বাধাই দো

 


যৌনতা নিয়ে তো কথা বহুযুগ আগে থেকেই হয়ে চলেছে, চলছে, এবং ভবিষ্যতেও চলবে। কিন্তু যৌনতার ব্যাপারে উদারপন্থী মানুষ সচরাচর খুব কম দেখা যায়। আমরা মুক্ত যৌনতার কথা বলি বটে (এমনকি যে কোন মেয়েরে ফেসবুক মেসেঞ্জারে তো এরকম উদারপন্থী মানুষের ঢল লেগে যায়), কিন্তু বাস্তবিকই কি তাই হয়? কজন টিন-এজ যুবক-যুবতী তার বিধবা মা’য়ের বা বিপত্নীক বাবা’র প্রেমকে সমর্থন করে? বা কোন মানুষ তার প্রৌঢ় হয়ে যাওয়া একাকী বাবা-মায়ের বিয়ের কথা ভাবে? কিম্বা কজন সন্তান তার আপন বাবা-মায়ের ঘরের দরজা বন্ধ দেখে মুচকি হেসে পাশের ঘরে চলে যায়। বাস্তব তো এই যে, প্রকাশ্যে ‘চুমু খাওয়া এদেশেতে এখনও অপরাধ’। প্রেমিকযুগলকেও ঝোপঝাড় খুঁজতে হয় অসংস্কৃতি তকমার হাত থেকে নিজেদের প্রেমকে বাঁচাতে। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বটে, কিন্তু কোথাও কোথাও উদারপন্থী এবং রক্ষণশীল মানুষদের মধ্যে সংঘর্ষ দেখতে পাওয়াটা রোজনামচার মতো। এমনকি Honor Killing –কেও অনেক রাজ্যে সামাজিক পরিকাঠামোর প্রেক্ষিতে এখনও মান্যতা দেওয়া হয়...

এই যখন অবস্থা, তখন অন্যান্য ধারার যৌন জীবন যাপন করতে চাওয়া মানুষের ক্ষেত্রে আর কি বলা যেতে পারে? যতই ইন্টারনেট আসুক, যতই জানি যে স্বাভাবিক প্রেমজ সম্পর্কের অনেক ধারা আছে, মন কি তা মানতে চায়? শাস্ত্র শস্ত্র হয়ে ওঠে, সমাজ শিউরে ওঠে, পরিবার বিরুদ্ধে চলে যায়। সুস্থতা আর অসুস্থতার টানাপোড়েনে কত মানুষ যে জেরবার হয়, কত মানুষ যে নীরবে লুকিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেয় তার ইয়ত্তা নেই। শহরে এসব বিষয়ে অনেকটা উদারতার ছোঁয়া থাকলেও গ্রামে বা মফস্বলে এই ছবিটা অনেক বিপথগামী।

আর তাই ‘বাধাই দো’-র পরিচালককে ধন্যবাদ। আগেরবার বানিয়েছিলেন ‘বাধাই হো’। সেখানে বিষয় ছিল অন্য কিছু। এবারের বিষয় আরোও জ্বলন্ত। এবং তিনি বানিয়েওছেন মানবিকভাবে। প্রসঙ্গত বলি, ‘শুভ মঙ্গল জাদা সাবধান’ কিম্বা ‘চণ্ডীগড় করে আশিকী’ --- এই দুটো সিনেমা অত্যন্ত বিরক্তিকর ছিল। প্রথমটা হলে দেখতে গিয়ে মনে হয়েছিল সময় এবং টাকা দুটোই নষ্ট হল। এবারেও দেখতে গিয়ে একটু ভয় করছিল, আসল বিষয়টাকে কমেডি করেই নষ্ট করে দেবেন না তো পরিচালক! খিল্লি হয়ে যাবে না তো!। কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি সসন্মানে উতরে গেছেন।

দুজন মানুষ বিয়ে করেন সমাজের চাপে, সমাজের চোখ এড়াতে। একজন গে – রাজকুমার রাও, আরেকজন লেসবিয়ান – ভূমি পেন্ডেকার। তারপর শুরু হয় একই ঘরে রুমমেট হিসাবে থাকা এবং তাদের নিজস্ব নিজস্ব জীবন যাপন। সিরিয়াসনেসের সাথে কমেডির এক অসাধারণ মেলবন্ধন। হাসতে হাসতে চোখে জল এসে যায়। যারা দেখেছেন, তার ওই দৃশ্যটার কথা মনে করুন, রাজকুমার রাও হোটেলের ঘরে মদ্যপ অবস্থায় ভূমি-কে বলছেন তার কি হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কমেডির আড়ালে রাজকুমার রাওয়ের নিজেকে নিয়ে খিল্লি করা দেখতে দেখতে চমকে যেতে হয়। কিম্বা গোটা সিনেমার সবচেয়ে মারাত্মক দৃশ্য রাজকুমার রাও-এর কান্নায় ভেঙ্গে পড়া তার মায়ের কাধে ভর দিয়ে। ও... বলা হয় নি... মায়ের ভূমিকায় শিবা চাড্ডা অপূর্ব বললেও কম বলা হবে। ভদ্রমহিলা দিন কে দিন চমকে দিচ্ছেন।

মোট কথা এই সিনেমাটায় প্রত্যেকে অভিনয় অসাধারণ করেছেন। আর রাজকুমার রাও সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভাল। স্ক্রীণে এলেই তিনি পুরো সিন নিয়ে বেরিয়ে যান। সেখানে পাশাপাশি ভূমি একদমই ছেড়ে কথা বলেননি। বাকিরাও যথাযথ। অল্প সময়ের জন্যে হলেও সীমা পাওয়া বা নীতিশ পান্ডে, কিম্বা লভলিন মিশ্র মন কেড়ে নেন। চুং দাড়াং কিম্বা গুলশন দেভাইয়া যথাযথ।

সব মিলিয়ে সিনেমাটা প্রশংশনীয়। যদিও গানগুলি মনে একটুও দাগ কাটার মতো নয় কিম্বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিনেমাটোগ্রাফি দুর্বল লেগেছে। গল্প এবং অভিনয় --- এই দুই জায়গাতেই কিছু বলার নেই। স্রেফ মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়। যারা দেখেননি তারা অবশ্যই দেখে নিন।

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে