Posts

Showing posts from December, 2022

জ্বরের ঘোর এবং একটা দৃশ্যপট

Image
  ঘুম, তন্দ্রা কিম্বা ঘোর --- এক অদ্ভুত অবস্থা। এমন কিছু চোখের সামনে ঘোরাফেরা করে যার কোন আপাত ব্যাখ্যা মাথায় আসে না। জ্বরে পড়েছিলাম এই কদিন, গা-হাত-পা-মাথা ব্যাথা। এগুলো কোন সমস্যা নয়। বেশ আদর এবং সেবা পাওয়া যায়। একদিক থেকে ভালোই লাগে। সমস্যা হয় যখন জ্বর ১০১ এর ওপরে উঠে যায়। মনে হয় চোখ-মুখ দিয়ে আগুনের হলকা বের হচ্ছে, পাশাপাশি বাকি শরীর ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপছে। আমি তখন এক ঘোরে চলে যাই। বাস্তব আর কল্পনার মাঝামাঝি অবস্থা । এবং সেই ঘোরের মধ্যে অদ্ভুত কিছু জিনিস দেখতে থাকি। এবারে তিনবার এমনই এক ঘোরে চলে গিয়েছিলাম। এবং তিনবারই, অদ্ভুতভাবে, একই জিনিস দেখলাম। দেখলাম এক অন্ধকার পৃথিবী। তার মাঝে আলোর পথ। সে পথ কালোয় মিশেছে দূরে বহুদূরে। আমাকে যেতে হবে এই আলোর পথ ধরে। দূরে কোথাও যেন আগুন জ্বলছে। সে আগুন নরম আলোর আগুন, না ভয়ঙ্কর বিধ্বংসী আগুন বোঝার উপায় নেই। আমার সেখানে যেতে ভয় করছে। বুঝতে পারছি না, আমার যাওয়া উচিৎ হবে কি হবে না, গেলে ধ্বংস অনিবার্য, না কি অন্য কিছু আমার জন্যে অপেক্ষা করছে? অথচ আশেপাশের অন্ধকারের মাঝে এড়িয়ে যাওয়ার পথ খোলা নেই। আমি প্রতিবারই এই ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে ঘেমে-নেয়ে

বাটখারার মাঠ, তেপান্তরের মাঠ

Image
         লোকে বলে বাটখারার মাঠ, আমি বলি তেপান্তরের মাঠ। এর মাঝখানে দাঁড়ালে, যতদূর চোখ যায়, মনে করুন চৈত্রের দুপুরে, দেখবেন ধু ধু করা এক মাঠ। একচিলতে ছায়া মেলা ভার। মাটি থেকে ওঠা ভাপে তখন মরিচীকা দেখা যায় চারদিকেই। মনে হয় যেন মাঠ আর মাঠ নেই, সে যেন জলের মধ্যে জেগে থাকা দ্বীপ। আর দেখা যায়, কপাল ভাল থাকলে, আলপথের আবডালে বাটখারাদের।       প্রধানত দুই রকমের বাটাখারা আছে --- গোখরো আর চন্দ্রবোড়া। কয়লা ওজন করতে বড়ো বড়ো বাটখারা যেমন হয়, তেমনভাবেই কুন্ডলী পাকিয়ে এরা পড়ে থাকে। মেঠো ইঁদুরের যম। এবং মানুষের। এই মাঠের মাঝখানে যদি গোখরো চুমু দেয়, মাঠ পেরিয়ে বড়ো রাস্তায় আসার আগেই অনেকের ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছে এমন উদাহরণ বিস্তর। কত মানুষ, গোরু, ছাগল, কুকুর, শেয়াল যে মাঠের মাঝেই পড়ে মারা গেছে, দিনের শেষে খোঁজপার্টি না বেরোলে জানার যো থাকে নেই। চন্দ্রবোড়ার ছোবলে মৃত্যু বড়ো করুন। আস্তে ধীরে বিষ ছড়ানোর যন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে প্রায় প্রতি বছরই কেউ না কেউ মারা গেছে। তেপান্তরের মাঠের আশেপাশের গ্রামে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। তবে বেশিরভাগ সাপ বড়ো ভাল। মানুষ কাছে এলে ফোঁসফাঁস আওয়াজে

এই যে ছুটি

Image
  এই যে ছুটি ======== আমার ছুটি নিরালাতে, আমার ছুটি ঘর ছাড়িয়ে আমার ছুটি অচিন গ্রামের অচিন মাঠে দিক হারিয়ে। যেখান থেকে এক নিমেষে দিগন্তলীন তেপান্তর,  যেখানেতে সবই ধূ ধূ, আকাশ-মাটি, নেই চরাচর। সেই মাঠেরই আলের ওপর, আমার ছুটি এক লহমায়, গাছের ফাঁকে চোখ চলে যায়, সূর্য ডোবার নিবিড়তায়। সেই গ্রামেতে ফিরছে গরু, ফিরছে মানুষ কাস্তে হাতে ঘুরছে শেয়াল বন বাদাড়ে, সরষে ক্ষেতের ইশারাতে। আমার ছুটি, ঠিক তখনই, হতভাগার বুকের মাঝে।  এক শালেতে জড়াজড়ি, নিবিড় করে, শীতের সাঁঝে।  আমার ছুটি এই অবেলায়, হঠাৎ করেই, কোলের কাছে  আমার ছুটি এমন করেই, তোমার কাছে, তোমার মাঝে।

শুভ্রঃ হুমায়ূন আহমেদের আখরকথাঃ শেষ পর্ব

Image
  হুমায়ূন আহমেদকে ধন্যবাদ। কারণ, যে হুমায়ূনকে আমি দেখতে অভ্যস্ত, একেবারে সেই হুমায়ূন স্বমহিমায় বিদ্যমান এই উপন্যাসে। উপন্যাসের নাম ‘শুভ্র গেছে বনে’। এবং, এই প্রথম, মনে হচ্ছিল, শুভ্রকে হুমায়ূন তৈরী করে নি, শুভ্র হুমায়ূনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে আপন ছন্দে। এই উপন্যাসের প্রথম থেকে সব চরিত্রকেই মনে হচ্ছে জীবন্ত, আনপ্রেডিক্টেবল এবং হুমায়ূনোচিত। সম্ভবত, ২০০৩ সালে যখন ‘এই শুভ্র এই’ উপন্যাস শেষ করেন, তখনই বুঝতে পারেন, এভাবে কোন শুদ্ধতম মানুষ সৃষ্টি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এ তার কাজ নয়। তারপর মনে হয় তিনি শুভ্রকে নিয়ে লেখার কথাই ভুলে গেছেন। তার আরেকটা কারণ হতে পারে, ‘হিমু’ এবং ‘মিসীর আলী’ সাহেবের তুমুল জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে হিমু একটা কাল্ট সৃষ্টি হয়ে দাঁড়িয়েছে ততদিনে। আর শুভ্র তেমন করে পাঠকমানসে জমাট বাধতে অক্ষম। ফলে, সাত বছর পর, ২০১০ সালে শুভ্র যখন আবার বের হয়ে এল তার কলম থেকে, তখন সেটা এল কোনরকম কোন এক্সপেক্টেশান ছাড়াই। সাত বছর! এবং, এই উপন্যাসের মুখবন্ধে হুমায়ূন লিখছেন, “শুভ্রর মতো কাউকে কি আমি চিনি, যাকে এই বই উৎসর্গ করা যায়? না, চিনি না। প্রকৃতি শুদ্ধতম মানুষ তৈরী করে না। কিছু-না-কিছু খাদ ঢুক

