Posts

Showing posts from March, 2022

ওরা আমাকে...

Image
  “ওরা আমাকে মোটামুটি তিনবেলা খেতে দিত। অন্য মেয়েরা তাও পেত না। তারা দুবেলা কি একবেলা আধপেটা খেতে পেত। ওরা জমিতে মুনিষের কাজ করত, তারপর ঘরের কাজ আর রাত্রে...” “আর তোমাকে?” “আমার সাথে ভাল ব্যবহার করত। আমি বয়সে ছোট, ফর্সা গোলগাল চেহারা, সুন্দর দেখতে, স্বাস্থ্য বেশ ভাল বলে আমাকে খুব যত্ন আত্তি করত। কিন্তু...” “কিন্তু কি?” “তার একটা কারণ ছিল। আমায় ওরা এক কাপড়ে রাখত।” “মানে?” “মানে শাড়ী ছাড়া আর কিচ্ছু পড়তে দিত না। কাপড় তাও হাটুর ওপর তুলে পরতে হত। বাড়ীর সবাই যখন খুশি, যেভাবে খুশি আমার সাথে... এমনকি আত্মীয় স্বজন এলে তাদের ঘরেও আমাকে পাঠাত ওরা।” “সে কী!” “হ্যাঁ জানোয়ার ওরা সবাই। ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করলাম, তারপর এখানে এসে দেখলাম আমার স্বামীর কাজই এটা। সারা ভারত ঘুরে ঘুরে মেয়ে জোগাড় করা। ওদের গোটা পাড়াটাই এরকম।” “তুমি কিছু বলোনি কাউকে?” “কাকে বলব? ওদের ভাষাই তো বুঝি না। শাশুড়ী প্রথম রাতে আমাকে ভাল করে সাজিয়ে গুজিয়ে শ্বশুরের ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিল।” “মেয়েরাও এই কাজে সাহায্য করে!” “না করে যাবে কোথায়? মেরে শেষ করে দেবে না। শাশুড়ীকে কতদিন মার খেতে দেখেছি। ও বাড়ীর সবাই, দেওর, বো

শুধু প্রেম নয়

Image
  “শুধু প্রেম নয়, কিছু ঘৃণা রেখো মনে” অরুণবাবু বললেন। কিন্তু কি করে? বসন্তের বিকেলে যার হাতের আঙ্গুলে হাত রেখে বনের পথে পথে হাটছি তাকে ঘৃণা করব কি করে? যার লাল টি-শার্ট ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলেছে আমার হলুদ শাড়ীর আঁচল তাকে ঘৃণা করা যায় কি? যার নিজের হাতে পরিয়ে দেওয়া পলাশ ফুল আমার চুলের আলগা খোঁপার তরঙ্গে এক টুকরো ডুবন্ত সূর্যের মত ভাসছে তাকে ঘৃণা? এও কি সম্ভব! হয়তো সম্ভব। মানুষের পক্ষে অসম্ভব কিছুই নয়। একদিন হয়তো সবকিছু বিষন্ন হয়ে যাবে। অভ্যাসের কার্পেটের তলা থেকে উঠে আসবে মন খারাপের গন্ধ। সকালে কুঁচকে যাওয়া বিছানার ভাজে ভাজে থাকবে অস্থির আর্তনাদ। ছুটির দিনের মরা বিকালগুলোয় জানলার ধারে স্খলিত শিথীল দেহ ক্লান্তস্বরে কথা বলবে পড়শীনীর সাথে। সন্ধ্যায় কোনদিন শেষ না হওয়া সিরিয়াল বদলে বদলে যেতে থাকবে রিমোটের ইশারায়। আবার রাত্রে ফের বুদ্ধিদীপ্ত কথপোকথন, ঝলসে যাওয়া কথার মারপ্যাচ, আর তারপর খেলা শেষে বা খেলা বাতিলের ঘোষনার পর হয়ে যাব যে যার মতো করে স্বপ্নবিলাসী। কিন্তু আজ সেকথা নয়। সে কথা ভবিষ্যতের গর্ভে। ফাল্গুনের বাতাসে আজ অন্যরকমের বিরহ। অন্যরকম ইচ্ছে। আমার লাল ব্লাউসের আগুনে তাকে পোড়ানোর অমোঘ ই

জলসা

Image
  শব্দেরা যখন তাড়া করে বেড়ায় তখন কেমন লাগে? একটা দৃশ্য, তার মধ্যে একটা চরিত্র, সেই চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গে চলছে কিছু শব্দ। সেই শব্দ আপনাকে অস্বস্তি দিচ্ছে, আপনাকে ব্যতিব্যস্ত করছে, আপনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারছে। আপনি জানেন সেই চরিত্রটি সদ্য একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, যার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সে জানে না, আপনিও জানেন না। দুর্ঘটনাস্থল থেকে সে পালিয়ে এসেছে। নৈতিকতা এবং মানবিক চেতনার প্রশ্ন চাপা পড়েছে প্রেস্টিজ ইস্যুর ভয়ে। তার শরীরে, মনে এর ফল অত্যন্ত প্রকট। আর প্রতি মুহুর্তে এই টানটান দৃশ্যকল্পের সাথে সাথে চলে ফিরে বেড়াচ্ছে কিছু শব্দ --- যাকে আমরা বলছি আবহসঙ্গীত তথা সাউন্ড। সিনেমার নাম জলসা। মারাত্মক অভিনয় করেছেন বিদ্যা বালান আর শেফালি শাহ। চোখ দিয়ে, মুখ দিয়ে, শরীর দিয়ে। যোগ্য সঙ্গত করেছেন রোহিণী হাত্তাঙ্গাডি, ইকবাল খান। চমকে দিয়েছে সূর্য কাশীবাটলা। কখনো কখনো তার অভিনয় এতটাই বাস্তব হয়ে যায় যে তার সামনে দুই সুপার জায়েন্টকেও ফিকে লাগে। বাকিরা ঠিকঠাক, মানানসই। কিন্তু আমাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে শব্দেরা এবং কিছু দৃশ্য। গৌরব চ্যাটার্জী আর তার সাউন্ড ডিপার্টমেন্ট এব্যাপারে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন। দর্শকের মনস্ত

ছেলেরা কাঁদে না

Image
  আমার হতভাগা আমাকে হঠাৎ ফোন করল, তুমি কি বাড়িতে একা? আমি ফাজলামি করে বললাম, হ্যাঁ। তুমি কি আসবে? মা-বাবার আসতে এখনো ঘন্টা দুই লাগবে... “বাজে কথা বোলো না, আই এম সিরিয়াস।” “কি হয়েছে?”, আমি ওর গলা শুনে একটু থতমত খাই। “আমি তোমার বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। **** আমার সাথে আছে। ওকে একটু সামলাও...”   আমি মাথামুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। যাকে ও সাথে নিয়ে এসেছে তার নাম সানী। সানী আমার মেয়েবেলার বন্ধু। সানী নামটা আমার দেওয়া। একটা বিশেষ কারণে কিশোরীবেলায় নামটা দিয়েছিলাম। সারা পৃথিবীর লোক ওকে এক নামে ডাকে, আর আমি ওকে নিজেদের মধ্যে থাকলে ‘সানী’ নামে ডাকি। আমরা একসাথে বড় হয়েছি। আমার মা-বাবা ওকে খুব পছন্দ করে। স্কুল-কলেজ লাইফে অনেকদিন আমার বাড়ী এসে বাড়ীর সবার সাথে চুটিয়ে আড্ডা দিয়ে গেছে সারাদিন। পরীক্ষার আগে আমরা একসাথে রাত জেগে পড়াশোনাও করেছি। অনেকদিন সে আমার চুল বেধে দিয়েছে। এমনকি আমাকে খাইয়েও দিয়েছে। আমাকে অনেক ছেলের হাত থেকেও সামলেছে। ও আমার ফ্যাশন ডিজাইনার, মেক-আপ ম্যান। মোট কথা ও আমায় একটা সুন্দর মেয়েলী বোধ দিয়েছে। আজ আমি যেভাবে নিজেকে ক্যারি করি তাতে ওর অবদান কোথাও কোথাও আমার মায়ের চেয়ে

সানন্দা এপ্রিল

Image
  সানন্দা আমি খুব একটা পড়ি না কোনকালেই। কি জানেন তো, ‘নারীবাদ’ তত্ত্বে ‘পুরুষ বাদ’-এর গন্ধ পেলে আমার সেটা সয় না। যদিও নারীপ্রগতিতে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু সেই প্রগতি যদি বিদ্বেষ আর বিচ্ছিন্নতা ডেকে আনে তবে তার ফল কখনই ভাল হয় না। রবীন্দ্রনাথের ‘প্রগতিসংহার’ নামক ছোটগল্পটি এ ব্যাপারে একটা বড় উদাহরণ। কিন্তু এবারে ‘থোর-বড়ি-খাড়া’ থেকে বেরিয়ে দুটো লেখা ভাল লাগল বেশ। একটা চীরদীপ্তা সেনগুপ্ত’র বয়ানে আর অন্যটা রত্নাবলী রায়ের বয়ানে। মজার ব্যাপার, এরা দুজনেই কিন্তু প্রগতিবাদী মনোবিদ। অনেকদিন পর এই প্রথম কোথাও যেন মেয়েদের ইন্ট্রোস্পেকশানের দিকে জোর দিতে বললেন কেউ। অন্তত আমার চোখে পড়ল। একটার মূল বিষয় ‘কমফোর্ট জোন’, এবং আরেকটা ‘পুরুষতন্ত্র’। দ্বিতীয় বিষয়টা চেনাপরিচিত হলেও শব্দের ইঙ্গিত ‘পুরুষ বাদ’-এ না গিয়ে সরাসরি শব্দটার মর্মবাণী নিয়ে কথা বলার উদারতা আমায় মুগ্ধ করল। তৃতীয়, অতি অবশ্যই যশোধরা রায়চৌধুরী। তার লেখা পড়ার জন্যে মুখিয়ে থাকি এই কারণে যে, প্রতিবারই নতুন কিছু না কিছু আমাদের দেন। এবারে আমি পেলাম কবিতা সিংহ -কে। বাদবাকি নতুন কিছুই নেই। মেয়েদের জন্য এই কমার্শিয়াল ম্যাগাজিনটা যেমন ছিল তেমনই আছে

আত্মজা

Image
জ্বালিয়েছি, আরোও জ্বালাব... এক্কেরে হাড়মাস কালি কালি, ভাজা ভাজা করে তবে ছাড়ব। যদি ভাব, আমার বিয়ের পর শান্তি। মোটেই না। আমি কি তোমায় শান্তি দিতে পারি? তোমার রক্ত আমার শরীরে। আমি তোমারই আত্মজা। ছাড়ব না মোটেই। এসে জ্বালিয়ে যাব মাঝে মাঝে। যেন প্রতিদিনই তুমি ঘুম থেকে উঠে ভাব, ওই! আবার এল বুঝি হতচ্ছাড়িটা! এখনও অনেক পথ চলার বাকি। তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর দিন চলে যায় নি। আজও অনেক বিষন্ন দিনে ইচ্ছা করে তোমার আর মায়ের মাঝখানটিতে গিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ি। পারি না। জগতের বিষন্নতা রাতভর জেগে থেকেও যেখানে কাটতে চায় না, সেখানে দুজনের মাঝে কয়েকটি ঘন্টায় কি করে কাটবে? তবু ইচ্ছা করে। পারি না আরোও একটা কারণে। কোলবালিশটা নিয়ে যেই মাঝখানে শুতে যাব, জানি তোমাদের একজন না একজন বিছানা থেকে টুপ্‌ করে পড়ে যাবে, হি হি..., কারো না কারোর কোমরে স্লিপ ডিস্ক হবেই হবে। আমাকেই আবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। তবু ইচ্ছা করে। তুমি খুব সাধারণ। এতটাই যে কেউ তোমাকে পাত্তাই দেয় না, আমি জানি। তুমি ঠকে যাও বাজারে, মাছের দোকানে, মুদিখানার হিসেবের চক্করে। তবু তোমাকে প্রতিশোধ নিতে দেখিনি একদিনও।

আমায় যেতে হবে

Image
  সন্ধ্যাবেলা। এই সময়ে কোলাহল থেকে যদি একটু দূরে যাওয়া যায়, তাহলে এক অদ্ভুত নীরবতা পেয়ে বসে, বিশেষত প্রকৃতির কোলে। একটা শূণ্যতা, একটা একাকীত্ব দখল করে বসে প্রথমে আমার চারপাশ, তারপরে আমাকে। পাখীদের ঘরে ফেরার পালা শেষ। ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে। দূর থেকে শঙখের ধ্বনি কানে আসছে। বাতাসে ধূপের গন্ধ। যেন কেউ আমায় ডাকছে। যেন ঘরে ফিরতে হবে এবার। আমার জন্যে রয়েছে পলাশ বিছানো রাঙা পথ। সে পথের ধুলো বসন্ত-বাতাসে ভেসে চলেছে। আমের বোলের গন্ধ মন ভারী করে তুলছে। চেতনায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে কেবল একটা ডাক, ঘরে ফেরার ডাক। সে ঘর কোথায়? জানি না। কে ডাকছে? জানি না। কেন ডাকছে? তাও জানি না। শুধু মনে জানি, আমায় ফিরতে হবে। একদিন না একদিন যেতেই হবে। অনেক দূরে লক্ষ তারার পথ পেরিয়ে আমার সেই ঘর। চাইলে ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া যায় এক লহমায়। কিন্তু পারি না। তবুও এক পরম মমতাভরা কন্ঠ আমায় ফিরে ফিরে ডেকেই চলেছে। বহুযুগের ওপার হতে স্নেহভরা এ ডাককে উপেক্ষা করার জো নেই। এ ডাক থামারও কোন লক্ষণ নেই। আমি যেতে চাই... আমি ফিরতে চাই...

বাধাই দো

Image
  যৌনতা নিয়ে তো কথা বহুযুগ আগে থেকেই হয়ে চলেছে, চলছে, এবং ভবিষ্যতেও চলবে। কিন্তু যৌনতার ব্যাপারে উদারপন্থী মানুষ সচরাচর খুব কম দেখা যায়। আমরা মুক্ত যৌনতার কথা বলি বটে (এমনকি যে কোন মেয়েরে ফেসবুক মেসেঞ্জারে তো এরকম উদারপন্থী মানুষের ঢল লেগে যায়), কিন্তু বাস্তবিকই কি তাই হয়? কজন টিন-এজ যুবক-যুবতী তার বিধবা মা’য়ের বা বিপত্নীক বাবা’র প্রেমকে সমর্থন করে? বা কোন মানুষ তার প্রৌঢ় হয়ে যাওয়া একাকী বাবা-মায়ের বিয়ের কথা ভাবে? কিম্বা কজন সন্তান তার আপন বাবা-মায়ের ঘরের দরজা বন্ধ দেখে মুচকি হেসে পাশের ঘরে চলে যায়। বাস্তব তো এই যে, প্রকাশ্যে ‘চুমু খাওয়া এদেশেতে এখনও অপরাধ’। প্রেমিকযুগলকেও ঝোপঝাড় খুঁজতে হয় অসংস্কৃতি তকমার হাত থেকে নিজেদের প্রেমকে বাঁচাতে। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বটে, কিন্তু কোথাও কোথাও উদারপন্থী এবং রক্ষণশীল মানুষদের মধ্যে সংঘর্ষ দেখতে পাওয়াটা রোজনামচার মতো। এমনকি Honor Killing –কেও অনেক রাজ্যে সামাজিক পরিকাঠামোর প্রেক্ষিতে এখনও মান্যতা দেওয়া হয়... এই যখন অবস্থা, তখন অন্যান্য ধারার যৌন জীবন যাপন করতে চাওয়া মানুষের ক্ষেত্রে আর কি বলা যেতে পারে? যতই ইন্টারনেট আসুক, যতই জানি যে স্বাভাবিক প

"যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু"

Image
এইসব অন্ধকারকে ভাষায় লিখব কি করে? এখানে মানুষ মানুষকে আড়চোখে দেখে। মন এখানে নদীর মতো বহমান নয়। নর্দমার ঘুর্ণির মতো পঙ্কিল আবর্তে হারিয়ে যায়। এখানে নরকঙ্কালের হাত আমার কাঁধে হাত রাখে। এখানে ঘাসের বনে আনমনে খেলতে খেলতে বালিকা হারিয়ে যায়। এখানে তীর বেঁধা পাখী ‘কাঁচা বাদাম’ গান গায়। কোথায় যেন আমরা হারিয়ে গেছি। সে হারানো পথের মধ্যে আরোও পথ এসে কাটাকুটি খেলে। ড্রোন দিয়ে তোলা সে পথের ছবি কেমন জানেন? পাশের বাড়ীর বউটার পিঠে আগের দিন রাত্রে তার বরের হাতের চাবুক যেমনভাবে আছড়ে পড়েছিল, ঠিক তেমনি। পথ পথকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, গন্তব্যের মরীচিকা চক্রাকারে মানুষকে ঘুরিয়ে মারছে। মানুষ ‘জম্বি’দের মতো হেটেই চলেছে... হেটেই চলেছে। তার যেন কোন লক্ষ্য নেই, উদ্দেশ্য নেই, দিন নেই, রাত নেই... তবুও এখানে পাথরে ফুল ফোঁটে। সে ফুল ঔদ্ধত্যের সঙ্গে পরম বিক্রমে নিজের অস্তিত্বের কথা জানিয়ে দেয়। পরক্ষণেই মিলিয়ে যায় ফসিল হয়ে। অস্তিত্ব থাকে, ব্যাক্তিত্ব থাকে না। এখানে কেউ নেই। কোথাও কেউ নেই। থেকেও কেউ নেই। অস্বাভাবিক সময়, অস্বাভাবিক মানুষ, অস্বাভাবিক ভবিষ্যৎ। মন-বুদ্ধি-চিন্তা-বাক্য সব কেমন ছন্নছাড়া। এমনকি নারী, এমনকি

যেতে নাহি চাই

Image
  বসন্তোৎসবের বিকেল। আমি আর আমার হতভাগা বেরিয়েছিলাম সেজেগুজে। শাল-পলাশ আর আমবাগানের মধ্যে দিয়ে পায়ে চলার পথ। এ পথে আমরা হেটেছি বহুবার। অনেক মান-অভিমানের সাক্ষী এই পথ। কলেজের দিনগুলো থেকেই এ পথের ধূলিকণা আমাদের পায়ে পায়ে। বসন্তের দক্ষিণ সমীরণ, আমের বোলের ম ম করা গন্ধ, পলাশের রক্তিম ছটা আর ভ্রমরের গুঞ্জন আমাদের ঘিরে ঘিরে। সূর্য অস্ত যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কনে দেখা আলোর মন কেমন করা সমুদ্রের মধ্যে ভেসে যেতে যেতে মন এমনিতেই স্তব্ধ হয়ে যায়। প্রকৃতি যখন কথা বলতে শুরু করে তখন তার নিঃশব্দ শব্দচেতনায় হৃদয় ভাসিয়ে দিতে মন চায়। আমরা নীরবে হাটছিলাম। কিন্তু কি বলে প্রকৃতি? সবুজ হয়ে সেজে ওঠা অরণ্যসভায় কি শুধুই নতুনের আবাহন? না। ঝরাপাতার মরসুম যে শেষ হয়েছে সদ্য তার চিহ্নও তো সবুজ ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে। অথচ তা আমাদের চোখের আড়ালেই থেকে যায়। বিরহের সুর আনন্দের উত্তেজনায় ঢাকা পড়ে যায়। সে মাথা নীচু করে আমার পাশে পাশে হাটে। শাড়ীর আঁচলে বারবার টান দিয়ে দিয়ে বলে, আমার কিছু কথা আছে। শুনবে? আমার চোখ চলে যায় আমার পায়ের কাছে, পথের দুধারে মন কেমন করা সবুজের ফাঁকে ফাঁকে নীল, সাদা, বেগুনি ফুল। চোখ জুড়ানো সাজে এমন বসন্ত

তবু আগুণ, বেণীমাধব, আগুণ জ্বলে কই!

Image
  মাথাটা আগুনের মতো জ্বলছে, কখনো কখনো, এই যেমন ন্যাড়াপোড়া হচ্ছিল, আমি দেখছিলাম আমার ভাইঝিকে টিউশান ব্যাচ থেকে আনতে গিয়ে তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে। দেখছিলাম ছোট ছোট বাচ্চারা হইহই করে আনন্দ করছে বুড়ির বাড়ীর জ্বলন্ত অগ্নুচ্ছ্বাসকে কেন্দ্র করে। তাদের আনন্দ আমার ছোটবেলাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল। দেখলাম এখনকার ছেলেমেয়েরা তার দিয়ে মালা বানায় না। আলু, বেগুন, কাঁচা টমেটো দিয়ে বানানো সেই মালা বুড়ির গলায় পরায় না। ন্যাড়া পোড়ানোর পর বাচ্চারা মোবাইল ফোন ঘাটতে ঘাটতে বাড়ীর পথ ধরে। তারা ওই আলুমাখা লেবু আর তেঁতুল দিয়ে মেখে একসাথে বসে খায় না। বসন্তের প্রথম শিশু উৎসব স্থানের অপ্রতুলতা, অসুস্থতার ভয় আর ফোনের হাতছানিতে আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসছে। আস্তে আস্তে হয়তো হারিয়েই যাবে। একদম ফুরাবে না --- যতদিন গ্রামসমাজ আছে। এই খুশির মধ্যে হঠাৎ করে অন্য এক বিষাদের সুর ভেসে এল। ঠিক বিষাদ নয়। রাগ। দিন দুয়েক ধরে ফেসবুক খুললেই যা ফেস করছি তার কারণে। আমার আগের প্রোফাইল বিশেষ কারণে বন্ধ করেছিলাম মাস দশেক আগে। আবার খুললাম নতুন করে নিজের আসল নাম আর ছবি দিয়ে। আগেরবার ছবিতে গোলাপ ফুল ছিল, আর নামের বদলে ছিল ছদ্মনাম। এবার স্

এক আশ্চর্য গভীরতায়

Image
  ছোটবেলায় একটা খেলা আমার খুব প্রিয় ছিল। পুকুরে স্নান করতে নেমে আস্তে আস্তে শরীরটাকে জলের মধ্যে ডুবিয়ে দেওয়া। সে যেন এক অন্য জগৎ। যেখানে নেই কোন শব্দ, নেই গন্ধ, নেই দৃশ্য --- মনের মধ্যে বিরাজ করে এক আশ্চর্য অনুভূতি। আমি আর শুধু আমি। সে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। বড় হয়ে যখন পুরী কিম্বা দীঘা গেছি তখন সমুদ্রের তর্জনে-গর্জনে বুক দুরুদুরু করলেও ঢেউয়ের মধ্যে যখন আমি তখন যেন সেই একইরকম প্রশান্তি। জীবন কি এইরকম? বহির্জগতের প্রচন্ড দানবীয় টানাপোড়েনের মাঝে হঠাৎ করে অন্তর্জগতে ঢুকে পড়া। সেখানে বড়বাজারের ভীড় থাকলেও চট্‌ করে একটা গলির মধ্যে ঢুকে পড়তে পারলেই তার মধ্যে উত্তর কলকাতার গ্রীষ্মের দুপুরের মন কাড়া শান্তি মেলে। সম্পর্কের মধ্যেই কি এই শান্তি মেলে? জীবনের কোন এক চরম দুঃসময় পার করে আসার পর যখন দেখা যায় সেই মুহুর্তটা আপনাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে তখন? সম্পর্কের টানাপোড়েন কখন হয়? যখন সমাজ আপনাকে বলে দেবে এই সম্পর্ক জায়েজ আর ওই সম্পর্ক নাজায়েজ। তখন সেই টানাপোড়েনের মধ্যে সেই দুঃসময় আপনাকে তাড়া করে বেড়াবে। মানসিক স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জ করবে। মনের গভীরে ডুব দিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত না একটা রফা হচ্ছে, নিজের কাছে

