অদ্ভুত এক লাইব্রেরী

 




যাকে বলে, আপাদমস্তক শিশুতোষ রচনা।

     কিন্তু এর মধ্যেও মুরাকামি, ঠিক যে জায়গায়, আমাকে অবাক করে দেয়, তা হল, তার পরাবস্তব চরিত্রগুলো। কী অদ্ভুতভাবে পরাবাস্তব চরিত্র, কিম্বা পরাবাস্তব ঘটনা, বাস্তবের সাথে মিশে গিয়ে অতিবাস্তব হয়ে ওঠে। পড়াটা বিস্ময়করভাবে সুখপাঠ্য হয়ে ওঠে।

     এই বইটাও তেমনই সুখপাঠ্য। বড়ো সুন্দর অনুবাদ করেছেন আফসানা বেগম। ঝরঝরে অনুবাদ। একবারে শেষ করে ওঠার মতো অনুবাদ। আর উপন্যাসটাও আহামরি কিছু বড়ো নয়।

    একজন শিশু, একটি লাইব্রেরিতে বন্দী হয়ে পড়ে ঘটনাক্রমে। সেই বন্দীদশায় তার পরিচয় হয় একজন ভেড়ামানব আর একজন অপূর্ব সুন্দরী বোবা মেয়ের সাথে। সে পালাতে চায়। পারে না। তবুও পালাতেই চায় সে, এদেরকেও মুক্ত করতে চায়।

     একটা প্রশ্ন এই উপন্যাসটা পড়তে পড়তে নিজেকেই করছিলাম। আমি বই পড়ছি কেন? পড়ার নেশায়, না পড়ার আনন্দে? কোন নেশাই ভালো না। যে যাই বলুক না কেন, নেশা, আসলেই নেশা। আর তা আমাদের বন্দী করেই করে। বছরের শেষে, অনেক গ্রুপেই দেখি, অনেক মানুষ তাদের সম্বৎসরের পড়ার লিস্ট দেয়। আতঙ্কিত হয়ে ওঠার মতো পড়া যাকে বলে। কিন্তু সেই পড়ার মধ্যে কতটা সার্থকতা আছে?

     নানা তথ্য, নানা ঘটনা, নানা গল্পে আমরা আমাদের মগজ ভরছি কি? যদি তাই করি, তাহলে আমরা দেখতে পাব, সেই পাঠের কোন মানে হয় না। সাহিত্যের অর্থ যদি বাস্তব জীবনের উত্তোরন না হয়, তাহলে আমাদের কি প্রয়োজন তাকে? সব বই-ই যদি আমাদের ভালো লাগে, তাহলে বলতে হবে, আমরা আসলেই সাহিত্যকে সার্থক সাহিত্য হিসাবে দেখতে শিখি নি। বাসী-পচা বিরিয়ানি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, পাচক তা যতই যত্নে বানাক না কেন, তার পরিশ্রমকে সন্মানিত করার জন্য যদি সেই বিরিয়ানি খেয়ে আমাকে ভালো বলতেই হয়, তাহলে নিজের পাকযন্ত্রের প্রতি যেমন অবিচার হয়, তেমনি অন্যেরাও আমাকে আর, অন্ততঃ বিরিয়ানি খাওয়ার ব্যাপারে আর ভরসা করতে পারে না।

      এই বইটা এই প্রশ্নটাকেই জাগিয়ে দেয়, একটু অন্যরকমভাবে।

     জাপানী সাহিত্য যত পড়ছি, ততই দেখছি, একটা একাকীত্বতা, অসহায়তা, বিষন্নতা তাদের লেখার ছত্রে ছত্রে থাকে। মৃত্যু, আত্মহত্যা কিম্বা হতাশা যেন সাহিত্যের সম্বল। কেন? আমাকে বড়ো বেদনা দেয়।

     এই উপন্যাসের শেষটা কি অমন হওয়া প্রয়োজন ছিল? মাত্র একটা পৃষ্ঠা, কেন লিখলেন মুরাকামি? অমন গাঢ় বিষন্নতায় এমন শিশুতোষ লেখা শেষ হচ্ছে? কেন?

     আমার মন খারাপ হয়ে যায়।

 

==========

অদ্ভুত এক লাইব্রেরী

হারুকি মুরাকামি

অনুবাদিকাঃ আফসানা বেগম

প্রকৃতি পরিচয় পাবলিকেশন

মুদ্রিত মূল্যঃ ১২০ টাকা

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ইন্টারনেট

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে