Posts

Showing posts from August, 2022

অপরাজিত

Image
  নিজের হাত আমি নিজে অনেকবার পুড়িয়েছি। কিন্তু এই প্রথম, আমি ঝলসে যাওয়ার ভয় পাচ্ছি। মাঝে মাঝে, লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে, লেখাটা না লিখলেই কি ভালো হয় না? তবুও, কোন একটা মূক যন্ত্রণায় আমি লিখতে বাধ্য হচ্ছি---   অনীক স্যার, আপনি সিনেমাটা কেন বানালেন?   নিঃসন্দেহে, বাঙালী হিসাবে যে কয়েকজন মানুষকে আমরা অনেকদিন পর্যন্ত মাথায় তুলে রাখব তার মধ্যে সত্যজিৎ রায় একজন। তিনি এমনই এক বহুমুখী প্রতিভা, যার পরবর্তী জেনারেশান আর তৈরী হল না। আঁকায়, লেখায়, সুরারোপে কিম্বা পরিচালনায় এই মাপের মানুষ সারা ভারতে জন্মেছে কি? আতস কাঁচ নিয়ে খুঁজতে হবে। মুস্কিল হল, সত্যজিৎ রায় তো আর এমনি এমনি হয় নি, এই আলোকোজ্জ্বল মানুষটি কত অন্ধকারের সাথে লড়েছিলেন, কিম্বা নিজের ভেতরের কতটা অন্ধকারকে জয় করে বা দাবিয়ে দিয়ে এমন মহান পথিকৃৎ হলেন, তার খবর অনীকবাবুর সিনেমায় নেই । ফলে সিনেমায় সত্যজিৎ রায়কে এমন এক আলোকবৃত্তে রাখা হল , যেখানে কোন অন্ধকার নেই। এমনকি তার নিজের ছায়াটুকুও নেই। ফলে এই সিনেমায় তিনি আপাদমস্তক অপাপবিদ্ধ মানুষ, যিনি এলেন, দেখলেন, আর জয় করলেন। সত্যজিৎ রায় এমন একটা আবেগ , যেখানে আর সবকিছুই ঢাকা পড়ে যায়। তিনি যে

দ্বিতীয় সীজন প্রথম সীজনকেও ছাপিয়ে গেছে

Image
  এই লেখাটা যখন আমি লিখছি, তখনও, অনেকখানি আচ্ছন্ন হয়ে আছি। আচ্ছন্ন হয়ে আছি শেফালি শাহ্‌র অভিনয়ে। আচ্ছন্ন হয়ে আছি রসিকা ডুগল, রাজেশ তাইলং, তিলোত্তমা সোমের অভিনয়ে। আমার বারবার মনে হচ্ছিল ঘটনাটা যেন আমার সামনে ঘটছে। আর মনে হচ্ছিল, এমন একটা ঘটনা দিল্লীতে ঘটে গিয়েছিল, দিল্লী এর সাক্ষী ছিল। এই ওয়েব সিরিজের প্রথম সীজন ইন্টারন্যাশনাল এমি এওয়ার্ডস পেয়েছিল। আমার মনে হয়, এই সীজনটা, আগের সিজনের থেকেও অনেক বেশি ভাল হয়েছে। এখানে খুব ছোট ছোট চরিত্রগুলোও এক্কেবারে বাস্তবোচিত অভিনয় করেছে। ফলে সব মিলিয়ে সম্পূর্ণ ওয়েব সিরিজটা হয়ে উঠেছে অদ্ভুত রকমের ভালো। শেফালি শাহ্‌কে যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি। কি মাপের অভিনয় যে উনি করতে পারেন, যাস্ট ভাবা যায় না। শুধুমাত্র মুখমন্ডল দিয়ে যে এই মাপের রিএকশান দেয়া যায় তা ওনাকে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। আর চোখদুটো! হায় ঈশ্বর! যে চোখদুটো দিয়ে ‘আজীব দাস্তান’ সিনেমায় রোমান্স করেছেন, সেই চোখ দুটোতেই এখানে কখনও আগুন ঝরেছে, কখনও ক্লান্তি এসেছে, কখনও পরাজয় এসেছে, কখনও স্নেহ ঝরে পড়েছে, কখনও উদ্বিগ্ন হয়েছে, আবার কখনও জয়ের আনন্দ ঠিকরে পড়েছে। সব মিলিয়ে এই চোখ দিয়ে এত কথা, অত সুক্ষ্ম সু

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে

Image
  ন্যাঃ! শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কোন পরিবর্তন হয় নি। এমন এক জায়গায় এসে কোপ বসালেন, ঠিক কি হল ঠাহর করতে না করতেই উপন্যাসটা শেষ হয়ে গেল। বেকুবের মতন কেমন যেন ঝিমধরা মাথা নিয়ে বসে রইলাম। তবে শেষ করেছেন বড়ই সুন্দরভাবে। আগেরগুলোর মতন হাবজি গাবজি একতাড়া অমীমাংসিত প্রশ্ন রেখে নয়। তবুও শেষ পাতায় এসে মুখ থেকে বেরিয়ে গেল, যাঃ **...!   “আমি এখন এক অন্ধকার প্রকোষ্ঠ। পা দুটো বুকের কাছে জড়ো করা, হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে থুতনীর নীচে। আমার চোখদুটো বোজা, আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না। দেখার কিছু নেইও। তবে আমি শব্দ শুনতে পাই। ধুকপুক ধুকপুক।”                 শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের   লেখা পড়লে মনে হয় তার যেন বৃত্তের মতন উপন্যাস সম্পূর্ণ করার বাসনা থাকে না। কেবল থাকে বৃত্তপথের মাঝে মাঝে বেশ কিছু চোরাপথের বাঁক। আর সেই বাঁকে এসে পাওয়া যায় মণিমুক্তো। যেমনভাবে হঠাৎ করে পর্বশেষে এক নিরীহ গোবেচারারূপে ঈশ্বর আসেন আর নহুষের সাথে কথোপকথনের মাঝে পর্ব শেষ করেন।   “আহা, ভাল করে একটু খুঁজে দেখ না! আঁতিপাঁতি করে খুঁজে দেখ, নিজের ভিতর কিছু পাস কি না। খুব ডুব দিয়ে খোঁজ, তলিয়ে গিয়ে খোঁজ।”   তার উপন্যাসে পার্

শারদীয়া আনন্দলোক উপন্যাস সম্পর্কে

Image
  যাত্রাপালা উল্লাস মল্লিক   ব্যাঙ্গাত্মক লেখার মধ্যে যদি বুদ্ধিমত্তার ছাপ থাকে তাহলে সেটা একটা পড়ার মতো একটা লেখা হয়। উল্লাস মল্লিকের উপন্যাস ' যাত্রাপালা ' তেমনই একটা লেখা। এটা একটা সার্থক লেখা --- এমন কথা বলা যেমন আমার মতন নবীনা পাঠকের শোভা পায় না , তেমন বিশ্বজগতের লেখার পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে আহামরি কিছু না হলেও একথা মানতেই হবে , বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে অনেকদিন পর শারদীয়া আনন্দলোক সংখ্যার কোন একটা লেখা মন ছুঁয়ে গেল। লেখাটা পড়তে পারেন। খারাপ লাগবে না। অন্তত অনেকদিন পর মনে হল উল্লাস মল্লিকের এই উপন্যাসটি বুদ্ধিদীপ্ততার সাথে সাথে গল্পের বুনোটের মাঝে ব্যাঙ্গের এক অদ্ভুত সহাবস্থানে রাজনৈতিক টানাপোড়েনকে কীভাবে অনেকটা আনবায়াসড হয়ে লেখা যেতে পারে তার একটা সুন্দর উদাহরণ হয়ে রইল। একটা লাইন খুব মনে ধরল , " সিদ্ধ আলু পাঁচ আঙ্গুলে চটকে দিলেই হয় না। পাঁচটা আঙ্গুল যখন হয়ে ওঠে প্রেম , ভালবাসা , স্নেহ , মায়া , মমতা... তখনই ঠিকমতো আলুভাতে হয়।" সঙ্গে দেবাশীষ দেব-এর অলঙ্করণের কোন তুলনা হয় না।   প্রত্যাঘাত সিজার বাগচী   যারা কাফকা-কাম্যু পড়েন তারা দূরে হঠুন। যারা হার

কি বিচিত্র দেশ!

Image
বেশ কয়েক বছর আগে একটা ভিডিও ক্লীপ ভাইরাল হয়েছিল। একটি স্কুলের সম্ভবত প্রবীণ বিদায় টাইপের একটা অনুষ্ঠান। সেখানে বাজছে ‘রব নে বানাদে জোড়ি’ গানটি, নাচছে এক নবীন কিশোর, স্কুলেরই এক ছাত্র। আর অদ্ভুত ব্যাপার, গানটির সাথে সাথে বেশ কয়েকজন শিক্ষিকা কিশোর ছাত্রটির সাথে সাথে নেচে গেলেন, শেষের দিকে যোগ দিলেন শিক্ষক এবং আরোও কিছু ছাত্র-ছাত্রী। এত সুন্দর দৃশ্য আর কি হতে পারে? এমন সৌন্দর্যের মধ্যে কোন অশ্লীলতা থাকতে পারে? না। আপনি যদি ভিডিওটা আজও দেখেন তাহলেও বলবেন এটা এক অপূর্ব সম্পর্কের মাধুর্যের বহিঃপ্রকাশ। এখানে কিন্তু কেউ কারো ব্যক্তিগত পরিসরে ঢোকে নি। আক্রমণও করে নি। ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক কি এমনই হওয়া উচিত নয়? উচিৎ।   বেশ। এবার একটু সরে এসে দেখা যাক। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সেই শিক্ষায়তনগত পরিসরের বাইরে একটা সামাজিক পরিচয় আছে, তার বাইরেও আছে তার ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা, সেটা তার আরেকটা পরিচয়। আমরা দৌড়তে চাইছি পশ্চিমের উন্নততর জীবনযাত্রাকে ধরার লক্ষ্যে, কিন্তু পাশাপাশি তাকে রূপ দিতে চাইছি পুরাতন ষোড়ষ কিম্বা সপ্তদশ শতকের মানসিকতায়। ফলে নকল হচ্ছে বটে কিন্তু উন্নতি হচ্ছে না; খাপ পঞ্চায়েত বসছে,

যে বুকে আগুন জ্বলে

Image
ঠিক যেন সন্ধ্যার রক্তপলাশ মেঘ । চারদিক আস্তে আস্তে তাকে ঘিরছে গাঢ় অন্ধকারের ধোঁয়াশা । আমি যেন সেই অন্ধকারের মাঝে হারিয়ে যেতে চাই । এই রক্তপলাশ আগুন বুকে নিয়ে । কি ক্ষতি হবে আমি যদি নষ্ট মেয়ে হই ? কার কি আসবে যাবে তাতে ? কার মন ভাঙবে ? কে আমাকে ডাকবে করুণ সুরে ' ফিরে আয় ' বলে ? কে আমার চুলে নরম করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলবে , একটু থির হ , মা । অনেক তো দৌড়ালি । সারাটা জীবন আরোও কত দৌড়াতে হবে । তার আগে একটু জিরিয়ে নে । কেউ বলবে কি ? কেউ আছো ? যে উত্তর দেবে , রাত কত হল । কেউ আছো , যে বলবে , ওইদিকে যেয়ো না । কথা বোলো না ওই তরুণের সাথে । কেউ কি বলবে , তোমার চোখে দেখেছিলেম ... কি হবে তবে আমি যদি নষ্ট মেয়ে হই ? আমার বুকের ব্লাউসের আগুন ধিকি ধিকি জ্বলে । আমার কামনা , আমার ক্ষোভ , আমার বাসনাকে পেরিয়ে , আমার আগুনে দগ্ধ হতে হতে কে ধরতে চাইবে আমার হাতের লাল, সাদা আর হলুদ গোলাপ? কে আছো ? নিজেকে দগ্ধ করে আমাকে দগ্ধ দিনের সুখ দেবে ? সে হাতটাকে আমি খুঁজে চ