Posts

Showing posts from June, 2024

বিশ্বকাপ, ভারত ও একটা মন খারাপের কথা

Image
  ভারত বিশ্বকাপ জিতেছে। মোটামুটিভাবে শেষ বল করার আগে থেকেই আমার আশেপাশে বাজী ফাটতে শুরু করেছিল। বেশিরভাগ ঘর থেকেই লোকজনের উল্লাস ভেসে আসছিল। সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট আসতে শুরু করেছিল। শেষ বলের পরে বন্যার মতো তারা ভাসিয়ে দিয়ে যায় আমার আশপাশ। আমার উন্মাদনা। আমার ইমোশন।       ক্রিকেট দলগত খেলা। আমি ক্রিকেট খেলা দেখতে ভালবাসি। খুব একটা এ নিয়ে কথা বা পোস্ট কোনদিনই করি নি। আগের বিশ্বকাপে অমন মর্মান্তিক হারের পরেও কারো সাথে এ নিয়ে মুখ ফুটে, অন্তত সোশাল মিডিয়ায় , কিছু আলোচনা করি নি। আজ করছি। কারন, দলের মধ্যে থেকে গোটা তিনেক মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে আসছে। অত্যন্ত যন্ত্রনাকাতর দু-তিনটে মুখ। কাল রাত্রে যখন একটা নিবিড় শান্তি নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলাম, ঘুম আসার আগে পর্যন্তও সেই তিনটে মুখ ভেসে আসছিল বারবার। স্বপ্নে কি তারা এসেছিল? জানি না। আমার স্বপ্ন সাধারণত মনে থাকে না। কালকেরটাও মনে নেই।       বিরাট কোহলি। রোহিত শর্মা। জসপ্রীত বুমরা।       আমাদের সময়ের তিন জাদুকর। আমার বাবা-কাকারা বলেন কপিল দেবের কথা, শচীন তেন্ডুলকরের কথা, সৌরভ গাঙ্গুলীর কথা। আমি বলব এদের কথা। শেষোক্ত দুজন আন্তর্জাতিক টি২০ খেলা থে

থ্রি ডেজ অফ হ্যাপিনেস

Image
  আমি একটু একটু করে যত জাপানী সাহিত্যের মধ্যে ঢুকছি, বিস্ময় লাগছে। এখনও, গল্প বলার যে প্রথা, উপন্যাস কিম্বা ছোটগল্পের মধ্যে, যা, সম্ভবত অনেকটাই, সে ধারা ভেঙ্গে অন্যরকমভাবে চলার চেষ্টা করছেন পাশ্চাত্যের লেখক-লেখিকারা, সেখান থেকে সরে এসে, গল্পটাকে রেখে, নিজেদের মতো করে উপস্থাপনা করার প্রথা দেখায় যায়। এ অনেকটা, এরিস্টটলীয় সাহিত্য সংজ্ঞা থেকে ভেঙে এসে অন্যরকম উপস্থাপনা। প্রসঙ্গত, বাংলা সাহিত্যও এখনও শুধুমাত্র গল্প বলার ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে না, যদিও, তাদের গল্প বলার পদ্ধতিটা, আমার অনেক সময় মনে হয়, বেডটাইম ড্রামা টাইপ । টিভি-সিরিয়ালগুলো ‘বেডটাইম’টাকে সরিয়ে নিয়ে ড্রামাটাকেই বড়ো করে দেখাতে গিয়ে প্রাচীন যাত্রাপালা এবং খেউর টাইপ নষ্টামী তার সাথে যুক্ত করে ব্যাপারটাকে ভয়ংকর সুন্দর বানিয়ে দিয়েছেন। আমি ভয় পাই। আমার হবু শ্বাশুড়ী এবং বড় ননদ সন্ধ্যেবেলায় নিয়ম করে ঘন্টা দুয়েক মন দিয়ে সিরিয়াল দেখেন এবং বন্ধুসমভিব্যহারে তা নিয়ে আলোচনা করে। প্রসঙ্গত, আমার মাতাঠাকুরাণীও এর বাইরে নন, যদিও, তাকে খুব একটা সিরিয়াল আলোচনা করতে দেখি নি।       ধান ভানতে শিবের গীত টেনে এনেছি, দুঃখিত, আসলে, এই তালে, মনের

ভার্জিনিয়া উলফ

Image
  আমরা, প্রত্যেকেই, কম-বেশি, স্বপ্নসন্ধানী। স্বপ্ন আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। আমরা কি কখনও স্বপ্নদের তাড়া করি?       আমার এক বন্ধু নিজের সাথে কথা বলে। একা থাকলে আপন মনে বিড়বিড় করে। আমরা ছোটবেলায় হাসাহাসি করতাম তাকে নিয়ে। সে লজ্জা পেত। চুপ করে যেত। কিন্তু কখন যেন আপন মনে আবার বিড়বিড় করতে শুরু করত। সেই ইন্ট্রোভার্ট বন্ধুটি তাঁর স্বপ্নগুলোর সাথে কথা বলত। নিত্যনতুন স্বপ্নের জন্ম দিত সে। চিরপুরাতন স্বপ্নগুলো অনেক সময় নিত্যনতুন রূপে-রূপান্তরে তার কাছে ধরা দিত। সে স্বপ্নকে তাড়া করত। স্বপ্নপুরণের জন্যে নয়। স্বপ্নের সাথে আরও কিছুক্ষণ কাটাবে বলে।       সে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, তুই যে চিন্তাগুলো করিস মনে মনে, সেগুলোকে কোনদিন অবসার্ভ করেছিস? পরপর?       সেদিন তাঁর মানে বুঝিনি। আজ বুঝতে পারছি। বুঝতে পারছি তার কারণ, ভার্জিনিয়া উলফ। ধরতে পারছি না, তাঁর কারন নিজের অনভ্যাস।       আমি রাতের পর রাত জাগি। নিজের চিন্তার স্রোতকে ধরব বলে। লিখব বলে। তাকে একটা সার্থক রূপ দেব বলে। আমার সামনে এসে দাঁড়ায় মিসেস ডলওয়ে, মিসেস র‍্যামসে, লিলিরা। আমি কখন যেন চিন্তার স্রোতে ভেসে যাই। আমার অবচেতন মনের মধ্যে বয়ে য

ঘরোয়া

Image
  “ দেখো মনে সব থাকে। সেই ছেলেবেলা কবে কোন্‌কালে দেখেছি রাজেন মল্লিকের বাড়িতে নীলে সাদায় নকশা কাটা প্রকাণ্ড মাটির জ্বালা, গা-ময় ফুটো, উপরে টানিয়ে রাখত। ভিতরে চোঙের মতো একটা কী ছিল তাতে খাবার দেওয়া হত। পাখিরা সেই ফুটো দিয়ে আসত, খাবার খেয়ে আর-এক ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যেত। অবাধ স্বাধীনতা, ঢুকছে আর বের হচ্ছে। মানুষের মনও তাই। স্মৃতির প্রকাণ্ড জালা, তাতে অনেক ফুটো। সেই ফুটো দিয়ে স্মৃতি ঢুকছে আর বের হচ্ছে। জালা খুলে বসে আছি, কতক বেরিয়ে গেছে কতক ঢুকছে কতক রয়ে গেছে মনের ভিতরে, ঠোকরাচ্ছে তো ঠোকরাচ্ছেই, এ না হলে আর হয় না আবার। আর্টেরও তাই। এই ধরো-না বিশ্বভারতীর রেকর্ড, রবিকাকা কোথায় গেলেন, কী করলেন, সব লেখা আছে; কিন্তু তা আর্ট নয়, ও হচ্ছে হিসেব। মানুষ হিসেব চায় না, চায় গল্প। হিসেবের দরকার আছে বৈকি, কিন্তু ওই একটু মিলিয়ে নেবার জন্য, তার বেশি নয়। হিসেবের খাতায় গল্পের খাতায় এইখানেই তফাত। হিসেব থাকে না মনের ভিতরে, ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যায়, থাকে গল্প। সেই ‘ঘরোয়া’ গল্পই বলে গেলুম তোমাকে। ”       বলছেন অবন ঠাকুর, কাটুম-কুটুমের স্রষ্টা, বাংলা ছবির জগতের অবিসম্বাদিত মুকুটহীন রাজা। গল্প বলছেন রাণীকে। রাণী চন্দ।

তসলিমাঃ লেখকদের আসলে পাঠক কি পছন্দ করবে, তা ভেবে, লেখা উচিত নয়

Image
কাফকা-র নাম ছোট্টোবেলা থেকে শুনে এসেছি। তার লেখা কালোত্তীর্ণ। অসামান্য। ‘মেটামরফোসিস’ যখন পড়লাম, মনে একদমই দাগ কাটল না। তিনটে বাংলা অনুবাদ এবং গোটা দুয়েক ইংরাজী তর্জমা পড়েও মনে হল না, এ লেখা খুব একটা ভালো লাগার মতো। ‘দ্য ট্রায়াল’ শেষ করে উঠে ভাবলাম, কেন পড়লাম? সময় নষ্ট। ‘দ্য কাসল’ অর্ধেক পড়ে রেখে দিয়েছি। মোট কথা, আমার চোখে কাফকা খুব একটা কহতব্য নয়। এর মানে কি? এর মানে এই যে, কাফকা বোঝার মতো বুদ্ধিসুদ্ধি আমার হয় নি। যে পর্যায়ে গেলে কাফকার লেখার মর্মার্থে আসা যেতে পারে, আমি সেই পর্যায়ে এক্সিস্ট-ই করি না। এই সিদ্ধান্ত কেন? কারণ, মার্কেজ থেকে শুরু করে মুরাকামি --- প্রতিথযশা লেখকের লেখায় এবং চিন্তনে কাফকার যে কি প্রভাব তা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। অনেক বিদিগ্ধ পাঠকও কাফকার কথায় চুপ করে যায় বিস্ময়ে কিছু বলতে না পেরে। লেখকেরা, বিদগ্ধেরা যখন লেখক কাফকার গুণগান করে, সন্দেহ নেই, তখন, পাঠক হিসাবে আমি চুড়ান্ত ব্যর্থ।       এই গোড়চন্দ্রিকার উদ্দেশ্য কাফকা নয়, এক লেখকের প্রতি আর এক লেখকের বক্তব্য। মনে পড়ে, বেশ কয়েকবার শ্রদ্ধেয় রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার সমালোচনা করেছিলাম। অনেকেই সমর্থন করেছিলেন, অনেক

আলাপচারী রবীন্দ্রনাথ

Image
  রাণী চন্দের রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা ‘গুরুদেব’ অথবা ‘আলাপচারী রবীন্দ্রনাথ’ --- এইদুটোর যে কোনও একটাকে আমি পড়তে বলব। ‘গুরুদেব’ বইটিতে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তিনি যে কথা ঘটনাপরম্পরায় লিখে গিয়েছেন, তার অধিকাংশই ‘আলাপচারী রবীন্দ্রনাথ’ বইতে পাওয়া যাবে, পার্থক্য শুধু একটাই, এই বই মুলত সংলাপ নির্ভর। যে আটপৌরে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের ছায়াঘেরা মায়াময় সম্পর্কের আলো-আঁধারিতে বিরাজমান, সেই রবীন্দ্রনাথ কোথাও যেন, এখানে, গুরুদেবের আসনে প্রতিষ্ঠিত। যেন বা একটু দূরের। যেন বা একটু ভক্তির আবেশে প্রতিষ্টিত। “গুরুদেব চলে গেছেন, এখন তাঁর স্মৃতি নিয়েই দিন কাটছে। শেষ দশবছর তাঁর অতি কাছেই ছিলুম। তাঁকে প্রণাম করে দিনের কাজে হাত দিতুম, সকালে উঠে তাঁর মুখই আগে দেখতুম জানালা দিয়ে। অতি প্রত্যুষে অন্ধকার থাকতে উঠে বাইরে এসে একটি চেয়ারে বসতেন পুবমুখো হয়ে, কোলের উপর হাত দুখানি রেখে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাতরাশ শেষ করে লেখা শুরু করে দিতেন। কোনোদিন দেখতুম বসেছেন কোনার্কের বারান্দায়, কোনোদিন শ্যামলীর বারান্দায় --- আমগাছের ছায়ায়, কোনোদিন বা বাতাবিলেবুর গাছটির পাশে। সে যেন দেবমুর্তি দর্শন করতুম রোজ। মানসচোখে প্রতি