টেরাকোটার যোদ্ধারা

 


কুইন সাই হুয়াং --- চীন --- রাজত্বকাল ২১০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ। মূল চীন সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। চীনের নামকরণ ওনারই। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কবর ঘিরে রাখা হয় মাটির তৈরী অসংখ্য যোদ্ধাদেরকে। যাদেরকে বলা হয় টেরাকোটা ওয়ারিয়র্স। অনেক মানুষের তৈরী এই শিল্প পুনরাবিস্কারের পর থেকেই বিস্ময়ের অবধি নেই।

এদের কথা আমরা প্রত্যেকেই কম-বেশি জানি। ‘দ্য মমি’ সিরিজের একটা সিক্যুয়েল এদেরকে নিয়েই তৈরী। রাজার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জেট লি। দুষ্টু রাজা।

সেই টেরাকোটার যোদ্ধাদের সাথে কি আর কিছুই ছিল না? ছিল। একটা গোটা নগরকে মৃত্তিকায়ন করা হয়েছিল। কেন? রাজার অমৃতের পুত্র হওয়ার সাধ ছিল। সে শখ সব রাজারই কম-বেশি থাকে, ইতিহাস সাক্ষী। সুদূর মিশরের পিরামিড কিম্বা ভারতের তাজমহল। অমর হতে চায় সকলেই। কেবল তার পিছনের দর্শন আলাদা আলাদা।

কিন্তু, রাজাদের এই শখের ক্ষতিপূরণ বলে কি কিছু হয়? এমন একটা বিস্ময়ের পেছনে কি শুধুই আলোকময় এক প্রচেষ্টা? না তো। কত রক্ত, কত নির্মমতা, কত বিশ্বাসঘাতকতা! ঘাটতে গেলে একটা কথাই ইতিহাস বলে ওঠে, “রাজা তোর কাপড় কোথায়?”

ইতিহাস সেই শিশুর মতো এসে প্রশ্ন করে। হুয়াং-কে প্রশ্ন করে? কত হত্যা ঘটিয়েছ হুয়াং? তোমার ইচ্ছাপুরণের বলি কারা হয়েছিল?

শুধু কি শ্রমিক? শুধু কি শিল্পী? তার সন্তানেরাও ছাড় পায় নি। অমন বড়ো একটা সাম্রাজ্যের অধীশ্বর যখন দেহ রাখেন তখন পেছনে পড়ে থাকে অন্ধকারের লোভ। সেই লোভে বলি হয় অপরাধী, নিরপরাধী।

তারপর? পড়ে থাকে ক্ষোভ, যন্ত্রনা আর প্রতিশোধ। টেরাকোটার যোদ্ধারা পরবর্তীকালে দস্যুদের হাতে লাঞ্ছিত। ক্ষতিগ্রস্থ।

আরও কিছু পরে আসে অন্যরকম দস্যু। অন্য সময়ে। লোভ, লালসা আর দারিদ্রতা তাদের টেনে নিয়ে আসে এই অন্ধকারে। তারা ইতিহাসকে মিশিয়ে দিতে চায় তাদের প্রত্যহের দৈনন্দিন চাহিদার মাঝে।

তারপর?

ক্ষত-বিক্ষত ইতিহাস আসে ঐতিহাসিকদের হাতে। নতুন করে পুরোনো বিস্ময় কথা বলতে চায়। আধো আধো। সেই আধো আধো ফিসফিসানির মধ্যে থেকে কিছু সত্যি উঠে আসে। কিছু মিথ্যাকে মেনে নিতে হয়। বাকিটা রহস্য হয়ে থাকে।

সেই রহস্যময়তার এক-টুকরো কণা সত্য-মিথ্যার আলো-আঁধারিতে আমাদের সামনে এসেছে, ডকুমেন্টারি হিসাবে। টেরাকোটার যোদ্ধাদের রহস্য।

বড়ো সুন্দর লাগল আমার। নেটফ্লিক্স কিছু বিস্ময় আমাদের সামনে আনছে। আমি বিস্মিত হচ্ছি।

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে