জঙ্গলে এক জনমদুখিনী
“Balance
duty with love. Trust me, it can be done.”
Justice এবং Forgiveness --- সমাজজীবনে এর মান্যতা, কিম্বা,
নিজের ব্যক্তিগত জীবনভর এর প্রভাব নিয়ে আমরা কি কখনও ভেবেছি? শুনেছি অমর্ত্য সেনের
একটি বই Idea Of Justice (নীতি ও ন্যায্যতা) নৈতিক-দর্শনে
এক অমোঘ প্রভাব ফেলেছে। যদিও, এর ঢেউ আমাদের এদিকে তেমন আসে নি।
হয়তো, আমরা নিজেদের স্কেলে এই দুটো শব্দের মাহাত্ম্যকে মেপে নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে তার
প্রয়োগ করে চলেছি। কখনও একে ‘ক্রস-চেক’ করি নি। অবশ্য, ব্যক্তিগত জীবনে আমাদের কাছে
এইসব পর্যালোচনা ‘দর্শন’-এর বিষয়। আর দর্শন আমাদের জীবনে তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে,
যখন আমরা কোন বিরুদ্ধ পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। আমাদের মন্দিরে যাওয়া বেড়ে যায়, গীতা-বেদ-বেদান্ত
পড়ার ধুম পড়ে যায়, পূজো-পাঠের জন্য বাড়ীতে পুরোহিত আনাগোনা করে, কিম্বা মনস্তাত্বিকের
চেম্বারে গিয়ে অথবা ওশো-সক্রেটিসের বাণী নিয়ে নিজের জন্য ঢাল বানাতে উদ্যোগী হই।
অথচ
এই দুটো শব্দের প্রতিঘাত যে কোন্ আদিকাল থেকে ভাবনার কিম্বা পর্যালোচনার মধ্যে দিয়ে,
অভিযোজিত হয়ে আজ আমাদের সমাজের পরিকাঠামোর মূল ভিত্তিস্বরূপ হয়ে পড়েছে, ভাবতে গেলে
বিস্ময় লাগে। এমনকি দস্যু রত্নাকর যখন রামায়ণে এক ‘পার্ফেক্ট’ চরিত্র প্রতিষ্ঠা করার
কথা ভাবলেন, তখন রাজারামকে ‘মর্যাদাপুরুষোত্তম’ বানালেন, এবং বানালেন Justice –এর প্রতিমূর্তি। রামের ‘প্রাণ যাবে, কিন্তু কথার নট নড়ন চড়ন’ এবং ‘শরণাগত
হলে প্রাণ দিয়েও তাকে রক্ষা করা’-র পাশাপাশি যখন ‘বালীবধ’ হল, কিম্বা ‘সীতানির্বাসন’
দিলেন তখন Jaustice কীভাবে প্রতিষ্ঠা হল তিনি স্বয়ং বুঝতে
পারলেন কি? Justice প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে Morality-কে ত্যাগ
করতে হল। আর Morality তখনই থাকে, যখন Forgiveness এসে তার হাত ধরে।
চিত্রা ব্যানার্জী দিবাকারুণির ‘রাম’ রাত্রে ঘুমের মধ্যে বিড়বিড়
করেন, অপরাধবোধে। তারা’র সাথে অন্যায় হয়েছে, অস্বীকার করতে পারেন না। কারণ, Morality ভ্রষ্ট হয়েছে যে! সীতা তাকে সান্ত্বনা দেন, ক্ষমা করতে বলেন, এমনকি নিজেকেও।
মুশকিল হল, Forgiveness-কে কী অদ্ভুতভাবে যেন
আমরা মূলপথ থেকে সরিয়ে দিতে চাইছি। ওই সিনেমায় যেমন হয় না, ‘পুষ্পা’ সব্বাইকে
ঠেঙ্গিয়ে লাট করে দিচ্ছে, কিম্বা ‘ভিক্রম’ মেশিনগান দিয়ে দুষ্টু মানুষদের মেরে
ঠান্ডা করে দিচ্ছে, কিম্বা ‘রণভীর’ স্কুলের মধ্যে AK 47 নিয়ে
ঢুকে পড়ছে দিদির অপমানের শোধ তোলার জন্য। হল জুড়ে সিটি বাজছে। হাততালি পড়ছে।
বহুদিন ধরে মনের ভেতরে জমে থাকা উষ্মা, বঞ্চনার হাহাকার থেকে সমাজ তার অবতারদের
পেয়ে যাচ্ছে --- রজনীকান্ত কিম্বা সলমন খান। Justice প্রতিষ্ঠা
করতে গিয়ে আমরা ক্ষমা-কে বনবাসে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমরা বুঝতেও পারছি না যে, “ক্ষমা
পরমো ধর্ম, স চ সত্যে প্রতিষ্ঠিতা” (ব্যাধগীতা)।
Justice একা
‘সত্যপ্রতিষ্ঠা’ করতে অক্ষম। এমনকি এক পর্যায়ে সে ক্ষমা-কে হারাচ্ছে
চিরতরে। সীতা পাতালপ্রবেশ করছেন। মজার ব্যাপার, তারপরেই কিন্তু রামায়ণের শেষ।
ক্ষমা না থাকলে, Justice কোথায়? আমাদের প্রস্তাবিত
রামরাষ্ট্রে যদি ED দেবতা Justice-এর
প্রতিমূর্তি হয়, তাহলে মহাত্মা গান্ধীকে প্রয়োজন কীসের? আর যে রাষ্ট্রে ক্ষমা নেই,
সেই রাষ্ট্রে সত্য নেই। মিথ্যারাষ্ট্রের ভিত শুধুমাত্র Justice দিয়ে টেকে কি? অযোধ্যাও টেকে নি। মহাভারতের যুদ্ধে শেষ অযোধ্যা সম্রাট
মারা যাওয়ার পর অযোধ্যা পরিত্যক্ত হয়, কথিত আছে। কিম্বা রামপ্রয়াণের ঠিক পরে পরেই
লব-কুশ অযোধ্যা পরিত্যাগ করে দুই আলাদা জায়গায় তাদের দুই রাজ্যনির্মাণ করেন, তবু
অযোধ্যা আর তার হারানো জৌলুস ফিরে পায় না।
চিত্রা ব্যানার্জি দিনাকারুণি আমাকে সত্যিই বিস্মিত করলেন। এখন নিশ্চুপ
নীরব রাত, বীণাপাণি-অর্চনার পূর্বরাত। সদ্য শেষ করেছি তার বই Forest Of
Enchantments. পড়া শুরু করার আগেই মনে মনে ধারণাই করে নিয়েছিলাম, এ
বেটি নির্ঘাত নারীবাদী টাইপ কিছু একটা লিখেছেন। ‘সীতা’ তো ভারতীয় নারীবাদ
আন্দোলনের এক বড়ো মুখ। কিন্তু কোথায় কি! এক-একটা চরিত্রকে তার নিজের নিজের জায়গা
থেকে নির্মাণ করে সমান্তরালে তাদেরকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা করা, এ যে কি কঠিন কাজ,
তা আরেকবার আমার কাছে প্রতিভাত হল।
এ উপন্যাস
সীতা-কে কেন্দ্র করে। সীতা, ক্ষমার প্রতিমূর্তি। কিন্তু কোন অবস্থাতেই নিজের
আত্মসন্মান ত্যাগ করেন না। সীতা, অযোধ্যার রাণী। কিন্তু কোন অবস্থাতেই প্রজা উৎপীড়নকে
ধর্মের নামে চাপিয়ে দেওয়াটাকে সমর্থন করেন না। একেবারে শেষ পর্বে, তাই রামকে
অনায়াসে তিনি ত্যাগ করতে পারেন। তার কারণ, তাকে পুনর্বার অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল
বলে নয়, কারণ, তিনি জানতেন, তিনি যদি এই পরীক্ষা আবার দেন, আবারও উত্তীর্ণ হবেন।
কিন্তু অযোধ্যার প্রজারা তো শুধু পুরুষদের নিয়ে নয়, মহিলারা এর ফলে কীভাবে নিপীড়িত
হবে, তা ভেবে শিউরে ওঠেন --- “I wish you all happiness with my dearest Lav
and Kush. I bless this land, its men and women. I bless my sons. And finally, I
bless my daughters, who are yet unborn. I pray that, if life tests them—as
sooner or later life is bound to do—they’ll be able to stand steadfast and
think carefully, using their hearts as well as their heads, understanding when
they need to compromise, and knowing when they must not. ‘And that is why, O King
Ram, I must reject your kind offer to allow me to prove my innocence again.
Because this is one of those times when a woman must stand up and say, No more!”
কিন্তু কেন?
রাম তো এমন পুরুষ নন। তিনি কি জানতেন না, সীতা নির্দোষ? কিন্তু Justice-এর সমস্যা হল, কেউ যদি একবার আঙ্গুল তোলে, তাহলে সত্য-মিথ্যার প্রভেদ করার
একটাই উপায় সে খোলা রাখে, প্রমাণ। এমন কেন? আমার মনে হয়, Justice তখন যুক্তির পথ ত্যাগ করে সন্দেহের পথে চলতে থাকে --- “Suspicion
is a terrible disease, a cancer that can totally destroy a relationship. I’d
felt its sting myself. It hurt worse when love was involved,”
রাম ব্যর্থ নন। তিনি দুর্বল চরিত্রেরও নন। তিনি ভারতের Justice, কেবল তার ব্যক্তিগত ‘দশরথজনিত’ আশঙ্কা তাকে একা করে দিল। সমষ্টিগত জীবনের
কাছে, রাজা হওয়ার সুবাদে, ব্যক্তিগত জীবনকে বলি দিতে হল। Justice যখন একা দাঁড়াতে চায়, ক্ষমা যদি তাকে ত্যাগ করে, তখন Justice প্রতিষ্ঠা হতে পারে কি? সে ভবিষ্যতকে দেখতে পায় না, সে বর্তমানকে
ব্যালান্স করতে গিয়ে, সব খুইয়ে বসে। ক্ষমা এই ভবিষ্যতকে দেখতে পায়, আর তাই সে বলতে
পারে, “O king of Ayodhya, you know I’m innocent, and yet, unfairly,
you’re asking me to step into the fire. You offer me a tempting prize indeed — to
live in happiness with you and my children. But I must refuse. Because if I do what you demand, society will use my
action forever after to judge other women. Even when they aren’t guilty, the
burden of proving their innocence will fall on them. And society will say, why
not? Even Queen Sita went through it.”
আমি, জানি,
চিত্রা ব্যানার্জী তার সমস্ত আবেগপ্রবণতাকে যথাসাধ্য সরিয়ে দিয়ে রামায়ণকে নির্মাণ
করেছেন সীতার চোখে। তার কাছে রামও ক্ষমা পেয়েছেন অনেক আগেই। তার শেষ কথাগুলো, আমার
মনের মধ্যে ভাসতে থাকে, আমি ভুলতে পারি না কথাগুলো --- “I forgave
you a long time ago,’ I say to Ram. ‘Though I didn’t know it until now. Because
this is the most important aspect of love, whose other face is compassion: It
isn’t doled out, drop by drop. It doesn’t measure who is worthy and who isn’t.
It is like the ocean. Unfathomable. Astonishing. Measureless.”
Justice এবং Forgiveness --- দুজনেরই যে
একটাই লক্ষ্য – Love
==================================
Forest Of Enchantments
Chitra Banerjee Divakaruni
HerperCollins Publishers
Price: 499/-
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সমর্পিতা
Comments
Post a Comment