Posts

Showing posts from July, 2022

বউ

Image
  " বউ , তুই কবে আবার বিয়ে করবি?"   আমার যিনি স্বামী, মানে বর্তমান স্বামী আর কি, তার বয়স চার বৎসর। যারা আমার হতভাগাকে চেনেন বলে আমাকে সন্দেহের চোখে দেখতে চাইছেন, তাদের বলি, আপনারা আমার প্রেমিক এবং আমার স্বামীর সঙ্গে সম্বন্ধে গুলাচ্ছেন। দুজন আলাদা মানুষ, আলাদা বিষয়, আলাদা সম্পর্ক। আমার স্বামী প্রথম যেদিন আমাকে 'বউ' বলে ডেকেছি লেন , যাস্ট অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। আমার বাবা-মা আমাকে না জানিয়ে, আমার অনুমতি না নিয়ে এমন একটা ঘটনা কবে ঘটিয়েছিলেন, তা আমার পতিদেবতার কাছে জানতে চাওয়ায়, তিনি আমার কোলে বসে বসে ললিপপ খেতে খেতে বলেছিলেন, তুই জানিস না, গতজন্মে তোর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তো! হিন্দুশাস্ত্র সম্পর্কে আমার যতটুকু ব্যুৎপত্তি আছে তাতে আমি পড়েছি বটে স্বামীর সঙ্গে নাকি সাত জন্মের সম্পর্ক। এহেন হাতে-কলমে প্রমাণ পেয়ে আমি আশঙ্কিত এবং আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তা এ জন্মে এই স্ত্রীরত্নটির কর্তব্য কি হবে? দেখা হলেই চিপস আর ললিপপ আর চুমু। আর তাকে কোলে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে হবে। এই হল এজন্মের স্বামীসেবা। এমন কর্তব্যে অবিচল ছিলাম এতদিন। মানে দুই বছর ধরে। এই দুই ব

অন্যরকম আশিকী

Image
বাণী কাপুরকে আমার একদমই ভাল লাগে না। মানে সে দেখতে এতটুকু খারাপ নয়। পুরুষালী চেহারাতে বেশ লাগে, বিশেষ করে চোখদুটো মায়াকাড়া। কিন্তু অভিনয়? উঁহু। ‘বেফিক্‌রে’ হোক কিম্বা ‘ওয়ার’-এ আমার একদমই ভাল লাগে নি ওর অভিনয়। অপরদিকে আয়ুষ্মান খুরানাকে দেখলে আমার মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়। ‘মেরী প্যায়ারী বিন্দু’, বা ‘শুভ মঙ্গল জাদা সাবধান’-এ যেমন ধেড়িয়েছে, তেমনি ‘দম লাগাকে হেইসা’, ‘ অন্ধাধুন ’, ‘আর্টিকেল 15 ’ কিম্বা ‘বাধাই হো’ --- মনে রাখার মতো অভিনয়ও করেছে । তার মুখটাতেই এমন একটা কিছু একটা থাকে যে স্ক্রীণে এলেই তাকে দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এই সিনেমায় দুজনেরই ঘটি উল্টেছে, মানে একজনের উলটে সোজা হয়েছে, আরেকজনের উলটে গেছে।     ট্রান্স সেক্সুয়ালিটি নিয়ে কতটা কি আমাদের জানা আছে আমরা জানি না, তবে ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়ই যে একমাত্র ‘ট্রান্স’ এমন একটা ধারণা আমার অনেকদিন ধরেই ছিল। ফলে স্বাভাবিক জনজীবনে যে তাদেরও একটা অধিকার আছে, তারাও খুব সহজ সরলভাবেই আমাদের সাথে মিশতে পারে, কথা বলতে পারে, আনন্দ-উল্লাস করতে পারে, প্রেম করতে পারে, এমনকি বন্য যৌনতাও করতে পারে --- তা ধারণাই ছিল না। এই ধারণা পরবর্তীকালে ভাঙে বটে, কিন্

তিন আতঙ্কবাদী

Image
অরিত্রী – সমর্পিতা - প্রধন্যা তিন বন্ধু, থ্রি মাস্কেটিয়ার্স তিন বিশুদ্ধ আতঙ্কবাদী   প্রথম লাইনে আমাদের নাম। দ্বিতীয় লাইনের বিশেষণটা স্কুলে আমাদের ইংরাজীর স্যার ডাকতেন। আর তৃতীয় বিশেষণটি আমাদের মায়েদের দেওয়া। সবকটা বিশেষণই নির্ভুল। বিশেষত তৃতীয়টা। পল্লবী, আমাদের দলের চতুর্থ সদস্যা, বড়ই সাবধানী, তাকে নিয়ে হুলুস্থুলু করা যায় না। বরং সে নিজেকে একটু গুটিয়েই রাখে। একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলে বলে আমরাও দূরত্বটাকে সন্মান দিয়ে চলি। ফলে যা কিছু টানাপোড়েন, সব মূলত আমাদের তিনজনকে ঘিরেই হয়। তো এই অরিত্রী উচ্চৈস্বরে ‘হা হা হি হি’ করে আশপাশের মানুষজনদের চমকে দিতে পারে। সমর্পিতা কোথা থেকে যে কোন বিপদে টেনে এনে ফেলবে তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। আর আমি? আমার নিজের গুণ আমি নিজে না হয় না-ই বা গাইলাম। মজার ব্যাপার, আমরা তিনজন যখন একত্রিত হই, সে বাড়ীই হোক, কিম্বা বাড়ীর বাইরে, মোটামুটি একটা ঝড় চলে আশেপাশে। কোন ধর্মস্থানে আমরা যাই না। কারণ ধর্মস্থানে চুপ থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। আর আমরা সেই হিসাবে অবাঞ্ছিত। জানি না, একত্রে মরলে বিষ্ণুলোক বা ইন্দ্রলোকে আমাদের ঠাঁই হবে কি না। নরকে যে জায়গা হবে না এটুকু

আয়নার এপার ওপার

Image
“আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম, স্বপ্নে দেখা নিজসত্তার অভাগা, অসহায় আবছায়াকে আমি ভালোবেসেছিলাম। আবছায়ার লজ্জা, ক্রোধ, পাপবোধ ও বিষণ্ণতা অনুভব করে দমবন্ধ হয়ে আসার মতো, কোন বন্য পশুকে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাতে দেখে লজ্জায় ডুবে যাওয়ার মতো বা নিজের বখে যাওয়া পুত্রের স্বার্থপরতায় ক্রোধান্ধ হয়ে ওঠার মতো তীব্র ছিল সেই ভালোবাসার অনুভূতি। তার প্রতি আমার ভালোবাসায় সবচেয়ে বেশি ছিল সম্ভবত আমার নিজেকে জানার নির্বোধ বিতৃষ্ণা ও আনন্দ।”   মজার ব্যাপার এই বইটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আমি বুঝতে পারছি না কি লিখব, কী-বোর্ডে হাত চলতে চাইছে, শব্দ হাতড়ে হাতড়ে বেড়াচ্ছি। আর খুঁজে চলেছি সঠিক শব্দবিন্যাসের। তার মানে কি এই ‘ The White Castle ’ তথা ‘সফেদ দুর্গ’ বইটা একটা অসাধারণ বই? এই প্রথম বলছি, সজ্ঞানে বলছি, আমি জানি না।   নিজের কাছে নিজেই যখন একটু একটু অপরিচিত, এবং সেই অপরিচয়ের বোঝা বইতে বইতে যখন নিজের সাথেই একদিন দেখা হয়ে যায়, এবং সেই অন্য ‘আমি’ আর এই ‘আমি’তে মিলে একটা বন্দোবস্ত হয়, আস্তে আস্তে সহাবস্থান হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং অবশেষে অনেক মিলে-অমিলে স্বীকার করে নিতেই হয় যে সেই চিনেও অচেনা, জেনেও অজানা, এব

