জীবনের আলো-আঁধারির রাস্তায়
BOOKER 2023 SHORTLISTED BOOK #1
বিধিসন্মত সতর্কীকরণঃ এই উপন্যাসটি
পড়তে হলে স্কোয়াশ খেলা, খেলার বিধিবদ্ধ নিয়ম এবং কোর্ট সম্পর্কিত খুঁটিনাটি জানা
আবশ্যক। প্রফেশনাল লেভেলের না হলেও বিগেইনার লেভেলের তো বটেই। নচেৎ, উপন্যাস পাঠের
সময় কল্পনাশক্তির অভাবে আপনি বারবার উপন্যাসের টিউনিং থেকে হঠে যেতে পারেন। খেলাটাও
একটু দেখে নিলে ভালো হয়। আমি, মাঝখান থেকে, ভারত এশিয়ান গেমসে স্কোয়াশ খেলায় সোনা
জেতার ম্যাচটা, অর্থাৎ ফাইনাল ম্যাচটা, যা পাকিস্থানের সাথে হয়েছিল, সেটা দেখে
যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি। হয়েছি এই দেখে যে, একটা বদ্ধ ঘরে দেওয়ালে ব্যাট দিয়ে বল মেরে
মেরে দুটো মানুষ খেলবে, এমন খেলাও মানুষের মাথা থেকে বেরোতে পারে! এ যেন অনেকটা আমাদের
মেয়েদের ছোটবেলায় বর্ষাকালে প্লাস্টিকের টেবিল টেনিস ব্যাট আর পিংপং বল দিয়ে একা
একা দেওয়ালে মেরে খেলে সময় কাটানোর মতন। এমন সময় কাটানোর খেলা যে বিশ্বজগতে সোনা
জেতার যশ এবং অর্থ জেতার এক মাধ্যম, আমি জানলে হয়তো... যাক গে... হাহুতাশ করে কি
হবে?
মূল বক্তব্যঃ পুরো উপন্যাসটাও
এরকম কিন্তু হাহুতাশ করবার মতোই। একটি গুজরাটি পরিবার। মা-বাবা ও তাদের স্কুলে পড়া
তিন মেয়ে (১৫, ১৩ ১১ বছর তাদের বয়স)। তারা প্রবাসী গুজরাটি। ছোট মেয়ের ভার্সানে এই
উপন্যাসের বিস্তার। শুরুতেই জানা যায়, মেয়েদের মা কিছুদিন আগে মারা গেছেন। এবং
সম্পূর্ণ উপন্যাস জুড়ে এই মাতৃত্বের এবং সঙ্গিনীর অভাবের হাত থেকে, বরং বলা ভাল,
এক বিষাদের হাত থেকে জীবনকে অন্যভাবে বাঁচানোর প্রচেষ্টার নাম Western
Lane.
“After Ma died, we had been careful always to appear with
our hair washed, our nails cut, our clothes clean. We did it instinctively,
without conferring with one another, and we all sensed that this girl must now
have found something amiss. We kept our heads down and tried not to think about
it, but our three voices sounded loud and harsh…” জীবনের এক মর্মান্তিক
সত্যির মধ্যে দিয়ে চারটে চরিত্রকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টার নাম Western
Lane. অতঃপর তিন মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়েটি স্কোয়াশ খেলার দিকে ঝুঁকে পড়ে। তার বাবা তার
ট্রেনার। এবং অবশেষে পরিবারটি মায়ের অনুপস্থিতির যন্ত্রনা বইতে বইতে, বইতে বইতে, বইতে
বইতে… একসময় বিষাদের পাহাড় প্রমাণ গুরুভারের তলায় চাপা পড়ে যেতে থাকে। বিধ্বস্ত হতে
থাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে। অবশেষে, মেয়েটির স্কোয়াশ প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করাকে কেন্দ্র
করে সম্পূর্ণ পরিবার এক নতুন জীবনের দিকে এগোতে থাকে।
গল্পের
কাঠামো খুব চেনা পরিচিত। অবশ্য এত ক্লাসিক সাহিত্য লেখা হয়ে গেছে যে, মৌলিক গল্পের
কাঠামো আর অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। যা আছে, তা হল, গল্প বলার প্যাটার্ন। আর এই অন্যভাবে
বলা গল্পের প্যাটার্নই হল চেতনা মারু-র Western Lane.
উপন্যাসটাকে
একটু অন্যরকমভাবে দেখা যেতে পারে। আমার জীবনে কোন বড়ো রকমের অনুপস্থিতি এভাবে
কোনদিন আসে নি বলেই আমার কাছে এ এক তত্ত্বমাত্র। উপন্যাসটা শেষ করার পর ভাবতে
বসেছিলাম, আমার যদি মা না থাকত তবে জীবন কেমন হত? আমি ভাবতে পারলাম না। অনাহুত
কল্পনার আশঙ্কা-বিহ্বলতা আমায় এমন কোন বিষাদের সন্ধান দিতে পারল না, যে বিষাদের
সাথে লড়াই করতে করতে কোন একটা সময় আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার লড়াইয়ে থাকা
বাবাকে বলতে পারতাম, “Do you remember Ma?”; কিম্বা আমার এমন কি হত
যে, “I felt tears coming now. Probably I should have kept talking,
because in the quiet I began thinking about the funfair and Mona telling us
that Ged and his mother were only in our lives because Ma was dead. I tried to
remember Ma’s face. I looked at the blank walls of the court.”; কিম্বা
বিষাদের বোঝা টানতে টানতে আমার মনে কি এই বোধ আসত যে, “... and what about
the shame on Ma, who was gone? While Ma was alive, whenever we did something we
weren’t supposed to, our relatives would bring Ma’s feelings into it, as if she
was easy to hurt. But she wasn’t. It didn’t matter now. Now she was gone, our
capacity to hurt her seemed infinit”; কিম্বা একলা সংসারের বোঝা ঠেলতে
ঠেলতে আমার ক্লান্ত বাবার কি এরকম মনে হত যে, “The children. The girls.
Sometimes I look at them and I think they will eat me.”
আমার এক
বাল্যবন্ধু মা-হারা। আকাশে শরতের রঙ ধরলে সে আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যেত। তাকে
আবার তেমন করে দেখতে পেতাম পূজোর পরে। বেশ কয়েক বছর পরে, আমরা যখন খানিকটা বড়ো
হলাম, এই অনুপস্থিতির দৃষ্টিকটুত্ব আমাদের পীড়া দিতে শুরু করল। একদিন চোখের জল
চোখের ভেতরে টানতে টানতে আমাদের সে বলেছিল, শরৎকাল এলেই মা-র অভাববোধ তাকে বড্ড
বেদনা দিতে শুরু করে। সারা বছর যে শূন্যতাবোধ ফল্গুধারার মতো দৈনন্দিন জীবনে বয়ে
যায়, পূজোর সময় তার সেই ধারা পাষানের মতো নিশ্চলভার হয়ে পড়ে। তার আর তার বাবা –
দুজনেরই। তাদের ইচ্ছা থাকলেও তারা সহজভাবে কারো সাথে মিশতে পারে না। এমন না যে
সারাদিন সেই অভাববোধে কান্নার ঢেউ এসে খানিক স্বস্তি দিচ্ছে, বরং নিঃশ্বাস বন্ধ
করে দেওয়ার মতো এক অন্ধকারবোধ বুকের ভেতর বয়ে নিয়ে নিয়ে চলতে হচ্ছে। কিন্তু সেই
সময়, কেবলমাত্র এই দুই প্রাণী দুজনের সাথে থেকে একটু স্বস্তিবোধ করত। বাবা আর
মেয়েতে মিলে খানিক কেঁদেকেটে আবার পাষানের সেই গুরুভারকে বয়ে নিয়ে চলার জন্য
প্রস্তুত করত, কিন্তু সেই পাষাণভার সরেও সরত না। তারা পূজোর ওই সময়টুকু নিজেদের
মতো করে একাকী কাটাতো।
জীবনের এই
যন্ত্রণা তো আবগের উথাল পাথাল নয়। তা নীরবে বয়ে যাওয়া এক সূচীভেদ্য বেদনার তীব্র
চোরা আঘাত। ক্ষতবিক্ষত করে, কিন্তু বাইরে তার প্রভাব খুব কম পড়ে। ফলে সেই গল্প আর
সাধারণ গল্পের মতো হাসিকান্নার উত্থান পতনে আমাদের টেনে রাখে না। চেতনা মারু তার
এই উপন্যাসে ঠিক সেইটাই করতে চেয়েছেন। ফলে গল্পের থেকে সরে এসে দৈনন্দিন এই বেদনার
বোধের একটা লেখার প্রয়াসের নামই হল Western Lane.
তবে, বলতে
বাধ্য হচ্ছি, এ লেখার প্রয়াস মাত্র। এই প্রয়াসের মধ্যে সাহিত্যের সেই মূর্চ্ছনা
নেই যা থেকে বলতে পারি, বুকার নমিনেশানের এ এক যোগ্য উপন্যাস। এই বেদনাবোধ
সাহিত্যের আঙ্গিনায় এসে মুখ থুবড়ে পড়ে বারংবার। ফলে অধিকাংশ সময়েই লেখার শ্লথ
গতিধারার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য একটা বড়ো রকমের প্রচেষ্টা করতে হয়।
আর সবশেষে
কি পড়ে থাকে? একটাই কথা, “Do not let your emotions control you when you are on the
court,”
====================
Western Lane
Chetna
Maroo
Picador
Publication
399/-
Comments
Post a Comment