Posts

Showing posts from February, 2025

শাইলকের বাণিজ্য বিস্তার

Image
  মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে কবিতাটা মনে আছে? শঙ্খ ঘোষের?   “বিকিয়ে গেছে চোখের চাওয়া / তোমার সাথে ওতপ্রত নিয়ন আলোয় পণ্য হলো / যা কিছু আজ ব্যাক্তিগত। মুখের কথা একলা হয়ে / রইলো পড়ে গলির কোণে ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু / ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে।”   বিজ্ঞাপনের পেছনের যে ব্যাবসা, অর্থাৎ, লেনদেন, আজ তো আর শুধুই টাকা-পয়সাতে সীমাবদ্ধ নয়। সময় কতটা দেওয়া হচ্ছে, ক্রেতা কতটা মাথায় রাখছে, ব্যবহার করছে, কতটা নিজের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নিচ্ছে সেটাও একটা বড়ো ব্যাপার। এবার আসা যাক শাইলকের ব্যাপারে। শাইলক শেক্সপীয়ারের এক নাটকের চরিত্র। সে মহাজনী কারবারি। অর্থ বোঝে, এবং একমাত্র অর্থই বোঝে। দুর্ভাগ্য, এই শাইলকের ঋণের জালে প্রচুর মানুষ জড়িয়ে পড়েছিল, তার হাত থেকে যেন নিস্তারই ছিল না কারোর। চিরকালই দারিদ্রতাকে সম্পূর্ণ নির্মোচনের বদলে দারিদ্রের শোষকদের আমরা ঘৃণ্য চোখে দেখে এসেছি। এই শাইলক নিয়ে উপন্যাস কেন? শাহযাদ বলছেন, “খুব স্বল্পকালের ভেতরে আমরা এমন একটা বণিক সভ্যতার গহ্বরে প্রবেশ করতে বাধ্য হব যে, আমাদের কেবল অন্ধকার থেকে আরও গভীরতর অন্ধকারের অভ্যন্তরে ঠেকে দেবে। আমাদের শিল্...

অঙ্গুলিমাল

Image
  “হিংসার বিরুদ্ধে অহিংসার বিজয়।” শাহযাদ ফিরদাউস তার ‘অঙ্গুলিমাল’ উপন্যাস শেষ হচ্ছে এমনিভাবে। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এই বাক্যের মূল্য কি নতুন করে উপলব্ধি করতে হবে? না। আমার অন্তত তা প্রয়োজন নেই। শাহযাদ তার এই উপন্যাসটি উৎসর্গ করেছেন কাদেরকে? “রক্তপাতহীন একটি পৃথিবী নির্মাণের জন্য যাঁরা সংগ্রাম করছেন” --- তাঁদেরকে। কি নির্মম পরিহাস! আমরা মধ্যযুগীয় বর্বরতা পেরিয়ে এসেছি। আমরা দুটো বিশ্বযুদ্ধ পেরিয়ে এসেছি। তবু রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষ হচ্ছে না। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে কোথাও না কোথাও তার জন্ম হচ্ছেই। কোন ঘরে কিম্বা দুটো দেশে। আবার তার শেষও হচ্ছে করুণ পরিনতিতে। সম্পর্কে… কিম্বা কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁকে। শাহযাদের এই উপন্যাসে অঙ্গুলিমাল ফার্স্ট পার্সনে লিখছেন, এবং কি সুচারুভাবে তার মনের অন্ধকারকে তুলে ধরছেন! কি সাংঘাতিক ঘৃণাবোধকে সযত্নে লালন পালন করেছেন। তাকে বড়ো করেছেন। এবং একসময় সমাজের ওপরে তার অমোঘ প্রয়োগ করেছেন। এমন উন্মাদনার মধ্যে মানুষ তার নিজের অন্তরাত্মার সাথে কিভাবে কথা বলে? শাহযাদ তার এক টুকরো ছবি গেঁথেছেন, আপন লেখকসত্ত্বার সুরমূর্চ্ছনা দিয়ে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা যাক, অঙ্গুলিম...

ব্যাস

Image
  মহাভারত নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে, হচ্ছে এবং হবেও। কিন্তু কটা লেখা মনে দাগ কাটে? বিশেষত বাংলায়? চরিত্র চিত্রণ হয়ে চলেছে প্রচুর। কিন্তু সে সমস্তই আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরী। সেই মাধুরীর সাথে যদি আমার মনের মাধুরী মিলে যায়, সুন্দর লাগে বৈ কি। কিন্তু মহাভারতের মধ্যস্থিত যে দর্শনবোধ, তার গুঢ় খবর কে দেয়?      শাহজাদ ফিরদাউস দিয়েছেন, বলা ভাল, তার লেখা পড়তে পড়তে আমার মনে হচ্ছিল, এ যেন তিনি আমাদের জন্যে লিখছেন না। তিনি লিখছেন নিজের জন্য। যেন লিখতে লিখতে তিনি বুঝতে চেষ্টা করছেন মহাভারতের ভারতাত্মাকে। শুধু তাই নয়, তিনি যেন কোথাও, সেই তৎকালীন সমাজের মূলধারার সাথে পরিচিত হতে চাইছেন, সেই সাথে তাকে কাটাছেঁড়াও করতে চাইছেন। এবং, সেই একই সমাজের অত্যাধুনিক প্রতিনিধি, এই আমরা, এই সময়ে দাড়িয়েও মহাভারত যে কতটা ‘রেলিভ্যান্স’, সেটাও দেখাতে চাইছেন।      তিনি যে চরিত্রটিকে নিয়ে তার এই মহাভারতের সূচনাপর্বকে নির্মাণ করার চেষ্টা করেছেন, সেই চরিত্রটি হলেন ব্যাসদেব, মহাভারতের আখ্যানকার। ব্যাস সম্পর্কে মহাভারতেও কি খুব বেশি কিছু জানা যায়? না। ব্যাস মহাভারতের শুধু কথকই নন;...

আফটার ডার্ক

Image
  যে যাই বলুক, এমনকি আমি নিজেও যতই যা বলি না কেন, হারুকি মুরাকামির লেখাতে এমন একটা ম্যাজিক আছে যেটাকে অস্বীকার করা যায় না। কোথাও, বর্তমান বিশ্বে তিনি অন্যান্য লেখকদের থেকে বেশ খানিকটা আলাদাই। ‘After Dark’ পড়তে পড়তে আমার সেটাই মনে হচ্ছিল।       এক রাতের গল্প – রাত - মানুষকে সাহসী করতে পারে; মানুষকে দুঃখী করতে পারে; মানুষকে ভীতু করতে পারে; মানুষকে নিজের ভেতরে ঢুকতে সাহায্য করতে পারে; মানুষকে অন্যের ভেতরে ঢুকতেও সাহায্য করতে পারে।       রাত আমার বড়ো প্রিয়।       দুই বোন। মারি আর এরি। এরি ঘুমিয়ে আছে কয়েকদিন ধরে, টানা। মারি রাত্রেবেলা শহরে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, একা। মারি বাস্তব, এরি পরাবাস্তব। দুই বোনে সুসম্পর্ক নেই। অথচ কাছে আসার এক আকুতি আছে। সম্পর্কের এই এক সমস্যা। কে আগে এগিয়ে এসে শান্তিপ্রস্তাব দেবে, তার ওপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। এই শান্তিপ্রস্তাব পাওয়ার আগেই, এক রাত্রে, ঘটে যায়, অনেক কিছু। সেই নিয়েই উপন্যাস ‘আফটার ডার্ক’। মানুষ একে অপরের থেকে কতটা বিচ্ছিন্ন, এমনকি তারা খুব কাছাকাছি থেকেও। মানবিক একাকীত...

দেখা হবে আগস্টে

Image
  উপন্যাসটা শেষ করার পর আমার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ল। মার্কেজ চান নি বইটা প্রকাশ হোক। মার্কেজ পঞ্চমবার সংশোধন করার পরে পাণ্ডুলিপিতে লিখে দিয়েছিলেন --- Gran OK final. অথচ, তারপরেও প্রকাশ না করে তিনি বলেছিলেন, কখনও কখনও বইয়েরও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে।      ঠিকই বলেছিলেন। এমনকি অরুন্ধতী ভট্টাচার্যের সার্থক অনুবাদের পরেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, মার্কেজ ম্যাজিক এই উপন্যাসে ছিটেফোঁটা আছে   যা আমাকে তৃপ্ত করে না। তবে অরুন্ধতী ভট্টাচার্য আমাকে যুগপৎ বিস্মিত এবং মুগ্ধ করেছেন। তার অনুবাদে মার্কেজের লেখনশৈলীর যে 'ম্যাজিক' তা বাংলা ভাষায় পাওয়া যায় (এ আমার ইংরাজি পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি), ওনার কাছ থেকে মার্কেজের মুখ্য মুখ্য বইগুলোর অনুবাদ অবশ্য আশা করি, জানি না, আমার এ ইচ্ছা পূরণ হবে কি না। আমি তো আরও একধাপ এগিয়ে মার্কেজ রচনাবলি-র দাবী করব। সার্থক অনুবাদ করার লোক বাংলায় খুব কম আছে।      একজন পঞ্চাশোর্ধ মহিলা, যিনি সুন্দরভাবে সংসার করছেন, প্রথাগত এক সংসার, সেই আনা মাগদালেনা বাখ, প্রতি বছর আগস্টে একটি দ্বীপে যান, যেখানে তার মায়ের কবর আছে, সেখানে ফুল দিতে। আ...

শিল্পীর অধিকার

Image
  শিল্পের ওপর শিল্পীর কি অধিকার থাকে? সৃষ্টির পর? আমি দেখছি, অনেকখানি তা নির্ভর করে তার জনপ্রিয়তার ওপরে। এই যেমন মার্কেজের Until August বইটা। 2024 সালের 6 মার্চ বইটা প্রকাশিত হয়। এবারের বইমেলাতে তার বঙ্গানুবাদও প্রকাশিত হয়ে গেল। মার্কেজ তার জীবদ্দশায় চান নি, এই বইটা প্রকাশিত হোক।     অথচ মার্কেজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বইগুলোর কোন অনুবাদ পশ্চিমবমঙ্গে হয় নি! 'নিঃসঙ্গতার শতবর্ষ' যে কোনদিন Out Of Print হয়ে যেতে পারে। The Autumn Patriarch, Love in the Time Of Cholera, Living to tell the teals, General in his Labyrinth বা Of Love and Other Demons পশ্চিমবঙ্গে অনুবাদের মুখ দেখে নি। বাংলাদেশের হাতে গোনা কয়েকটা বই ছাড়া বাকি মার্কেজ-অনুবাদ পাতে দেওয়া যায় না। অথচ ‘মার্কেজ রচনাবলি’ সার্থক অনুবাদে প্রকাশিত হয়ে যাওয়া উচিত ছিল এতদিনে!      অর্থাৎ, যে বই পড়তে পরিশ্রম করতে হয় তা থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। প্রকাশকেরা অদ্ভুত সব যুক্তি দেখিয়ে প্রকাশ করেন না। মার্কেজের গল্পসমগ্রের অনুবাদের খোঁজ কয়জন জানেন? সেই অনুবাদের মুখবন্ধ লিখেছিলেন সুনীল। কি অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে ...