর সে জনপ্রিয় অনলাইন সাইটে গিয়ে ‘BUY’ অপশনটায় ক্লিক করতে করতে বিড়বিড় করে বলল, আবার এইসব ছাইপাশ গিলবি, নিজের চোখ আর আমার মাথা খাবি।

সেদিনই সন্ধ্যেবেলায় ফিরে এসে বাবার ঘরে উঁকি দিলাম। এখানে উদারতা নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্নতা নেই। বেশ কিছু অর্থ আমদানী হল অনায়াসেই। অতঃপর ভাইয়ের ঘরে। এইবার সবচেয়ে কঠিন মরুভূমিতে এসেছি। এখানে রুক্ষতার চুড়ান্ত। কোনরকম নারীঘটিত অস্ত্র খাটবে না। তবুও, অর্থ বড় বালাই। একটা ভালো গেঞ্জী উপহার দিতেই সে ভ্রু কুঁচকে বললে, আমার কাছ থেকে কিন্তু কিছু পাবি না। আমি বেকার মানুষ। আমি বললাম, বছরের প্রথম দিনের জন্যে কি কিছু দেওয়ার মতো তোর নেই রে শয়তান? আচ্ছা, দিবি না তো দিবি না। পড়ে দ্যাখ, কেমন লাগছে।

পড়ল। সুপারী গাছকে আলখাল্লা পড়ালে যা হয় তাই হল। তবুও বেশ সুন্দরই লাগল। বললাম, সায়ন্তিকাকে নিয়ে বেরোনোর সময় এটা পরিস। ভাল লাগছে তোকে দেখতে। ভাই আমার দিকে কড়া চোখে তাকাল। সায়ন্তিকার কথা কেউ জানে না, এক আমি ছাড়া। ব্যাপারটা কি একটা থ্রেট হিসাবে গেল? বোঝার চেষ্টা করছে। আমি বললাম, এটা আমি আর সায়ন্তিকা মিলে কিনলাম। খুব ভাল মেয়ে। তোকে একটা কিছু কিনে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তোর সঙ্গিনীর তোর মতই অবস্থা। তা আমি তাকে বললাম, তুই-ই না হয় পছন্দ কর। ভাই সেটা পরেই তোর সাথে দেখা করতে যাবে কাল। দেখে নিস।

দেখলাম ভাইয়ের দেহের যাবতীয় রক্ত দ্রুত মুখে উঠে গেল। আমাকে লজ্জা লজ্জা মুখে প্রণাম করে বলল, আমার কাছে টাকা নেই রে। থাকলে তোকে একটা কিছু কিনে দিতাম। তবে ভাবিস না। পূজোয় এবারে তোকে একটা শাড়ী দেবই। প্রমিস।

আমি বললাম, আড়াইশো টাকাও নেই তোর কাছে! আমি দেব কিছু টাকা তোকে? কালকে তো বেরোবি। সে হতভম্ব হয়ে বলল, না না তা কেন থাকবে না। সায়ন্তিকার জন্যে একটা গিফট কিনতে গিয়ে তোর জন্যে কেনা হল না। সরি রে। তুই আমার জন্যে গিফট কিনেছিস, আর আমিই তোকে কিছু দিতে পারলাম না এবার। মানে একটু চাপ হয়ে যাবে।

আড়াইশো টাকা দিতে পারবি? আমারও হাত খালি। একটু লাগত। বাবার কাছে আর চাইতে ইচ্ছে করছে না। তুই না দিতে পারলে থাক।

সে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। এরকম একটা জ্বলন্ত সমস্যা মাত্র আড়াইশোতে রফা হয়ে যাবে!

আমাকে টাকাটা দিতে দিতে বল, আই লাভ ইউ দিদি...

আমি মৃদু হেসে বললাম, তুই পুজোয় শাড়ী দিবি, এতেই মনটা ভাল হয়ে গেল রে। সত্যি করে বল, এতে কোন অসুবিধা হবে না তো? মানে টাকাটা...

আরে না না। কি যে বলিস...

এক ঢিলে দুই পাখী। ভাই বুঝতেও পারল না, ডবল গিফ্‌ট আদায় হয়ে গেল আমার। পয়লা বৈশাখের গিফট তো এবার নিলামই, উপরন্তু এই গিফ্‌ট আবার ফিরে আসবে পূজোয়, তারপরে ভাইফোঁটা তো আছেই... নারীবুদ্ধি জিন্দাবাদ।

ভাইয়ের ঘর থেকে বেরিয়েই বইকাকুকে ফোন করলাম, ও গো আমার জীবনদাতা, আমার প্রাণনাথ, আমার পরাণবঁধু বইকাকু গো! যা যা নাম বলছি, লেখ... কালকের মধ্যেই চাই...

বইকাকু আমাকে চেনে ভালোমতো। ‘কাল’ মানে কাল। না হলে ওনার কাল। ফলে সবক’টা বই হাতে এল পরদিনই। অনলাইনের বইগুলোও ঢুকে গেল এক এক করে। টকটক করে ছবিও তুলে ফেললাম।

এবার ছবিগুলোতে আসা যাক।

আমার হতভাগার কাছ থেকে আদায় করলাম --- গুরুচরণ দাস, দেবদত্ত পট্টনায়েক, খালিল জিব্রান আর ইউভাল নোয়া হারারি। তাকে ছবি পাঠিয়েছি। সে আমায় বাপ-বাপান্ত করছে।

বাবা অল্পের ওপর দিয়ে ধনেপ্রাণে মারা যাওয়ার হাত থেকে বেঁচেছেন – এইচ জি ওয়েলস আর এইচ পি লাভক্রাফট এ যাত্রায় তার মানরক্ষা করেছেন।

ভাইকে অনেক চুমু চুমু চুমু... ‘মহাত্মা ও কবি’ বইটাও তার কল্যাণে তুলে নিলাম।

আর সবশেষে, নিজেকে নিজে কিছু উপহার না দিলে হয়? দিলাম। রুদ্রাংশু মুখার্জী। এরজন্যে অবশ্য কিছুটা কৃতজ্ঞতা অমর্ত্য দা’র প্রাপ্য। এক ব্যাগ ভালোবাসা আপনাকে দাদা...

সবাইকে পয়লা বৈশাখে অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল। কে কে কি কিনলেন বা পেলেন জানাবেন। ছবি দিলেও কোন ক্ষতি নেই... লোভ দেব, কিন্তু ডাকাতি করতে যাব না।






Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে