ম্যালিস
একটা খুন হয়েছে প্রথম পর্বে -
হিদাকা। দ্বিতীয় পর্বে গোয়েন্দা সমস্ত অ্যালিবাই যোগাড় করে ফেললেন – কিয়োচিরো কাগা।
এবং তৃতীয় পর্বে খুনী তার খুন করা শুধু স্বীকার করে নিলেন, তা-ই নয়, খুনের কারণও
বিস্তারিতভাবে লিখিত জানিয়ে দিলেন – নোনোগুচি।
গল্প শেষ হল নবম পর্বে গিয়ে।
ডিকেক্টিভ কাগা প্রকৃত রহস্য সমাধান করলেন অবশেষে।
আমারও মাথা ঘুলিয়ে গিয়েছিল চতুর্থ
পর্বের সময়। মনে হচ্ছিল লেখক হিগাশিনো এটা ঠিক কি লিখছেন? কেনই বা লিখছেন? তাহলে খুনী
কি অন্য কেউ? আসল খুনীকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে? গতানুগতিক লেখায় যা হয় আর কি!
না।
খুনী আসলেই খুনী।
ঘটনাটা এভাবে ভাবা যাক, বিষয়টা
তারপর কি দাঁড়াচ্ছে বোঝার চেষ্টা করা যাবে - যে কোন খুনের একটা মোটিভ থাকে। সেই
মোটিভকে তথ্যপ্রমাণ সমেত জোগাড় করা হলে তা অ্যালিবাই হিসাবে আদালতে পুলিশ জমা দেয়।
অপরাধের শাস্তি নির্ভর করে খুনের সেই মোটিভটার ওপর।
কিন্তু, যদি এমন হয়, খুনীর খুন
করার উদ্দেশ্য হল খুনের মোটিভটাকেই ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করা? সে খুন করেছে তা সে
অস্বীকার করছে না, কিন্তু খুনের ‘মোটিভ’ হল ‘মোটিভ’ আড়াল করা। মূল মোটিভের
ধারেকাছে যেন পুলিশ আসতে না পারে।
এই হল আসলে ‘ম্যালিস’। এমন এক বিদ্বেষ,
যা ছোটবেলা থেকে বহন করে অবশেষে তার সার্থকতা প্রদান করা। কিয়েগো হিগাশিনোর আর এক
মাস্টারপিস - ম্যালিস।
“এরপর ষোলো এপ্রিল পর্যন্ত
অপেক্ষা করেন আপনি, ওদিনই খুন করেছিলেন হিদাকাকে। স্পষ্টতইওটা মেজাজ হারিয়ে করা কোনো খুন
নয়। ওটা পূর্বপরিকল্পিত, ঠান্ডা মাথার ভয়াবহ এক খুন।
খুনটার পিছে ছিল দীর্ঘদিন ধরে বুনে আসা বিশাল পরিকল্পনা। এমনভাবে চিন্তা করে
পরিকল্পনাটা করেছিলেন যেন আর দশটা খুনের সাথে এই খুনের পার্থক্য না বোঝা যায়।
স্বীকার করতেই হবে, যে টুইস্ট দিয়েছেন এতে, সেটা দুর্দান্ত। জিনিয়াস! সাধারণত পূর্বপরিকল্পিত খুনগুলো করা হয়
অ্যালিবাই বানাতে, গ্রেফতার এড়াতে অথবা দোষ থেকে বাঁচতে।
কিন্তু আপনার প্ল্যান ছিল একেবারে অনন্য। আপনার লক্ষ্য ছিল একেবারেই ভিন্ন।
গ্রেফতার হতেই চেয়েছেন আপনি। পারফেক্ট ক্রাইম করার কোনো খায়েশ আপনার ছিল না।
আপনি তৈরি করতে চাইছিলেন পারফেক্ট মোটিভ।
“জানি, ব্যাপারটা চমকপ্রদ। আপনি হয়ত দুনিয়ার প্রথম খুনি যে অপরাধ করার আগেই
মিথ্যা মোটিভ বানিয়েছে। বিশ্বাস করুন, সত্যিটা জানার পর
আমারও বিশ্বাস হচ্ছিল না। যে সত্যিটা উন্মোচন করেছি সেটা বিশ্বাস করতে দীর্ঘসময়
লেগেছে। তদন্তের প্রত্যেকটা পদক্ষেপে সংশয় তৈরি হয়েছে আমার মধ্যে। এমনকি যে
ব্যাপারগুলো সত্যির পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছিল, ওগুলাও বিশ্বাস
করতে ইচ্ছা হয়নি।”
কি জটিল না? এই বইয়ের সবথেকে চ্যালেঞ্জ
চতুর্থ পর্ব থেকে। কারণ, এই সময়ে রহস্যের সমস্ত ঘটনাপ্রবাহ পাঠকের সামনে উন্মোচিত।
তবুও গোয়েন্দা কি যেন একটা খুঁজে যায়। আমি আবার প্রথম তিনটে পর্ব পড়ি। আমার কোথাও
কোন সমস্যা মনে হয় না। খুন স্পষ্ট, অ্যালিবাই স্পষ্ট, স্বীকারোক্তি স্পষ্ট। তবুও
কেন এত হাতড়ানো। এমনই, যেখানে খুনী খুনটা স্বীকার করে লিখিত দিয়ে দিয়েছে!
এমন এক টুইস্ট, যা মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার
পক্ষে যথেষ্ট। আর কি তার লেখার পদ্ধতি! আমি সত্যি অর্থেই হিগাশিনোর ফ্যান হয়ে
উঠছি। এমনকি তার লেখার অনুবাদ, ইংরাজী বা বাংলা --- যোগাড় করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
যে কোন লেখায় বুদ্ধিদীপ্ততা থাকলে লেখা পড়াটা একটা আদর্শ পাঠ হয়ে ওঠে।
আমি হিগাশিনোর জন্য আবার অপেক্ষায়
থাকবো।
============================
ম্যালিস
কিয়েগো হিগাশিনো
অনুবাদকঃ সালমান হক
বাতিঘর প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্যঃ ৪০০টাকা
Comments
Post a Comment