Posts

Showing posts from October, 2023

শ্রীসাঁই মহারাজের অন্যধারার অখ্যান

Image
  ভূমিকাঃ সবাইকে বিজয়া দশমীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা। গুরুজনদের প্রণাম। বিজয়া দশমীতে শিরিডি-র শ্রীসাঁই মন্দিরে, ‘দসেরা’ উৎসবে বর্তমানে সাঁই মন্দির সারারাত সাঁইপ্রেমীদের জন্য খোলা থাকে। গতকালও তাই ছিল। শ্রীসাঁই-এর মহাসমাধি হয়েছিল এই দিনটিতেই। বর্তমানে তার জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছে সমগ্র ভারত-সাধারণদের মধ্যে। আমার মনে হল, তার একটা বই নিয়ে আলোচনা করলে কেমন হয়? আমার পাড়ার একজন সাঁইপ্রেমী আমাকে এনে দিয়েছিলেন দুটি বই। একটি সাঁইভক্তপ্রিয় ‘শ্রীশ্রীসাঁসৎচরিত্র’ (বাংলা এবং হিন্দী) এবং অপরটি শ্রীসাই জ্ঞানেশ্বরী। প্রথমটা নিয়ে আলোচনা করার কোন মানে হয় না, বরং, দ্বিতীয়টাতে দেখা যাক, সে বই কতটা ‘মোহমুদগর’, আর কতটাই বা ভক্তিবিলোল কবিকল্পনা।   কিছুদিন আগে ইসরোর একদল বিজ্ঞানী চন্দ্রযান ৩ –এর সাফল্য কামনা করে তিরুপতি মন্দিরে পূজো দিয়েছিলেন। অন্য অঞ্চলের কথা জানি না, কিন্তু পশ্চিম বাংলায় অনেক ধিক্কার কিম্বা মিম আমার চোখে পড়েছিল। বিজ্ঞানী হয়ে এমন কুসংষ্কারাগ্রস্থ! ধর্মের ওপর এমন দুর্বলতা ! অর্থাৎ, এই বঙ্গপুঙ্গবেরা মনে করছেন, বিজ্ঞানী হলে তার ঈশ্বরপ্রীতি থাকাটা বালখিল্যতা। মজার কথা, বর্তমানের বৈজ্ঞানিক টেকন

দ্য সাবজেক্ট

Image
  প্রতিবারের মতো এবারেও পুজো-প্রস্তুতি নিয়েছি বেশ কয়েকদিন ধরে। বাড়ি থেকে অনেক দূরে একটা নতুন বিউটি পার্লার খুলেছে, নামকরা। সক্কাল সক্কাল ভরপেট আলুভাতে খেয়ে দুই বন্ধুনী সহযোগে সেখানে গিয়ে ধরনা দিয়েছি, এবং সব কমপ্লিট করে সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরে মায়ের বকুনি খেয়েছি।       ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যেবেলা যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন প্রাণপনে শাড়ীর কুঁচি সামলাচ্ছি, ভাই একবার উঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেল, তার গলার আওয়াজ কানে এসে ধাক্কা মারল, পুরো চল্লিশ মিনিট হয়ে গেছে রে... আর কতক্ষণ? ভাই আমাকে প্যান্ডেলে ছেড়ে দিয়ে ফটোগ্রাফি করতে যাবে মণ্ডপে মন্ডপে। আমি ‘আর একটু’ বলে নিজেকে ঘুরিয়ে বাঁকিয়ে দেখে নিলাম মনবসমান আয়নাতে। এবং তখনই মাথায় একটাই প্রশ্ন ধাক্কা মারল। কেন? এত সাজ কিসের কারণে? আমাকে যাতে খুব সুন্দরী দেখায় সেই কারনেই তো! কিন্তু কেন? তার জন্য এতদিনের প্রস্তুতির কারন কি? উত্তর একটাই। আমি ‘সাবজেক্ট’ হতে চাইছি। আমার আগের জেনারেশান মানুষের চোখে সাবজেক্ট হতে চেয়েছিল। আমি ক্যামেরার লেন্সের চোখে সাবজেক্ট হতে চাইছি। ক্যামেরার সর্বগ্রাসী ক্ষুধার সামনে আমরা সবাই সাবজেক্ট। এমনকি ফটোগ্রাফার নিজেও। তারা সাবজেক

তবে আজ কীসের উৎসব?

Image
  মোটামুটিভাবে আমাদের এদিকেও দুর্গাপুজা শুরু হয়ে গেল। চিরাচরিত রীতি হিসাবে বলা যায়, ঢাকে কাঠি পড়ে গেল। যদিও, ঢাকী মন্ডপে এখনও এসে পৌছোয় নি। আমাদের এখান থেকে অনেকটা দূরে কল্যাণী। শুনেছি, ওখানকার এক মণ্ডপে ঠাকুর দেখতে এত ভীড় হচ্ছে যে, ট্রেনে ভিড়ের চাপে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করা মানুষদের নাভিশ্বাস উঠছে। সম্ভবত একটি বাচ্চা ট্রেন থেকে পড়ে মারাও গেছে। সেখানেই যখন এই অবস্থা, কলকাতায় তখন কি? টিভিতে চোখ পড়লেই হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি। রাস্তা বন্ধ। ট্রাফিক জ্যাম, তাতে এম্বুলেন্স আটকে রোগীর নাভিশ্বাস। মাইকের দাপটে কানে কানে কথা বলাটাও চ্যালেঞ্জ। স্কুল-কলেজে পড়া ছাত্র ছাত্রীদের অনেকেই এই ভীড়ের মধ্যে স্কুলে যাওয়াটা নিরাপদ মনে করছে না। আর ডেলি প্যাসেঞ্জারদের অনেকেই, মোটামুটিভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যে, তারা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করবে, আমার হতভাগা তাদের মধ্যে একজন। আমাদের আশেপাশের বেশিরভাগ প্যান্ডেলে এখনও দুর্গা আসেননি, অথচ লাইটিং নিখুঁতভাবে সাজিয়ে ফেলা হয়েছে। অনেক রাত্রে যে রাস্তা দিয়ে, অন্তত আমরা মেয়েরা, একা কিম্বা দু-তিনজন মিলেও যেতে ভয় পেতাম, আলো ঝলমলে সেই রাস্তাই এখন চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। প্যান্ডেল সম্

জীবনের আলো-আঁধারির রাস্তায়

Image
BOOKER 2023 SHORTLISTED BOOK #1 বিধিসন্মত সতর্কীকরণঃ এই উপন্যাসটি পড়তে হলে স্কোয়াশ খেলা, খেলার বিধিবদ্ধ নিয়ম এবং কোর্ট সম্পর্কিত খুঁটিনাটি জানা আবশ্যক। প্রফেশনাল লেভেলের না হলেও বিগেইনার লেভেলের তো বটেই। নচেৎ, উপন্যাস পাঠের সময় কল্পনাশক্তির অভাবে আপনি বারবার উপন্যাসের টিউনিং থেকে হঠে যেতে পারেন। খেলাটাও একটু দেখে নিলে ভালো হয়। আমি, মাঝখান থেকে, ভারত এশিয়ান গেমসে স্কোয়াশ খেলায় সোনা জেতার ম্যাচটা, অর্থাৎ ফাইনাল ম্যাচটা, যা পাকিস্থানের সাথে হয়েছিল, সেটা দেখে যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি। হয়েছি এই দেখে যে, একটা বদ্ধ ঘরে দেওয়ালে ব্যাট দিয়ে বল মেরে মেরে দুটো মানুষ খেলবে, এমন খেলাও মানুষের মাথা থেকে বেরোতে পারে! এ যেন অনেকটা আমাদের মেয়েদের ছোটবেলায় বর্ষাকালে প্লাস্টিকের টেবিল টেনিস ব্যাট আর পিংপং বল দিয়ে একা একা দেওয়ালে মেরে খেলে সময় কাটানোর মতন। এমন সময় কাটানোর খেলা যে বিশ্বজগতে সোনা জেতার যশ এবং অর্থ জেতার এক মাধ্যম, আমি জানলে হয়তো... যাক গে... হাহুতাশ করে কি হবে?   মূল বক্তব্যঃ পুরো উপন্যাসটাও এরকম কিন্তু হাহুতাশ করবার মতোই। একটি গুজরাটি পরিবার। মা-বাবা ও তাদের স্কুলে পড়া তিন মেয়ে (১৫,

এ কোন রবীন্দ্রনাথ?

Image
  এক-একটা সময় আমার মনে হয়, রবীন্দ্রনাথ আস্তে আস্তে কেমন করে যেন, আমার জীবনে, এক অন্তহীন পথ হয়ে যাচ্ছেন । আর সেই পথের ধারে ধারে কতই না পসরা! কি চাই, আছে তাই। গুরুগম্ভীর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শপিং মল থেকে শুরু করে তার মুখে চুনকালি দেওয়ার উদগ্র আগ্রহে পথের ধারে প্লাস্টিক পেতে বসে যাওয়া ফুটপাথের বেসাতি - আমি দেখি। তা বলে সেখান থেকে টুকরো টুকরো রবীন্দ্রনাথকে আমার জীবনে জুড়ি না। আমার রবীন্দ্রনাথকে নির্মাণ করি তার রচনাবলী থেকে, তার পত্রাবলী থেকে; কণিকা-সুচিত্রা-সুবিনয়-দেবব্রত কিম্বা বন্যা-অদিতি-বিক্রম-লিজা-র গায়কী থেকে। এদের হৃদয়ের রবীন্দ্রনাথকে আমি দেখি, বিস্মিত হই । যে নির্জন এককের পথিক রবীন্দ্রনাথ নিজে হতে চেয়েছিলেন, আমি সেই নির্জন এককের রবীন্দ্রনাথকে বারংবার ফিরে পেতে চাই। তবে এই বই নিয়ে কথা বলা কেন? পসরার দু-একটা জিনিস কিনে ঘর সাজানোর ব্যাপার আর কি। রবীন্দ্রনাথ দিয়ে দিব্যি ঘর সাজানোও যে যায়! কেন সাজাবো না তাকে? অবশ্যই সাজাবো। কিন্তু সেটা যে সাজ, সেটা আমার সজ্জা নয়, মনে রাখব। তেমনই পসরার এক টুকরো, যা আমার হাতে এসে উঠেছে, চিন্ময় গুহের রবীন্দ্রনাথ। সুরের বাঁধনে : রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। এই

Rise of Empires: Ottoman

Image
  ১৪৫৩ খ্রীষ্টাব্দের জুলাই মাস , মাত্র সাত হাজার সৈন্য, যার একটা অংশ ছিল ভাড়া করা ইতালিয়ান পাইরেট্‌স। অন্যদিকে দ্বিতীয় মোহাম্মদের হাতে ছিল সত্তর হাজারের কাছাকাছি সৈন্য। তবুও, ৫০ দিন লেগেছিল এর পতন হতে। ক্ষয়ক্ষতি, দুই পক্ষেরই, অগণিত। তুর্কি শাসন চলবে এরপর পরবর্তী তিনশ বছর। কিন্তু, এই যুদ্ধ, তার মুহুর্মুহ পরিবর্তিত গতিপ্রকৃতি, আর দুই তরফের বুদ্ধি এবং শক্তিমত্তার পরিচয় নিয়ে ছয় পর্বের যে ডকুমেন্টারি, তার নাম Rise of Empires: Ottoman কনন্টান্টিনোপলের শেষ রোমান-খ্রীষ্টান ইতিহাস, নেটফ্লিক্সের হাত ধরে ডকুমেন্টারি রূপে। সিজনের শেষে কনস্টান্টিনোপল চলে যায় তুর্কিদের হাতে। কেমন তা? সেটা বোধহয় পরবর্তী সিজনে বোঝা যাবে। আসলেই সেই সময়ে বিশ্বজুড়ে কনস্টান্টিনোপলের দখল নিয়ে দুই যুযুধানের লড়াই চলছিল অনেক বছর ধরে। একটা কারণ, আর্থিক, একটা কারণ, ভৌগলিক, আর আরেকটা কারণ সমগ্র এশিয়া-ইউরোপে আধিপত্য। আর শেষ কারণ, যা খানিকটা রেখেঢেকে বলা আছে, তা হল ক্রুসেড। ধর্মের নামে মোহ দুই ধর্মের লোকেদের রাজনীতিকে একটাই নামে নামাঙ্কিত করা যায় – মধ্যযুগীয় বর্বরতা। তারই একটুকরো ছবি হয়ে রইল এই সিরিজ। আমি দেখলাম প্রথম সিজন