মৃত্যুপুরীর দেবতা

Image
  হিমালয়ের রেঞ্জে অনেক পর্বতশৃঙ্গ থাকলেও চোখ টেনে নেয় মাউন্ট এভারেস্ট , বা কাঞ্চনজঙ্ঘা। খুব বেশি হলে এরপরে দু-একটা আরোও পর্বতশৃঙ্গের কথা লোকে বলে বটে , কিন্তু সবশেষে ওই একটা বা দুটো পর্বতশৃঙ্গ চাক্ষুষ করার জন্যেই বেশিরভাগ লোক ছুটে যায়। মহামান্য ফিওদর দস্তয়েভস্কি ’ র ক্ষেত্রেও তাই। তার এভারেস্ট অবশ্যই ‘ দ্য ব্রাদার্স কারামাজোভ ’ । আর সারা বিশ্বজুড়ে আদর ‘ ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট ’- এর। মাঝে আর দু-একটা বই আছে অতি উ ৎ সাহী যারা তার হয়তো এরপরেই পাঠ করেন --- ইডিয়ট , নোট্‌স ফ্রম দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড। প্রথম দুটি বই নিয়ে সারা বিশ্বজুড়ে এখনও এক অব্যক্ত বিস্ময় রয়েছে। অথচ দস্তয়েভস্কির ‘ ফিওদর নিকলোভিয়েচ দস্তয়েভস্কি দ্য প্রফেট ’ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে যে বইটা , বা বলা ভাল যে তিন বছরের অভিজ্ঞতা তাকে এই উচ্চতায় নিয়ে আসে সেই বইটা জনগোচরে খুব কমই এসেছে , কিম্বা দস্তয়েভস্কি ’ র অনেক প্রেমিক প্রেমিকাও সন্ধান রাখেন না --- দ্য হাউস অফ দ্য ডেড। এবারের বইমেলায় বাংলায় এর অনুবাদ হয়েছে --- মৃত্যুপুরী। করেছেন পলশ্রী কীর্তনীয়া। প্রথমেই বলে রাখি এই বইটার অনুবাদ বেশ ভাল হলেও এটি একটি সংক্ষিপ্তানুবাদ। যারা মাতৃভাষা ছাড়া

স্রেফ একটা থাপ্পড়ই তো!!!

Image
হ্যাঁ, স্রেফ একটা থাপ্পড়। একটা থাপ্পড় মানুষের Self Dignity-র ওপর, একটা থাপ্পড় পরিবারে বহুদিন ধরে চলে আসা একটা প্রথাগত চিন্তাধারার ওপর, একটা থাপ্পড় সমাজের উদাসীনতার ওপর, আর একটা থাপ্পড় সিনেমাটা দেখতে থাকা তামাম দর্শককূলের ওপর। অমৃতাকে থাপ্পড় মারে বিক্রম, তার স্বামী, পার্টি চলাকালীন, সবার সামনে --- সিনেমা এগিয়ে চলতে থাকে অমৃতার আত্মাভিমানের সাথে বিক্রমের আত্মঅহমিকার টানাপোড়েনে। কিন্তু সমান্তরালে আরোও অনেক সম্পর্কের টানাপোড়েনও চলতে থাকে। আমায় বিষ্মিত করে, স্তব্ধ করে, অবাক করে এই দেখে যে মধ্যবিত্ত এক সম্পর্কের পাশাপাশি চরম উচ্চবিত্ত এবং একদম গরীব পরিবারে সেই একই থাপ্পড় কিভাবে সম্পর্কের জটিলতায় নিয়ে যায়। গোটা সমাজের স্তরে স্তরে যেখানে এই self-respect বারবার মাথা নত করে, তবু বলতে পারে না, “Just A slap! পর নেহি মার সাকতা।” একটা প্রশ্ন আমায় সারা সিনেমাটা জুড়ে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়, ভালবাসার সম্পর্ক অম্লমধুর, আমরা শুনে এসেছি। প্রচন্ড ঝগড়াঝাটির মধ্যেও বাস করেছে, কিন্তু কেউ কাউকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেনি, এমন সম্পর্ক প্রচুর দেখেছি। সেই সব দম্পতি শেষবেলায় এসে বলছে, যেমন করেই হোক না কেন,