আত্মজা




জ্বালিয়েছি, আরোও জ্বালাব...

এক্কেরে হাড়মাস কালি কালি, ভাজা ভাজা করে তবে ছাড়ব।

যদি ভাব, আমার বিয়ের পর শান্তি। মোটেই না। আমি কি তোমায় শান্তি দিতে পারি? তোমার রক্ত আমার শরীরে। আমি তোমারই আত্মজা। ছাড়ব না মোটেই। এসে জ্বালিয়ে যাব মাঝে মাঝে। যেন প্রতিদিনই তুমি ঘুম থেকে উঠে ভাব, ওই! আবার এল বুঝি হতচ্ছাড়িটা!

এখনও অনেক পথ চলার বাকি। তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর দিন চলে যায় নি। আজও অনেক বিষন্ন দিনে ইচ্ছা করে তোমার আর মায়ের মাঝখানটিতে গিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ি। পারি না। জগতের বিষন্নতা রাতভর জেগে থেকেও যেখানে কাটতে চায় না, সেখানে দুজনের মাঝে কয়েকটি ঘন্টায় কি করে কাটবে? তবু ইচ্ছা করে।

পারি না আরোও একটা কারণে। কোলবালিশটা নিয়ে যেই মাঝখানে শুতে যাব, জানি তোমাদের একজন না একজন বিছানা থেকে টুপ্‌ করে পড়ে যাবে, হি হি..., কারো না কারোর কোমরে স্লিপ ডিস্ক হবেই হবে। আমাকেই আবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। তবু ইচ্ছা করে।

তুমি খুব সাধারণ। এতটাই যে কেউ তোমাকে পাত্তাই দেয় না, আমি জানি। তুমি ঠকে যাও বাজারে, মাছের দোকানে, মুদিখানার হিসেবের চক্করে। তবু তোমাকে প্রতিশোধ নিতে দেখিনি একদিনও। তোমার বন্ধু নেই তেমন। বাজারের বন্ধুরা তোমায় নিয়ে খিল্লি করেছে অনেকদিন, আমি দেখেছি, তুমি মাথা নীচু করে বোকার মতো হেসেছ। আত্মীয়রা বলে, তুমি বোকা। তোমার বোকামোর জন্যে আজ তোমার এই দশা। আমার কাছে তুমি বোকা, নির্লোভ আর আপাদমস্তক ভাল একটা বাবা।

আচ্ছা, নির্বান্ধব এই পুরীতে কেমন করে কাটে তোমার? মায়ের সাথে আর কত কথা? তবুও কাটে। দিন চলে গড়িয়ে গড়িয়ে, যেমন আমাদের চলে। তোমার কোন হবি নেই। টিভিতে খেলা, দেখেও যেন দেখো না। যত দিন যায়, সুগার-প্রেসার-থাইরয়েড আমাদের আর ডাক্তারের হাতের নাগালের বাইরে যেতে থাকে। আস্তে আস্তে। তবু অমলিন বাচ্চাদের মতো হাসিটা যায় না। বকা দিলে মনে হয়, ঠিক যেন আমার মতো করে হাসছ। অমলিন, অপ্রস্তুত।

আমার ‘তুমি’ হতে ইচ্ছা করে। আমাকে তোমার নির্লোভত্ব দাও। তোমার ‘ভালমানুষ’ বোধটা দাও। তোমার মুখের অমলিন হাসিটা দাও। আর দাও তোমার কোলে মাথা রেখে গুটিশুটি মেরে একটু ঘুমাতে...

 

[ছবিঃ কেভিন কার্ডেন]

 

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে