এক আশ্চর্য গভীরতায়

 


ছোটবেলায় একটা খেলা আমার খুব প্রিয় ছিল। পুকুরে স্নান করতে নেমে আস্তে আস্তে শরীরটাকে জলের মধ্যে ডুবিয়ে দেওয়া। সে যেন এক অন্য জগৎ। যেখানে নেই কোন শব্দ, নেই গন্ধ, নেই দৃশ্য --- মনের মধ্যে বিরাজ করে এক আশ্চর্য অনুভূতি। আমি আর শুধু আমি। সে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। বড় হয়ে যখন পুরী কিম্বা দীঘা গেছি তখন সমুদ্রের তর্জনে-গর্জনে বুক দুরুদুরু করলেও ঢেউয়ের মধ্যে যখন আমি তখন যেন সেই একইরকম প্রশান্তি। জীবন কি এইরকম? বহির্জগতের প্রচন্ড দানবীয় টানাপোড়েনের মাঝে হঠাৎ করে অন্তর্জগতে ঢুকে পড়া। সেখানে বড়বাজারের ভীড় থাকলেও চট্‌ করে একটা গলির মধ্যে ঢুকে পড়তে পারলেই তার মধ্যে উত্তর কলকাতার গ্রীষ্মের দুপুরের মন কাড়া শান্তি মেলে।

সম্পর্কের মধ্যেই কি এই শান্তি মেলে? জীবনের কোন এক চরম দুঃসময় পার করে আসার পর যখন দেখা যায় সেই মুহুর্তটা আপনাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে তখন? সম্পর্কের টানাপোড়েন কখন হয়? যখন সমাজ আপনাকে বলে দেবে এই সম্পর্ক জায়েজ আর ওই সম্পর্ক নাজায়েজ। তখন সেই টানাপোড়েনের মধ্যে সেই দুঃসময় আপনাকে তাড়া করে বেড়াবে। মানসিক স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জ করবে। মনের গভীরে ডুব দিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত না একটা রফা হচ্ছে, নিজের কাছে নিজে স্পষ্ট হচ্ছে --- ততক্ষণ সমুদ্রের অতলের খোজ নেই, পেলেও তা হারিয়ে যায় --- “অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে / হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে”।

এই সিনেমায় একটা গল্প আছে। পরকীয়া আছে। সুন্দর সুন্দর রোমান্টিক দৃশ্য আছে। যা সমুদ্রের ওপরের ঢেউ। অন্যদিকে আছে দীপিকার চোখ। সাক্ষাৎ অতল। আমার হৃদি ভেসে গেল দীপিকার চোখের চাহনির ঢেউয়ে।

যারা গল্প খুঁজেছেন, একটা পাবেন বটে। এ সিনেমা তাদের জন্য নয়; যারা জীবনের অলিতে গলিতে কোন এক মোড়ে সন্ধান পান নিজের SoulMate –এর। সব বাধা ভাসিয়ে এগিয়ে যেতে চান তার সাথে, এ গল্প কিছুটা তাদের জন্য; আর যারা নিজের সাথে খানিকটা বা পুরোটা নিজের মুখোমুখি হতে চান --- এ ছবি তাদের জন্য। দীপিকার কোন জবাব নেই। মেয়ে হয়েও তার প্রেমে পড়ে গেলাম। মনে হয় যদি কোনদিন তার মুখোমুখি হই তাহলে একটাই রিকোয়েস্ট করব – আমায় একটা চুমু খাবে? ঠিক এই ছবিটার মতো করে, বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে...

 

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে