Posts

জেন আয়ার - হেলেন বার্নস

Image
  “আমি বড় খুশি, জেন; যখন তুমি শুনবে আমি আর নেই, আমার জন্য দুঃখ কোরো না। দুঃখ পাওয়ার ব্যাপারই নয় এ। আমাদের সবাইকেই তো একদিন মরতে হবে; আর যে অসুস্থতা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, তা ব্যথাহীন; খুব ধীরে ও কোমল স্পর্শে সে আমাকে টানছে; আমার মনে কোনো গ্লানি বা অশান্তি নেই। আমার পেছনে এমন কাউকে রেখে যাচ্ছি না, যে আমার জন্য শোক করবে। আমার শুধু বাবা আছেন, কিন্তু তিনিও হালে বিবাহ করেছেন, তাই আমার জন্য বিশেষ শোক করার সময় তাঁর হবে না। অল্প বয়সে এভাবে মারা গিয়ে আমি ভবিষ্যৎ জীবনের অনেক দুঃখ-কষ্টকে এড়াতে পারব। এই পৃথিবীতে অনেক ওপরে যাওয়ার জন্য আমার বিশেষ কোনো প্রতিভা ছিল না; সারাজীবন সবার কাছে আমি দোষী হয়েই থাকতাম।” সাহিত্যে কালোত্তীর্ণ গল্প–উপন্যাস–কবিতা–প্রবন্ধ নিয়ে রিভিউ করার ধৃষ্টতা দেখানো আমার কম্ম নয়। কিন্তু আজ যদি আমি সেইসব কালোত্তীর্ণ লেখার সামনে এসে দাঁড়াই, কী লিখব তাদের নিয়ে? এই যেমন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস নিয়ে সম্প্রতি যে সিনেমা হল, তা ভালো–খারাপ ব্যতীত আমি দেখছি; কুসুমের ব্লাউজের নিচে মন আছে কি নেই, থাকলে তা ফ্রয়েডিয়ান না বাঙালীয়ান—তা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই বাঙালি এখনও দিন কাটাচ্ছে, আর সিন...

বিদ্বান বনাম বিদুষী

Image
অসাধারণ গল্পকারদের দলে প্রীতম বসু নিঃসন্দেহে অন্যতম। ‘পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল’ কিংবা ‘চৌথুপীর চর্যাপদ’ উপন্যাস দুটোতে এটা বেশ লক্ষ্য করেছি। এবং এত সুখপাঠ্য লেখা খুব কম লেখকের লেখায় পেয়েছি। মাঝের উপন্যাসগুলো আমি পড়িনি। কিন্তু এখন ‘বিদ্বান বনাম বিদুষী’ পড়ার পর মনে হচ্ছে, বাকি উপন্যাসগুলোও পড়ে ফেলতে হবে।        এর সঙ্গে তার উপন্যাসে দেখি রিসার্চ ওয়ার্ক। এই রিসার্চ ওয়ার্ক শুধুমাত্র আমাদের ঋদ্ধ করে, শুধু তাই নয়, কৌতূহলীও করে তোলে। ইংরেজিতে যাকে বলে ফার্দার রিডিংস —সেটাতে উৎসাহিত করে।        এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু খনা। এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু টাইমলাইন—চিরপরিচিত এই চেনা ছকে এখন তাবৎ লেখককুল হাঁটছেন, বিশেষ করে যারা ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখছেন। ওই অনেকটা এভারেস্টে ওঠার মতো। এই প্যাটার্নের লেখায় এখন ট্রাফিক জ্যাম হয়ে গেছে। প্রীতম বসু সেই ট্রাফিকের মধ্যেই নিজের থ্রিলার-মেশানো ঐতিহাসিক কাল্পনিক পটভূমিতে খনাকে দাঁড় করিয়েছেন। কিরকম দাঁড় করিয়েছেন? একটা জায়গা তুলে ধরি, তাহলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে— “বেহুলা চুপ হয়ে বসে রইল। সাহেবও স্বল্পক্ষণ মৌন থেকে তার...

না রাধা না রুক্মিণী

Image
  অমৃতা প্রীতমকে চিনি তার কবিতা দিয়ে। আহা! কি সমস্ত তার কবিতা! একটা যেমন--- तुम मिले तो कई जन्म मेरी नब्ज़ में धड़के तो मेरी साँसों ने तुम्हारी साँसों का घूँट पिया तब मस्तक में कई काल पलट गए — কেমন যেন ‘বাজিল বুকে সুখের মতো ব্যথা’, আমার মনে হয় এমনভাবে কোন মেয়ে যখন বলে ওঠে তখন পুরুষের বুকের ভেতরে কি এমনি রকমই উথাল-পাথাল চলে? কি জানি, আমি মেয়ে নই, আমি জানি না। অমৃতা মেয়ে, অমৃতা কবি, অমৃতা জানে, অমৃতা শব্দগুলোর মধ্যে দিয়ে কেমন ছন্দে ছন্দে অনুভূতিগুলোকে সাজায়, রঙের পরতে পরতে যেমন একজন চিত্রকর চিত্রনির্মাণ করে, ঠিক তেমনিভাবেই। অমৃতার জীবন কবিতা, অমৃতার কথা কবিতা, এমনকি অমৃতার উপন্যাসও কবিতা... না রাধা না রুক্মিণী — উপন্যাসটি আদতে উপন্যাস নয়। এক কাব্যোপন্যাস। অমৃতা এখানে কোন মেয়ের কথা লেখেননি, লিখেছেন একজন পুরুষের কথা — কৃষ্ণ (হরেকৃষ্ণ), একজন চিত্রকর, যার জীবনে না রইল রাধা, না পেল রুক্মিণীকে। কিন্তু শুধু এই কি গল্প? না তো! অমৃতা এমন সহজ-সরল গল্প লেখেন না। অমৃতা যার গল্প লিখছেন তিনি একজন চিত্রকর, যার ছবি দেশে-বিদেশে সমাদৃত। ফ্রান্স, রাশিয়া, আমেরিকা — কোথায় ন...

কোরে কাগজ

Image
  “অমৃতা প্রীতমের উপন্যাসের মূল তত্ত্ব হলো মানবিক অনুষঙ্গ। নারী-পুরুষের সম্পর্কের জটিলতা এবং সেই জটিলতার অরণ্যে হারিয়ে-যাওয়া তথা পরম্পরাগত সীমার বাইরে দাঁড়িয়ে-থাকা স্ত্রী এবং পুরুষ। বহুধা পরিভাষিত সম্পর্ক থেকে পৃথক। চিরন্তন অনুবন্ধের উল্লিখিত নামের বাইরে সম্পর্কের সৃজন এবং খণ্ডন। অমৃতা অনাদিকাল থেকে সযত্নে লালিত পরম্পরাকে মুহূর্তে খারিজ করেছেন। এই প্রক্রিয়ার অবস্থান্তরই তাঁর সাহিত্য চেতনার কেন্দ্র বিন্দু।”       বলছেন ডাঃ স্বরণ চন্দর। তাই কি? তিনি আরও বলছেন,       “'ডাক্টর দেব' (১৯৪৯) থেকে 'কোরে কাগজ' (১৯৮২) অমৃতা ২৬টি উপন্যাস লিখেছেন তেত্রিশ বছরে। বিভিন্ন সমাজে ভিন্ন ভিন্ন স্ত্রী-পুরুষ বিষম পরিস্থিতিতে, বিচিত্র বহু নর-নারীর সম্পর্ক এবং সম্পর্কহীনতার কথা লিখেছেন। সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়েছে মধ্যবিত্ত চরিত্রের কনট্রাডিকশন বা দ্বন্দ্ব। পরিবেশ পরিস্থিতির প্রতিকূলতা নয়-তাঁর চরিত্রগুলি নিজেদের স্বভাব, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভাল-মন্দ সবকিছুর মিশ্রণ নিয়ে পাঞ্জাবী উপন্যাসের ইতিহাসে মাইলস্টোনের সম্মান এনেছে। পরিস্থিতি পরিবেশ উপ...

ডঃ দেব

Image
  অমৃতার প্রথম উপন্যাস ডঃ দেব। তার প্রথম উপন্যাস তিনি লেখেন ১৯৪৯ সালে। প্রথম উপন্যাসে অনেকে চমকে দেয়, অনেকে ধস্তাধস্তি করে। অমৃতার এই উপন্যাস নেহাতই বালখিল্যপনা। আমার এক কাকা, যিনি ‘ডঃ দেব’ পড়েছেন, আমি পরেছি শুনে বলল, টিপিক্যাল অশোক কুমার টাইপ সিনেমা লিখেছেন। যথেষ্ট রকমের ভুলতে চেষ্টা করার মতো উপন্যাস। আমি ভুলতে চেষ্টা করছি।   ডাঃ স্বরণ চন্দন এই উপন্যাসের একটা ছোট্ট বিবরণী দিয়েছেন, গল্পের প্লটটা আর কি, আমি সেটাই এখানে লিখে দিচ্ছি, কারন আমার নিজেরই উপন্যাসটা নিয়ে বলতে মন চাইছে না। স্বরণ সাহেব লিখছেন--- অমৃতার প্রথম উপন্যাস 'ডাক্টর দেব' (১৯৪৯)। দেব আর মমতার প্রেমের ফসল তাদের সন্তান রঞ্জু। কিন্তু অভিভাবকেরা দেব আর মমতার অসামাজিক বিয়ে মেনে নেয় না। মমতার বিয়ে হয়ে যায় জগদীশের সঙ্গে। একটি কন্যার জন্ম দেয় মমতা। কিন্তু দেব এবং প্রথম সন্তানের স্মৃতিকে সজাগ রাখার জন্যে মেয়ের নামও রঞ্জু রাখে মমতা। আরও কিছুদিন পরে অপরাধবোধে পীড়িত মমতা জগদীশকে ছেড়ে চলে যায়। এদিকে ততদিনে রাজকুমারী এসে গিয়েছে দেবের জীবনে, কিন্তু হৃদয়ের দরজা তার বন্ধ। রাজকুমারীর বিয়ে হয় সোমনাথের সঙ্গে। কৃষ্ণলাল আর সরলার ...

রসিদি টিকট

Image
  “একদিন খুশওয়ান্ত সিং কথায় কথায় বলেন, 'তোমার আবার জীবনী কি, শুধু এক-আধটা অ্যাকসিডেন্ট। লিখতে বসলে রেভিনিউ স্ট্যাম্পের পেছনে লিখে শেষ করা যায়। রেভিনিউ স্ট্যাম্প সম্ভবত এজন্যই বলেন, অন্যান্য টিকিটের সাইজে পরিবর্তন হয়, কিন্তু রেভিনিউ স্ট্যাম্পের সাইজ একই থাকে।        ঠিকই বলেছিলেন—যা কিছু ঘটেছে, মনের স্তরেই ঘটেছে এবং সে সবই কাহিনি-নভেলের মাঝে ঢুকে গেছে। তাহলে বাকি আর কী থাকে?        তবুও কয়েক ছত্র লিখছি—এমন কিছু, যা জীবনের লেখা-জোখা কাগজে যেন ছোট্ট এক রেভিনিউ স্ট্যাম্প এঁটে দিচ্ছি—কাহিনি-নভেলের লেখাজোখা কাঁচা রসিদকে পাকা রসিদ করার জন্য।” লিখছেন অমৃতা। তার জীবন তাহলে কেমন? শুধুই কি এক টুকরো রসিদে টিকিট? না তো! সেই টিকিটের পরতে পরতে ছবির পর ছবি। সেই ছবি যুক্ত করেছেন জনা কয়েক মানুষ — সাজ্জাদ হায়দার, শাহির, ইমরোজ… আমি যে অনুবাদ পড়ছি, ‘আমার কাছের বন্ধুরা’ — রসিদে টিকিট -এর থেকে একটু আলাদা। কতটা আলাদা সেটা হয়তো ভাষা সংসদ থেকে যে অনুবাদ বেরিয়েছে রসিদি টিকিট নামে, সেটা পড়লে বোঝা যাবে। কেন আলাদা? এই বইটার ভাষান্তর করেছেন যিনি, সেই সুব...

কুকুরপ্রেমীদের নতুন আন্দোলন?

Image
  পথকুকুরদের নিয়ে আদালতের একের পর এক রায় বেরিয়েছে। প্রথম রায়, তার বিরুদ্ধে আপিল, তারপর সংশোধিত রায়—কোনোটাই কুকুরপ্রেমীদের মন জয় করতে পারেনি।      অধিকাংশ কুকুরপ্রেমী এই রায় মেনে নিতে নারাজ। কেউ কেউ আইন অমান্য আন্দোলনের কথাও ভাবছেন। মহাত্মা গান্ধীর পর স্বাধীন ভারতে আইন অমান্য আন্দোলন হয়েছে, তবে তার প্রায় সবকটিই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সম্ভবত এই প্রথম, একেবারে গৃহস্থালি স্তরে আমরা দেখতে যাচ্ছি non-violent, non-cooperation আন্দোলনের রূপরেখা। কুকুরপ্রেমীদের কাছে এটা এক বিরল সুযোগ—নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে ভারতীয় ইতিহাসে লিখে রাখার। হাজার হোক, গান্ধী আমাদের 'ফাদার অফ নেশন' বলে কথা। তার পথই আমাদের পথ। আর প্রেমে কি না হয়। দশটা খুন করে ফেলা যায়, আর এ তো... দুটো মানুষ আহত হলে বা মারা গেলে কিই বা যায় আসে? তারা তো কুকুর নয়, তারা মানুষ। কুকুর অবলা, তার ওপর পরিবেশ পরিস্থিতি ইত্যাদি ইত্যাদি...      বিরোধীদের ব্যঙ্গের মুখেও এনাদের পড়তে হচ্ছে। বলা হচ্ছে—“কুকুর এতই প্রিয় হলে, বাড়িতে নিয়ে গিয়ে লালন-পালন করুন।” অথচ এঁরাই কুকুরপ্রদত্ত নিরাপত্তা নিতে যত...