একান্ত বিষয়

 


সন্তান কি সবারই প্রিয়? কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কদাপি নয়। পিতা-কন্যার সম্পর্ক বড়ো মধুর…
      খবরের কাগজ কিংবা নিউজ চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা আমার পাশের পাড়া — রোজ একথা মিথ্যা প্রমাণ করে চলেছে।
      কারণ, কথাটা সর্বৈব মিথ্যা। এরকম একটা মিথ চালানোর পেছনে পারিবারিক ষড়যন্ত্র আবহমানকাল ধরে চলে আসছে। তারও ভিত্তি সমাজ। বৈদিক যুগ কিংবা প্রস্তর যুগের অনেক ইতিহাস এখন আমাদের চোখের সামনে।
      এখন এর একটা পর আছে। সেই ‘পর’টা হল — যদি সেই সন্তান স্বাভাবিক না হয়? তাহলে? গোদের উপর বিষফোঁড়া। আজীবন সন্তানকে সঙ্গ দিয়ে চলতে হবে, সন্তান আমায় সঙ্গ দেবে না। আমার ভবিষ্যতের অ্যাসেট অন্ধকারে চলে গেল। তখন কি হবে?

এর উত্তর খুঁজছেন কেনজাবুরো ওয়ে। জাপানের দ্বিতীয় নোবেলপ্রাপ্ত ঔপন্যাসিক। সাহসী লেখা। বড়ো মর্মান্তিক লেখা। A Personal Matter — বাংলায় অনুবাদ হয়েছে ‘একান্ত বিষয়’ নাম দিয়ে। অনুবাদ করেছেন শওকত হোসেন। মন্দ নয় অনুবাদটা।

বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় এই গল্পের একটা ইতিহাস আছে ছোট্ট করে — লেখকের ব্যক্তিগত ইতিহাস।
      “ওয়ের পুত্রসন্তান হিকারির জন্ম তার ব্যক্তি ও সাহিত্যিক জীবনের সংকট ঘনিয়ে তোলে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠা আর ছেলেকে মেনে নেওয়ার যন্ত্রণাবিদ্ধ অভিজ্ঞতা অতুলনীয় দরদে ফুটিয়ে তুলেছেন উক্ত উপন্যাসে।”

ওয়ে এই উপন্যাসে আমাদের কিছু দেখাতে চাননি। নিজেকে দেখতে চেয়েছেন। আর সারা দুনিয়ার কাছে এই দেখতে চাওয়াটাকেই দেখাতে চেয়েছেন। বড়ো কঠিন এই দেখানো। বিশেষ করে একটা মর্মান্তিক দ্বান্দ্বিক সত্যকে উপস্থাপন করা চাট্টিখানি কথা নয়। সে কথা বলতে গেলে বুকের পাঁজরের মধ্যেখানে ইস্পাতকঠিন একটি হৃদয় আর বাস্তবকে বাস্তবোচিত করে বলার প্রয়াসসম্পন্ন মস্তিষ্ক থাকা চাই। বিশেষত প্রতিথযশা লেখকের ক্ষেত্রে তা আরও কঠিন।

ওয়ের উপন্যাস একটা মারাত্মক প্রশ্নচিহ্নের মধ্যে ফেলে দেয়। কোনটা বাছব? জীবন না মৃত্যু? নিজের স্বপ্ন, নাকি রূঢ় বাস্তব?

প্রোটাগনিস্ট চরিত্র বার্ড সারা উপন্যাসে ছুটে বেড়ায় — কখনও একাকী, কখনও সমাজে, কখনও প্রকৃতিতে, কখনও অন্ধকারে, কখনও বা বন্ধুনীর সঙ্গে শারীরিক উদ্দামতায়।
      কিন্তু পালানোর মধ্যে উত্তর মেলে না। উত্তর মেলে যখন সে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়।
      শিশুটির সমস্ত জীবনের যন্ত্রনার অবসান ঘটাবে, নাকি নিজের সমস্ত স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দেবে?

এ উপন্যাস নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো। কারণ, মানবতাবোধ আর স্বাধীনতাবোধ কখনও কখনও প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়ায়। প্রত্যেকের জীবনেই ঘটে। আমাদের যে কোনও একটাকে বেছে নিতে হয়। আর সেটাই আমাদের ব্যক্তিত্বের মানদণ্ড।

দিনের শেষে, মানুষ পারে না — এমন কিছুই নেই। “নিজের স্বপ্ন ত্যাগ করে অন্যের বেঁচে থাকাকে গ্রহণ করাই কি সাহসের পরিচয়? নাকি সেটাই ব্যক্তিত্বের চূড়ান্ত পরীক্ষা?”

==================

একান্ত বিষয়

কেনজাবুরো ওয়ে

অনুবাদকঃ শওকত হোসেন

সন্দেশ পাবলিকেশান

মুদ্রিত মূল্যঃ ১৬৫ টাকা

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে