হার্ট ল্যাম্প

 


“Call the world a small place, or call it big, say that the world is round, giggle and say the world has become a small village… say something! No matter what you say, it makes little difference.” [HIGH-HEALED SHOES]

      বানু মুস্তাকের গল্পগুলো পড়তে পড়তে বুকের কলিজা এক-একসময় যেন আমার ছিঁড়ে যাচ্ছিল। এমন নয় যে কেঁদে ভাসাচ্ছিলাম। কারন, আমার দেশের আর এক প্রান্তে, কি যেন অসম্ভব সব ঘটনা ঘটে চলেছে। যেন সেগুলো মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাথে তুলনীয়, কিন্তু, তবু কোথাও, যেন অনেক polished, এবং সেই কারণে আরও ভয়ঙ্কর।

      আমার নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে হচ্ছে, কারণ, ইংরাজীটা আমি একটু আধটু পড়তে পারি, আর জানি, এ বই আর যাই হোক, বাংলায় অনুবাদ হবে না বোধহয়। বাংলার কোন লেখক-লেখিকা লিখতেও পারবেন না।

আমায় ভুল বুঝবেন না। ওটা লেখক-লেখিকাদের অক্ষমতা নয়, অপারগতা। কারন, কেরল আর বাংলা এক নয় বলেই লিখতে পারবেন না। বাংলার যন্ত্রনা আর কেরলের সামাজিক যন্ত্রণার পার্থক্য আছে। ওটা অন্য জল-হাওয়ার গুণ। কিন্তু, যন্ত্রনা বা অবদমনের গল্পগুলো কোথাও যেন এক। একই কান্না, একই অসহায়তা, একই অত্যাচার…

বানু মুশতাক সম্পর্কে তার আগে একটু জেনে নেওয়া যাক। কন্নড় লেখিকা, আইনজীবী এবং সমাজকর্মী। তার লেখা ছোটগল্প সংকলন ‘হার্ট ল্যাম্প’ এক জাজ্বল্যমান ডকুমেন্টারি। মেয়েদের কথা, মুসলিম মেয়েদের কথা বা বলা ভাল মুসলিম সমাজের এক টুকরো অন্ধকার আর আলোর কথা তিনি লিখেছেন। যা দেখেছেন, তাই লেখেননি, বরং, যা দেখেছেন, তার মধ্যে যা তার অন্তরাত্মাকে লিখতে বাধ্য করেছে, সেটাই লিখেছেন। এ বছর আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জিতেছেন এই বইটার জন্য। এই প্রথম ছোটগল্প সংকলনের জন্য বুকার দেওয়া হল। আবার কন্নড় ভাষায় প্রথম বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত গ্রন্থ। বানু’র বয়স ৭৭। ভাগ্যিস তিনি বুকারটি পেলেন। আর তাই এখন আমার মনে একটা প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে, প্রেমচন্দ-অমৃতা প্রীতম-মান্টোর বাইরে এমন অনেক লেখক লেখিকা ছিলেন কিম্বা আছেন, যারা বিবেকের আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে রেখেছেন তাদের ছোট্ট ঘরে ঘরে। আলোকিত করছেন। আর আমি এখন আঞ্চলিক সাহিত্যের দিকে দৃষ্টি ফেরানোর কথা ভাবছি।

বানু মুশতাক কর্ণাটকের একটি ছোট শহরে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বেড়ে ওঠেন। তাঁর বাবা, একজন সরকারি কর্মচারী, তাকে আট বছর বয়সে শিবমোগার একটি কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি করান, যেখানে শিক্ষার মাধ্যম ছিল কন্নড়। ২৬ বছর বয়সে প্রেমজ বিবাহে পরেও দাম্পত্য জীবনের শুরুটা ছিল ভয়ানক কঠিন। বিয়ের পর তাকে বোরখা পরতে এবং গৃহস্থালির কাজেই একরকম বাধ্য করা হয়। ২৯ বছর বয়সে সন্তান জন্মের পর তিনি বিষণ্নতায় ভুগতে শুরু করেন। সম্ভবত তার মৃগীরোগও ছিল। একবার হতাশায় তিনি নিজের উপর পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু স্বামী তাকে সময়মতো বাঁচান। শিরোনাম গল্প ‘হার্ট ল্যাম্প’ হয়তো সেই কাহিনীই বলে। কেমন সে আত্মহত্যার চেষ্টা?

“She walked quickly to the kitchen, picked up the matchbox and, holding it tightly in her right hand, quietly opened the latch of the front door and stepped into the yard again. She stared into the darkness and made sure she thought of how she had nobody, how no one wanted her, as she poured the kerosene on herself. She was in the grip of a force beyond her control. She looked around, and no sounds reached her, and she could feel no touch, no memories were left, no relationships could pierce her. She was beyond her consciousness.” [HEART LAMP]

বানু মুশতাক মসজিদে নারীদের নামাজ পড়ার অধিকার এবং হিজাবের পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন। ফলে ২০০০ সালে তিনি হুমকিমূলক ফোন পেতে শুরু করেন। তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হয়। এই সময়ে এক ব্যক্তি ছুরি দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করে, আমরা যাকে বলি অনার কিলিং। অতঃপর তিনি লিখতে শুরু করেন। তাঁর গল্পগুলো দক্ষিণ ভারতের মুসলিম নারীদের জীবন, তাদের সংগ্রাম, ধর্মীয় রক্ষণশীলতা এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতিফলন। হার্ট ল্যাম্প-এর ১২টা গল্প, ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে লেখা। এই গল্পগুলোর পটভূমি নারী ও কিশোরীদের অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে, যেখানে শুষ্ক ও কোমল রসবোধ, বুদ্ধিদীপ্ত ভাষার ব্যবহার এবং সমাজের নিষ্ঠুরতার তীব্র সমালোচনা প্রকাশ পায়। সমস্ত রকম ভয়ের ঊর্ধ্বে উঠে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ও পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে লেখা তার চলতে থাকে। আর এইভাবেই, তার লেখার মধ্যে মধ্যেই উঠে আসে তার বিদ্রোহ,

“Why don’t scholars tell women about the rights available to them? Because they only want to restrict women. The whole world is at a stage where everyone is saying something must be done for women and girl children. But these people, they have taken over the Qur’an and the Hadiths. Let them behave as per these texts at least! Let them educate girls, not just a madrasa education, but also in schools and colleges. The choice of a husband should be hers. Let them give that. These eunuchs, let them give meher and get married instead of licking leftovers by taking dowry. Let a girl’s maternal family give her a share in the property. Let them respect her right to get divorced if there is no compatibility between the man and woman. If she is divorced, let someone come forward to marry her again; if she is a widow, let her get a companion to share her life with.’

‘Apa, Apa, what are you saying?’ Aashraf felt like she had lost her senses.

‘What I am saying is correct, Aashraf. All these rights are available for women in Islam. A girl can go to school, she can go to the shops, go to work. She can have a life outside. But there is a clause too that she should not exhibit her body and her beauty…’ Zulekha Begum began giving a passionate lecture.” [BLACK COBRAS]

বানু মুশতাকের লেখা কখন যেন, হয়তো তার নিজে অজান্তেই, সমকালীন ভারতীয় সাহিত্যে একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর ওঠে। তার বক্তব্য, “সাহিত্য আমাদের সেই শেষ আশ্রয় যেখানে আমরা একে অপরের মনোজগতে বাস করতে পারি।আর তাই, তাঁর গল্পে প্রান্তিক জীবন, নারীদের সংগ্রাম এবং সমাজের প্রতি তীক্ষ্ণ সমালোচনা ফুটে ওঠে। কখন যেন তিনি নিজেকে একজন ব্যক্তি হিসেবে নয়, বরং বহু কণ্ঠের সমবেত প্রতিনিধি হয়ে ওঠেন --- বহুজনের এক কন্ঠস্বর…

“Do not beg. Demand justice. Do you know who gets justice? Only those who demand it. People like you will not get justice if you don’t demand it. Give a petition to the masjid, gather a panchayat around and call me. I will tell your man, and that mutawalli, what the Sharia is, what justice is. Twisting the Qur’an and Hadiths the way they want in front of a helpless woman is not justice.” [BLACK COBRAS]

বানু মুস্তাককে আমার প্রণাম। কারন, তিনি, এ কথাটা লেখার ক্ষমতা রেখেছেন, যে কথাটা আমার মনের মধ্যে যেমন চরম ধাক্কা মেরে যায়, তেমনই, মনে হয়, এ অনন্ত মহাবিশ্বে, আমার ঘরে মাথা উঁচু করে, অন্তত আমি যেন বলতে পারি, নিম্নোক্ত কথাকটাকে, অন্তত আমার জীবনে, যতটা সম্ভব, মিথ্যা প্রমাণ করতে পারি ---

“Material things had become priceless, and human beings worthless.”

==========

Heart Lamp

Banu Mushtaq

Translator: Deepa Bhasthi

Penguin Publication

Printed Price: 399/-

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ কৌশিক মজুমদার

 

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে