মৃত্যুপুরীর দেবতা

 




হিমালয়ের রেঞ্জে অনেক পর্বতশৃঙ্গ থাকলেও চোখ টেনে নেয় মাউন্ট এভারেস্ট, বা কাঞ্চনজঙ্ঘা। খুব বেশি হলে এরপরে দু-একটা আরোও পর্বতশৃঙ্গের কথা লোকে বলে বটে, কিন্তু সবশেষে ওই একটা বা দুটো পর্বতশৃঙ্গ চাক্ষুষ করার জন্যেই বেশিরভাগ লোক ছুটে যায়।

মহামান্য ফিওদর দস্তয়েভস্কির ক্ষেত্রেও তাই। তার এভারেস্ট অবশ্যই দ্য ব্রাদার্স কারামাজোভ। আর সারা বিশ্বজুড়ে আদর ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট’-এর। মাঝে আর দু-একটা বই আছে অতি উসাহী যারা তার হয়তো এরপরেই পাঠ করেন --- ইডিয়ট, নোট্‌স ফ্রম দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড। প্রথম দুটি বই নিয়ে সারা বিশ্বজুড়ে এখনও এক অব্যক্ত বিস্ময় রয়েছে। অথচ দস্তয়েভস্কির ফিওদর নিকলোভিয়েচ দস্তয়েভস্কি দ্য প্রফেটহয়ে ওঠার ক্ষেত্রে যে বইটা, বা বলা ভাল যে তিন বছরের অভিজ্ঞতা তাকে এই উচ্চতায় নিয়ে আসে সেই বইটা জনগোচরে খুব কমই এসেছে, কিম্বা দস্তয়েভস্কির অনেক প্রেমিক প্রেমিকাও সন্ধান রাখেন না --- দ্য হাউস অফ দ্য ডেড।

এবারের বইমেলায় বাংলায় এর অনুবাদ হয়েছে --- মৃত্যুপুরী। করেছেন পলশ্রী কীর্তনীয়া। প্রথমেই বলে রাখি এই বইটার অনুবাদ বেশ ভাল হলেও এটি একটি সংক্ষিপ্তানুবাদ। যারা মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় স্বচ্ছন্দ নন তারা এই বইটা পড়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারেন। আর যারা একটু কষ্ট করে ইংরাজীতে পড়বেন তারা দেখতে পাবেন রাশিয়ার এক জেলখানাকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তির জীবনকে অন্য এক আলো-আধারিতে দেখতে পাওয়ার অভিজ্ঞতা।

এই বইটার পূর্বের উপন্যাসগুলোতে দস্তয়েভস্কি সে অর্থে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন নি। Poor Folk (1846), The Double (1846) কিম্বা The Landlady (1847) সে অর্থে মনে দাগ রেখে যাওয়ার মতো নয়। ঘটনাক্রমে তারপরেই তার সেই বিখ্যাত মৃত্যুদণ্ড, শেষ মুহুর্তে তা রদ এবং কারাবাসের পর ফিরে এসেই লিখছেন House Of The Dead (1862), এবং এর পরে-পরেই কি লিখছেন? Notes from Underground (1864), Crime and Punishment (1866), The Idiot (1869)

অর্থা, এই বইটা দস্তয়েভস্কির দুই সত্ত্বার এক মেলবন্ধন। এই বইটা পড়তে পড়তে মনে হয় যেন লেখক এবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শয়তানের মুখোমুখি হওয়ার। তার সাথে চোখ রেখে কথা বলার। ধীরে ধীরে, আস্তে আস্তে। রাস্কোলনিকভ, প্রিন্স মিশকিন অপেক্ষা করছেন তাদের কথা বলার জন্য। আর অবশেষে ইভান, ইভান এবং ইভান --- সেই বিখ্যাত দ্য গ্রান্ড ইনকুইজিটারএবং 'শয়তানের সাথে মুখোমুখি। সত্যি বলতে কি, পাঠক নিজেও যেন কোথাও ওই তিনটি মারাত্মক বইয়ের মধ্যে দিয়ে নিজেরও মুখোমুখি হন।

তা এমন বই পড়ব না তা কি হয়?

 

========

 

মৃত্যুপুরী

অনুবাদিকাঃ পলশ্রী কীর্তনীয়া

মৌসুমী প্রকাশনী

মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০ টাকা

The House Of The Dead

Translator: David McDuff

Penguin Publication


Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে