সিনেমাটা দেখে পল্লবীর যা মনে হল
কিছু সিনেমা দেখলে মনে হয়, না দেখলেই ভাল হত; আর কিছু সিনেমা দেখলে মনে হয়, না বানালেই ভাল হত।
পল্লবী এসেছিল বাপের বাড়ি অনেকদিন পর। আজ দুপুর-সন্ধ্যা আমরা চার
বন্ধুতে একসাথে আড্ডা দিলাম। সত্যি বলতে, ওর সাথে আমাদের মাঝে-মাঝেই কথা হয়। এতএব, সারা দুপুর-সন্ধ্যা আর কতো শাড়ি-নাইটি-শাশুড়ির কথা আলোচনা করা সম্ভব? বিশেষত, আমাদের মতো আইবুড়ো মেয়েরা যেখানে শূন্যদৃষ্টিতে
পল্লবীর দিকে
তাকিয়ে আছে? এতএব, কিছুক্ষণ পরে ক্লান্ত হয়ে পল্লবীরই অনুরোধে দেখতে বসলাম, দশম অবতার।
আমার
কেমন লেগেছে তা তো একবাক্যেই বলে ফেললাম। আমরা বরং পল্লবীর চোখে কিম্বা বলা ভাল
তার আবেগঘন উত্তেজনামূলক বাক্যবল্লরীর কিছু উদাহরণ দিয়ে আপনাদেরকে সিনেমাটার পরিচয়
করিয়ে দিই ---
বাক্য ১ : দেখলি দেখলি প্রসেনজিৎ কেমন দুধগুলো পা দিয়ে মাড়াল না! কতটা সংবেদনশীল মন!
আর দুষ্টু লোকটা দুধের ড্রামগুলোই উলটে সব দুধ নষ্ট করে দিল!
বাক্য ২ : উরেশ্লা! অনির্বান আর প্রসেনজিতের ডায়ালগবাজি দেখলি?
এক্কেবারে সেয়ানে সেয়ানে! লালবাজারের পুলিশ এমন
বলেই তো গোয়েন্দাপীঠ লালবাজারের গল্পগুলো ওরা লিখতে পারে!
বাক্য ৩ : পিরানহাগুলোকে দিয়ে কোথায় কোথায় ঠোক্কর মারিয়েছে দেখেছিস! যীশুর জবাব নেই। এমনভাবে খুন
করতে আজ পর্যন্ত কাউকে দেখেছিস? খুন করতে ব্যাঙ্গালোর থেকে মাছ
অর্ডার করতে হয়েছে! কারো মাথায় আসা সম্ভব, বল?
বাক্য ৪ : দ্যাখ দ্যাখ, হি হি হি… চিমনি-মোমবাতি জ্বালিয়ে কম্পিউটার করছে! কারেন্ট চলে গিয়ে
থাকলে কম্পিউটার চলছে কি করে?
বাক্য ৫ : জয়া কি অভিনয় করে দেখছিস! কি লুক মাইরি!
বাক্য ৬ : এক-একটা শট কতক্ষণ ধরে দেখাচ্ছে রে! দেখেও আশ মিটছে না। তাড়া করছে তো
তাড়া করছেই… মনে হচ্ছে এক খেপ ঘুমিয়ে নেওয়া যাবে এই তালে…
বাক্য ৭ : এই সিনেমায় কি দুর্দান্ত সব জায়গায় গান ঢুকিয়েছে দেখেছিস! এইজন্যেই বাংলা সিনেমা আমার এত ভাল লাগে। যখন
ইচ্ছা দারুন দারুন গান চালিয়ে দিতে পারে ওরা।
বাক্য ৮ : ই স স স…! মা-বোনের সামনে কেউ অমনভাবে
ভাইকে মারে! বাজে পুলিশ এরা! একবার দেখে
নেবে না, বাড়ীতে কে কে আছে! আচ্ছা অনির্বান
যখন প্রেম করছিল, তখনই জেনে নেয় নি কেন যে ওদের বাড়ীতে ওদের মা-ও থাকে। আহা রে! স্বামীটা তো গেছেই, এবার ছেলেটাও গেল!
বাক্য ৯ : ও বাবা! খাদ থেকে লাফ দিলে বুঝি এইভাবেই পাখীর মতো ভাসতে
ভাসতে লোকে মারা যায়!
বাক্য ১০ : জয়ার মারা যাওয়ার জন্যে অনির্বানই দায়ী। ওরকম
দুজনে দুদিকে ঘুরে পিঠে পিঠ দেখিয়ে অমন ফিসফিস করে কেউ ঝগড়া করে! ছি ছি! অনির্বানের পুরুষত্ব বলে কিছুই নেই দেখছি!
ইত্যাদি ইত্যাদি
ইত্যাদি…
মোটের উপর
জয়া, অনির্বান এবং যীশু --- অভিনয় যথেষ্ট ভাল। কিন্তু কার হাতে পড়েছে দেখতে হবে
তো! তাই না?
কাহিনীর এখনও একটু বাকি আছে। রাত্রিবেলাতেও যখন ফোনে ফোনে আমরা চারজনে গল্প করার চেষ্টা করছি সিনেমাটা নিয়ে, তখন দোষের মধ্যে সমর্পিতা জিজ্ঞেস করে ফেলেছিল, পোদ্দার কোনটা? ভাইটা না বোনটা?
সেই থেকে পল্লবীর ফোন সুইচ্ অফ্।
আমি পল্লবীকে মেসেজ করলাম, তুই ঠিক আছিস? *ল আছিস। সাবধানে আমার বাড়ি চলে আয়। বর্নভিটা খাব...
পল্লবীর ফোনে আমার মেসেজ ঢুকেছে বটে, তবে ফোনটা আবারও সুইচ্ অফ্।
Comments
Post a Comment