বিশ্বাস

 


একদিন মেয়েটাকে তার প্রেমিক বলেছিল,

কোন পরমহংস নাকি বলেছে, চাকরী করা দাসত্ব

     এতএব বাকি জীবনটা সে কারোও দাসত্ব করে কাটাবে না

মেয়েটি অবাক হয়েছিল, গর্বিত হয়েছিল,

      এমন গুণধর শুদ্ধাত্মাকে নিজের জীবনে পেয়ে,

নিজেকে ভেবেছিল, মা সারদা, কিম্বা রুক্মিনী, কখনও কখনও বা সীতা

    প্রতিজ্ঞা করেছিল, বিয়ে সে একেই করবে।

 

বিয়ে হয়েছিল অবশেষে, মেয়েটির তেজে আর জেদে

 

সেই স্ত্রীকেই স্বামী বলেছিল, ফুলশয্যার রাতে,

    তার জন্ম ও কর্ম নাকি দিব্য ও নির্মল

    প্রথমে বেদে লেখা হয়েছে, আর তারপরে গীতায়

সে বুঝেছে সে-ই সে

     অর্থাৎ, নারীটির স্বামীসেবাই পরম ধর্ম

এতএব, বিনা প্রশ্নে, বিনা প্রতিবাদে নিঃশব্দ আত্মসমর্পন।

নারীটি বুঝেছিল, ভারতের সনাতন ধর্মের ধারা

     এবার তার শরীরে বইবে, কিম্বা তার পরের প্রজন্মে

        এতএব পরম মমতায় পালন করেছিল সেই ধর্ম। 

 

সকল অভাব-অভিযোগ, নিন্দা ও তিরস্কারকে

 এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছিল সে

  স্বামীর মর্মবিদারী অসন্মান এবং সমালোচনাকে

   গলায় মালা করে পরে ভুগেছিল অপরাধবোধে,

     তবুও উড়াতে পারেনি নিজের অন্ধ বিশ্বাসকে

       তুলতে পারেনি গলা, চড়াতে পারেনি সুর।

         নিজেকে ভাগ্যবতী ভেবেছিল সে।

বিশ্বাস করেছিল, এর শুভফল একদিন মিলবেই মিলবে।

 

আর আজ, সন্ধ্যের অন্ধকারে, একাকী

  রঙচটা, চিড়ধরা বাড়ীর জানালার ধারে

     ইউরিক অ্যাসিডে যন্ত্রণাময় বাঁ-পায়ে ছেঁড়া ব্লাউজ দিয়ে

        সেঁক দিতে দিতে সন্ন্যাসী সন্তান পরিত্যক্তা বৃদ্ধা বিষ্ণুপ্রিয়া ভাবে,

 

বিধবা ভাতা-র আর কত দেরী...


[ছবিঃ ইন্টারনেট]

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে