Posts

বাবা, পুরুষ দিবসে, এ লেখা তোমার জন্য

Image
যারা আমাকে অনেকদিন ধরে জানেন, আমার লেখা পড়েন, তারা জানেন, আমার বাবা-মা’র প্রিয়তম যে, সে আমি নই, আমার ভাই-ও নয়, আমার জ্যেঠতুতো-খুড়তুতো বোনেরাও নয় – সে আমার গডব্রাদার, আমার পিসতুতো দাদা । আমি যদি সমগ্র বিশ্বে কাউকে হিংসে করি, একমাত্র তাকেই। বাবা-মা’র ভালবাসায় ভাগ হয়ে যাওয়াটা আমি বরদাস্ত করতে পারি না, কিন্তু বরদাস্ত করতে হয়, কারন যতটুকু ঘাটতি পড়ে, তার অনেকটাই সুদে-আসলে সে কিছুটা মিটিয়ে দেয় আমাকে ভালোবেসে, বাকিটা আমি আদায় করে নিই।       এত কথা কেন?       কারণ, আমার পিতাঠাকুর, যার সঙ্গে কেবলমাত্র প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পর্ক দৈনিক সংবাদপত্রের মাধ্যমে, তিনি কি না পড়ছেন একটা আস্ত বই! কাজ থেকে ফিরে, চায়ের কাপ নিয়ে, একটু একটু করে চুমুক দিয়ে প্রচন্ড মনযোগী হয়ে পড়ছেন বইটা । এবং শুধু তাই নয়, বই পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছেন, জানলার বাইরে অন্ধকারে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছেন! বই যে খুব পড়ছেন, তাও নয়। পড়ছেন একটু একটু করে, বর্ষাকালে গরম ধোঁয়া ওঠা সুস্বাদু খিচুড়ি গরাসে মুখে তোলার মতো করে, কোন তাড়া নেই। শুধু তাই নয়, মায়ের সাথে মাঝে মাঝেই গুটুর গুটুর গল্প করছেন, যা সংসারের হিসাব নি

দ্য সাউন্ড অফ মাউন্টেন

Image
  কাওয়াবাতা-র এই পর্যায়ের উপন্যাসটি, যেটা আমি পড়ে শেষ করে উঠলাম, সেটা যদি কেউ শুরু করতে চান, তাহলে তাকে দুটো বিষয় একটু মাথায় রাখতে হবে, নচেৎ, এই উপন্যাস দুই-তিন পর্বের মধ্যেই একঘেয়ে লাগতে পারে। প্রথম বিষয় – যুদ্ধ। আমাদের জেনারেশান যুদ্ধ কি জিনিস, মানে, তার ডায়রেক্ট ইমপ্যাক্ট কি, তা জানে না। আমরা কোনদিন কোন যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করি নি, এমনকি, ভারত-পাকিস্থান কিম্বা ভারত-চীন যুদ্ধের ভয়াবহ প্রভাব আমাদের জনসমাজে তেমন করে পড়ে নি, অন্তত, ইউক্রেন কিম্বা প্যালেস্তাইনের দিকে তাকালে ব্যাপারটা আরও পরিস্কার হয়ে যাবে। কাওয়াবাতার এই উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে যখন বের হচ্ছে, সেই সময়কাল হল ১৯৪৯-১৯৫৪। অর্থাৎ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান শুধু পর্যুদস্থই হয় নি, সমগ্র জাতি এমন এক সংকটের মধ্যে দিয়ে এরপরের কয়েক দশক অতিক্রান্ত করেছিল যে, তার সামগ্রিক সত্ত্বাটিই একটা ভয়ানক অস্থিরতা এবং অনির্দেশ্যতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল। সামাজিক পরিকাঠামো, অর্থনৈতিক পরিকাঠামো এবং জাতির মূল্যবোধ --- এই তিনটে জায়গায় চরম দ্বিধা ও দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে তাকে চলতে হয়েছিল। ফলে একটা পরিবারেই মাত্র দুটো জেনারেশানের মধ্যেকার মূল্যবোধের

বিউটি অ্যান্ড স্যাডনেস

Image
  *** বিধিসন্মত সতর্কীকরণঃ রিভিউটা একটু ধীরে ধীরে, সময় নিয়ে পড়বেন, নচেৎ পড়বেন না। জটিল জিনিস, বুঝতে গেলে, সময় দিতে হয়।       এবার শুরু করা যাক ---   আমি না, সত্যি বলতে, এখনও ঠিক ধাতস্থ হয়ে উঠতে পারি নি। এ আমি কি পড়লাম! কাওয়াবাতা'র Beauty And Sadness আমাকে যেন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সম্পর্কের টানাপোড়েন এক জিনিস। কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে এক জটিল ধ্বংসাত্মক অন্ধকার, এক অন্ধ আবেগ ও মারণতৃষ্ণার উদগ্রতা, অতীতের জ্বলন্ত যন্ত্রনা বর্তমানে কাছের মানুষটার মধ্যে দিয়ে বীভৎসতার আর্তনাদ আমাকে বিহ্বল করে তুলেছে। ব্যাপারটা আগে বোঝা দরকার। ষোল বছরের ওটোকো প্রেমে পড়ে বিয়াল্লিশ বছরের সাহিত্যিক, বিবাহিত এবং এক পুত্রের জনক ওকি'র। ওটোকো প্রেগনেন্ট হয়ে পড়ে। তাদের সন্তানটি প্রসবের পরে মারা যায়। ওটোকো আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ওকি এবং ওটোকোর মায়ের চেষ্টায় সে বেঁচে ফিরে আসে। ওটোকোকে নিয়ে তার মা চলে যায় টোকিও থেকে অনেক দূরে। ওকি নিজেদের এই সম্পর্ক নিয়ে একটি বই লেখে, Girl Of Sixteen. বইটি বহুল জনপ্রিয় হয়। লেখকের স্ত্রী ফুকুমা প্রথমে পাগলের মতো হয়ে গেলেও যখন দেখে এই বইটিই তাদের সংসারের স্বচ্ছ

হাজার সারস

Image
  হাজার সারস – জাপানী সমাজে এর বৈশিষ্ট্য কি? বলা হয়, কোন মানুষ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে, তাকে তার পরিচতেরা মোট নয়শো নিরানব্বইটা কাগজের সারস বানিয়ে একটা বাক্সে করে উপহার দেয়। যাতে করে সে সুস্থ হয়ে ওঠার পর একটা সারস নিজেই বানিয়ে নিয়ে সারসের সংখ্যা এক হাজার করে ফেলতে পারে। জাপানে সারস সৌভাগ্য এবং দীর্ঘজীবনের প্রতীক। তারা বিশ্বাস করে, এতে করে ব্যক্তিটি হাজার বছর বাঁচবেন। কাওয়াবাতার এই উপন্যাসের ‘সারস’ অতীতের অপরাধবোধজনিত বিষন্নতা নামক অসুস্থতা থেকে বেরিয়ে আসার কামনা করে। সেই হাজারটি সারস আছে য়ুকোকি’র রুমালে। সাদা স্বচ্ছ রুমালে। যাকে দেখলেই কিকুজি বুঝতে পারে না, য়ুকোজিকে তার আপন অস্বচ্ছ, দ্বন্দ্ব এবং ক্ষোভপুর্ণ জীবনের সাথে যুক্ত করা উচিৎ হবে কি না। কাওয়াবাতার গল্পের মধ্যে আছে প্রকৃতি। আছে মানুষের সম্পর্কের এক জটিল দ্বান্দ্বিক পরিকাঠামো। আর আছে জাপানী সংস্কৃতি। এই পর্যায়ে উপন্যাসের অধিকাংশটা জুড়েই রয়েছে চা-উৎসব – ‘ chanoyu ’ বা ‘ sado ’ নামে যাকে জাপানে অভিহিত করা হয়। চেনা পরিচিত মানুষেরা বিশেষ দিনে এক জায়গায় বসে একত্রে চা-পান করেন। আমাদের এখানে পারিবারিক বিজয়া সন্মেলনীর মতো। গৃহকর্তা

স্নো কান্ট্রি

Image
১৯৬৮ সালে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পেলেন এশিয়ার দ্বিতীয় যে জাপানী ব্যক্তিটি, তিনি কাওয়াবাতা ইয়াসুনারি। জাপানের সাহিত্য জগতের যে কয়েকজন দিকপাল জন্মেছেন কাওয়াবাতা তাদের অন্যতম। কাওয়াবাতার নাম আগে শুনিনি, পড়া তো অনেক দূর অস্ত। আমাদের এখানে জাপানী সাহিত্য নিয়ে আমরা মুরাকারি কিম্বা হিগাশিনোর বেশি এগোতে পারি নি। এই কথা বললেই যারা হইহই করে এগিয়ে এসে আরও কয়েকজন জাপানী ধ্রুপদী সাহিত্যিকের নাম শুনিয়ে দেবেন, তাদের কড়জোড়ে বলি, দয়া করে সাহিত্য গ্রুপের সদস্যদের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞাসা করুন পাঁচজন জাপানী ধ্রুপদী সাহিত্যিকের নাম ও তাদের কটা বই তারা পড়েছেন সে নিয়ে সুচিন্তিত আলোচনা। তাহলেই মালুম পাবেন আমার কথা। আমি স্কুল কিম্বা কলেজ স্টুডেন্টদের তো বাদই দিলাম। তো, এই কাওয়াবাতার ঠিক কোন উপন্যাস দিয়ে শুরু করব, আমাকে কে বলবে? এতঃপর ইন্টারনেটের স্মরণাপন্ন হলাম, অধিকাংশই সমস্বরে বলল, স্নো কান্ট্রি। গডব্রাদারকে ফোন দিলাম। সে বললে, ‘স্নো কান্ট্রি’ ট্রাই করে দেখতে পারিস। এতএব, মহাজনো যেনো গত স পন্থাঃ!       কাওয়াবাতা’র ‘ইয়ুকিগুনি’ থুড়ি ‘স্নো কান্ট্রি’ পড়তে গিয়ে প্রথমেই আমার যা মনে হল, তা হল, তার উপন্যাসে প্রক

রামপ্রসাদ

Image
  ঐতিহাসিক চরিত্রের একটা বড়ো সমস্যা যখন সেই চরিত্রের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য গবেষকের হাতে নেই। সেই চরিত্র যদি ধর্মের সাথে যুক্ত হয়, তাহলে মুগ্ধ ভক্তকূল তার চরিত্রে অতিমানবিক সব ব্যাপার স্যাপার যোগ করে। সেই অতিমানবিক ব্যাপার স্যাপারগুলোকে ছাড়িয়ে আসল মানুষটাকে বের করে আনা বেশ কঠিন ব্যাপার। এর জন্যে প্রয়োজন একটা জীবন যাপন, একটা সাধনা।       সাধক কবি রামপ্রসাদের জীবনী যদি কেউ লিখতে চান, তো একই সমস্যা। তথ্য অপ্রতুল, কিছু লোকগুজব আছে, আর আছে অসংখ্য গান, যা মুখে মুখে অনেক পরিবর্তিত। ফলে তাঁর জীবন সম্পর্কে লিখতে গেলে একটা বড়ো সমস্যা --- তথ্য।       স্বামী বামদেবানন্দ রামপ্রসাদের ওপর লিখতে গিয়ে বলছেন, “অনেক সময় দেখা যায়, মহাপুরুষ বা সাধক মহাজনের জীবনী-সংগ্রহে বিশেষ কিছু পাওয়া যায় না। সেই জন্য অনেকে গ্রন্থ বাড়াইবার জন্য সামান্য ঘটনাবলীকে ফেনাইয়া নাটক বা উপন্যাস লিখিয়া বসিয়া থাকেন। রামপ্রসাদ-জীবনীতেও তাহার ব্যতিক্রম নাই। মহাপুরুষ-জীবনকে উপন্যাস-আকারে সাজাইয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি করা উচিৎ নয়। যতটুকু তথ্য ঠিক মত পাওয়া যায়, সেইটুকুই জনসমাজে ধরিয়া দেওয়া ভাল। জীবনী সংগ্রহ নাই

দ্য ভেজিটেরিয়ান

Image
  "Why, is it such a bad thing to die?"        এই একটা প্রশ্ন … মাত্র এই একটা প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে আছে সারা জীবনের যন্ত্রনা , অপমান , অনাদরের হিসাব। আমাদের চারপাশের অনেকেরই , জীবন সুখকর নয়। একটা বড়ো কারন, পরিবেশের প্রতিকূলতার কারণে যতটা তার থেকেও অনেক বেশি , সম্পর্কের ক্ষেত্রে submissive হয়ে থাকার কারণে। হয়তো কোন এক সময়ে , শোষিত ও নিপীড়িত হতে হতে মানুষের মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে , প্রশ্ন করে , মরে যাওয়াটা এমন কি ক্ষতির ? আমরা একে ‘ আবেগপ্রবণতা ’ বলে উড়িয়ে দিতেই পারি। আমরা বলতেই পারি , ফালতু ‘ সিন ক্রিয়েট ’ । কিন্তু যার মনে এই প্রশ্নটা উদিত হচ্ছে , সে যে সারা জীবন ধরে কত অগণিত যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে এসে এই কথাটা বলছে , আমরা ভেবে দেখি না। যদিও , বেশিরভাগ মানুষই অল্পে কাতর হয়ে এই কথা বলে স্রেফ সহানুভূতি আদায়ের জন্য। ফলে , যারা এই প্রশ্নের আর্তি নিয়ে সমাজের কাছে আসছে , তাদেরকেও আমরা , অনেক সময় , ধর্তব্যের মধ্যে আনি না।      লেখিকা হান ক্যাং ঠিক এই জায়গাটা থেকে প্রশ্ন রেখেছেন তার The Vegetarian উপন্যাসে , ইয়ং-হেই নামক প্রোটাগনিস্ট মহিলাটির মধ্যে দিয়ে , আর আমি এই দৃষ্টিকোণ থেকেই উ