তিন আতঙ্কবাদী
অরিত্রী – সমর্পিতা - প্রধন্যা
তিন বন্ধু, থ্রি
মাস্কেটিয়ার্স
তিন বিশুদ্ধ আতঙ্কবাদী
প্রথম লাইনে
আমাদের নাম। দ্বিতীয় লাইনের বিশেষণটা স্কুলে আমাদের ইংরাজীর স্যার ডাকতেন। আর
তৃতীয় বিশেষণটি আমাদের মায়েদের দেওয়া। সবকটা বিশেষণই নির্ভুল। বিশেষত তৃতীয়টা। পল্লবী,
আমাদের দলের চতুর্থ সদস্যা, বড়ই সাবধানী, তাকে নিয়ে হুলুস্থুলু করা যায় না। বরং সে
নিজেকে একটু গুটিয়েই রাখে। একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলে বলে আমরাও
দূরত্বটাকে সন্মান দিয়ে চলি। ফলে যা কিছু টানাপোড়েন, সব মূলত আমাদের তিনজনকে ঘিরেই
হয়।
তো এই
অরিত্রী উচ্চৈস্বরে ‘হা হা হি হি’ করে আশপাশের মানুষজনদের চমকে দিতে পারে।
সমর্পিতা কোথা থেকে যে কোন বিপদে টেনে এনে ফেলবে তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। আর আমি?
আমার নিজের গুণ আমি নিজে না হয় না-ই বা গাইলাম।
মজার
ব্যাপার, আমরা তিনজন যখন একত্রিত হই, সে বাড়ীই হোক, কিম্বা বাড়ীর বাইরে, মোটামুটি
একটা ঝড় চলে আশেপাশে। কোন ধর্মস্থানে আমরা যাই না। কারণ ধর্মস্থানে চুপ থাকাটাই
বাঞ্ছনীয়। আর আমরা সেই হিসাবে অবাঞ্ছিত। জানি না, একত্রে মরলে বিষ্ণুলোক বা
ইন্দ্রলোকে আমাদের ঠাঁই হবে কি না। নরকে যে জায়গা হবে না এটুকু নিশ্চিত। নরকও না
কি আমাদের সহ্য করতে পারবে না। আমাদের মায়েদের মতে, আমরা যমেরও অরুচি।
অদ্ভুতভাবে
আমাদের মায়েরা নিজ নিজ তনয়াদের একদমই পছন্দ করে না, কিন্তু অপর মায়ের মেয়েকে আবার
বেশ পছন্দ করে। যেমন, আমার মা সমর্পিতাকে প্রচন্ড পছন্দ করে। আমার বাড়ীতে তার
অবারিত দ্বার। আমার আবার অসময়ে খিদে পেলে অরিত্রীর মায়ের কাছে চলে যাই, জানি আমার
জন্য কিছু না কিছু স্নেহ জমা আছে ওখানে। আর অরিত্রী? বহুদিন সমর্পিতার মায়ের সাথে
ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করে বাড়ী ফিরেছে। মোদ্দা কথা, যে যার নিজের বাড়ীতে পাত্তা না
পেলেও আমরা জানি, আমাদের প্রত্যেকেরই আরেকটা বাড়ি আছে। মায়েরা নিজেদের মধ্যে কথা
বলে আমাদের ‘শাফ্ল’ করে নিয়ে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের কোন
স্বামীদেবতাই নিজ নিজ মহীয়সী কন্যারত্নদের হাতছাড়া করতে চায় নি। আবার, কন্যারাও
আপন পিতাঠাকুরকে ছাড়া থাকতে অপারগ। আর মাতাদেবীরা তাদের নিজ নিজ পতিঠাকুরদেরও
‘শাফ্ল’ করতে চায় নি। সব জিনিসের ভাগ হয় না কি না...
যাই হোক, আমাদের
তিনজনের আড্ডাস্থলগুলো অদ্ভুত অদ্ভুত জায়গায় অবস্থিত --- ইটভাটার সামনের জলামাঠে,
খোলা উন্মুক্ত ধানজমির আলের ধারে, পেট্রোল পাম্পের লাগোয়া ধাবায়, কিম্বা মদের
দোকানের লাগোয়া পার্কে। সেখানে ‘হা হা হি হি’ চলে, যা লোকেদের এখন গা সওয়া হয়ে
গেছে। কোনদিন আমরা দুজন বন্ধু গেলে প্রণয়ীযুগলেরা জিজ্ঞাসা করে, আরেকজন কোথায়?
আমরা মাঝে মাঝে প্রণয়ীদের ছবি তুলে দিই, তার বদলে তারা আমাদের চোখে চোখে রাখে,
মানে হতভাগাদের বদলে অন্য কোন পরপুরুষ এটাক করলে বা করার চেষ্টা করলে একটা বড় শীষ
দিলেই ভীড় জমে যাবে আর কি। আর এই শিষ দেওয়ার কাজটা অরিত্রী অসম্ভব ভাল পারে।
আমাদের
মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাঁপে-নেউলে সম্পর্ক আমার ভাইয়ের সাথে অরিত্রীর। অরিত্রীও বেশ
পছন্দ করে আমার ভাইকে। দুজনে মিলে একবার মারামারি করতে করতে বালিশ ফাটিয়ে ফেলেছিল।
শাস্তিস্বরূপ আমার মা অরিত্রীকে এগরোল খাইয়েছিল, ভাইয়ের পিঠে চড়ের দাগ এঁকে
দিয়েছিল, আর আমাকে বালিশদুটোতে তুলো ভরে আবার সেলাই করতে হয়েছিল। আমি কার ওপর
প্রতিশোধ নেব বুঝতে না পেরে ফ্রিজে রাখা একবাক্স চকলেট সাবড়ে দিয়ে আবার ঝ্যাটার
বাড়ি খেয়েছিলাম। ভাই অরিত্রীকে শাষিয়েছিল যে তাকে না কি স্টেশানের কচা পাগলার সাথে
বিয়ে দেবে। অরিত্রী তাই শুনে ভাইকে টানতে টানতে স্টেশানে কচা পাগলার কাছে নিয়ে
গিয়ে বলেছিল, আমি বিয়ে করব, কিন্তু তোকে কথা বলতে হবে পাগলার সাথে। কচা পাগলা
বিয়ের আনন্দে ডগোমগো হয়ে ভাইয়েরই হাত চেপে ধরেছিল খপাৎ করে। ভাই বুঝতে পারে নি যে
অরিত্রী আর প্রধন্যা এক জিনিস নয়, অরিত্রী আরোও বড় বিষকন্যা। সেবার আধাঘন্টা
ধস্তাধস্তি করে ছাড়া পেয়েছিল ভাই। তারপর থেকে আর অরিত্রীকে ঘাটায় না। অবশ্য ভাইয়ের
‘রাধারাণী’র সাথে ভাব করানোর প্রধান বৃন্দে ঝি ছিল এই অরিত্রীই। সেজন্যে দুজনের
মধ্যে গলায় গলায় ভাবও আছে। আমার বদলে বাড়ীতে অরিত্রী এলে ভাইয়ের আপত্তি নেই। আমার
মায়ের আবার ইচ্ছা সমর্পিতা আসুক গৃহ আলো করে। আর আমি? মাঝে মাঝে বাবার গলা জড়িয়ে
ধরে বুকে মাথা রেখে নাকিকান্না কাঁদা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর দেখি না।
এই ছবিটা
ভাই আর তার রাধারাণী যখন ইটভাটায় প্রেম করতে এসেছিল তখন তুলেছিল। আমরা কোথায় কোথায়
চরতে যাই তার প্রমাণ রেখেছে মায়ের জন্যে। মায়ের এক্কেবারে চামচা হয়েছে সে। মাঝেরটি
অরিত্রী। সে সবসময় মধ্যমণি হয়ে থাকতে চায়। অরিত্রীর বাঁ-পাশে সমর্পিতা। আর ঠিক ডানপাশের সফেদ হাতিটা??? ওটা আমি। আর আমাদের পেছনে
যে দুজন সুখে শুয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমাদের পাহারা দিচ্ছেন তারা আমাদের রক্ষাকর্তা।
কয়েকটা বিস্কুটের বিনিময়ে আমাদের সারা বছরের পাহারাদারি করে দিনযাপন করেন এনারা।
“और तुझसे हसीं, और तुझसे हसीं तेरा प्यार
तू जाने ना
ये नयन डरे डरे...
ये नयन डरे डरे, ये जाम भरे भरे ज़रा पीने दो
कल की किसको खबर, इक रात होके निडर
मुझे जीने दो
ये नयन डरे डरे...”
Comments
Post a Comment