মহারাজা

 


সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি, আমার কাছে, চিরকালই, খুব একটা ভালো লাগে না। বড্ডো কড়া। সবকিছুতেই এরা বেশ কড়া। গল্প বলাতেই হোক, কিম্বা লার্জার দ্যান লাইফ দেখাতে গিয়ে ‘অতি লার্জার দ্যান লাইফ’ করে ফেলাই হোক, কিম্বা ইমোশনের সমস্ত আত্মীয়-স্বজন এক করে দেওয়াই হোক --- দক্ষিণী সিনেমায়, মানে কমার্শিয়াল সিনেমায়, এ সবই দেখা যায়।

      কিন্তু তবুও কিছু সিনেমা ভালো লাগে। কারণ, অতি নাটকীয়তার পেছনে কোথাও যেন একটা ‘সেন্সিটিভ’ বিষয় কাজ করে। এই সংবেদনশীলতা আমাকে ভাবায়। সংবেদনশীল প্রশ্নটা সারা সিনেমা জুড়ে ভুলতে দেয় না। আর দ্বিতীয় কারণ, মানুন চাই না মানুন --- কয়েকজনের অভিনয়। মারাত্মক কিছু অভিনেতা সিনেমাটাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে, একাই।

      বিজয় সেতুপতি তার পঞ্চাশতম সিনেমায় এক ন্যায়বিচার অন্বেষিত পিতা। আর অনুরাগ কাশ্যপ সাংঘাতিক নিষ্ঠুর এবং পরবর্তীকালে প্রতিশোধপরায়ণ বাবা। দুটো বাবাকে একসাথে পাঞ্চ করলে ‘মহারাজা’ সিনেমা দাঁড়ায়।

      যদি দ্বিতীয় প্যারার বিষয় নিয়ে পুনরায় কথা বলতে যাই, তাহলে একটা উদাহরণ দিই। সিনেমায় দেখবেন, পুলিশ এক পর্যায়ে আইন জনসাধারণের হাতে তুলে দিচ্ছে। কোন ধরনের পুলিশ? যে নিজেই কি না ঘুষ খেয়ে খেয়ে ফাটিয়ে দিচ্ছে। চালাকি করছে। তঞ্চকতা করছে। তবে সংবেদনশীলতা কোন জায়গায়? অপরাধের নিষ্টুরতাকে বোঝাতে গিয়ে তারাও কোথাও সরে আসছে --- সেটাকে বোঝাতে চাওয়া, যেন এই অপরাধের সমাপ্তি জেল নয়, চরম শাস্তি। হয়তো দক্ষিণী সিনেমা চিরকালই এই তুঙ্গ আবেগপ্রবণ সিনেমা করতে অভ্যস্থ হওয়ায় এটাই তার সিগনেচার হয়ে গেছে।

      এই সিনেমা নিয়ে আমি যদি কিছু বলতে চাই, তাহলে, সেটা কোথাও গল্পটাকে বলা হয়ে যাবে, আমি তা করতে চাই না। গল্পটা বলে দিলে মজা থাকবে না, যদিও গল্পটা আহামরি কিছু নয়। কিন্তু গল্পটার সবচেয়ে মর্মান্তিক দিক হল, এক, শেষের টুইস্ট, যা দর্শককে শিহরিত করবে, নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেবে। কারণ ভিলেনের হৃদয়ের জন্যে তখন দর্শকের বুক ফেটে যাবে। আর দুই, গল্পটা বলার ভঙ্গী। অতীত এবং বর্তমানের একটু একটু করে কোলাজে সিনেমাটা নির্মিত। সে কোলাজ কখনও আগে, কখনও বা পরে। সেটার সাথে চলতে চলতে, সেটাকে বুঝতে বুঝতে কখন যে সিনেমার শেষ পর্যায়ে এসে পৌছবেন, আপনি টেরই পাবেন না।

      আর প্রধানত দুইজনের অভিনয়। বিজয় সেতুপতির ফ্যান আমি। তার সিনেমা যদি, যদি, যদি দেখতে বসি, আমি শেষ করেই উঠব। যদিও বেশি সিনেমা আমি দেখি নি। কিন্তু কোথাও তার অভিনয় আমার দারুন লাগে। কমার্শিয়াল সিনেমাতেও কীভাবে যে নিজের আইডেন্টিটি রাখতে হয়, বিজয় সেতুপতি তার প্রমাণ। আর অনুরাগ কাশ্যপ। সারাটা সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন বটে, কিন্তু শেষ পাঁচটি মিনিট তিনি চরিত্র হয়ে গেছেন। ওই সময়টুকু, কেবলমাত্র ওই সময়টুকু, দেখতে দেখতে, একদমই আমার মনে হচ্ছিল না যে, আমি অতি অভিনয় দেখছি। আমার মনে হচ্ছিল, আমি একটা চরিত্রকে দেখছি --- দেখছি এক বাবার ব্যাকুল আকুল হাহাকার, যার নিষ্ঠুরতার কোন সীমা নেই, যার পরিতাপের কোন অন্ত নেই, এক সহস্র যুগ ধরে বুক চাপড়ে হাহাকার করলেও তার সেই অনুশোচনার তিলমাত্র শেষ হবে না।

      আর হ্যাঁ, সিনেমার শেষ দৃশ্যটা বড়ো চমৎকার।

=======================

মহারাজা

পরিচালক, কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপঃ নিথিলন স্বামীনাথন

বিজয় সেতুপতি, অনুরাগ কাশ্যপ, মমতা মোহনদাস

নেটফ্লিক্স

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে