Posts

পিঞ্জর

Image
  “যে কোনো মেয়ে, সে হিন্দু হোক কি মুসলমান, যে সব মেয়েরা ফিরে গিয়ে আপন আপন ঘরে ঠাঁই পাচ্ছে, মনে করো তাদের সঙ্গে পূরোর আত্মাও সঠিক ঠিকানায় পৌঁছে গেছে।”        দেশভাগের ক্ষতচিহ্ন আর তার থেকে যে বিষ ছড়িয়েছে, আজও আমরা তার ভুক্তভোগী। অন্তত আমাদের আগের জেনারেশন। আমাদের মধ্যে কিংবা আমাদের পরে এর প্রভাব অতটা সুদূরপ্রসারী হবে না, এবং আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাবে। পড়ে থাকবে এক টুকরো মর্মান্তিক ইতিহাস।        এই ইতিহাস আমাদের গল্পে-গাঁথায়। এই ইতিহাস আমাদের চারপাশের রাস্তায়, বাড়িতে, ক্ষেতে-খামারে। ভারত এবং প্রতিবেশী দুটি দেশই এই ইতিহাস বয়ে নিয়ে চলেছে, আজকের যুগে সঠিক ও সটীক প্রমাণের কারণে যাকে আর অস্বীকার করা যায় না। অমৃতা প্রীতম দেশভাগের শিকার। অমৃতা দেশভাগের পরে দেশভাগের কুটিল পরিণতির সাক্ষী। অমৃতা রচনা করেছেন ‘পিঞ্জর’।        এই উপন্যাস বহুপঠিত। বহু আলোচিত। আর তাই আমার বলার জায়গা খুব কম। অহেতুক আবেগপনায় ভাসতেও মন চায় না। কারণ, অনেক আবেগ আমরা খরচ করে চলেছি অহেতুক। নিজেদের আবেগী বলে গর্ববোধ করি বটে, বুঝতে চাই না—এই আবেগ ...

একান্ত বিষয়

Image
  সন্তান কি সবারই প্রিয়? কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কদাপি নয়। পিতা-কন্যার সম্পর্ক বড়ো মধুর…        খবরের কাগজ কিংবা নিউজ চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা আমার পাশের পাড়া — রোজ একথা মিথ্যা প্রমাণ করে চলেছে।        কারণ, কথাটা সর্বৈব মিথ্যা। এরকম একটা মিথ চালানোর পেছনে পারিবারিক ষড়যন্ত্র আবহমানকাল ধরে চলে আসছে। তারও ভিত্তি সমাজ। বৈদিক যুগ কিংবা প্রস্তর যুগের অনেক ইতিহাস এখন আমাদের চোখের সামনে।        এখন এর একটা পর আছে। সেই ‘পর’টা হল — যদি সেই সন্তান স্বাভাবিক না হয়? তাহলে? গোদের উপর বিষফোঁড়া। আজীবন সন্তানকে সঙ্গ দিয়ে চলতে হবে, সন্তান আমায় সঙ্গ দেবে না। আমার ভবিষ্যতের অ্যাসেট অন্ধকারে চলে গেল। তখন কি হবে? এর উত্তর খুঁজছেন কেনজাবুরো ওয়ে। জাপানের দ্বিতীয় নোবেলপ্রাপ্ত ঔপন্যাসিক। সাহসী লেখা। বড়ো মর্মান্তিক লেখা। A Personal Matter — বাংলায় অনুবাদ হয়েছে ‘ একান্ত বিষয় ’ নাম দিয়ে। অনুবাদ করেছেন শওকত হোসেন। মন্দ নয় অনুবাদটা। বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় এই গল্পের একটা ইতিহাস আছে ছোট্ট করে — লেখকের ব্যক...

জুঠন

Image
  ‘জুঠন’ শব্দটার অর্থ কি? উচ্ছিষ্ট। ভারতবর্ষে মানুষ উচ্ছিষ্ট হয়। আগেও হত। এখনও হয়। যারা এই কথাটাকে মেনে নিতে চাইবেন না তাদের জন্যে আমি একটাই শব্দ উচ্চারণ করব --- দলিত। প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত কত দলিত নীরবে এক যন্ত্রণাময় জীবন যাপন করছে, সে কি আর আমরা জানি না? এখন তো এদের নিয়ে অনেক সিনেমা কিম্বা ওয়েব সিরিজ হয়। ভারতবর্ষের ‘গোবলয়’ বিখ্যাত হয়েই আছে দলিতদের ওপর নিকৃষ্ট ব্যবহারের জন্য। দলিত শব্দের অর্থ করা হচ্ছে ‘দমিত’, ‘চূর্ণ-বিচূর্ণ’, বা ‘দলিত-নিপীড়িত’। এরা মূলত ভারতের নিম্নবর্ণের সেইসব মানুষেরা, যারা ঐতিহাসিকভাবে বর্ণপ্রথার কারণে সমাজে বৈষম্যের শিকার হয়েছে। বুদ্ধের আমলের কথা ভাবুন। সে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে! এমনকি বৈদিক সভ্যতা, ইতিহাস যেখানে স্পষ্ট নয়, সেই সমাজও এর বাইরে নয়। দলিতরা প্রধানত চতুর্বর্ণ ব্যবস্থা (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত, তথাকথিত ‘অস্পৃশ্য’ শ্রেণির মানুষ, যাদের সমাজের নিচু স্তরে ঠেলে রাখা হয়েছিল। ঠেলে রাখা হয়েছিল বলার থেকে বলা ভাল, ফেলে রাখা হয়। আর তা কতটা নারকীয়তার সঙ্গে হয়, তার উদাহরণ ‘দলিত সাহিত্যে’ ভুরি ভুরি আছে। তারই এক সাংঘাতি...

অ্যানিমেল ফার্ম

Image
  “একটা বিশেষ সময়কালকে কেন্দ্র করে রচিত হলেও, একথা অনায়াসে বলা যায় যে এই উপন্যাস প্রকৃত অর্থেই কালজয়ী। বর্তমান সময়েও, 'সব পশুরাই সমান' থেকে 'সব পশুরাই সমান কিন্তু কিছু পশু অন্যদের চেয়ে বেশি সমান' হয়ে ওঠার এই আদর্শচ্যুতির গল্পে, এই অনুবাদকের মতো পাঠকরাও প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাবে বলেই আমার বিশ্বাস।”       লিখছেন প্রবাল বসাক। ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ উপন্যাসের অনুবাদক। এই উপন্যাস ক্লাসিক উপন্যাস, কাল্ট উপন্যাস। নতুন করে কিছু বলতে যাওয়া বাতুলতা। আমি কেবল সেই সময় আর এই সময়ের মধ্যেকার সেতুটাকে খুঁজি। সেই সময়ঃ ------------- জর্জ অরওয়েল এই উপন্যাসটি লিখেছেন ১৯৪৫ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের শেষদিকে। গল্পটা, সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান, বিপ্লব, এবং তার বিকৃতির রূপকাঙ্গিক। 1. Mr. Jones = Tsar Nicholas II - রাশিয়ার শেষ রাজা, দুর্নীতিগ্রস্ত, গরিবদের দুঃখ-দুর্দশা বোঝেন না। 2. Old Major = Karl Marx - আদর্শবাদী, যারা পশুদের মুক্তির স্বপ্ন দেখায়, ঠিক যেমন মার্ক্স ‘শ্রেণীহীন সমাজ-এর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। 3. Animal Rebellion = 1917 Bolshevik Revolution - পশুরা খামার দখল ন...

1984

Image
  যে বই নিয়ে কয়েক লক্ষবার আলোচনা করা হয়ে গেছে, সে বই নিয়ে কি বিশেষ করে কিছু বলা যায়? না আমার মতো অতি সাধারণ পাঠিকার পক্ষে তা মানায়? অবশ্যই মানায় না। তবে কয়েকটা বিষয়কে সামনে আনা যেতেই পারে। বিশেষ করে কয়েকটা শব্দ, যা কালজয়ী, আর এই সময়ে দাড়িয়েও কি সাংঘাতিকভাবে প্রযোজ্য!       তার আগে একটা কথা বলে নেওয়া যাক। ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস এর আগে আমি দুটো পড়েছি। অ্যালডাস হাক্সলি-র আর রে ব্র্যাডবেরি-র। কিন্তু জর্জ অরওয়েল পড়ার সময় আমার মনে হচ্ছিল, এ যেন অন্য লেভেলের উপন্যাস। তুলনা না করেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, ডিস্টোপিয়ান অভিজ্ঞতায় এ আমার পড়া সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস। আর বুঝতে পারছি, হারুকি মুরাকামি কেন 1Q84 নাম দিয়েছিলেন তার উপন্যাসের।       মজার ব্যাপার ভারতে এই বই অনুবাদ হল ২০২৫ সালে। আর হল তো হল, একেবারে দু-দুটো! ১৯৪৯ সালের বই এখন অনুবাদ হচ্ছে! ভ্যালা রে বাঙালি! জানি না, এর মাঝে অনুবাদ হয়ে ‘আউট অফ প্রিন্ট’ হয়ে গেছে কি না, হলে তা আমার জানা নেই। অনুবাদ করেছেন দুইজন। রাকেশকুমার দাস এবং প্রবাল বসাক। একটা বেরিয়েছে কল্পবিশ্ব থেকে, আরেকটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাবল...

আবার রবীন্দ্রনাথ

Image
  “এই ক্ষুদ্র পুস্তকটির নাম আবার রবীন্দ্রনাথ কেন? নিজের রবীন্দ্রনাথ নামে এই রকমই একটি ক্ষুদ্র পুস্তক প্রকাশ পেয়েছিল আমার ষোলো বছর আগে। পরের পনেরো বছরে রবীন্দ্রনাথকে বিষয় হিসেবে টেনে এনে সামান্য কিছু লিখেছি আরও। সেইরকম কয়েকটি গদ্য এই ক্ষুদ্রায়তন গ্রন্থটিতে দিলাম। পাঠক, এই লেখাগুলিকে আমার একান্ত ব্যক্তিগত অনুভব বলেই গ্রহণ করবেন, এটুকুই অনুনয়। এখানে বলা যে-কোনো কথাকেই যে অক্লেশে উড়িয়ে দেওয়া যায়, তা আমি মানি।”       লিখছেন জয় গোস্বামী। তার রাবিন্দ্রীকী জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ে। এই পর্যায়ের বয়স ষোল বছর। ষোলটি বছরে এক কবি আর এক কবিবরকে নিয়ে কেমন জীবন যাপন করলেন?       “প্রথম দিনের সূর্য? হ্যাঁ, আমার কাছে রবীন্দ্রনাথই। কারণ মন তৈরির রেওয়াজ দরকার। এবং রবীন্দ্রকবিতার পাঠগ্রহণেই আমার কাছে তা সম্ভব। সংগীতশিল্পী নিয়মিত রেওয়াজে বসেন যাতে রাগ থেকে ভ্রষ্ট না হন, গাইবার সময়ে। সুরচ্যুত না হন। এমন অনেক রাগ আছে যাতে বিশেষ-বিশেষ স্বর লাগে না। মালকোষ যেমন পঞ্চমবর্জিত। খাম্বাজের আরোহণে রেখাব লাগে না। এরকম অনেক পাওয়া যায় সংগীতশাস্ত্রে। কিন্তু এমন কোনো র...

হার্ট ল্যাম্প

Image
  “Call the world a small place, or call it big, say that the world is round, giggle and say the world has become a small village… say something! No matter what you say, it makes little difference.” [HIGH-HEALED SHOES]       বানু মুস্তাকের গল্পগুলো পড়তে পড়তে বুকের কলিজা এক-একসময় যেন আমার ছিঁড়ে যাচ্ছিল। এমন নয় যে কেঁদে ভাসাচ্ছিলাম। কারন, আমার দেশের আর এক প্রান্তে, কি যেন অসম্ভব সব ঘটনা ঘটে চলেছে। যেন সেগুলো মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাথে তুলনীয়, কিন্তু, তবু কোথাও, যেন অনেক polished, এবং সেই কারণে আরও ভয়ঙ্কর।       আমার নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে হচ্ছে, কারণ, ইংরাজীটা আমি একটু আধটু পড়তে পারি, আর জানি, এ বই আর যাই হোক, বাংলায় অনুবাদ হবে না বোধহয়। বাংলার কোন লেখক-লেখিকা লিখতেও পারবেন না। আমায় ভুল বুঝবেন না। ওটা লেখক-লেখিকাদের অক্ষমতা নয়, অপারগতা। কারন, কেরল আর বাংলা এক নয় বলেই লিখতে পারবেন না। বাংলার যন্ত্রনা আর কেরলের সামাজিক যন্ত্রণার পার্থক্য আছে। ওটা অন্য জল-হাওয়ার গুণ। কিন্তু, যন্ত্রনা বা অবদমনের গল্পগুলো কোথাও যেন এক। একই কান্না, একই অস...