তন্দ্রাবিলাসিনীর পুস্তবালোকন
২৫ শে বৈশাখের যত নিকটবর্তী হই, আমি নিজের অজান্তেই
বড্ডো বেশি করে রবীন্দ্রঘেষা হয়ে যাই। এ যেন খানিকটা উপবৃত্তাকার পথে পৃথিবীর
সূর্যের পরিভ্রমণ করার মতো। সারা বছরই রবীন্দ্রসূর্যের আলো মেখে থাকি বটে, তবে এই
সময়টা যেন সূর্যালোকের আলোর অনেকখানি কাছে চলে আসা।
এইসময়
হাতের কাছে যা পাই চোখ বোলাতে থাকি। তা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের লেখা হোক, কিম্বা তাকে
নিয়ে লেখা হোক, কিম্বা তার জীবনী, কিম্বা তাকে দেখেছেন এমন কোন লেখক-লেখিকার
স্মৃতিচারণ, কিম্বা তার প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন নিয়েও লেখা হাতের কাছে এলে পড়ে
ফেলি, কিম্বা চোখ বোলাই।
সত্যেন্দ্রনাথ
ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজদাদা, তস্য পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তস্য পুত্র
সুবীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তস্য পুত্র সুপ্রিয় ঠাকুর। জন্ম ১৯৩৮–এ। ফলে তার কাছে কোন
সরাসরি রবীন্দ্রস্মৃতি নেই। আছে অনেকখানি শান্তিনিকেতন স্মৃতি। জীবনের একটা বড়ো
অংশ কাটিয়েছেন শান্তিনিকেতনে। এমনকি শান্তিনিকেতনের পাঠভবনের অধ্যক্ষও ছিলেন।
পরবর্তীকালে বিশ্বভারতী কর্মসমিতি এবং ট্রাস্ট ডিভের সদস্য।
বিদ্বান
ব্যক্তি। লিখেছেন ছেলেবেলার শান্তিনিকেতনকে নিয়ে। ১৪৪ পাতার বই। বিশ্বভারতীর
বিখ্যাত ছাপাখানা থেকে বের হলে কত পাতার দাড়াত জানি না, তবে আনন্দ পাবলিকেশান
বইয়ের সাইজ বর্গাকার করেছে, তেইশ লাইনের এক-একটা পাতার ফন্ট সাইজ বাড়িয়েছে বেধড়ক,
যেন মনে হয়, এ বই মোটা চশমার বুড়োহাবড়াদের জন্য, সাথে কয়েক পাতার নির্দেশিকা যুক্ত
করে এটাকে মোটামুটি দেড়শো পাতায় নিয়ে যেতে চেয়েছে, পারে নি, দাম করেছে মাত্র
দেড়শো। বইটার মুদ্রণ ২০১২ সালের, জানি না, এখন এর দাম কতো।
আমি
বিয়াল্লিশ ডিগ্রীর গরমের নিস্তব্ধ দুপুরে জানালাগুলোর ভারী পর্দা টেনে দিই। মাথার কাছে মাটির জালার
ঠান্ডা জলের বোতল নিই। পাখা পুরোদমে চালানো থাকে। প্রার্থনা করি কারেন্ট
যেন না যায়। বালিশে মাথা দিই। ছড়ানো চুল বালিশের বাইরে লুটোতে দিই। একটা পর্দা খুব
অল্প সরিয়ে দিই। পাখীর ক্লান্ত ডাক শুনতে শুনতে বইটা পড়ি। পড়তে পড়তে ঝিমোতে থাকি। এবং এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
এই
তন্দ্রাবিলাসের মধ্যে দিয়ে আস্তে আস্তে, দিনে দিনে বইটাকে টেনে হিঁচড়ে পড়তে থাকি।
কারা যেন আমার চোখের সামনে দিয়ে আসে আর চলে যায় --- ইন্দিরা দেবী, অভিজিৎ চন্দ,
তেজেশদা, গোঁসাইজি, উমাদি, ধনপতিদা, জয়সিং, সত্যেনদা...
তারপর
কি থেকে কি যেন একটা হয়ে গেল, বইটা আজ দুপুরে শেষ হওয়ার ঠিক এক পাতা আগেই একইভাবে
ঘুমিয়ে পড়লাম। রাত্রে শেষ পাতার সাতটি লাইন পড়ে রিভিউ লিখছি। হায়! ঘুমানোর আগে যদি
জানতাম যে বইটাকে মেরেই এনেছি, তাহলে রাত্রে অন্য একটা বই নিয়ে বসতে পারতাম!
বইটা
কেমন? পড়েই বুঝতে হবে। আমার কেমন লেগেছে সেটা ঠিক বুঝতে পারি নি, এখন লেখার সময়েও
কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। নিস্তরঙ্গ একটি লেখা। সে লেখার অবশ্যই মাধুর্য আছে। সে
মাধুর্য তন্দ্রাবিলাসের সুখে, না লেখনীর আন্তরিকতার মধ্যে তা ঠাহর কেউ করতে পারলে এ
হতভাগিনীকে জানিয়ে দেবেন।
অগ্রিম
ধন্যবাদ।
=========================
ছেলেবেলার শান্তিনিকেতন
সুপ্রিয় ঠাকুর
আনন্দ পাবলিকেশান
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৫০ টাকা
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সমর্পিতা
Comments
Post a Comment