Posts

Showing posts from May, 2025

২৪ শ্যামানন্দ রোড এলো নব্বইয়ের দশক। বিশ্বায়ন।

Image
  পাড়ায় কফিন ঢুকেছে। বিশ্বায়ন, উন্নয়ন এবং রিয়েল এস্টেট --- ইত্যাদির ধাক্কায় নব্বইয়ের দশকের কলকাতা এক ধাক্কায় ঢুকে পড়েছে অন্ধকারে --- লেখকের বয়ানে।       “এই ভরসন্ধেবেলায় কিছু অকালদর্শী মানুষ, আমাদের এই অতিমাত্রায় আলোকিত হওয়ার বিপদ বুঝে যেন বলে উঠতে চাইছে- যা কিছু ভালো, তা কিছু ভালো — এমনটা মনে করায় আর মনে করানোয় আজ শবের সামনে সন্ধ্যারতি। ... ঠিক এইসময়ে- মনে হচ্ছে- কলকাতার কালবিলম্বিত মানুষ কালবিড়ম্বিত হয়ে কোনো 'কাল'কে বুঝতে চাইছে এই অ'কাল' মৃত্যুর কারণ হিসেবে। তাই- ধরে নেওয়া যাচ্ছে-শহর থেকে, পাড়া থেকে, ঘর থেকে, বারান্দা থেকে সবাই আকাশের তলায় নেমে এসে- আকাশের কাছেই যেন জানতে চাইছে- কেন এই অকালেই মৃত্যু- কেন এই অকালেই শেষ- কেন এই অকালেই নিঃশেষ। আকাশ- এই মুহূর্তে যেন- শীতসন্ধের জমাটব্ধ ধোঁয়া- এক ও অদ্বৈত সত্তায়- স্থির ও স্থিতধী। এক চরাচরব্যাপী স্থৈর্য নিয়ে- নীহারিকাসম নিস্তব্ধ নিঃশব্দ নিরুত্তর- সে। এবং-অতঃপর- সীমাহীন সৌরহীন এই নৈঃশব্দ্যে- আমাদের ইন্দ্রিয় থেকে অতীন্দ্রিয়ে অনুভূত হচ্ছে-স্পষ্ট ও অতিস্পষ্ট: শুনে রাখো কলকাতা, এখনো পর্যন্ত যে-মৃত্যু প্রত্যক্ষ করে...

২৪ শ্যামানন্দ রোড বিশ্বায়ন পূর্ববর্তী কলকাতা

Image
  এই বইটার রিভিউ অনেক আগেই দিয়ে দিতে পারতাম, দিই নি, কারণ, দুটো বই ঘিরে আমার প্রাথমিক অভিজ্ঞতার প্রতিক্রিয়া। আমি নিজেও ক্ষিপ্ত ছিলাম, সবুজ মুখোপাধ্যায়, খোয়াবনামা-র প্রকাশক ও তাদের অন্ধ ভক্তেরাও উন্মত্ত ছিলেন, এবং সেই সময়ে বইটির রিভিউ ঠান্ডা মাথায় করা যেত না।       একটা শব্দ আমি ভুলে গিয়েছিলাম – Nostalgia, ‘নস্টালজিয়া’ শব্দটির বাংলা অর্থ হলো স্মৃতিবেদনা বা স্মৃতিবিধুরতা। এটি একটি আবেগপ্রবণতা যা অতীতের কোনো বিশেষ সময় বা ঘটনার জন্য মন কেমন করে। সাধারণত, এটি পুরনো ছবি, গান, বা স্মৃতির সাথে জড়িত।       আমি ভুলে গিয়েছিলাম, প্রতিটি বাঙালীই অতীত ইতিহাস, যার সাথে বিশেষত, সে নিজে জড়িত, তাকে খুব সঙ্গোপনে, নরম হৃদয়ের ভেতরে অজ্ঞাতবাস করায়। এবং সেইখানে যদি কেউ খোঁচা দেয়, তাহলে, তা সাপের লেজে পা পড়ার মতো হয়ে যায়। ঠিক সেই কারনে গায়ত্রীর বইয়ের তঞ্চকতা নিয়ে যখন গলা ফাটাচ্ছি, তখন এই স্মৃতিমেদুর ভক্তকূলকে মাথা ঘামাতে দেখি নি। নান্দনিকতা-র যোগ্য সমর্থন কি অনুষ্টুপের প্রকাশকেরা পান নি? সেখানে কি কোন স্মৃতিমেদুরতা বা আবেগপ্রবণতা ছিল না?  ...

অবিনির্মাণ

Image
  এক সপ্তাহ ধরে পড়ছি, ছোট্ট একটা প্রবন্ধ। মাথার চুল ছিঁড়ে ন্যাড়া হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা, থুড়ি নেড়ী --- হইনি। অবশেষে বুঝতে পেরেছি, এমন কথাও জোর দিয়ে বলতে পারছি না, কিন্তু ছুঁচোর মতো কানা দৃষ্টিশক্তি নিয়ে যতটুকু ঠাহর করতে পারলাম, তা নিয়ে কথা বলা যেতেই পারে। এখানে অনেক বিজ্ঞজন আছেন, তারা আরও সহায়তা করলে আমি উপকৃত হব। অবিনির্মাণ কি? Deconstruction = In philosophy, deconstruction is a loosely-defined set of approaches to understanding the relationship between text and meaning. The concept of deconstruction was introduced by the philosopher Jacques Derrida, who described it as a turn away from Platonism's ideas of "true" forms and essences which are valued above appearances. অর্থাৎ, যে কোনো লেখ্য বা সাংস্কৃতিক পাঠের অন্তর্নিহিত দ্বৈততা, অসঙ্গতি ও শক্তি-সম্পর্ক উন্মোচন করাই হল অবিনির্মাণের কাজ। এর একটা উদাহরন হয়ে যাক? ধরুন, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘অবনী বাড়ি আছো’ কবিতাটা। “অবনী, বাড়ি আছো?”—এই প্রশ্নটি একাধিকবার ফিরে আসে কবিতায়। যেন কোনো আত্মীয়, বন্ধু, কিংবা পরিচিত কেউ সন্ধান করছ...

‘ঈশ্বর’-এর পাশা

Image
  বাঙালী পাঠক আর যাই হোক, বিজ্ঞানমনষ্ক হয় নি, প্রযুক্তিমনষ্ক হয়েছে; ফলে পরিশিলীত বোধযুক্ত মন নয়, ধূর্ততা আর ছলনাময় মন নিয়ে নিজের পৃথিবী দাপানোর কথা ভাবে। আর ভাবে, খুব কম নাম্বার পেলেও, যেভাবেই হোক, সায়েন্স নিয়ে পড়তে পারলেই কেল্লা ফতে। চাকরী মিলবে, সমাজে মাথা উঁচু করে চলার (এটা বাবা-মায়ের দিক থেকে বলছি) টিকিট মিলবে।       একথা আরও বেশি করে মনে হয়, কারন, বিজ্ঞান নিয়ে পড়লেও তন্ত্র, লুতুপুতু প্রেম আর গোয়েন্দা উপন্যাসের সস্তা কাহিনীর দিকে তার রুচি। বইমেলাতে দেদার বিকোয়। সারা বছর ধরে দেদার লোকে পড়ে। যদি একটু রিসার্চ করে দেখা য্য, তাহলে, দেখা যাবে, বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে চাকরী করা লোকের অভাব নেই।       কিন্তু বাংলা বইবাজারে পপুলার সায়েন্সের ওপর বই, ভারতে ক্রিকেট টিমে বাঙালী প্লেয়ার থাকার মতোই ক্ষীণ।       এর মধ্যে আমার হাতে এল এই বইটা। ‘ঈশ্বর’-এর পাশা। গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় আর দেবজ্যোতি ভট্টাচার্যের পরিশ্রমের ফসল, প্রশংসার দাবী রাখে। তবে যারা ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত সায়েন্স একটু মন দিয়ে পড়েছে, তারা মোটামুটি ১৫২ পাতা পর্যন...

যখন যুদ্ধ চলছে

Image
যখন যুদ্ধ চলছে, সেই সকালে, শান্তিনিকেতনের উদয়নের ছাদে, চারটে মাইকে বেজে চলেছে রবীন্দ্রকণ্ঠ। জীবনে প্রথম, আমি, শনছিলাম সেই কণ্ঠ, সেই তীক্ষ্ণ ক্ষয়াটে কিন্তু কী আত্মবিশ্বা   সী কণ্ঠ। সেই কণ্ঠ উচ্চারণ করছিল, “তোমারে পেয়েছিনু যে, কখন্‌ হারানু অবহেলে, কখন্‌ ঘুমাইনু হে, আঁধার হেরি আঁখি মেলে।           বিরহ জানাইব কায়, সান্ত্বনা কে দিবে হায়,”       আমার মনে হচ্ছিল, কে দেবে আলো? কে দেবে প্রাণ? যে পরম করুণাময় ঈশ্বরের নামে অকারণে নিরীহকে হত্যা করা যায়, তার দায় কার? পরম করুণাময়ের? না কি সেই করুণাময়ের নামে যে অকারণ হত্যালীলা চালিয়ে কাপুরুষের পরিচয় দিয়ে আবার পালিয়ে মুখ লুকায়???       আমার মনে পড়ল সেই অমোঘ লাইনগুলো--- “তোমার ন্যায়ের দন্ড প্রত্যেকের করে অর্পণ করেছ নিজে। প্রত্যেকের 'পরে দিয়েছ শাসনভার হে রাজাধিরাজ।”       আমরা আজ অন্যায়ের দন্ড দিয়েছি। যে প্রতিবেশী দেশ নিজঘরে জামাই আদরে সন্ত্রাসবাদীদের পালন করে তাদের প্রভুর দুর্নামে পাশবিক আনন্দ পাচ্ছে, সেই তাদের ঘ...

নিজের রবীন্দ্রনাথ

Image
  “এই হল আমার নিজের রবীন্দ্রনাথ। তাঁকে বোঝা-না-বোঝা। সেই জন্যই রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে প্রকাশ্যে বলতে অস্বস্তি হয়। কেন না, বলতে হলে তো নিজেরই অজান্তে ভক্ত হয়ে বলব। ভক্তের মতের দাম নেই। জানি, চোখে জল এসে পড়লে তা দিয়ে সাহিত্যের বিচার হয় না। চকখড়ির দাগ ধুয়ে যায়। দণ্ডী কাটা যায় না। এবং এও জানি, রবীন্দ্রনাথকে সকলেরই দরকার হয় না। রবীন্দ্রনাথকে ছাড়াই বহু মানুষের জীবন চলে যাচ্ছে। জানি। রবীন্দ্রনাথকে দরকারও হচ্ছে অনেকের। নিজের কোনও মতকে জোরের সঙ্গে স্থাপন করবার জন্য রবীন্দ্রনাথের কোনও কোটেশন- কবিতা, প্রবন্ধ বা বক্তৃতা কি চিঠিপত্র যাই হোক— ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া, রবীন্দ্রনাথকে উড়িয়ে দেবার জন্যও, অথবা তেমন ভালো কবি ছিলেন না, বলবার জন্যও রবীন্দ্রনাথকেই ব্যবহার করতে হয়। আক্রমণ করবার জন্যও তাঁর চেয়ে উপযুক্ত কিছু এখনও বাংলার সংস্কৃতিতে আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এ সবই নিজের নিজের দরকারে। অপরের সামনে নিজের প্রতিষ্ঠা আরও শক্ত করবার দরকারে। এজন্য রবীন্দ্রনাথকে লাগে।”       বলছেন জয় গোস্বামী। আমাদের সময়ের অন্যত্ম শ্রেষ্ঠ। এক কবি আর এক কবিকে দেখতে চাইছেন, যে তার অগ্রজই নন, বাংলা সাহিত...

ডাবলিননামা

Image
  সমস্ত লেখকই সমসাময়িক, তার লেখনীতে তার সময়কার প্রভাব থাকতে বাধ্য, অল্পবিস্তর হলেও, এদের মধ্যে কয়েকজন আবার পূর্ণমাত্রায় সমসাময়িক। অর্থাৎ, তার লেখা পড়তে হলে সেই সময়ের লেখকের বাসস্থানের আশেপাশে ইতিহাসটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ পড়তে হলে ঊনবিংশ শতকের ধর্মীয় দ্বন্দ্ব, বিশেষ করে হিন্দুসমাজ ও ব্রাহ্মসমাজের শহরকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে রসভঙ্গ হতে বাধ্য। ‘গোরা’ তো আর গোরা-সুচরিতা কিম্বা বিনয়-ললিতার প্রেমকাহিনী নয়। সেটা পার্শ্বঘটনা। তেমনই জেমস জয়েসের ‘ডাবলিননামা’ পড়তে হলে তার সময়ের আয়ারল্যান্ড এবং তার লেখার স্টাইলটা সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। নচেৎ, গল্পগুলোর সাথে কমিউনিকেট করা, অনেক ক্ষেত্রেই, অসম্ভব, সেদিক থেকে দেখলে ডাবলিনার্স পড়াটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, জয়েস-ম্যাজিক আরও অনেক ক্ষেত্রে আছে, তা এক-এক করে আসছি। আয়ারল্যান্ড ইংলন্ডের অধীনস্থ রাজ্য। জয়েসের সময়ের আয়ারল্যান্ডের অবস্থাটা ঠিক কি রকম? আয়ারল্যান্ডের মূল শহর ‘ডাবলিন’-কে কেন্দ্র করে জয়েসের এই গল্পগুচ্ছ আসলে আয়ারল্যান্ডের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার লিপিকাহিনী। ভূমিকায় দেখি, “ডাবলিনার্স –এর গল্পগুলি তৎ...

চিন্তার দুর্দশা

Image
­“যাঁরা আমার কলকাতার গত দুটি বক্তৃতায় এসে আমাকে বাধিত করেছেন, তাঁদের বলে রাখি যে আজকের কথাগুলি সেই দুটি ভাষণের সঙ্গে জড়িত থাকবে। প্রথম ছিল 'গণতন্ত্রের রহস্য' (শুধু আমি ও আমার অধিকার নয়, সম্পূর্ণ অন্যরকম লোকেদের সঙ্গে সমতাবোধ), তার পরেরটা ছিল 'যুক্তি ও কল্পনাশক্তি' (কল্পনাশক্তি যুক্তিকে রক্ষা করে), এবং সেই দুটির সঙ্গে এক রেখায় আজকের বক্তব্য: যখন চিন্তাধারায় এই রহস্যগুলি স্থান পায় না, তখনই চিন্তা দুর্দশাগ্রস্ত হয়। এখানে বলা দরকার যে, কল্পনাশক্তি এই অর্থে একটি শক্তি। শুধু উড়িয়ে দেওয়ার মতো অসত্য নয়।”       এই কল্পনাশক্তিরই কি প্রকৃত ধারক ও বাহক চিন্তা? গায়ত্রী বলছেন, “এই সাবলীল বলিষ্ঠ কল্পনাশক্তি নিজেকে ছেড়ে, অন্যের এবং অন্য গোষ্ঠীর অন্তর্গত হতে চেষ্টা করে অন্তরে অন্তরে। একক এবং বহুজনীন অন্তরে। এই পারদর্শী কল্পনাশক্তি যখন মৃতপ্রায়, আত্মমুখী, যুক্তিকে রক্ষা করতে অক্ষম, তখন গণতন্ত্রের সেই অন্তর্নিহিত রহস্য- আমি নই অধিকারের মালিক শুধু, অপরের অধিকারের জামিনও আমি, এ-চিন্তা হারিয়ে যায়। ভীরু দুর্বল চিন্তায় যখন এই রহস্য কল্পনা করা যায় না, তখন সব আমি, সব আমার - আমার স্বামী...