Posts

Showing posts from April, 2024

‘পাসকরা মাগ’ এবং একটি বিতর্ক

Image
  কিছু কিছু সময়ে একদম লিখতে ইচ্ছে করে না, মনে হয়, অহেতুক ঝামেলায় জড়ানোর কোন মানে হয় না। পাথরে কি আর পেরেক গাঁথে? আবার কিছু কিছু সময় না লিখেও পারা যায় না। মনে হয়, হোক পেরেক ভোঁতা, হাতুড়ির বাড়িটা যে মেরেছিলাম, তা নিজেরও যেমন মনে থাকবে, আর বাড়ি মারার শব্দটা, অন্তত কয়েকজনের কিছু সময়ের জন্য হলেও অস্বস্তিতে ফেলবে।       অনেক অনেক আগের কথা। বটতলার বই প্রকাশিত হত। সস্তার বই। সস্তার বিষয়। সস্তার আমোদ। তারই একটা বই হল ‘পাশকরা মাগ’। নীচে ব্র্যাকেটে লেখা, “সামাজিক প্রহসন”। একজন এই বইটার প্রচ্ছদের একটা পোস্ট দিলেন ফেসবুকের একটি জনপ্রিয় বইয়ের গ্রুপে। তার কাজ পুরোনো বইয়ের প্রচ্ছদের ছবি শিল্পীর নামসমেত পোস্ট করা এবং জানানো, ওহে এমন সব বই আগে ছিল। তিনি আসলে দুগ্ধপোষ্য শিশু সেজে জনগনের প্রতি সাধারণ জ্ঞান জ্ঞাপন করছেন। কারণ, বেশরভাগ বইয়েরই কোন প্রাসঙ্গিকতাই নেই বর্তমান যুগে। আর থাকলেও তিনি জানানোর প্রয়োজন মনে করছেন না, তার একটাই কারণ, তিনি নিজেও সে ব্যাপারে জ্ঞাত নন। এই সমস্ত পোস্টের রেসপন্স প্রায় নেই বললেই চলে।       এখন, এই বইটার প্রচ্ছদসমেত পোস্টটি জনপ্রিয় হয়ে পড়েছে। বইটার নাম, প্রচ্ছদে নগ্নিকার

তন্দ্রাবিলাসিনীর পুস্তবালোকন

Image
২৫ শে বৈশাখের যত নিকটবর্তী হই, আমি নিজের অজান্তেই বড্ডো বেশি করে রবীন্দ্রঘেষা হয়ে যাই। এ যেন খানিকটা উপবৃত্তাকার পথে পৃথিবীর সূর্যের পরিভ্রমণ করার মতো। সারা বছরই রবীন্দ্রসূর্যের আলো মেখে থাকি বটে, তবে এই সময়টা যেন সূর্যালোকের আলোর অনেকখানি কাছে চলে আসা।       এইসময় হাতের কাছে যা পাই চোখ বোলাতে থাকি। তা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের লেখা হোক, কিম্বা তাকে নিয়ে লেখা হোক, কিম্বা তার জীবনী, কিম্বা তাকে দেখেছেন এমন কোন লেখক-লেখিকার স্মৃতিচারণ, কিম্বা তার প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন নিয়েও লেখা হাতের কাছে এলে পড়ে ফেলি, কিম্বা চোখ বোলাই।       সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজদাদা, তস্য পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তস্য পুত্র সুবীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তস্য পুত্র সুপ্রিয় ঠাকুর। জন্ম ১৯৩৮–এ। ফলে তার কাছে কোন সরাসরি রবীন্দ্রস্মৃতি নেই। আছে অনেকখানি শান্তিনিকেতন স্মৃতি। জীবনের একটা বড়ো অংশ কাটিয়েছেন শান্তিনিকেতনে। এমনকি শান্তিনিকেতনের পাঠভবনের অধ্যক্ষও ছিলেন। পরবর্তীকালে বিশ্বভারতী কর্মসমিতি এবং ট্রাস্ট ডিভের সদস্য।       বিদ্বান ব্যক্তি। লিখেছেন ছেলেবেলার শান্তিনিকেতনকে নিয়ে। ১৪৪ পাতার বই। বিশ্বভারতী

প্রধন্যারামায়ণ – ২

Image
  বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতবর্ষে ‘রামরাজ্য’ আনার চেষ্টা হচ্ছে । এই যে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বলা হচ্ছে, তার মূল ভিত্তি কি? চ্যাটজিপিটি বলছে, " Ramrajya" represents good governance, development, and the preservation of cultural and religious values. They often portray themselves as working towards establishing a modern-day equivalent of Ramrajya, emphasizing principles such as good governance, social harmony, and economic progress.       সাধু উদ্দেশ্য, সন্দেহ নেই, কিন্তু প্রশ্ন অনেক। একটা বড়ো প্রশ্ন, রামরাজ্যে রাম রাজা হন। অর্থাৎ, একজন মানুষের হাতে গোটা রাজত্ব । যার বর্তমান অর্থ, অটোক্রেসি --- it is a system of government in which absolute power is held by the ruler, known as an autocrat, এখানে সেরকম হবার সম্ভবনা থেকেই যায়, রামরাজ্যের প্যাটার্ন অনুযায়ী, আধুনিক ভারতে শীর্ষে কে থাকছেন? সেই অনুযায়ী, তার কথাই কি শেষ কথা? এক্কেবারে শেষ...!!! ???       এসব নিয়ে মাথা ঘামাবার লোক অনেক আছে । আমি অন্য বিষয় নিয়ে ভাবছি। আমি ভাবছি এর প্রায়োগিক বিষয়গুলো নিয়ে। এবং সেখান থেকে, আমরা যদি ব

প্রোজেক্ট কাদম্বরী দেবী

Image
এখনকার সময়ে স্কুলের ছেলেমেয়েদের প্রায় প্রত্যেকটা বিষয়েই একটা অবধারিত টাস্ক করতে হয়। তাকে বলে ‘প্রোজেক্ট’। বেশ ভারী ভারী বিষয় নিয়ে হয় এই প্রোজেক্ট। খাতা বানাতে হয়। হাজারো রকমের বিষয়োদ্দিষ্ট তথ্য জুড়ে জুড়ে উক্ত বিষয়টাকে প্রতিষ্ঠা করার নামই হল ‘প্রোজেক্ট’। প্রোজেক্ট করার সময়টা, ছেলেমেয়েরা নাওয়া খাওয়া ভুলে যায়। তবে, অনেক ছেলে-মেয়েকে, আমাদের এখানে, আমি দেখেছি, সাইবার ক্যাফেতে লাইন দিতে। ক্যাফের দাদারা বিষয়টার যতরকম তথ্য টুক্‌ করে ছবিতে ও লেখাতে এক জায়গায় জড়ো করে তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে, একটু ভালো ভালো কথা জুড়ে প্রিন্ট আউট বের করে দেয়। ছেলে-মেয়েদের কাজ হল, খাতায় সেগুলোকে নিজের হাতের লিখে ফেলা এবং ছবিগুলোকে সাঁটিয়ে ফেলা। ব্যাস, হয়ে গেল প্রোজেক্ট। কিছু টাকা খরচ করলেই যেখানে আর চাপ নেই সেখানে বিষয়টার গভীরে গিয়ে দু-দশটা বই খোঁজার হ্যাঙ্গামা কে করে রে বাপু? এত কথা কেন বলছি ? সুব্রত রুদ্রের ‘কাদম্বরী’ নামক বইটির পাতা উলাটাতে গিয়ে আমার একই অবস্থা হল। লজ্জার মাথা খেয়েই বলছি, আমি বইটার ডিজিটাল ভার্সান পড়েছি। ভাগ্যিস পড়েছি। কারণ এই বই কিনলে আমার কোন উপকার হত না। কারণ, ইন্টারনেট এতটাই শক্তিশালী হয়ে গ

ভারত সন্ধানে

Image
  Post Truth: Relating to or denoting circumstances in which objective facts are less influential in shaping public opinion than appeals to emotion and personal belief.   ৬ এপ্রিল তারিখে একটি জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্রে একটি ছোট্ট কলাম চোখে পড়েছিল। তারা আবার ইংরেজী সংবাদপত্র থেকে জেনেছেন, স্কুলের সিলেবাস, বিশেষত, ইতিহাসের সিলেবাসে বেশ কিছু বড়োসড়ো রদবদল হচ্ছে, যা সত্য অর্থে আপত্তিকর। ১১ এপ্রিল তারিখ উক্ত সংবাদপত্রে হিন্দোল ভট্টাচার্য মহাশয়ের একটা বড়ো কলাম বের হয়, যেখানে এই রদবদলের উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমাদের এদিকে এ নিয়ে তেমন হইচই হচ্ছে না। কারণ, ইতিহাস সত্য হোক কিম্বা মিথ্যা, বাবা-মায়েরা কেবল একটাই জিনিস চান, আর তা হল এই যে, এইসব ইতিহাসপাঠ অত্যাবশ্যকরূপে তার সন্তানকে ভালো রেসাল্ট তথা উন্নত ‘চাকর’ বানাতে সক্ষম কি না। কিন্তু দেশ জুড়ে যে এর একটা বড়োরকম বিবাদ হচ্ছে, তা সর্বভারতীয় সংবাদপত্র, ব্লগ, ভ্লগ, ম্যাগাজিন , ইন্টারনেট ইত্যাদি দেখলে বেশ টের পাওয়া যায়। ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে --- এই দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে একটাই প্রশ্ন, প্রকৃত ইতিহাসটি তাহলে কি? যদি ‘প্রকৃত’ জানতে সক্ষম হই,

প্রধন্যারামায়ণ – ১

Image
  “ আয়ুষ্যমারোগ্যকরং যশস্যং সৌভ্রাতৃকং বুদ্ধিকরং শুভং চ। শ্রোতব্যমেতন্নিয়মেন সদ্ভিরাখ্যান্মোজস্করমৃদ্ধিকামৈঃ।। ১২৮ । ১২৫ ।। ” (যুদ্ধকান্ড)         একটি বিখ্যাত মহাকাব্য বাল্মীকী রামায়ণের ষষ্ঠকান্ড, যার নাম ‘যুদ্ধকান্ড’, আমরা আদর করে ডাকি ‘লঙ্কাকান্ড’, সেই লঙ্কাকান্ডই শেষ হচ্ছে এই শ্লোকটি দিয়ে। এর বঙ্গার্থ হল --- এই কাব্য আয়ু, আরোগ্য, যশ এবং সৌভাতৃত্বের বিবর্ধনকারী, উত্তম বুদ্ধিবৃত্তির জনক ও মঙ্গলকর। এতএব, সুখসমৃদ্ধির কামনায় সৎপুরুষগণের এই উৎসাহব্যঞ্জক ইতিহাস যথানিয়মে শ্রবণ করা কর্তব্য। এর পূর্ববর্তী ১৮ শ্লোক জুড়ে (১০৭ ~ ১২৪) রামায়ণের মাহাত্ম্যের কথা বলা হচ্ছে। পূর্বাপর অন্যান্য কান্ডের শেষে এমন কোন মাহাত্ম্য নেই যখন, তখন বোঝা যাচ্ছে বাল্মীকী মুনি এই কান্ডের পরেই রামায়ণ সমাপন করতে চাইছেন। ১০৭ এর ঠিক আগের শ্লোকগুলোর বিষয়বস্তুগুলো মূলত কি কি? ১। যুদ্ধে রাবণের পরাজয় ও সীতার অগ্নিপরীক্ষা ২। অযোধ্যায় রামের আগমন, ভরত কর্তৃক রাজ্যলাভ এবং শ্রীরামের রাজ্যাভিষেক ৩। রামরাজ্যের বর্ননা এবং রামের রাজত্বকালের সময় বর্ননা       এর ঠিক পরেই আসে গ্রন্থমাহাত্ম্য বর্ণন। অর্থাৎ, এটুকু পরিস

তাঁকে ছোঁয়া গেল কি?

Image
  এ যেন এক বালিকা ঘরের এক কোনে সূঁচ-সুতো নিয়ে বসেছে। খেলাচ্ছলে গৌরী বালিকা মালা তৈরী করছে শিব ঠাকুরের জন্য। পাশের ঝুড়িতে লাল-নীল-হলুদ হরেকরকমের ফুল। আপনমনে যে ফুল হাতের কাছে উঠছে তাই সূত্রাকারে গাঁথা হচ্ছে। তার কোন নির্দিষ্ট ছন্দ নেই, তাল নেই, লয় নেই। তবুও যে মালা গেঁথে সে শিব ঠাকুরের গলায় পরাল, তা অনিন্দ্যসুন্দর। তেমনই, কখনও সেকেন্ড পার্সন ন্যারেটিভে, কখনও ফার্স্ট পার্সন ন্যারেটিভে, কখনও থার্ড পার্সন ন্যারেটিভে; কখনও চলিত ভাষায়, কখনও বা সাধু গদ্যে; কখনও কাব্যের রূপমায়, তো কখনও গদ্যের আবেগে; কখনও বা কল্পিত সত্য, কখনও বা সত্যের কল্পনা অবলম্বন করে সিদ্ধার্থোপন্যাসের এক ভাঙাচোরা স্থাপত্য রচনা করেছেন সন্মাত্রানন্দ।       “ ইতিহাস ও ঐতিহ্যসম্মত তথ্যসমৃদ্ধ একটি বুদ্ধজীবনী নতুন করে লেখা আমার এ উপন্যাসের উদ্দেশ্য ছিল না । বুদ্ধচরিত্র অনুধ্যান করে নিজের মনকে শান্ত ও সুসমাহিত করার জন্যই আমি বইটি লিখেছি । অর্থাৎ এ উপন্যাস আমি লিখেছি প্রাথমিকভাবে আমার নিজের জন্যই নিতান্ত ব্যক্তিগত প্রয়োজনে । ” লিখছেন লেখক সন্মাত্রানন্দ । এবং নিজের প্রয়োজনে বুদ্ধের ঠি