জলসা

 


শব্দেরা যখন তাড়া করে বেড়ায় তখন কেমন লাগে? একটা দৃশ্য, তার মধ্যে একটা চরিত্র, সেই চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গে চলছে কিছু শব্দ। সেই শব্দ আপনাকে অস্বস্তি দিচ্ছে, আপনাকে ব্যতিব্যস্ত করছে, আপনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারছে। আপনি জানেন সেই চরিত্রটি সদ্য একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, যার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সে জানে না, আপনিও জানেন না। দুর্ঘটনাস্থল থেকে সে পালিয়ে এসেছে। নৈতিকতা এবং মানবিক চেতনার প্রশ্ন চাপা পড়েছে প্রেস্টিজ ইস্যুর ভয়ে। তার শরীরে, মনে এর ফল অত্যন্ত প্রকট। আর প্রতি মুহুর্তে এই টানটান দৃশ্যকল্পের সাথে সাথে চলে ফিরে বেড়াচ্ছে কিছু শব্দ --- যাকে আমরা বলছি আবহসঙ্গীত তথা সাউন্ড।

সিনেমার নাম জলসা। মারাত্মক অভিনয় করেছেন বিদ্যা বালান আর শেফালি শাহ। চোখ দিয়ে, মুখ দিয়ে, শরীর দিয়ে। যোগ্য সঙ্গত করেছেন রোহিণী হাত্তাঙ্গাডি, ইকবাল খান। চমকে দিয়েছে সূর্য কাশীবাটলা। কখনো কখনো তার অভিনয় এতটাই বাস্তব হয়ে যায় যে তার সামনে দুই সুপার জায়েন্টকেও ফিকে লাগে। বাকিরা ঠিকঠাক, মানানসই।

কিন্তু আমাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে শব্দেরা এবং কিছু দৃশ্য। গৌরব চ্যাটার্জী আর তার সাউন্ড ডিপার্টমেন্ট এব্যাপারে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন। দর্শকের মনস্তাত্ত্বিকতায় একটু একটু করে ঢুকেছে শব্দের আবহ সেই বাইক চালানোর দৃশ্য শুরুর সাথে সাথেই, অজান্তে। এমনকি ঘুমের ঝুলে ঢলে ঢলে পড়া অবস্থার হঠাৎ হঠাৎ শব্দশূণ্যতাও, বিস্ময় জাগায় এমন ভাবনাকে একদম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করাটাকে। আর তারপর দুর্ঘটনার পর থেকে সেই যে বিদ্যা বালানের পেছু ধরেছে কিছু অশরীরী আবহ, আর ছাড়েনি। বিদ্যা বালানের জায়গায় কখন যে দর্শক নিজেই বিদ্যা বালান হয়ে গেছেন টের পাওয়া দায়। বিদ্যা বালানের চূড়ান্ত অভিনয় আর শেফালি শাহ্‌-র মর্মান্তিক অভিনয়ের কথা মাথায় রেখেই বলছি, শব্দ এই সিনেমার মুকুটের কোহিনূর।

অভিনয় নিয়ে প্রচুর কথা হয়ে চলেছে, প্রচুর প্রশংশা, যা সত্যিই প্রাপ্য। গল্পের প্লট, সিনেমাটোগ্রাফি, সংলাপ নিয়ে অনেকেই ভুয়োশী প্রশংসা করেছেন, আমিও তাদের সাথে সহমত। পরিচালক বিষ্ময় সৃষ্টি করেছেন সব মিলিয়ে, একদম সঠিক কথা। কিন্তু এ সমস্ত কিছুর উপরে, অনেকদিন পরে আমার মন শব্দের মূর্চ্ছনায় আবিষ্ট করতে পেরেছে কোন সিনেমা।

 

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে