Posts

Showing posts from February, 2024

রবীন্দ্রনাথঃ এক আদালতীয় টানাপোড়েনের সিদ্ধান্ত

Image
  “ যা কিছু অসাধারণ, তাকে ঘিরেই কিংবদন্তী গড়ে তোলার স্বভাব আমাদের। তা সে ঘটনাই হোক, কি কীর্তি। কখনও সেই কিংবদন্তী এমনই উচ্ছ্বসিত, যার প্রতাপে অসাধারণ হয়ে ওঠে অলৌকিক; কখনও আবার তা উৎসারিত এমনই ঈর্ষা-কুৎসা থেকে, যার প্রকোপে অসাধারণের প্রকৃত মহিমারও ঘটে যায় খর্বতা। রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রেও বারবার এমন ঘটনা ঘটেছে। ” সৌরীন্দ্র মিত্রের লেখা ‘খ্যাতি অখ্যাতির নেপথ্যে’-র ব্লার্বের শুরুই হচ্ছে এই কথাকটা দিয়ে। তার এই বইয়ের মূল বিষয়বস্তু একজনই --- রবীন্দ্রনাথ। তিনি রবীন্দ্রনাথের অখ্যাতির পেছনে যে সত্য তা উদ্‌ঘাটন করতে অনলস পরিশ্রম করেছেন, যার ফসলই হল এই বইটি। এই বইয়ের গরিষ্ঠ অংশই রয়েছে রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তি এবং তৎপরবর্তী ইউরোপ জনমানসে প্রতিক্রিয়া বিষয়ে। বিশেষত, যেখানে তাকে কালিমালিপ্ত করার প্রচেষ্টা হয়েছে বারংবার --- “দীর্ঘদিনের নিরলস প্রচেষ্টায় রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পুরো প্রেক্ষিতটিকেই নতুনভাবে আবিষ্কার করে এ-গ্রন্থে তুলে ধরেছেন।” এর সাথে রয়েছে রোম্যাঁ রোলাঁ ও পশ্চিমের চোখে রবীন্দ্রনাথ। পড়তে গেলেই বোঝা যায় কি পরিমাণ খুঁটিয়ে রিসার্চটি উনি করেছেন, এবং তার ফলস্বরূপ এই বইট

ছিন্ন শিকল পায়ে নিয়ে...

Image
অক্টোবর ১ : গতকাল, ৩০শে সেপ্টেম্বর ১৮৭৬, সকাল এগারোটার কয়েক মিনিট বাদে মস্কো থেকে আগত মারিয়া বরিসভা নামে এক দরজি বিশ নম্বর গালেরনায়া স্ট্রীটের ছয়তলা উঁচু অভ্‌সিয়ান্নিকভ হাউসের চিলেকোঠার জানলা থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। ... আত্মহত্যার সময়ে বরিসভার দু-হাতে মেরি-মাতার আইকন ধরা ছিল। (জনৈক সংবাদপত্রে প্রকাশিত কলামের অংশবিশেষ)             দস্তয়েভস্কির মতে, এটি ‘বিনীত, বিনম্র আত্মহননের এক অভূতপূর্ব নিদর্শন’। তিনি লিখছেন, “এখানে দেখাই যাচ্ছে, কোনও কাতরোক্তি বা কারও বিরুদ্ধে কোনও অনুযোগ --- এসবের কিছু নেই। স্রেফ বেঁচে থাকাটাই তার পক্ষে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। ‘ঈশ্বর তা চানও নি’ --- তাই সে মারা গেল, প্রার্থনা করতে করতেই মারা গেল। কিন্তু কিছু ব্যাপার আছে যেগুলি দেখতে যত সাধারণ-ই হোক-না-কেন, তা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ চিন্তা না করে পারা যায় না। সেগুলি আপনার চোখের সামনে এমনভবে দাঁড়িয়ে থাকবে যেন আপনি নিজেও তার জন্যে দায়ী। এই বিনম্র মেয়েটি যে নিজেকে এমনভাবে ধ্বংস করে দিল এটা কিন্তু আপনি চান-না-চান আপনার মনকে পীড়া দেবেই দেবে।” দস্তয়েভস্কি লিখছেন, তার ‘লেখকের দিনলিপি’তে।       অতঃপর জন্ম নিচ্ছে এ

চীনা সংসারের একটুকরো রোজনামচা

Image
লিউ ঝেনউয়ুন চীনদেশের হেনান প্রদেশের মানুষ। ২০১১ সালে পেয়েছেন ‘ মাও দুন ’ সাহিত্য পুরস্কার, যা চীনা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের সমতুল্য ধরা হয়। আচ্ছা, আমাদের দেশের কোন পুরস্কারটা ভারতীয় সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার হিসাবে ধরা হয়? সাহিত্য অকাদেমী? জ্ঞানপীঠ? জানি না। তো যাই হোক, বাঙলা ভাষায় এই প্রথম তার বই অনুবাদ করা হয়েছে। করেছেন আশিস দেব। চমৎকার অনুবাদ। কিছু কিছু শব্দ, এমনকি বাক্যবন্ধকেও বাংলা তর্জমা করেছেন, এমনকি কাঁচা খিস্তিও। অহোঃ! চমৎকার সাহসী অনুবাদ।       শিয়াও লিন্‌, স্বামী, রোজ সকালে উঠে পনীর কেনার লাইনে দাঁড়ায়। বাড়ি ফেরে। ঘরে আয়া, খানিক ফাঁকিবাজ, খানিক বা কাজের। শিয়াও লিন্‌ তাকে বকাবকি করে। শিয়াও লি, স্ত্রী, ঘরের আয়াকে বকাবকি করে কাজে ফাঁকি দেওয়ার জন্য। তারপর স্বামীকে বকাবকি করে। অতঃপর দুজনে ঝগড়া করে। এই পর্যায়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ খানিকটা হয়ে যায়। তারপর দুজনেই অফিসে চলে যায়। ঘরে রয়ে যায় আয়া এবং তাদের ছোট্ট বাচ্চা। তারা রোজ অফিসে যায় । প্রতিবেশী ভারতীয় পরিবারটি দুই চক্ষের বিষ, যদিও, দুজনেরই দুজনকে প্রয়োজন। তারা জলের চুরি করে। ধরা পড়ে। লজ্জা পায়। আবার চুরি করে। তারা চাকরির উন্নতির, ম

জঙ্গলে এক জনমদুখিনী

Image
  “Balance duty with love. Trust me, it can be done.”   Justice এবং Forgiveness --- সমাজজীবনে এর মান্যতা, কিম্বা, নিজের ব্যক্তিগত জীবনভর এর প্রভাব নিয়ে আমরা কি কখনও ভেবেছি? শুনেছি অমর্ত্য সেনের একটি বই Idea Of Justice ( নীতি ও ন্যায্যতা ) নৈতিক-দর্শনে এক অমোঘ প্রভাব ফেলেছে। যদিও, এর ঢেউ আমাদের এদিকে তেমন আসে নি। হয়তো, আমরা নিজেদের স্কেলে এই দুটো শব্দের মাহাত্ম্যকে মেপে নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে তার প্রয়োগ করে চলেছি। কখনও একে ‘ক্রস-চেক’ করি নি। অবশ্য, ব্যক্তিগত জীবনে আমাদের কাছে এইসব পর্যালোচনা ‘দর্শন’-এর বিষয়। আর দর্শন আমাদের জীবনে তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যখন আমরা কোন বিরুদ্ধ পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। আমাদের মন্দিরে যাওয়া বেড়ে যায়, গীতা-বেদ-বেদান্ত পড়ার ধুম পড়ে যায়, পূজো-পাঠের জন্য বাড়ীতে পুরোহিত আনাগোনা করে, কিম্বা মনস্তাত্বিকের চেম্বারে গিয়ে অথবা ওশো-সক্রেটিসের বাণী নিয়ে নিজের জন্য ঢাল বানাতে উদ্যোগী হই।       অথচ এই দুটো শব্দের প্রতিঘাত যে কোন্‌ আদিকাল থেকে ভাবনার কিম্বা পর্যালোচনার মধ্যে দিয়ে, অভিযোজিত হয়ে আজ আমাদের সমাজের পরিকাঠামোর মূল ভিত্তিস্বরূপ হয়ে পড়েছে, ভাবতে গেলে বিস্ময়

সিনেমাটা দেখে পল্লবীর যা মনে হল

Image
  কিছু সিনেমা দেখলে মনে হয় , না দেখলেই ভাল হত; আর কিছু সিনেমা দেখলে মনে হয় , না বানালেই ভাল হত । পল্লবী এসেছিল বাপের বাড়ি অনেকদিন পর । আজ দুপুর - সন্ধ্যা আমরা চার বন্ধুতে একসাথে আড্ডা দিলাম । সত্যি বলতে , ওর সাথে আমাদের মাঝে - মাঝেই কথা হয় । এতএব , সারা দুপুর - সন্ধ্যা আর কতো শাড়ি - নাইটি - শাশুড়ির কথা আলোচনা করা সম্ভব ? বিশেষত, আমাদের মতো আইবুড়ো মেয়েরা যেখানে শূন্যদৃষ্টিতে পল্লবীর দিকে তাকিয়ে আছে ? এতএব , কিছুক্ষণ পরে ক্লান্ত হয়ে পল্লবীরই অনুরোধে দেখতে বসলাম , দশম অবতার ।       আমার কেমন লেগেছে তা তো একবাক্যেই বলে ফেললাম। আমরা বরং পল্লবীর চোখে কিম্বা বলা ভাল তার আবেগঘন উত্তেজনামূলক বাক্যবল্লরীর কিছু উদাহরণ দিয়ে আপনাদেরকে সিনেমাটার পরিচয় করিয়ে দিই --- বাক্য ১ : দেখলি দেখলি প্রসেনজিৎ কেমন দুধগুলো পা দিয়ে মাড়াল না! কতটা সংবেদনশীল মন! আর দুষ্টু লোকটা দুধের ড্রামগুলোই উলটে সব দুধ নষ্ট করে দিল! বাক্য ২ : উরেশ্লা ! অনির্বান আর প্রসেনজিতের ডায়ালগবাজি দেখলি ? এক্কেবারে সেয়ানে সেয়ানে ! লালবাজারের পুলিশ এমন বলেই তো গোয়েন্দাপীঠ লা

'আমাকে দেখুন' কিম্বা 'আমরা দেখি'

Image
  সম্প্রতি , একটি জনপ্রিয় দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি কলাম নিয়ে হুলুস্থুল বেঁধে গেছে । সঙ্গে এই কলামের স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে বহু মানুষ কথা লিখে চলেছেন । ততোধিক মানুষ সেই লেখা কথাগুলোকে নিয়ে বাকবিতণ্ডা চালিয়ে যাচ্ছেন । এর মধ্যে লেখক , প্রকাশক এবং পাঠক --- তিনপক্ষই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জুড়ে গেছেন । আমি লেখিকা নই , পাঠিকা । সাহিত্যের আঙ্গিনায় দর্শক হলেও কিছু কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছি এ প্রসঙ্গে , সাহিত্যেরই খাতিরে । বইমেলার কয়েকদিন আগে থেকেই , নব্যলেখকদেরকে নিয়ে , বিশেষত , যাদের একটা অংশ ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম থেকে উঠে এসেছেন , রীতিমতো ব্যঙ্গ চলছে , মিম চলছে । এই নব্য লেখকেরা তাদের যাবতীয় সৃষ্টির বিজ্ঞাপন ফেসবুকেই করছেন । কিম্বা , অনেক ক্ষেত্রে , ব্যক্তিগত মেসেজ কিম্বা পোস্টের কমেন্টসে গিয়ে তাদের বইয়ের কথা জানাচ্ছেন । এদের অধিকাংশই তাদের বইয়ের বিজ্ঞাপন করার জন্য বছরের পর বছর ধরে ফেসবুককেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন । এইভাবে আস্তে আস্তে তাদের পরিচিতমন্ডলী তৈরী হচ্ছে , ফ্যানবেস