মৃত্যুহীন কালের গহীন সমুদ্রে

Image
প্রথম পর্ব ======== বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে কি শুধুমাত্র বিজ্ঞানীর অবদান থাকে? মোটেই না। বিজ্ঞানের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেন তারাও নিঃশব্দ বিপ্লবে সহায়তা করেন। জেমস ওয়েব তাদেরই একজন। কেনেডির সময়ের এই রাজনীতিবিদ কেনেডিকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, শুধুমাত্র চাঁদে মানুষ পাঠালে হয়তো তাৎক্ষনিকভাবে জনমনের সমর্থন আদায় করতে পারবেন, কিন্তু ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানের জন্য আরোও কিছু করা দরকার। আরোও বড় কিছু। এতএব ১৯৬১ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত তিনি নাসার স্পেস এজেন্সিকে সামলান এবং নাসা তার প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হাব্‌লের উত্তরসূরীরূপে যে নতুন ও শক্তিশালী স্পেস টেলিস্কোপ নির্মান করা হয়, তার নাম এই জেমস ওয়েবের নামেই রাখা হয়।        এই টেলিস্কোপ আদতেই প্রচন্ড শক্তিশালী। প্রথম ছবিটা লক্ষ্য করলেই এর গঠনগত দিক লক্ষ্য করা যাবে। পথিক গুহ ’র ভাষায়, “ ১৯৯০-এর দশকে মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল এই টেলিস্কোপের। তখনই খরচ ধরা হয়েছিল ১০০ কোটি ডলার। ২০২১ সালে যখন এই টেলিস্কোপ মহাকাশে পাড়ি দেয়, তখন খরচ দাঁড়ায় ১০০০ কোটি ডলার। ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইএসএ) এবং কানাডার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (সিএসএ) নাসা-র দিকে আর্থিক সাহায্যের হাত না

বিশ্বাস

Image
  একদিন মেয়েটাকে তার প্রেমিক বলেছিল, কোন পরমহংস নাকি বলেছে, চাকরী করা দাসত্ব      এতএব বাকি জীবনটা সে কারোও দাসত্ব করে কাটাবে না মেয়েটি অবাক হয়েছিল, গর্বিত হয়েছিল,       এমন গুণধর শুদ্ধাত্মাকে নিজের জীবনে পেয়ে, নিজেকে ভেবেছিল, মা সারদা, কিম্বা রুক্মিনী, কখনও কখনও বা সীতা     প্রতিজ্ঞা করেছিল, বিয়ে সে একেই করবে।   বিয়ে হয়েছিল অবশেষে, মেয়েটির তেজে আর জেদে ।   সেই স্ত্রীকেই স্বামী বলেছিল, ফুলশয্যার রাতে,     তার জন্ম ও কর্ম নাকি দিব্য ও নির্মল     প্রথমে বেদে লেখা হয়েছে, আর তারপরে গীতায় সে বুঝেছে সে-ই সে      অর্থাৎ, নারীটির স্বামীসেবাই পরম ধর্ম । এতএব, বিনা প্রশ্নে, বিনা প্রতিবাদে নিঃশব্দ আত্মসমর্পন। নারীটি বুঝেছিল, ভারতের সনাতন ধর্মের ধারা      এবার তার শরীরে বইবে, কিম্বা তার পরের প্রজন্মে          এতএব পরম মমতায় পালন করেছিল সেই ধর্ম।     সকল অভাব-অভিযোগ, নিন্দা ও তিরস্কারকে   এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছিল সে   স্বামীর মর্মবিদারী অসন্মান এবং সমালোচনাকে    গলায় মালা করে পরে ভুগেছিল অপরাধবোধে,         তবুও উড়াতে পারেনি নিজের অন্ধ বিশ্বাসকে