Posts

শারদীয়া ২০২৪

Image
১ লেখিকাকে যখন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এই গল্পের বিষয়বস্তু কি? উনি উত্তর দিয়েছিলেন, সেটা জানতে গেলে তো পড়তে হবে। ভাগ্যিস কথাটা বলেছিলেন ! সর্বাণী মুখোপাধ্যায় আমাকে প্রতিবারই চমকে দেন তার লেখার বিষয়বস্তুর জন্য। এমন অ-সাধারণ সব বিষয়বস্তু বাছেন, যা একদিক থেকে অস্বস্তিকর, কিন্তু অন্যদিক থেকে প্রয়োজনীয়ও বটে। ‘যো * নিকীট’ উপন্যাসটিতে প্রথম নজর কাড়েন উনি। ওই একটি মাত্র উপন্যাস, যা ওনার লেখা, নিয়ে লাগামছাড়া হইচই পড়ে গিয়েছিল। তার কারণ, শিরোনামের অভিঘাত অধিকাংশ বাংলার তথাকথিত ভদ্র শিক্ষিত পাঠককূল সহ্য করতে পারেননি। বিষয়বস্তুতে যাওয়া তো আরও দূরের কথা। যারা বইটার মধ্যে আদিম কদর্যতা খুঁজতে গিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই হতাশ হয়ে আরও ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন, আর বাকিরা বিস্মিত হয়েছিলেন। আমি বিস্মিত হয়েছিলাম, লেখিকার সাহস দেখে। লেখিকার লেখার ক্ষমতা দেখে। তার পরের বছরের এবং এই বছরের উপন্যাস নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয় নি। কারণ অমন কোন শিরোনাম উনি ব্যবহার করতে পারেন নি। অথচ, এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু নিয়ে লেখার কথা খুব কম লেখক ভাবতে পারেন। লিখেছেন কজন, আমি জানি না। আমার পড়া এই প্রথম। লেখার বিষয়বস্তু ইন্টারসে * ক্

স্ত্রী ২

Image
  সিনেমাটা দেখতে দেখতে আমার একটা কথা মনে হচ্ছিল বারবার, আপনারাও একবার ভেবে দেখতে পারেন –       যতদিন মনুষ্য প্রজাতি জীবিত থাকবে, ধর্ম, সমাজ, নীতি-নৈতিকতা, বিজ্ঞান ইত্যাদি সমস্ত কিছুর উপরেও একটাই বিষয় নিজেদের মধ্যে লড়াই করবে। কোন একজন কোনো এক সময়ে অপরজনের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে চলবে।       সেটা হল দ্বিজাতিতত্ত্ব – খুব ভাল করে বললে, স্ত্রীজাতি এবং পুরুষজাতির প্রাধান্য দ্বন্দ্ব।       এই মুহূর্তে সারা বিশ্ব জুড়ে, কোথাও আমার মনে হয়, পুরুষপ্রাধান্যতা থেকে আস্তে আস্তে স্ত্রীপ্রাধান্যতার দিকে সমস্ত মানবসমাজ ‘শিফট্‌’ করছে। খুব ধীরে ধীরে হলেও করছে।       কীভাবে? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে, সমগ্র সমাজে, কর্মক্ষেত্রে স্ত্রীজাতির খুব একটা বিচরণ ছিল না। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই আস্তে আস্তে নারীরা কর্মক্ষেত্রে আসতে একরকম বাধ্য হয়, এবং তাদের কর্মকুশলতা কিছু কিছু ক্ষেত্রে রীতিমতো প্রাধান্যতা পেয়ে যায়। সমগ্র ইউরোপ এবং আমেরিকা যুদ্ধের কারণেই, মেয়েরা সংসার থেকে সরে এসে মূল সমাজে যোগদান করতে শুরু করে। তার আগে, মেয়েদের কর্মকান্ডে তেমন করে দেখা গিয়েছিল কি?   ঠিক তেমনই, আমাদের এদিকে, মানে পশ

আর্থার সি ক্লার্ক গল্পসমগ্র ১

Image
  কল্পবিজ্ঞান – কল্পবিশ্ব – গল্পপাঠক এই ত্রিবেণীতীর্থে আমি কোথায়? পাঠকের আসনে। বই পড়তে পড়তে, মানে যতটুকু পড়েছি আর কি, তাতে করে, কিছু কিছু পাবলিশিং হাউসের প্রতি আমার একটা বিশ্বাসবোধ অবচেতনেই জন্মে গেছে। মনে হয়েছে, অন্তত, এ আমাকে ঠকাবে না। দামে বেশি মানে ভাল হলে আমার কোন আপত্তি নেই। কল্পবিজ্ঞানের কোন গল্পের অনুবাদ যদি কল্পবিশ্ব করে থাকে, তাহলে, আমি ঠিক জানি, সার্থক অনুবাদ না হলেও, গছানোর মতো অনুবাদ তারা করবেন না। সার্থক অনুবাদ নিয়ে বিতর্ক অনেক থাকে। ফলে সেই জায়গায় পৌছচ্ছে কি না, তা নিয়ে অনুবাদ বিশেষজ্ঞরা কথা বলবেন। আমরা, সাধারণ পাঠক-পাঠিকারা, অনুবাদের ভাষা যদি আমাদের সাথে ‘কমিউনিকেট’ করতে পারে অতি সহজে, তাহলেই বর্তে যাই। কল্পবিশ্বের অনুবাদকেরা আমাকে কখনই হতাশ করে নি। করে নি বলেই, দাম একটু বেশি দিয়ে হলেও আমি চোখ বন্ধ করে কিনি। যদিও, আমি এখনও সুলভ সংস্করণ, স্টুডেন্ট সংস্করণ কিম্বা পেপারব্যাকের কথা বলে যাব। অথবা কিন্ডল এডিশন, যেখানে দামটা একটু কম। আর আমাজনে বইগুলো পাওয়া গেলে সোনায় সোহাগা। পোস্টাল খরচ বাজারে আলু-বেগুনের দামের মতো বাড়ছে। সেটা কখনই কাম্য নয়। অন্তত আমাজনের জঙ্গলে থেকে...

অনুবাদ পূজাবার্ষিকী ২০২৪

Image
  পাঁচ বছর আগেও , পূজাবার্ষিকী কেনার জন্য বাবার প্যান্টের পকেট থেকে টাকা হাতিয়েছি বাবা জেনেও না জানার ভান করেছেন। মায়ের রান্নার কৌটো থেকে কখন যে এক-দুশো টাকা ' ইঁদুরে ' নিয়ে গেছে মা টেরও পান নি। এমনকি আমার ' ন্যাতা-ক্যাতা ' র হাড়ির শেষ সম্বলটিও খরচ করে ফেলেছি। রাতের অন্ধকারে জেমস বন্ড* আমার জানালায় টোকা দিয়ে পূজাবার্ষিকী আমার হাতে পাচার করেছে। কিম্বা ভোরবেলা দড়ি বেধে ঝুলিয়ে রাখা বাজারের ব্যাগে ' মাল ' ট্রান্সফার করেছে।          তারপর , আস্তে আস্তে কখন যেন মনে হয়েছে , এ বড়ো অন্যায়। না। বাবা-মা-র প্রতি নয় , নিজের প্রতি। সময় এবং অর্থের মুল্য সম্যকভাবে জানা প্রয়োজন। কারণ আমি বড়ো হচ্ছি। আমাকে এ ছেলেমানুষী মানায় না একদম। আমি মা-কে বললাম , মানে এই বইটা হাতে নিয়ে তাকে দেখিয়ে বললাম , দেখো আমি বাড়ছি মাম্মি। মা রোষাকষিত নয়নে তার চালের ড্রামের দিকে একবার তাকিয়েই বেলন হাতে নিলেন। আমি বললাম , বৃথা করো এ উদ্যম মাতঃ , আমি এই একটিই বই এবার কিনছি। বাস... আমার পূজাবার্ষিকী বাজার কমপ্লিট।        এই একটা বই ' লোকাল ' থেকে সরে এসে ' গ্লোবালের ' জানালা খুলে দিয়েছ

তিন বন্ধু, একটি স্টোর, এবং সময়ের পরপার

Image
  তিন বন্ধু – সোতা, কোহেই এবং আতসুয়া । এক অপরাধ করার পর খুঁজছে আশ্রয়। লুকিয়ে থাকার একটা জায়গা। সোতা’র মাথায় যে আশ্রয়টি এসেছিল, শহরের একটু বাইরে, কিন্তু শহর থেকে একদম দুরেও নয়, তা হল, একটি পরিত্যক্ত জেনারেল স্টোর – নামিয়া জেনারেল স্টোর। উপায়ান্তর না দেখে তারা সেখানে আশ্রয় নেয়। মধ্যরাত। মাঝ আকাশে পূর্ণচন্দ্র। তিনজন নামিয়া স্টোরে ঢুকে পড়ে। শাটার নামানো এক অতি সাধারণ স্টোর, যার সামনে একটা আদ্যিকালের মেল স্লট। আগেকার দিনে যারা চিঠি লিখত, ডাকপিওন এসে চিঠির উদ্দিষ্ট প্রেরকের মেইল স্লটে চিঠি ফেলে যেত। যাই হোক, পেছনের দরজা দিয়ে স্টোরে ঢুকে পড়ে তিনজনে। দরজার সামনে একটা মিল্ক ক্রেট। স্টোরের ভেতরে হাবিজাবি পরিত্যক্ত জিনিসের মধ্যে ছিল মোমবাতি। সেটাই জ্বালানো হল। এবং, ঠিক সেই সময়ে, তিনজনকে চমকে দিয়ে, মধ্যরাত্রে, মেইল স্লটে এসে পড়ল একটা চিঠি! ফোনের যুগে চিঠি! হাড় হিম করা ব্যাপার। কে ফেলল? পুলিশ? না কি কেউ তাদের দেখে ফেলেছে? এখন পুলিশ ডাকার আগে একটু মস্করা করে নিচ্ছে! তিন বন্ধু কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠি খুলে দেখল, একটা সমস্যা লেখা আছে চিঠিটার মধ্যে। সমাধান চাইছে একজন মেয়ে – মুন র‍্যাবিট। আতসুয়া এ পর

না উত্তর

Image
  বনজ্যোৎস্নার নিথর শীতলতা থেকে আর্তনাদ উঠে আসে,     "রাত কত হল?"      মেলে না উত্তর।   একটু পরে, ঘামে ভেজা অন্ধকার জিজ্ঞাসা করে,     "ভোর কি হল?"      পেল না উত্তর।   আবার, ক্লান্ত রাতপাখী প্রশ্ন করে, করুণ স্বরে,     "আলো কোথায়?"      এল না উত্তর।

মানুষ জেগে থাকছে

Image
শিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকতে কি ভালোই না লাগে! শাড়ির আঁচলটাকে গাছ কোমর করে পেঁচিয়ে পাড়া দাপিয়ে হল্লাবাজি করে যখন বাড়ি ফিরি , মায়ের একটা চাপড় ব্লাউজ ভেদ করেও পিঠে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। বাবা মুচকি হাসে। বোধ করি বুঝতে পারে , আর তো বেশিদিন নেই। বয়স বড়ো বালাই। তারও এমন একটা দিন ছিল , যখন ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে তারা দুই ভাই মিলে চড়ুই পাখী ধরত। আজ তা করলে লোকে সাইকায়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাবে। এতএব , মেয়ে যে বয়েসটা পার করেও করতে চাইছে না , তার অন্তরের উদগ্র ইচ্ছার মতো , কিচ্ছুক্ষণ তার অস্তিত্ব না হয় থেকেই যাক তার জীবনে।   কেবল আমার এই ডানপিটে দিশেহারা উড়নচণ্ডী রূপ দেখে আমার হতভাগা বলে , তোকে দেখে মনে হচ্ছে , বিয়ে না করলে আমার এমন কি আর ক্ষতি হবে ? আমি জানি , উত্তরে তার টি শার্ট ভেদ করে আমার অমোঘ চপেটাঘাত লাল দাগ রেখে গেছে , ঠিক আমার মায়ের মতো।   হতভাগার সাথে হেটে হেটে যখন ফিরছি , বিশ্বকর্মা পূজোর প্যান্ডেল থেকে , কিম্বা প্যান্ডেল সংলগ্ন ছেড়ে আসা ' গাদী ' খেলার কোর্ট থেকে , তখন সন্ধ্যে নামছে। আস্তে আস্তে পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ছে , কিন্তু মানুষ জেগে থাকছে...