অন্যরকম আশিকী
বাণী কাপুরকে আমার একদমই ভাল লাগে না। মানে সে দেখতে এতটুকু খারাপ নয়। পুরুষালী চেহারাতে বেশ লাগে, বিশেষ করে চোখদুটো মায়াকাড়া। কিন্তু অভিনয়? উঁহু। ‘বেফিক্রে’ হোক কিম্বা ‘ওয়ার’-এ আমার একদমই ভাল লাগে নি ওর অভিনয়।
অপরদিকে আয়ুষ্মান খুরানাকে দেখলে আমার মিশ্র প্রতিক্রিয়া
হয়। ‘মেরী প্যায়ারী বিন্দু’, বা ‘শুভ মঙ্গল জাদা সাবধান’-এ যেমন ধেড়িয়েছে, তেমনি
‘দম লাগাকে হেইসা’, ‘অন্ধাধুন’,
‘আর্টিকেল 15’ কিম্বা ‘বাধাই হো’ --- মনে
রাখার মতো অভিনয়ও করেছে। তার মুখটাতেই এমন একটা কিছু একটা থাকে যে স্ক্রীণে
এলেই তাকে দেখতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু এই সিনেমায় দুজনেরই ঘটি উল্টেছে, মানে একজনের উলটে
সোজা হয়েছে, আরেকজনের উলটে গেছে।
ট্রান্স সেক্সুয়ালিটি নিয়ে কতটা কি আমাদের জানা আছে আমরা
জানি না, তবে ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়ই যে একমাত্র ‘ট্রান্স’ এমন একটা ধারণা আমার
অনেকদিন ধরেই ছিল। ফলে স্বাভাবিক জনজীবনে যে তাদেরও একটা অধিকার আছে, তারাও খুব
সহজ সরলভাবেই আমাদের সাথে মিশতে পারে, কথা বলতে পারে, আনন্দ-উল্লাস করতে পারে,
প্রেম করতে পারে, এমনকি বন্য যৌনতাও করতে পারে --- তা ধারণাই ছিল না। এই ধারণা
পরবর্তীকালে ভাঙে বটে, কিন্তু সমাজ জীবনে যে শক্তিশালী মাধ্যমকে এ ব্যাপারে আরোও
বেশি করে এগিয়ে আসা উচিৎ ছিল, সেই মাধ্যমটি সম্ভবত এই প্রথম এই বিষয়ে পা রাখল।
বিশেষ করে বলিউডে।
‘রক্ অন্’ বা ‘কাই পো চে’-র ডিরেক্টরকে অনেক ধন্যবাদ এমন
একটা বিষয় বাছার জন্যে। কিন্তু এতটা কমার্শিয়াল করার খুব প্রয়োজন ছিল কি? মুম্বই
মশালা থেকে আপনি কেন হঠতে পারলেন না? সেই শেষে একই রকমের ‘থোর বড়ি খাড়া’। কেন
সিনেমাটা সমাজের দ্বন্দ্বকে নিয়ে, তার মানসিক টানাপোড়েনটাকে নিয়ে আর এগোতেই পারল
না? কেন সিনেমাটায় থেকে থেকেই অযাচিতভাবে গান এসে সময়ের অপচয় করাল? ফলে না হল একটা
সিরিয়াস মুভি, না কমার্শিয়াল। না কমেডি, না সিরিয়াস।
সিরিয়াস মুভিতে কি কমেডি হয় না? হয় তো। ‘বাধাই হো’ কিম্বা
‘শুভ মঙ্গল সাবধান’ দেখেছি আমরা। কিন্তু ‘ড্রিম গার্ল’ থেকে আয়ুষ্মান স্যার, আপনার
যে কি হল, নিজেকে কোথাও জোকার বানিয়ে ফেললেন। এই বইতেও তাই। যেখানে আপনি অসাধারণ,
সেই কেমিস্ট্রিটাই অনুপস্থিত। ফলে কোথাও সিনেমাটা ঝুল হয়ে গেল।
আর বাণী কাপুর! আহা আহা! এই সিনেমাটাতে যদি কাউকে দেখতে হয়
তো সে আপনি। এক্কেবারে পারফেক্ট অভিনয় করেছেন। আপনার মদ্দাটাইপ চেহারাতে, আপনার
চোখের ভাষায় একজন ট্রান্সের যে বেদনা, যে যন্ত্রণা, যে টানাপোড়েন আপনি ফুটিয়ে
তুলেছেন, শুধুমাত্র সেইটাই দেখার জন্যে এই সিনেমাটা শেষ পর্যন্ত দেখা যায়। বাকি সব
চরিত্র মোটামুটি চলে যায়।
সব মিলিয়ে আয়ুষ্মান খুরানা বলতে আমরা যেরকমের সিনেমা আশা
করি, আবারও নিজের শুধুমাত্র বডি দেখিয়ে দেখিয়েই হতাশ করলেন। অভিনয় করার থেকে
পরিচালকের হাতে নিজেকে ছেড়ে একরম খুশবন্ত সিং-এর সান্টা-বান্টা কমেডি হয়ে গেলেন
আপনি। যদিও এরকম একটা বিষয়ে কাজ করার সাহস একমাত্র রাজকুমার রাও ছাড়া আপনিই দেখাতে
পারেন।
ট্রান্সজেন্ডারদের সম্পর্কে যে ধারণা আমাদের আছে তা ভাঙতে
এই সিনেমা অক্ষম হলেও, যে প্রচেষ্টা নিয়ে সিনেমাটার নির্মান তা ভবিষ্যতে বলিউডের
সিনেমাসমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বলিউড যে আস্তে আস্তে খান জমানা থেকে
বেরিয়ে অন্যরকম সিনেমা করছে এবং অনেক বেশি পরিমাণে করছে তার জন্যে সাধুবাদ। অন্তত
উদাহরণ হিসাবে এই সিনেমাটার বেশ কিছু অংশ তো তারা জনসমাজের সামনে এনে নিজদেরকে
তুলে ধরতেই পারেন।
=============================
Chandigarh Kare Aashiqui
Ayushmann Khurrana, Vaani
Kapoor
Director: Abhishek Kapoor
Duration: 116 minutes
Comments
Post a Comment