শুভ্রঃ হুমায়ূন আহমেদের আখরকথাঃ চতুর্থ পর্ব

Image
  ‘শুভ্র’ উপন্যাসের তিন বছর পর, ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘এই শুভ্র এই’। এবং, বলা ভাল, এই প্রথম আমি শুভ্র উপন্যাসকে এক ছিমছাম মেদবর্জিত, বাহুল্যবর্জিত রূপে দেখতে পাচ্ছি। হুমায়ূন তার লেখকসত্ত্বার চরম উচ্চতা থেকে লিখছেন। এবং এই প্রথম তার শুভ্র সিরিজের সব চরিত্রগুলোই হেটে-চলে বেড়াচ্ছে। এখানে শুভ্রর বাবা অনেক বেশি খোলামেলা। লাইট এন্ড ডার্কনেসের শেড অনেক বেশি বিদ্যমান। শক্তের ভক্ত, নরমের যম টাইপের। এমন মানুষটি পরিবারের অন্দরমহলে সবার সাথেই বেশ কমিউনিকেট করে চলেন। পরিবারের একজন কর্তামানুষ যেমন হয় আর কি। এখনও পর্যন্ত যে চরিত্র প্রথম থেকেই প্রাউ একই রকম গহীন ও জটিল চরিত্রে অবস্থান করছে, তিনি হলেন জাহানারা, শুভ্রর মা। আগের উপন্যাসগুলোর মতো এই উপন্যাসেও তাকে চিনতে একটুও ভুল হয় না। বরং যে ধরনের কাজ তিনি করে চলেছেন, সেটা তারই সাজে। আমার মনে হয় বিনুর চরিত্রের খানিক অংশ এখানে সকিনা এবং মিতুর চরিত্রের খানিকটা রুনুর মধ্যে দিয়ে চলে এসেছে এই উপন্যাসে। মূল গল্প প্রায় একই। রূপবান যুবক। মেধাবী ও বুদ্ধিমান যুবক। অজাতশত্রু যুবক। প্রায় অন্ধ হতে চলা যুবক। কখনও কখনও আনপ্রেডিক্টেবল এবং সবশেষে আবিস্কার হয়, মানে য

আয় ব্যাটা তুই চড়বি আমার হিরো সাইকেলে

Image
  জীবনে নিজের সম্পত্তি ঠিকঠাক রাখতে গেলে কত যে কান্ড করতে হয় তার ইয়াত্তা নেই। বড়ো বড়ো নেতারা সুইস ব্যাঙ্কে কিম্বা বন্ধুনীর বাড়ীতে টাকা রেখেও যেখানে ছাড় পান না সেখানে আমি তো এক অবলা মেয়েমানুষ। আমার দুঃখের কথা আর কি-ই বা বলি। কিন্তু তা বলে কি উঠেপড়ে লাগব না? নিশ্চই লাগব।            এই যেমন আমার সাইকেল। যেটাতে করে আমি বাজারে যাই, মাঠে-ঘাটে-হাটে-পথে চড়ে বেড়াই, সেই বাংলা ‘হিরো’ সাইকেলটার কথাই ধরুন না কেন। নীল লেডিজ সাইকেল। সুন্দর দেখতে। সামনে খাঁচা। পেছনে ক্যারিয়ার। নাম দিয়েছি --- সবেধন নীলমণি। এই সবেধন নীলমণিতে মাঝে মাঝে হতভাগাকেও ক্যারিয়ারে বসিয়ে তেপান্তরের মাঠে নিয়ে গিয়ে পিরীত করেছি। তার কোমরে টনটন করেছে রাস্তার সস্তা অবস্থার কারণে, কিন্তু আমার সাইকেল যেমন শক্ত, তেমনই পোক্ত রয়ে গেছে। মাঝে মাঝেই আমার সাইকেলটা পরের হস্তগত হয়ে যায়। কেউ যদি জিজ্ঞাসা করেন, ওরে! ভাই কি তোর পর? আমি বলব, মোটেই না। কিন্তু ভাই তো আমার শাড়ী-সালোয়ারে হাত দেয় না, কিম্বা লিপস্টিক-নেলপালিশে। তাহলে আমার সাইকেলেই বা হাত দেবে কেন? বেরোতে গিয়ে যদি দেখি, ভাই নেই, কিন্তু ভাইয়ের বাইকটা আছে, তাহলে আমি নিশ্চিত জানি আমার

শুভ্রঃ হুমায়ূন আহমেদের আখরকথাঃ তৃতীয় পর্ব

Image
শুভ্র সিরিজের সবথেকে বড়ো উপন্যাস – শুভ্র। শুভ্র সমগ্রের নিরিখে ২২১ পাতার এক সুবৃহৎ আখ্যান। অর্থাৎ, হুমায়ূন আহমেদ শুভ্রকে নিয়ে রীতিমতো আদাজল খেয়ে লিখতে বসেছেন এই উপন্যাস। এই সময়ে তাকে যেন প্রতিপন্ন করতেই হবে শুভ্র একজন শুদ্ধ মানুষ। নচেৎ এতবড়ো উপন্যাস লেখার মানুষ উনি নন। সুবৃহৎ উপন্যাস লেখার স্টাইল ওনার নয়। বেশ কয়েকটি উপন্যাস লিখেছেন যদিও। কিন্তু, যে মানুষ জানেন, কীভাবে অল্প সময়ে, গুছিয়ে আসল কথাগুলো বলে ফেলা যায়, সেই মানুষ এত বেশি পাতা নেবেন না। এই উপন্যাসে এসে শুভ্রর বাবার নাম মোতাহার সাহেব (আগের উপন্যাসগুলিতে নাম ছিল ইয়াজউদ্দিন) এবং মায়ের নাম জাহানারা (আগের উপন্যাসগুলিতে নাম ছিল রেহানা)। মোতাহার সাহেবের চারিত্রিক গঠনের একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। দ্বারুচিনি দ্বীপ, রূপালী দ্বীপের ইয়াজউদ্দিনের সাথে কিন্তু মোতাহার সাহেবের অমিল আছে, মূলত তার পেশায়। এবং এই পেশাগত কারণেই কোথাও তার চরিত্রের দৃঢ়তা নষ্ট হয়েছে অনেকটাই। এমনকি ‘মেঘের ছায়া’ উপন্যাসের থেকেও কোথাও এই উপন্যাসে এসে শুভ্রর বাবাকে বেশ দুর্বল লাগে। তুলনায় জাহানারা একই রকমের রয়ে গেছেন। বরং জাহানারার শুভ্রকে নিয়ে যে উদগ্র আত্মকেন্দ্রি

শুভ্রঃ হুমায়ূন আহমেদের আখরকথাঃ দ্বিতীয় পর্ব

Image
অঘটন আজও ঘটে । কথাটা বহুবার শুনেছি । এবার নিজের ক্ষেত্রে দেখলাম। তার মানে কি আমার সাথে কোন অঘটন ঘটেনি? ঘটেছে। তবে মনে রাখার মতন নয়। এবারেরটা ভুলব না চট করে। জেমস বন্ড ফোন করেছিল দিন কয়েক আগের এক শীতল সন্ধ্যায়। “হ্যালো প্রধন্যা, আমি কল্যাণীতে এসেছি। এখানে একটা বইমেলা হচ্ছে। কোনো বই দেখব না কি রে তোর জন্যে?” শুনেই মেজাজ খিঁচড়ে গেল। আমাদের এদিকে শীতকালীন বইমেলার নামে ঢু ঢু। আর উনি ওদিকে শ্বশুরবাড়ীতে বেড়াতে গিয়েও আমাকে বইমেলার খোঁটা! নিশ্চই শালীসমভিব্যাহারে গেছে ব্যাটা। দাঁড়া! তোর প্রেস্টিজের টিউব ফুটো করছি। বললাম, “হুমায়ূন আহমেদের ‘মেঘের ছায়া’ উপন্যাসটা পেলে দেখো তো।”       সারা সন্ধ্যে আর কোন আওয়াজ নেই। আমি ঘাটে বন্ধুনীদের সাথে গল্প করতে করতে মনে মনে হাসছি। দ্যাখ কেমন লাগে। সন্ধ্যার একটু পরেই মেসেজ, “বইটা পেয়ে গেছি। পরশুদিন ফিরে গিয়ে তোকে দিয়ে দেব। দাম নিয়েছে একশো টাকা।”       বিশ্বাস করুন, লাইফে এমন তাজ্জব কখনও হই নি। কল্যাণী কোথায়? কত বড় শহর? কত বড়ো বইমেলা হয় সেখানে যে বাংলাদেশের বইও পাওয়া যায়! কলেজ স্ট্রীট যেখানে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়, সেখানে একটা গ্রাম্য বইমেলা এমন চমকে দেওয়

নদীর ছায়ায়

Image
  “অন্ধ ভালোবাসার ফল কখনো মঙ্গলময় হয় না।” হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন। আর, আমরা তিনজন, বছরের পর বছর ধরে, অমঙ্গল গায়ে-মাথায় মেখে এসে বসে থাকি নদীর ধারে। অনেক জ্বালা জুড়িয়ে দেয় সে। আমাদের কথা আমরা জানি। এবং অনেক কথা, পরস্পর জানি না। এবং অনেক কথা, নিজেরাও জানি না। এবং অনেক কথা, নিজেদের কাছে নিজেরা স্বীকার করতেও ভয় পাই। কিন্তু প্রকৃতি জানে। আর জানে বলেই দিনের শেষে প্রকৃতি কাছে টানে। তখন প্রকৃতির কাছে আসতে মন চায়। এসে দুদন্ড বসতে মন চায়। ইচ্ছে করে, পাশে থাকুক কোন প্রিয়জন। বন্ধুর থেকে প্রিয় কে আছে? মৃদুমন্দ অর্গলহীন ভাষার লাগামছাড়া ভাবনার কোলাজ বন্ধু ছাড়া কেই বা বুঝবে? শ্রান্ত শান্ত সন্ধ্যায় ঘাটের সিঁড়িতে আমরা তিনজনে জড়াজড়ি করে বসে থাকি। একটা পর্যায়ে পাখীর উড়ান বন্ধ হয়ে যায়। নদীর কলধ্বনি বন্ধ হয়ে যায়। শঙ্খের আর্তনাদ বন্ধ হয়ে যায়। ওপারে , দূরে একটা-দুটো আলো জ্বলে উঠতে শুরু করে। এক অদ্ভুত শান্ততার মাঝখানে নিজেকে বেঁধে নেওয়া, পাড়ে বসে ওপাড়ের ডাক শুনতে চাওয়ার আকূল বাসনা আর পরস্পরের সংলগ্ন শরীরের ওম্‌ নিতে নিতে মনে হয়--- আর কতদিন...???

শুভ্রঃ হুমায়ূন আহমেদের আখরকথাঃ প্রথম পর্ব

Image
‘শুভ্র’ চরিত্রের আগমন ঘটে ‘দারুচিনি দ্বীপ’ উপন্যাসে। উপন্যাসটা ভালো করে পড়লে দেখা যায় শুভ্র এখানে অতি সাদামাটা একজন চরিত্র। যে চরিত্র অন্যান্য অনেক চরিত্রের সাথে মিলেমিশে সহাবস্থান করছে। হুমায়ূন আহমেদের মতে ‘সাদা গাড়ি’ নামক ছোটগল্পের মধ্যে দিয়ে শুভ্রের পথ চলা শুরু হয়েছে। সম্ভবত তথ্যটি ভুল। লেখক নিজেই হয়তো সাব্বির আর শুভ্রের মধ্যে একটা মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছেন। হতে পারে, এই চরিত্রটা সৃষ্টি করার সময়ে শুভ্রের আইডিয়াটা মাথায় আসে।       ‘সাদা গাড়ী’ কোন সময়ে লেখা হয় আমি জানি না। তবে দারুচিনি দ্বীপ লেখা হয় ১৯৯১ সালে। মূলত এখান থেকেই শুভ্রের পথ চলার শুরু। এই চরিত্রটিকে তৈরী করতে গিয়ে হয়তো হুমায়ুন আহমেদের মাথায় আসে, “ শুদ্ধতম মানুষ কেমন হবে ? ... শুদ্ধ মানুষ আমাকে সৃষ্টি করতে হয়েছে কল্পনায়। শুভ্র সে রকম একজন। ” এবং হয়তো অজান্তেই, শুভ্রের মধ্যে সেইসব বৈশিষ্ট্য ঢুকিয়ে দিতে থাকেন, যা একজন শুদ্ধতম মানুষের থাকা উচিৎ বলে তার মনে হয়েছে।       আমি এখানে দুটি উপন্যাস নিয়ে আলোচনা করব। ‘দারুচিনি দ্বীপ’ এবং ‘রূপালী দ্বীপ’। যারা উপন্যাস দুটি সম্পর্কে জানেন না, তাদের বলি, একুশ-বাইশ বছরের কয়েকজন কলেজে পড়

শুভ্রঃ যাত্রা শুরু

Image
কিছু কিছু উপহার চলার পথের সাথী হয়ে আসে। অঞ্জন দা’র উপহার ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসেছে ভাইফোঁটার স্নেহচ্ছায়ায়। এমন এক লেখকের বই যে লেখক আমার অনেক নির্জন রাতের সাথী; যার সঙ্গ কামনা করে কোনবার বিফল মনোরথ হই নি; আমার অনেক হাসিকান্নার নীরব সাক্ষী যে লেখক, তার এক অজ্ঞাত চরিত্রকে নিয়ে একটা সমগ্র! জাস্ট ভাবা যায় না। হিমু, মিশির আলী শুনেছি , পড়েছি। কল্পবিজ্ঞান সমগ্র আছে, গল্প সমগ্র আছে। পড়েছি তার কিছু কিছুও। কিন্তু শুভ্র সমগ্র! কে এই শুভ্র? “শুভ্র যে খুব একটা জনপ্রিয় চরিত্র তা কিন্তু না। হিমুকে বা মিসির আলীকে সবাই যেভাবে চেনে শুভ্রকে সেভাবে চেনে না। … সাদামাটা শুভ্রের আকর্ষণী ক্ষমতা মনে হয় কম। বেচারা তার জন্য দায়ী না , দায়ী আমি। আমিই তাকে দূরের মানুষ করে রেখেছি।” অথচ এই শুভ্রকে দিয়ে যাচ্ছেন কাকে? উৎসর্গপত্রে লেখা --- “জগতের কনিষ্টতম শুভ্র আমার ছোট্ট বাবু ‘নিষাদ’কে।” অর্থাৎ, তার জীবনের একটা অংশ, তার পুত্রের কাছে রইল। এতএব, শুভ্র নিষ্পাপ। ছোট্ট নিষাদের মতোই নিষ্পাপ। শুভ্র সম্পর্কে আরেকটু খোঁজ খবর নিলাম। ‘শুভ্র’ নামক উপন্যাসের উৎসর্গপত্রে লেখা --- “শুদ্ধতম মানুষ কেমন হবে? ... শুদ্ধ ম

Annie Ernaux এবং বাঙালীর সংকট

Image
Annie Ernaux এবারে সাহিত্যে নোবেল পেলেন, আমরা সবাই জানি। তার পর পরই আমার এক বান্ধবী সমর্পিতা আমাকে তার কিছু বই সংগ্রহ করে দিল। মোট সাতটি বই। কোন নোবেল প্রাপকের নোবেল পাওয়ার অব্যবহিত পরেই তার লেখা নিয়ে টানা দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে তার সাথে বাস করার অভিজ্ঞতা এই প্রথম, এবং এ নিয়ে সময়ে সময়ে আমার পাঠ-প্রতিক্রিয়া আপনাদের সাথে শেয়ারও করেছি। এবং, এর পাশাপাশি, কয়েকটা উপলব্ধি হয়েছে, যা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই, শেষবারের মতো।       তাকে নিয়ে যে কবার লিখেছি, কোনবারই Annie Ernaux-র নামের বাংলা তর্জমা করে লেখার সাহস দেখাইনি। কারণ, এতদিনে বুঝে গেছি, অধিকাংশ বাঙালী পাঠকের, বই সম্পর্কিত কোন লেখায়, সেটা যদি ‘শরদিন্দু’ বা ‘সত্যজিৎ’ গোত্রের, কিম্বা ‘গোয়েন্দা’ বা ‘তন্ত্র’ জঁরের না হয়, তাহলে, বিদ্যা জাহির করার একমাত্র উপায় থাকে বানান ভুল ধরায়। এবং এই কাজে সে এমন এক আত্মপ্রসাদ লাভ করে যে ভুলগুলি সোচ্চারে তুলে ধরার পরে হয়তো আনন্দে ‘জ্যোমাটো’তে খাবার অর্ডার দেয়। আমার ক্ষেত্রে, এই নামের ভুল না থাকার কারণে প্রায় অধিকাংশ লেখায় দেখলাম তেমন কোন রেসপন্স নেই। অর্থাৎ, নামের বানান কিম্বা অন্যন্য বানানের ভুল না ধ