Posts

Showing posts from December, 2024

সেরা পাঁচ বই ২০২৪

Image
আমার কাছে অনেকেই আবদার করেছেন, এ বছরে আপনার পড়া বইগুলোর একটা লিস্ট দিন। প্রথম কথা, আমি এমন কেউকেটা নই যে লিস্ট করব। বছরের শেষে লিস্ট পোস্ট করা লজ্জাকর ব্যাপার, আমার কাছে, কারন, আমার মনে হয়, লিস্ট দিলে কারোরই কোন উপকার হয় না। সারা বছর ধরে আমি নিজের পড়া বইয়ের রিভিউ লিখি, পোস্ট করি, যদি উপকার কোথাও থেকে থাকে, তাহলে সেই পোস্টগুলোতেই আছে। এই পর্যায়ে লিস্ট দিলে সেটা ঢাক পেটানোর মতো লাগে আমার কাছে। আর তাছাড়া, বলার মতো সংখ্যাও নয় আমার পাঠ্য বইয়ের। পঞ্চাশটাও বছরে পেরোয় কি না সন্দেহ আছে। ফলে লিস্ট করা বাতুলতা।            তবে এ বছরে আমার পড়া সেরা পাঁচটি বইয়ের নাম দিতে পারি। আমার মনে হয়, সেটা আমার পড়ার ওপর খানিকটা সুবিচার, আমি নিজে অন্ততঃ, করতে পারব। সারা বছর মনের গতিপথটাকে ধরার এইটাই সেরা পন্থা মনে হয়েছে আমার।            বাছতে গিয়ে একটা ব্যাপার আমার মনের মধ্যে বিস্ময় তৈরী করেছে। আমি একটাও পশ্চিমবঙ্গীয় লেখকের লেখা বইয়ের নাম মনে করতে পারছি না! আমি শারদীয়ায় পড়া এমন কোন লেখার কথাও মনে করতে পারছি না, যা আমার মনে দাগ কেটে গিয়...

স্বর্ণমন্দির

Image
  ৪ জুলাই, ১৯৫০ সাল। কিয়োটো শহর, জাপান। কিঙ্কাকুজি স্বর্ণমন্দির। সন্ন্যাসী হায়াশি ইয়োকানজি। ইতিহাস বড়ো অদ্ভুত। মানুষের এমন অনেক কাজের সাক্ষী সে, যা আপামর একটি মানব সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে। ইউকিও মিশিমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। কারন ঐ দিন ঐ মন্দিরটা ঐ সন্ন্যাসী পুড়িয়ে দিয়েছিল। হায়াশি নিজে স্বীকার করে, মন্দিরের অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রতি তার মুগ্ধতা এবং এই সৌন্দর্য ধরে রাখার মধ্যে তার নিজের অক্ষমতা তার ভেতরে এক তুমুল মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি করেছিল। সে মন্দিরের নিখুঁত সৌন্দর্যকে একধরনের বোঝা হিসেবে দেখতে শুরু করেছিল এবং মনে করত যে ধ্বংসের মাধ্যমেই একমাত্র তার এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সৌন্দর্য আর ধ্বংস --- কারোর মনে কেন সমপর্যায়ে আসে? আমরা তাকে বলি বিকৃতমনস্ক। কারন, শুধুমাত্র একটা সৌন্দর্যই নয়, যে কোন সৌন্দর্যকেই সে ক্ষতবিক্ষত কিম্বা ধ্বংস করতে চায়। তার সাধারণ কাজে, সম্পর্কে এমনকি *ন*তা*য়ও। সে সেইসব অন্ধকারকে আপন করে পেতে চায়। তার আশেপাশের মানুষজনের থেকে সরে এসে নিজেকে অন্য ‘এক মানুষ’ বলে ভাবে। এবং সেই অন্য মনুষ্যত্ব তাকে দিয়ে অন্য এক পৃথিবী তৈরী করিয়ে নিতে চায়, যা আপামর মা...

অঙ্কের জগৎ ও অধ্যাপকের প্রেম

Image
  প্রথমেই অনুবাদের বিষয়ে আগে বলে নেওয়া উচিত। অভিজিৎ মুখার্জির এই অনুবাদ এক কথায় দুরন্ত অনুবাদ। খুব কম অনুবাদ আমাকে অভিভূত করে। এটা তার মধ্যে একটা। এমনকি তার ‘সমুদ্রতটে কাফকা’-ও আমাকে এতটা অভিভূত করতে পারে নি। মূল জাপানী থেকে অনুবাদ এই বইটা আমাকে মারাত্মক রকমের ধাক্কা দিয়ে গেছে। এবং তা মূলত অনুবাদের কারনেই। মাতৃভাষায় সার্থকভাবে কেউ যদি আমার কাছে সাহিত্য নিয়ে আসে তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। অনুবাদের ব্যর্থতায় আমাদের যে কি হাল তা শারদীয়া পত্রিকাগুলো দেখলেই বোঝা যায়। ডোবার জল ফিল্টার করে কাহাতক খাওয়া যায়? মাঝে মাঝে মনে হয় ঝর্না নামুক, তার মিস্টি জল পান করে জীবনটাকে একটু আদর দিই। অনুবাদ প্রমাণ করে দেয়, আধুনিক বাংলা সাহিত্য প্রথাগত ভাবের বাইরে ভাবতে ভুলে গেছে।       ইয়োকো ওগাওয়ার এই বই ইংরাজীতে পড়লে ঠিক কতটা ভালো লাগত আমার সন্দেহ আছে। আচ্ছা আমার ব্যকগ্রাউন্ড সায়েন্স ছিল বলেই কি আমার এই বইটা ভালো লাগল? সেটাও একটা বিষয় হলেও বাংলা ভাষায় এর সার্থক প্রয়োগ আমাকে আনন্দ দিয়েছে অনেক বেশি।       যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড অঙ্ক আছে, তাদের এই বইটা আরও বেশি ভা...

One Hundred Years In Solitude

Image
  বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’ কিম্বা সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু ট্রিলজি’, Ry ū nosuke Akutagawa-র ‘রসোমন’ কিম্বা Akira Kurosawa-র ‘রসোমন’। সাহিত্যের হাত সিনেমা ধরেছে অনেকবার, সিনেমা ‘কাল্ট’ আখ্যা পেয়েছে। ক্লাসিক সাহিত্যকে সিনেমায় প্রকাশ করার সুবিধা এই, সাহিত্য নিজেই সিনেমার ৮৫ শতাংশ কাজ করে দেয়। বাকি থাকে একটা নিখুঁত চিত্রনাট্য। সংবেদনশীল অভিনয়।       গন্ডগোলটা কি হয় জানেন? যদি সিনেমা সাহিত্যের সেই এসেন্সটাকে ধরতে ব্যর্থ হয়। আবার অনেক সময় উল্টোটাও ঘটে। অতি সাদামাটা একটা সাহিত্য সিনেমার হাত ধরে ‘কাল্ট’ হয়ে গেছে, এমন উদাহরন খুব একটা কম নয়।       One Hundred Years In Solitude-এর সমস্যা কিন্তু ভয়ঙ্কর। একে বইটা শুধু তার জন্মলগ্ন থেকেই ‘ক্লাসিক’ নয়, ‘কাল্ট’ নয়, রীতিমতো বাইবেলের পরেই সর্বাধিক বিক্রীত বই; তার ওপর ‘পাটা’ কোন গল্প নয়, স্তরের পর স্তর এক-একবার পড়লে আবিস্কার করা যায়; সেই সাথে ম্যাজিক রিয়েলিজমের এমন এক চূড়ান্ত উদাহরণ সারা বিশ্ব সাহিত্যে হাতে গোনা আছে; এমনকি স্বয়ং লেখকের সন্দেহ ছিল, এই উপন্যাসকে সার্থক সিনেমায় রূপান্তরিত আদৌ করা সম্ভব...

Mary

Image
  যীশুখ্রীষ্টের মাতা মেরী কিম্বা মরিয়ম, তার কোন সার্থক জীবনীগ্রন্থ নেই। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে, মূলত বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট, মাতা মেরীর কিছু কিছু ঘটনা উঠে এসেছে।      কোথায় কোথায় মেরীর উল্লেখ পাওয়া যায়?   New Testament: লূকের সুসমাচার (Gospel of Luke), মথির সুসমাচার (Gospel of Matthew), যোহনের সুসমাচার (Gospel of John), প্রেরিতদের কার্যাবলী (Acts of the Apostles)। Old Testament: মেরীর নাম সরাসরি উল্লেখ নেই, তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী তার মাতৃত্বের দিকে ইঙ্গিত করে বলে খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ববিদরা বিশ্বাস করেন (যেমন, যিশাইয় ৭:১৪: "একজন কুমারী গর্ভবতী হয়ে পুত্রসন্তান জন্ম দেবেন")। কোরআন (Qur'an): সূরা আল-ইমরান, সূরা মারিয়াম, সূরা আল-মায়েদা, সূরা আন-নিসা। অ্যাপোক্রাইফাল গ্রন্থ (Apocryphal Texts): বাইবেলের বাইরের কিছু প্রাচীন লেখা। Protoevangelium of James: এখানে মেরীর শৈশব, তার মন্দিরে বাস, এবং যিশুর অলৌকিক জন্মের প্রসঙ্গ রয়েছে। Gospel of the Nativity of Mary: মেরীর জন্ম ও তার পবিত্র জীবন নিয়ে বিশদ আলোচনা রয়েছে এই বইতে। এছাড়াও আরোও কিছু টুকরা টাকর...

দ্য মাস্টার অফ গো

Image
  এই বই পাঠের মুহূর্তে , খেলার উন্মাদনায়, একটা প্রশ্ন উঠে আসে। খেলাটা কি একটা শিল্প, সত্যিই?       যারা খেলার হার-জিতটাকেই প্রাধান্য দেয়, তাদের যতজনাই বলুক না কেন, সে দর্শক হোন কিম্বা খেলোয়াড়, মনে মনে তারা শিল্পানুগামী নন। আমাদের প্রতিবেশী দেশদুটিকে ক্রিকেট খেলা নিয়ে মারাত্মক রকমের আগ্রাসনের কথা মাথায় রাখলে আমার কথাটা পরিস্কার হয়ে যাবে।       এখন, যারা এটাকে শিল্প বলে মানেন, তারা পরিস্কার জানেন, খেলায় হার-জিতটা বড়ো কথা নয়। ও চলতেই থাকবে। বড়ো কথা তুমি খেলাটা কিভাবে খেলছ। খেলাটাকে কতটা এনজয় করছ। সেখানেই খেলার সার্থকতা।       যারা এই পন্থায় বিশ্বাস করেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথেই বলতে হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই একটু পুরোনোপন্থী। অর্থাৎ কি না, তারা বলেন, আগেকার দিনে খেলার একটা স্পিরিট থাকত, এখন আর তা মানা হয় না। এখনকার দিনে জয়টাই শেষ কথা বলে।       ঠিক এই বিতর্ক থেকেই কাওয়াবাতার এই উপন্যাস, ‘দ্য মাস্টার অফ গো’-র নির্মাণ ।       এই উপন্যাস পড়তে হলে ‘গো গেম’ সম্পর...

ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার গল্প

Image
  ব্লার্বে দেখছি লেখা আছে, “ বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে লেখা প্রথম ছোটোগল্পর সময় থেকে তাঁর মৃত্যুর সময় অব্দি প্রকাশিত গল্পগুলিকে ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা ‘তানাগোকোরো নো সোসেতসু’ বলতেন যার অর্থ হল এমন সব গল্প যা তাদের আয়তনের কারণে হাতের তালুর মধ্যে চলে আসতে পারে। কাওয়াবাতার এই হাইকু-সুলভ রচনাশৈলীতে ভাবনার গভীরতা, সূক্ষ্ম-ইশারা বা ইঙ্গিত, মানুষের হৃদয়ের মধ্যেকার অস্থিরতা, তার উপলব্ধি এবং রূপান্তর ধরা দেয়। ধরা দেয় সেইসব মানুষ যাদের কাছে বিচারবুদ্ধির থেকে অনেক সময় অনুভূতি বা কোনও একটি মুহূর্তের উষ্ণতা বেশি প্রাধান্য পায়। ”       আমাদের পাঠকদের, মূলত যারা, একটু গভীরে গিয়ে গল্পগুলোকে পাঠাভ্যাস করতে চায়, তাদের সমস্যা শুরু হয় ঠিক এইখান থেকেই। কাওয়াবাতা-র লেখা ছোটগল্পের বই কিন্তু একটা নয়, একাধিক। এর মধ্যে কোন গল্প থেকে কোন গল্পের অনুবাদ হয়েছে, তার কোন নির্দেশিকা নেই। ফলে আমাদের পক্ষে জানার উপায় নেই সে, এই গল্পগুলো পড়ার পর, যাকে বলে, Further Reading, সেটারও কোন বোধগম্যতা নেই, অন্তত এই বই থেকে।       এই ধরনের বইগুলো আগে আমার কাছে বেশ ল...

দ্য লেক

Image
  মানসিক অসুস্থতা। বর্তমানে দাঁড়িয়ে অবশ্যই বড়ো বিষয়। কারণ, মানুষের মন যে কোন ধারায় কখন বয়ে যায়, তা ধরতে পারা, অনেক সময়, সেই মানুষটির পক্ষেও অসম্ভব। তার একটা অতীত আছে, বর্তমান আছে, কিন্তু ভবিষ্যৎ? ভবিষ্যৎ সেই মানুষটারই হাতে। শারীরিক অসুস্থতার ওষুধ আছে, মানসিক রোগের ক্ষেত্রে, রোগীকেও নিজের সাথে লড়তে হয়, ওষুধের পাশাপাশই, অনেক সময়।       গিমপে, এই উপন্যাসের মূল চরিত্র, একজন মানষিক অসুস্থ মানুষ। ‘হ্রদ’ এক শান্ত, স্থির জলাশয়, কিন্তু তার গভীরতার, অনেক ক্ষেত্রে কোন অন্ত পাওয়া যায় না। শিশুকালে, একদিন এমনই একটি হ্রদে, ভেসে ওঠে, গিমপের বাবার দেহ। হত্যা? না আত্মহত্যা? কেউ জানে না। গিমপের মনে ভয়, পাছে তার মা তাকে ছেড়ে চলে যায়! মামাবাড়ীতে থাকতে সেই কারনেই সে চায় না। আরেকটা কারণ আছে, মামাতো বোন। ছোটবেলার খেলার সাথীকে সে ভালোবেসে ফেলে। কিশোরীবেলায় বোনটি বদলে যায়। তার ক্রুরতা ও নিষ্ঠুরতার কারনে গিমপে সেখানেও ব্যর্থ হয়। এই হল অতীত। মেয়েদের ওপরে এমন এক প্রভাব এই দুইজন দিয়ে ফেলে গিমপেকে, যে, বড়ো হয়ে, যখন সে স্কুলের শিক্ষক হয়, শিকার হয় এক অদ্ভুত মানসিক জটিলতার। মেয়েদের ...

দ্য সাউন্ড অফ দ্য মাউন্টেন

Image
  কাওয়াবাতা-র এই পর্যায়ের উপন্যাসটি, যেটা আমি পড়ে শেষ করে উঠলাম, সেটা যদি কেউ শুরু করতে চান, তাহলে তাকে দুটো বিষয় একটু মাথায় রাখতে হবে, নচেৎ, এই উপন্যাস দুই-তিন পর্বের মধ্যেই একঘেয়ে লাগতে পারে। প্রথম বিষয় – যুদ্ধ। আমাদের জেনারেশান যুদ্ধ কি জিনিস, মানে, তার ডায়রেক্ট ইমপ্যাক্ট কি, তা জানে না। আমরা কোনদিন কোন যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করি নি, এমনকি, ভারত-পাকিস্থান কিম্বা ভারত-চীন যুদ্ধের ভয়াবহ প্রভাব আমাদের জনসমাজে তেমন করে পড়ে নি, অন্তত, ইউক্রেন কিম্বা প্যালেস্তাইনের দিকে তাকালে ব্যাপারটা আরও পরিস্কার হয়ে যাবে। কাওয়াবাতার এই উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে যখন বের হচ্ছে, সেই সময়কাল হল ১৯৪৯-১৯৫৪। অর্থাৎ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান শুধু পর্যুদস্থই হয় নি, সমগ্র জাতি এমন এক সংকটের মধ্যে দিয়ে এরপরের কয়েক দশক অতিক্রান্ত করেছিল যে, তার সামগ্রিক সত্ত্বাটিই একটা ভয়ানক অস্থিরতা এবং অনির্দেশ্যতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল। সামাজিক পরিকাঠামো, অর্থনৈতিক পরিকাঠামো এবং জাতির মূল্যবোধ --- এই তিনটে জায়গায় চরম দ্বিধা ও দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে তাকে চলতে হয়েছিল। ফলে একটা পরিবারেই মাত্র দুটো জেনারেশানের মধ্যেকার মূল্যব...