আসুরী-পরস্বকায়-দহনপুরুষ
ন্যাঃ! তিনটে উপন্যাসের
একটাও আমার মনে দাগ কাটতে ব্যর্থ, তবে এ ব্যর্থতার দায় আমি নিজের ঘাড়ে নেব না। কোনো
ভক্তকূলের কারণেও নয়।
‘আসুরী’
লেখিকার প্রথম মৌলিক ফিকশন উপন্যাস। ভূমিকায় লেখিকা লিখছেন, “সুমির গল্প না বললে এ
জীবনে মুক্তি ছিল না। দায়বদ্ধতা বলেও একটা কথা হয়। ঋণের বোঝা কিছুটা লাঘব হল। গাঢ় লবণাক্ত
স্বেদবিন্দুর মতো এই গল্পের পুরো শরীর জুড়ে যে সমস্ত গোপন কথা ছড়িয়ে ছিল, তারা এবার
শাস্তির নিঃশ্বাস নিক। মিলিয়ে আসুক নখের আঁচড়-রেখা। কানাগলি থেকে সৈকতে ফিরে যাক পুরোনো
স্মৃতিচিহ্নেরা।”
কিন্তু
কেন এই চরিত্র দিয়েই তাঁর উপন্যাস নির্মাণ? কীসের সে দায়বদ্ধতা? আছে হয়তো কোনো একটা।
অসুর শব্দের সংজ্ঞা কী? “অসুর (সংস্কৃত: असुर) হল ভারতীয় ধর্মের
এক শ্রেণির প্রাণী। তাদেরকে হিন্দুধর্মে আরও কল্যাণকর দেবদের (সুরা নামেও পরিচিত) সম্পর্কিত
শক্তি-সন্ধানী প্রাণী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর বৌদ্ধ প্রেক্ষাপটে, শব্দটিকে ‘টাইটান’
বা ‘অ্যান্টিগড’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।” [উইকিপিডিয়া]
কিন্তু
এখানেও দেখতে পাচ্ছি, সুমি পরিস্থিতির শিকার। সে আসুরীও হচ্ছে বাধ্য হয়ে। কিন্তু শুধু
পরিস্থিতিই কি কাউকে আসুরী বানায়, বিশেষ করে মেয়েদের? জন্মলগ্ন থেকেই যাদের ‘আসুরী’
যোগে জন্ম, তাদের বীভৎসতার কথা কে বলে? লেখিকা লিখছেন, “দেবীদের গল্প তো লেখা হচ্ছেই!
যাঁরা আলোর দিকে নিজেদের মেলে ধরেন, প্রতিনিয়ত তাঁরা কতজনের আদর্শ হয়ে উঠছেন। কিন্তু,
এক নারী তার সম্পূর্ণ জীবনাবর্তে কতবার যে আসুরী হয়ে ওঠে, তার ইয়ত্তা নেই। যারা মনের
ভিতর ব্যাসিলিস্ককে পুষে রাখে, তার পিছনেও তো কোনো না কোনো কারণ রয়েছে! কেউ সেই কারণ
খোঁজার জন্য, তাদের মনের অতলে ডুবুরি নামিয়ে দেখার চেষ্টা করে না। শুধু যে বিষাক্ত
নীল বলয় তাদের ঘিরে রাখে, সেটুকু দিয়ে বিচার করেই পেনের নিব ভেঙে দেয়। মর্মবেদনা বোঝে
কয়জন?”
এ
নতুন কথা কি? এমন গল্প-উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে অনেক আছে। খুঁজলে যে কেউ পাবেন। বঙ্কিম
থেকে সুপর্ণা — বিষবৃক্ষ থেকে আসুরী।
বরং
‘পরস্বকায়’ একটু অন্যরকম লাগল। এমন প্রেম, যা এই সময়ে সব থেকে বেশি কৌতূহলের। লেখিকা
লিখছেন, “প্রেম সত্যিই অন্ধ। সে না দ্যাখে শরীর, না দ্যাখে স্থান-কাল। মানব হোক, দানব
হোক, নর হোক কিংবা নারী—এর দুর্বিষহ জাল থেকে নিষ্কৃতি নেই। কালবৈশাখীর ঝড়ের মতোই তার
আগমন। ঝঞ্ঝাতাড়িত ব্যক্তির কী শোচনীয় অবস্থা হয়, তা পাঠকমাত্রেই জানেন।
এমনই
দুটি প্রেমের কাহিনিকে, পুরাণের পাতা থেকে তুলে এনে, নিবেদন করলাম আপনাদের হাতে। তার
আগে অবশ্য নবকলেবর দান করতে ভুলিনি। আশা রাখি, এই বই পড়তে গিয়ে পাঠক অন্তত একবার হলেও
গোপনে স্মৃতিচারণ করবেন সেই চিরপুরাতন অথচ চিরনতুন অনুভূতির।”
বিশেষ
করে ‘পরস্বকায়’ উপন্যাস লা-জবাব। তবে সুদ্যুন্মের বালকবেলার জটিলতায় তিনি খুব বেশিদূর
এগোননি। এগোননি তাঁর মানবিক জটিলতাতেও। বর্তমানের আঙ্গিকে শরীরে বিপর্যয় যেভাবে মানবিক
জটিলতা আনতে পারে, তা অনুপস্থিত। সেগুলো আনতে হলে অবশ্য আশঙ্কার জায়গা থেকে যায়—আমরা
এখনও ততটা সাবালক হইনি। আর পুরাণ তাঁর যথেষ্ট রকমের উপাচার নিয়েও আসেনি। তবে সেই সাহস
তিনি পুষিয়ে দিয়েছেন তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাসে। একটু বেশিই সাহস দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় উপন্যাস
পড়ার পর লেখিকাকে অনুরোধ করব, অন্তত এই ধরনের সম্পর্কে বীভৎস জটিলতা (মানসিক ও শারীরিক)
নিয়ে তিনি যদি উপন্যাস লেখেন, তাহলে সমাজের উপকার হয়। ‘হলদে গোলাপ’-এর পরে এই উপন্যাস
আমার কাছে আশা-জাগানিয়া।
‘দহনকাল’
আমি শেষ করছি কোনোমতে। মহাভারত নিয়ে ইদানীং গল্প-উপন্যাস লেখা ট্রেন্ড হয়ে গেছে—তা
সে বাণী বসুই হোন, কিংবা সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। একই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়েছেন লেখিকা। কৃষ্ণের
চরিত্রচিত্রণে বেশ কিছু প্রশ্ন ওঠে। সে প্রশ্নের উত্তর কি রয়েছে? ভক্তকূল জানেন। আমি
খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত।
=================

Comments
Post a Comment