Posts

Showing posts from January, 2025

কেন তোমরা আমায় ডাকো?

Image
  এক-একটা সময় আসে, যখন নিজেকে বড়ো অসহায় লাগে। শীতের রাত্রের অন্ধকারের মতো জমাট কালো অনুভূতি আমাকে ঘিরে ধরে। এই অনুভূতি ঠিক কি, আমি জানি না। কেমন, তা মুখে বল যায় না। এই সময় মনের পাশাপাশি শরীর গুটিয়ে যায়। সমস্ত কিছু থেকে মন ছুটি নেয়। আমার মন খারাপ লাগে না ভালো লাগে, আমি কিছু বুঝতে পারি না।        এই সময় আমি কোন বই পড়তে পারি না। কেবল বই নাড়াচাড়া করে দিন কাটে। কোন সিনেমায় মন বসে না। কোন গান কানে ঢোকে, মনে ঠাঁই পায় না।        আমার আশেপাশের সবকিছুই কেমন যেন রুক্ষ হয়ে যায়। আমার বন্ধুরা রুক্ষ হয়ে যায়। আমার বাবা-মা-ভাই রুক্ষ হয়ে যায়। আমার ঘরের ছোট্ট টেডি বিয়ারটাও রুক্ষ হয়ে যায়। লেপের ওমের মধ্যে কোলবালিশের স্পর্শ রুক্ষ লাগে। আমি গোল্লা পাকিয়ে শুয়ে থাকি। ঠিক যেমন মায়ের পেটে বাচ্চারা থাকে। আমার জলের মধ্যে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে। কোন শব্দ, কিম্বা স্পর্শ, কিম্বা দৃশ্য কিম্বা স্বাদ --- ভালো লাগে, কিন্তু ভালো লাগে না।        জানুয়ারি শেষ হয়ে গেল। কতদিন আমি কোন বই পড়ি নি! একটা-দুটো বই অভ্যাসবশে পড়েছি, কয়েকটা গান শুনেছি এক...

দ্য গেস্ট ক্যাট

Image
        তাকাশি হিরাইড – নাম শুনেছেন? আম শুনিনি।       জাপানী এই লোকটির লেখা হাতে গোনা। কবি (check)-সাহিত্যিক এই লেখকটির এই বইটা আমার হাতে এসে পড়ল। আর আমি পড়া শুরু করলাম তৎক্ষণাৎ। কেন? জাপানী সাহিত্য আশেপাশে চোখে পড়লেই আমি পড়ে ফেলছি যে! জাপানী সাহিত্য মানেই তো আর কাজুও ইশিগুরো কিম্বা হারুকি মুরাকামি নয়!       দ্য গেস্ট ক্যাট প্রকাশিত হয়েছে ২০১৪ সালে। বাংলাদেশে অনুবাদ হয়ে গেছে, ২০২৪ সালে। কপিরাইট ইত্যাদির কথা বাদ দিন। ওদের ওখানে বইটি পড়ার লোক আছে। এতএব অনুবাদ হয়ে পাবলিশ হয়েছে। আমাদের এখানে পড়ার লোক নেই। তাই কিস্যু হয় নি, হয় না। সোজা হিসাব।       এই বইয়ের গল্পটা কি? টোকিওর একটি নিরিবিলি পাড়ায় বসবাসরত এক দম্পতি, যারা পাশের বাড়ির একটি ছোট্ট বিড়ালের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। সেই বিড়ালের নাম চিবি, এবং সে মাঝেমধ্যে এই দম্পতির বাড়িতে আসে। চিবির এই ছোট্ট উপস্থিতি তাদের জীবনে একধরনের প্রশান্তি ও সংযোগের অনুভূতি এনে দেয়। চিবি কাউকেই ধরা দেয় না। সে কেবল আসে আর যায়। এই যাওয়া আসার মাঝের সুখদুঃখ...

BLACK WARRANT

Image
‘তিহাড় জেল’ কথাটার সাথে আমি যে বিশেষণের সাথে পরিচিত ছিলাম, তা হল, কুখ্যাত। অর্থাৎ, তিহাড় জেলে ভারতের সবচেয়ে অন্ধকার জগতের বন্দীরা থাকে। তিহাড় জেল সম্পর্কে এর বেশি আমার আর কোন ধারনা ছিল না।       ধারণা ভাঙল ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’ নামে ওয়েব সিরিজটা। NETFLIX-এ সদ্য আগত সিরিজ আমাকে অভিভূত করল।       BLACK WARRANT = a court order that authorizes the execution of a convicted person. It's also known as a death warrant or execution warrant.       সুনীল গুপ্তা এবং সুনেত্রা চৌধুরী মিলে একটি বই লেখেন, আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে, ২০১৯ সালে। এই সুনীল গুপ্তা তিহাড় জেলের জেলার ছিলেন। মাত্র ১৭৮ পেজের এই বইটা থেকে যে ওয়েব সিরিজ বানিয়ে দেখালেন Vikramaditya Motwane এবং Satyanshu Singh, তা বিস্ময়কর। আট পর্বের এই সিরিজ এক টুকরো দলিল।       এই সিরিজ কোন আঙ্গিককেই বাদ দেয় নি। জেলারদের ব্যক্তিগত সমস্যা, জেলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, রাজনৈতিক উত্থান-পতনে এর প্রভাব, জেলবন্দীদের রোজনামচার টুকরো টুকরো ছবি, জেলের নিজস...

অদ্ভুত এক লাইব্রেরী

Image
  যাকে বলে, আপাদমস্তক শিশুতোষ রচনা।      কিন্তু এর মধ্যেও মুরাকামি, ঠিক যে জায়গায়, আমাকে অবাক করে দেয়, তা হল, তার পরাবস্তব চরিত্রগুলো। কী অদ্ভুতভাবে পরাবাস্তব চরিত্র, কিম্বা পরাবাস্তব ঘটনা, বাস্তবের সাথে মিশে গিয়ে অতিবাস্তব হয়ে ওঠে। পড়াটা বিস্ময়করভাবে সুখপাঠ্য হয়ে ওঠে।      এই বইটাও তেমনই সুখপাঠ্য। বড়ো সুন্দর অনুবাদ করেছেন আফসানা বেগম। ঝরঝরে অনুবাদ। একবারে শেষ করে ওঠার মতো অনুবাদ। আর উপন্যাসটাও আহামরি কিছু বড়ো নয়।     একজন শিশু, একটি লাইব্রেরিতে বন্দী হয়ে পড়ে ঘটনাক্রমে। সেই বন্দীদশায় তার পরিচয় হয় একজন ভেড়ামানব আর একজন অপূর্ব সুন্দরী বোবা মেয়ের সাথে। সে পালাতে চায়। পারে না। তবুও পালাতেই চায় সে, এদেরকেও মুক্ত করতে চায়।      একটা প্রশ্ন এই উপন্যাসটা পড়তে পড়তে নিজেকেই করছিলাম। আমি বই পড়ছি কেন? পড়ার নেশায়, না পড়ার আনন্দে? কোন নেশাই ভালো না। যে যাই বলুক না কেন, নেশা, আসলেই নেশা। আর তা আমাদের বন্দী করেই করে। বছরের শেষে, অনেক গ্রুপেই দেখি, অনেক মানুষ তাদের সম্বৎসরের পড়ার লিস্ট দেয়। আতঙ্কিত হয়ে ওঠার মতো পড়া য...

অন্তর্বাসনা

Image
  লেখকদের প্রত্যেকটা লেখাই সন্তানসম --- মহাজনেরা বলেন। কিন্তু সব সন্তানের প্রতি কি মায়ের সমান টান? সব লেখাকেই কি লেখক প্রাণপ্রিয় আখ্যা দেন? মায়াময় এ জগতে সেই লেখাই সাধারণ গড়পড়তা লেখকদের কাছে বেশি মান পায়, যে লেখা খুব সহজেই সাধুবাদ পাবে, জনগণমানসে নিজের জায়গা অধিকার করবে, চেনা পথ চেনা ছক ধরে। বিতর্কিত লেখা, সাধারণ লেখা থেকে বেরিয়ে এসে একটু অন্য ধরনের লেখা, কিম্বা অন্য ধরনের চিন্তা-ভাবনা, তার প্রতি লেখকের একটা অনুকম্পাবোধ থাকে। লেখক ভাবেন, আহা রে! এই লেখাটা লিখতেও আমি কত না রাত জেগেছি, কিন্তু, লেখাটা তার প্রাপ্য মর্যাদা পেল না! অথচ এর গুণীজনে সমাদৃত হওয়ার সমস্ত গুণ এর ছিল...       আসুরী, কারবাঁ, দহনপুরুষ, পরস্বকায় --- এইগুলো লেখিকা সুপর্ণা চ্যাটার্জী ঘোষালের জনপ্রিয় লেখা। আর একটি মাত্র বই-ই তার দুয়োরাণী – অন্তর্বাসনা। প্রচারের আড়ালে, আলোচনার আড়ালে, হয়তো বা একদিন ‘আউট অফ প্রিন্ট’ হয়ে জনমানসের আড়ালে চলে যাবে। দুর্ভাগ্য বইটার। দুর্ভাগ্য লেখিকার।       প্রত্যেকটা লেখার পেছনেই একটা পরিশ্রম থাকেই থাকে। কিন্তু কি বিষয় লেখক বাছছেন সেটাও এ...

ম্যানহ্যাটন

Image
  “Everybody gets corrupted. You have to have a little faith in people.” 1985 সালের ম্যানহ্যাটন কিম্বা 2024 সালের কলকাতা। নাগরিক সভ্যতার উদ্ভ্রান্ত দৌড়ের মধ্যে কত কথা, কত তত্ত্ব, কত আলোচনা, কত বুদ্ধির বাহারি ঝিলিক। সমস্তটাই মানুষকে অবশেষে ক্লান্ত করে। সে আসলেই একজন খাঁটি সম্পর্কের মধ্যে নিজের অস্তিত্বকে খুঁজতে চায়। ব্যবহার করতে করতে এবং ব্যবহৃত হতে হতে, মেকি চিন্তার মধ্যে থাকতে থাকতে এবং মেকি বিশ্বাসকে বিশ্বাস করতে করতে ঠিক কোনটা আসলেই সে, সে ভুলে যায়। এই গল্পে আইজ্যাক এক মারাত্মক ট্যালেন্টেড মানুষ। বইয়ের পাতায় পাতায় যে চিন্তাধারার স্রোত বয়ে যায়, তার মধ্যে থেকে সে খুঁজতে থাকে শহর ম্যানহ্যাটনকে। তার বিয়ে ভেঙে যায়। সম্পর্ক হয়ে এমন একজন মেয়ের সাথে যার বয়স মাত্র সতেরো। মেয়েটি তার মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেলেও সে মেয়েটির মধ্যে নিজেকে খুঁজে পায় না। একটু সাহস করেই বলা যেতে পারে, আমাদের সমাজকে একটু সরিয়ে দিয়ে, বয়সের অনিশ্চয়তার মধ্যে ভালবাসার ভিতকে সে প্রোথিত হতে দেয় না। সত্যিই তো, মাত্র সতেরো বছরের মেয়ে সে। আর তার নিজের বয়স? বিয়াল্লিশ। আইজ্যাকের বন্ধুর প্রেমিকাকে তার প্রেমিকা করে নেয় ...