স্রেফ একটা থাপ্পড়ই তো!!!



হ্যাঁ, স্রেফ একটা থাপ্পড়। একটা থাপ্পড় মানুষের Self Dignity-র ওপর, একটা থাপ্পড় পরিবারে বহুদিন ধরে চলে আসা একটা প্রথাগত চিন্তাধারার ওপর, একটা থাপ্পড় সমাজের উদাসীনতার ওপর, আর একটা থাপ্পড় সিনেমাটা দেখতে থাকা তামাম দর্শককূলের ওপর।

অমৃতাকে থাপ্পড় মারে বিক্রম, তার স্বামী, পার্টি চলাকালীন, সবার সামনে --- সিনেমা এগিয়ে চলতে থাকে অমৃতার আত্মাভিমানের সাথে বিক্রমের আত্মঅহমিকার টানাপোড়েনে। কিন্তু সমান্তরালে আরোও অনেক সম্পর্কের টানাপোড়েনও চলতে থাকে। আমায় বিষ্মিত করে, স্তব্ধ করে, অবাক করে এই দেখে যে মধ্যবিত্ত এক সম্পর্কের পাশাপাশি চরম উচ্চবিত্ত এবং একদম গরীব পরিবারে সেই একই থাপ্পড় কিভাবে সম্পর্কের জটিলতায় নিয়ে যায়। গোটা সমাজের স্তরে স্তরে যেখানে এই self-respect বারবার মাথা নত করে, তবু বলতে পারে না, “Just A slap! পর নেহি মার সাকতা।”
একটা প্রশ্ন আমায় সারা সিনেমাটা জুড়ে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়, ভালবাসার সম্পর্ক অম্লমধুর, আমরা শুনে এসেছি। প্রচন্ড ঝগড়াঝাটির মধ্যেও বাস করেছে, কিন্তু কেউ কাউকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেনি, এমন সম্পর্ক প্রচুর দেখেছি। সেই সব দম্পতি শেষবেলায় এসে বলছে, যেমন করেই হোক না কেন, সারাটা জীবন লড়ে-ভালোবেসেই তো কাটিয়ে দিলাম, তবু কই? আমাদের তো একবারও মনে হল না, ছেড়ে চলে যাই, এ অশান্তি মুখ বুজে আর সহ্য করব না। একেই ভালোবাসা বলে। এভাবেই বাঁচতে শিখতে হয়। তবে এই থাপ্পড়কে এতটা বড়ো করে দেখানো কেন? তাহলে ভালবাসা বলে কি কিছু নেই? ভালবাসা তো সমস্ত জ্বালা-যন্ত্রনাকে জুড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায় দু’জন মানুষকে। পূর্ণ করে তাদের। তবে সেটা কি? এতদিনের এই সংজ্ঞা কি ভুল? না কি এখন আমাদের ভুল রিপ্রেসেন্টেশান করা হচ্ছে? তার উত্তর পাই এক জায়গায়, ‘প্রায়োরিটি’ ঠিক করে কখন কোনটা বেশি প্রয়োজন। Self Dignity, না সম্পর্ক? যে সম্পর্ক নির্ভরতার, প্রয়োজনের, কোথাও কোথাও বা সমস্তটুকু দিয়ে আপন ভালোবাসায় তৈরি করা এক সুখ ও আনন্দের পৃথিবী। তাকে খতম করবে আত্মসন্মান? না। এতএব, থাপ্পড়ের পর থাপ্পড়... সহ্য করা। ফল? সবার সামনে তৈরি করা ভালবাসার এক মধুর সম্পর্কে রয়ে যায় দুই প্রজাতি --- একজন শোষণ করে, আর একজন শোষিত হয়েই চলে, হয়েই চলে, হয়েই চলে...
এবং অবশেষে বেরিয়ে আসে সেই সাঙ্ঘাতিক সত্যি, প্রেমজ সম্পর্ককে বাঁধতে বিয়ের প্রয়োজন হয় না, বিয়ে একটা Unfair deal of some sense of dignity and security. এখানেই ধাক্কা লাগে। একটা সত্যি, যাকে আমরা চেপে রেখে এসেছি জীবনের পরতে পরতে, সেই সত্যিটাই বাইরে বেরিয়ে আসে। আর সেই সত্যের মুখোমুখি হওয়াটা যেমন অস্বস্তিকর, তেমনই সম্পর্কের রূপরেখার একটা প্রথাগত চিত্রকে ভেঙে এক চরম প্রশ্নচিহ্নের মুখোমুখি হওয়াটা তেমনই বেদনাদায়ক।
Domestic Violence নতুন কথা নয়। এর জন্য এখন কড়া আইন-কানুন, কড়া শাস্তি। কিন্তু যে ভায়োলেন্সের কোন চিহ্ন থাকে না! কোন প্রমাণ থাকে না! তাকে শাস্তি দেবে কোন আইন? প্রকাশ্যে শারিরীক নির্যাতন যেমন সাক্ষী রেখে যায়, তেমন রেখে যায় হয়তো বা চিহ্নও। তাকে অয়ুধ করে কোর্টে মামলা করা সহজ। কিন্তু যে যন্ত্রণা মানসিক, তিলে তিলে মনের ভেতরটা শেষ করে দেয়, তার কি হবে? সহ্য, ঘৃণা, বিদ্বেষ --- এই নারকীয়তা কে রুখবে? অমৃতা না হয় এভাবে বাঁচতে পারে না, কিন্তু অন্য এক কথোপকথনে যখন তার মা তার বাবাকে বলে ফেলে, তার ইচ্ছা ছিল গায়িকা হওয়ার, কিন্তু হতে পারল কই? তখন ভাবি, জীবনের শেষলগ্নে এসে এই যন্ত্রনা যদি বিষাক্ত হয়ে ওঠে তখন প্রতিশোধ আসে অন্যপথে, চরম বিদ্বেষের সাথে, সামর্থ্যের অসহায়তার সুযোগে। সে কি দু’জন মানুষের পক্ষে সুখকর হয়? নয় তো! বস্তির নিগৃহীতা বধু একসময় হাতে তুলে নেয় ছোরা, কিম্বা থাপ্পড় ফিরিয়ে দেয়; কিম্বা এলিট সোসাইটির বধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, আর তারপর এক ঝটকায় বেরিয়ে আসে স্বামী ও প্রেমিকের কাছ থেকে। এমনটাও কি কাম্য? হয়তো বা।
সব মিলিয়ে এই সিনেমাটা একটা প্রশ্নচিহ্ন। সিনেমাটা রিলিজ হয় ২০২২ সালে। আমাজন প্রাইমে দেখতে পাবেন। imdb রেটিং 6.7 হলেও এর রেটিং আরোও বেশি হওয়া উচিৎ ছিল...

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে