Posts

Showing posts from September, 2024

আর্থার সি ক্লার্ক গল্পসমগ্র ১

Image
  কল্পবিজ্ঞান – কল্পবিশ্ব – গল্পপাঠক এই ত্রিবেণীতীর্থে আমি কোথায়? পাঠকের আসনে। বই পড়তে পড়তে, মানে যতটুকু পড়েছি আর কি, তাতে করে, কিছু কিছু পাবলিশিং হাউসের প্রতি আমার একটা বিশ্বাসবোধ অবচেতনেই জন্মে গেছে। মনে হয়েছে, অন্তত, এ আমাকে ঠকাবে না। দামে বেশি মানে ভাল হলে আমার কোন আপত্তি নেই। কল্পবিজ্ঞানের কোন গল্পের অনুবাদ যদি কল্পবিশ্ব করে থাকে, তাহলে, আমি ঠিক জানি, সার্থক অনুবাদ না হলেও, গছানোর মতো অনুবাদ তারা করবেন না। সার্থক অনুবাদ নিয়ে বিতর্ক অনেক থাকে। ফলে সেই জায়গায় পৌছচ্ছে কি না, তা নিয়ে অনুবাদ বিশেষজ্ঞরা কথা বলবেন। আমরা, সাধারণ পাঠক-পাঠিকারা, অনুবাদের ভাষা যদি আমাদের সাথে ‘কমিউনিকেট’ করতে পারে অতি সহজে, তাহলেই বর্তে যাই। কল্পবিশ্বের অনুবাদকেরা আমাকে কখনই হতাশ করে নি। করে নি বলেই, দাম একটু বেশি দিয়ে হলেও আমি চোখ বন্ধ করে কিনি। যদিও, আমি এখনও সুলভ সংস্করণ, স্টুডেন্ট সংস্করণ কিম্বা পেপারব্যাকের কথা বলে যাব। অথবা কিন্ডল এডিশন, যেখানে দামটা একটু কম। আর আমাজনে বইগুলো পাওয়া গেলে সোনায় সোহাগা। পোস্টাল খরচ বাজারে আলু-বেগুনের দামের মতো বাড়ছে। সেটা কখনই কাম্য নয়। অন্তত আমাজনের জঙ্গলে থেকে...

অনুবাদ পূজাবার্ষিকী ২০২৪

Image
  পাঁচ বছর আগেও , পূজাবার্ষিকী কেনার জন্য বাবার প্যান্টের পকেট থেকে টাকা হাতিয়েছি বাবা জেনেও না জানার ভান করেছেন। মায়ের রান্নার কৌটো থেকে কখন যে এক-দুশো টাকা ' ইঁদুরে ' নিয়ে গেছে মা টেরও পান নি। এমনকি আমার ' ন্যাতা-ক্যাতা ' র হাড়ির শেষ সম্বলটিও খরচ করে ফেলেছি। রাতের অন্ধকারে জেমস বন্ড* আমার জানালায় টোকা দিয়ে পূজাবার্ষিকী আমার হাতে পাচার করেছে। কিম্বা ভোরবেলা দড়ি বেধে ঝুলিয়ে রাখা বাজারের ব্যাগে ' মাল ' ট্রান্সফার করেছে।          তারপর , আস্তে আস্তে কখন যেন মনে হয়েছে , এ বড়ো অন্যায়। না। বাবা-মা-র প্রতি নয় , নিজের প্রতি। সময় এবং অর্থের মুল্য সম্যকভাবে জানা প্রয়োজন। কারণ আমি বড়ো হচ্ছি। আমাকে এ ছেলেমানুষী মানায় না একদম। আমি মা-কে বললাম , মানে এই বইটা হাতে নিয়ে তাকে দেখিয়ে বললাম , দেখো আমি বাড়ছি মাম্মি। মা রোষাকষিত নয়নে তার চালের ড্রামের দিকে একবার তাকিয়েই বেলন হাতে নিলেন। আমি বললাম , বৃথা করো এ উদ্যম মাতঃ , আমি এই একটিই বই এবার কিনছি। বাস... আমার পূজাবার্ষিকী বাজার কমপ্লিট।        এই একটা বই ' লোকাল ' থেকে সরে এসে ' গ্লোবালের ' জানালা খুলে দিয়েছ

তিন বন্ধু, একটি স্টোর, এবং সময়ের পরপার

Image
  তিন বন্ধু – সোতা, কোহেই এবং আতসুয়া । এক অপরাধ করার পর খুঁজছে আশ্রয়। লুকিয়ে থাকার একটা জায়গা। সোতা’র মাথায় যে আশ্রয়টি এসেছিল, শহরের একটু বাইরে, কিন্তু শহর থেকে একদম দুরেও নয়, তা হল, একটি পরিত্যক্ত জেনারেল স্টোর – নামিয়া জেনারেল স্টোর। উপায়ান্তর না দেখে তারা সেখানে আশ্রয় নেয়। মধ্যরাত। মাঝ আকাশে পূর্ণচন্দ্র। তিনজন নামিয়া স্টোরে ঢুকে পড়ে। শাটার নামানো এক অতি সাধারণ স্টোর, যার সামনে একটা আদ্যিকালের মেল স্লট। আগেকার দিনে যারা চিঠি লিখত, ডাকপিওন এসে চিঠির উদ্দিষ্ট প্রেরকের মেইল স্লটে চিঠি ফেলে যেত। যাই হোক, পেছনের দরজা দিয়ে স্টোরে ঢুকে পড়ে তিনজনে। দরজার সামনে একটা মিল্ক ক্রেট। স্টোরের ভেতরে হাবিজাবি পরিত্যক্ত জিনিসের মধ্যে ছিল মোমবাতি। সেটাই জ্বালানো হল। এবং, ঠিক সেই সময়ে, তিনজনকে চমকে দিয়ে, মধ্যরাত্রে, মেইল স্লটে এসে পড়ল একটা চিঠি! ফোনের যুগে চিঠি! হাড় হিম করা ব্যাপার। কে ফেলল? পুলিশ? না কি কেউ তাদের দেখে ফেলেছে? এখন পুলিশ ডাকার আগে একটু মস্করা করে নিচ্ছে! তিন বন্ধু কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠি খুলে দেখল, একটা সমস্যা লেখা আছে চিঠিটার মধ্যে। সমাধান চাইছে একজন মেয়ে – মুন র‍্যাবিট। আতসুয়া এ পর

না উত্তর

Image
  বনজ্যোৎস্নার নিথর শীতলতা থেকে আর্তনাদ উঠে আসে,     "রাত কত হল?"      মেলে না উত্তর।   একটু পরে, ঘামে ভেজা অন্ধকার জিজ্ঞাসা করে,     "ভোর কি হল?"      পেল না উত্তর।   আবার, ক্লান্ত রাতপাখী প্রশ্ন করে, করুণ স্বরে,     "আলো কোথায়?"      এল না উত্তর।

মানুষ জেগে থাকছে

Image
শিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকতে কি ভালোই না লাগে! শাড়ির আঁচলটাকে গাছ কোমর করে পেঁচিয়ে পাড়া দাপিয়ে হল্লাবাজি করে যখন বাড়ি ফিরি , মায়ের একটা চাপড় ব্লাউজ ভেদ করেও পিঠে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। বাবা মুচকি হাসে। বোধ করি বুঝতে পারে , আর তো বেশিদিন নেই। বয়স বড়ো বালাই। তারও এমন একটা দিন ছিল , যখন ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে তারা দুই ভাই মিলে চড়ুই পাখী ধরত। আজ তা করলে লোকে সাইকায়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাবে। এতএব , মেয়ে যে বয়েসটা পার করেও করতে চাইছে না , তার অন্তরের উদগ্র ইচ্ছার মতো , কিচ্ছুক্ষণ তার অস্তিত্ব না হয় থেকেই যাক তার জীবনে।   কেবল আমার এই ডানপিটে দিশেহারা উড়নচণ্ডী রূপ দেখে আমার হতভাগা বলে , তোকে দেখে মনে হচ্ছে , বিয়ে না করলে আমার এমন কি আর ক্ষতি হবে ? আমি জানি , উত্তরে তার টি শার্ট ভেদ করে আমার অমোঘ চপেটাঘাত লাল দাগ রেখে গেছে , ঠিক আমার মায়ের মতো।   হতভাগার সাথে হেটে হেটে যখন ফিরছি , বিশ্বকর্মা পূজোর প্যান্ডেল থেকে , কিম্বা প্যান্ডেল সংলগ্ন ছেড়ে আসা ' গাদী ' খেলার কোর্ট থেকে , তখন সন্ধ্যে নামছে। আস্তে আস্তে পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ছে , কিন্তু মানুষ জেগে থাকছে...

মুখোশ ও মৃগয়া - স্তানিসোয়াভ লেম

Image
  শ্রদ্ধেয় মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় স্তানিস্লাভ লেম-কে অনুবাদ করা জন্য বেছে নিইয়েছিলেন দুটি নভেলা --- পোলোভানিয়ে (মৃগয়া) এবং মাস্কা (মুখোশ)। ‘সোলারিস’ নয়, ‘সাইবেরিয়াড’ নয়, ‘হিস মাস্টার্স ভয়েস’ নয়। যুগল উপন্যাসের শিরোনাম রাখলেন, ‘মুখোশ ও মৃগয়া’। কেন? “... লেম-এর লেখায় মুখোশ, মুকুর বা প্রতিবিম্বের এত ছড়াছড়ি। অচেনার আড়ালে চেনা, চেনা জিনিসকে অচেনা ক’রে দেখানো, বের্টোল্ট ব্রেখ্‌ট যাকে বলেন ‘এলিয়েনেশন’ পদ্ধতি, লেম তাকে দুর্ধর্ষ নৈপুণ্যের সঙ্গে কাজে খাটান। আয়না হয়তো অনেক সময় মিথ্যে কথা বলে, মুখশ্রীর চাইতে মুখোশই হয়তো অনেক সময় বেশি সত্য। আর লেম এটা করেন একই বিষয়কে নানা কোণ থেকে দেখিয়ে : ‘মৃগয়া’য় মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে রোবটকে, আর ‘মুখোশ’-এ রোবট খুঁজে বেড়াচ্ছে মানুষকে --- যেহেতু তার মধ্যে এই মর্মেই নিদানক্রমে পুরে দেওয়া হয়েছে। একটা গল্প আরেকটার প্রতিবিম্ব, আবার তা নয়ও। আর সেই জন্যই স্তানিসোয়াভ লেম-এর সব লেখাই এমন নতুন, উত্তেজন জাগানো, আবার কেমন যেন চেনা চেনা।” মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সমগ্র জীবনে বিশ্ব সাহিত্য পড়েছিলেন প্রচুর। দুই বাংলা মিলিয়ে নেক্সট একশো বছরে তাঁর মতো এমন বিদগ্ধ পাঠ

ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড

Image
  বইটা যখন হাতে নিলাম, একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়েছিল অজান্তেই। আমি কেন বইটা পড়তে চাইছি? কেন? ইদানীং কানাঘুষোয় খুব শোনা যাচ্ছে যে, আমাদের দেশ থেকে নাকি আস্তে আস্তে ‘ডেমোক্রেসী’ বিদায় নিচ্ছে। তার স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে অনেক বাদ-বিতন্ডা চলছে। মেট্রোপলিটন শহরের এই গরমাগরম বিবাদের ঢেউ আমাদের মফস্বলেও এসে পড়ছে। অনেকে অনেক কিছু বলছে। আমার মনে একটাই প্রশ্ন, ডেমোক্রেসী যদি চলেই যায়, তর্কের খাতিরে, তাহলে রাষ্ট্র আর আমার মধ্যেকার সম্পর্কটি ঠিক কি হতে পারে? ডেমোক্রেসীর জন্যে, জাস্টিসের জন্য আমরা পথে নেমেছি, পথ দখল করেছি। রাষ্ট্রযন্ত্র আমাদের চোখে ‘করাপ্টেড’। আমরা জ্বলন্ত বিবেকের মশাল নিয়ে পথে নেমেছি। আমাদের সম্বল প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ। অ্যালডাস হাক্সলি ১৯৩০ সালে দেখতে পেয়েছিলেন অনেক কিছুই। রাষ্ট্র যখন যন্ত্র, তখন এই রাষ্ট্রযন্তরটি ঠিক কি করতে পারে? এখন হাক্সলি সাহেব তো রিবেলিয়ান মানুষ নন, তিনি তার সাথে সাথে দার্শনিকও। ফলে তিনি মোটামুটি কয়েকটা পয়েন্টকে বেস করলেন এবং রচনা করলেন ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’। এটি ‘ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও, রাজাকে গদি থেকে টেনে নামাও’ গোত্রের বই নয়। ভাবনা-চিন্তা করার বই। কারণ ভেঙে-গুঁ

মামলা লিগাল হ্যায়

Image
  এই সিরিজটা দেখা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও একটাই দৃশ্য বারংবার চোখের সামনে ভেসে আসছে। একটি দৃশ্যে তনভী আজমী আর রবি কিষেণ বসে আছেন আদালতে। আদালতে তখন বিচার চলছে। এই সিরিজে তনভী আজমী বিচারক। তনভী আজমী রবি কিষেণকে নিয়ে এসেছেন একটাই মর্ম বোঝাতে, কেন রবি কিষেণের জাজের পদ গ্রহণ করা প্রয়োজন, কারণ, রবি কিষেণ বিচারক হওয়ার থেকে অ্যাডভোকেট থেকে যাওয়াটা বেশি প্রয়োজনীয় মনে করেছিল। তনভী আজমী বলছেন, একবার অ্যাডভোকেটদের দেখো, পুরো কেসটায় তারা জাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারা চায় জিততে। কিন্তু একবার আসামীর দিকে তাকিয়ে দেখো। তার একটাই মিনতি, সে যেন তার প্রার্থিত সঠিক বিচার পায়। সেই বিচারের জন্য সে বিচারকের কাছেই নীরব মিনতি করে। বিচারক তার রায় জানানোর পরে একবার তার চোখে চোখ রাখে। প্রার্থিত বিচার সত্যে অটুট থাকলে তাদের দৃষ্টি বিনিময়ে যে মহান মুহূর্ত তৈরী হয়, সেই মুহূর্তই সভ্যতার, মানবিকতার চরম মুহূর্ত। আমরা, ভারতীয়রা, সেই চরম মুহূর্তকে বড্ডো বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে। আমরা, প্রত্যেকটা মানুষ বিশ্বাস করি ন্যায় বিচারের। নচেৎ, রাজতন্ত্র কিম্বা একনায়কতন্ত্রে কোন একটা দেশে যে কি হাল হতে পারে, তার অনেক