আকাশ জোড়া মেঘ

 




কার্টুন দিয়ে, বলা ভাল কমিক্স দিয়ে আমার পড়া শুরু, সেই-ই-ই-ই-ই... ছোট্টোবেলায়। তারপর কখন যে কমিক্স ছেড়ে বড়ো হলাম মনে পড়ে না। কেবল মাঝে মাঝে ছোটবেলায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করে, ছোটবেলার স্বাদ পেতে।

      কমিক্সের ওপর একটা ভালোবাসা বুকের মাঝে থেকে যাওয়ার আরেকটা বড়ো কারণ আমার বন্ধু সমর্পিতা। সে কমিক্স বড়ো ভালবাসে। সে প্রচুর কমিক্স পড়ে। কিছুদিন আগে জাপানী অ্যানিমে-র কথা বলাতে সে বলল, সে ওসব প্রচুর পড়ে। দুটো অ্যাপসও তার আছে, যেখানে সে নিয়মিত কমিক্স পড়ে। আমি বললাম, আমায় বলিস নি কেন হতভাগী?

      সে থতমত খেয়ে বললে, আমি তো জানি, তুই কমিক্সের থেকে ওইসব মাথা-চাটা বই বেশি পছন্দ করিস। কমিক্স তুই শেষ কবে পড়েছিস শুনি?

      তাই তো? আমি শেষ কমিক্স কবে পড়েছি? আমার জমানো বইয়ের এক কোনায়, অন্ধকারে আমার যে এক টুকরো ছেলেবেলাটা অজ্ঞাতবাস করে তাকে আমি আবার টেনে নামাই। ধুলো ঝাড়ি। আবার রেখে দিই।

      এতএব সমর্পিতার জন্মদিনে কিনলাম বই তিনটে। কিনেই মনে হল, আমি তো ‘বিশ্ব হিংসুটে’, তা আমার কাছেই বা কেন এক কপি করে থাকবে না? এতএব, জেমস্‌ বন্ড, লে আও ফিরসে।

      জেমস বন্ড* ফোনের ওপারে একরকম ঝাঁঝিয়েই বলে ওঠে, তোমার এই মেয়েলীপনা আর সহ্য হয় না। একই বই দু’বার করে আনতে কেন পাঠাও? একবারে বললেই হয়।

      আমি থতমত খাই। আমায় কি সে মেয়ে মনে করে না? এত খারাপ অবস্থা আমার? নিজের দিকে তাকাই। ‘মন কহে শুধু অসম্ভব / এ অসম্ভব!’ তারপর ব্যাপারটা বুঝতে পারি। বইয়ের কথা বললেই ইদানীং সে ক্ষেপে থাকে। বেশিরভাগ বই আনতে তার নাকি কালঘাম ছুটে যায়। সে বলে, সোজা সোজা বই না পড়ে কঠিন বই পড়ো কেন? পাঠ্য বই পড়ো। রায় এন্ড মার্টিন, সাঁতরা (সার্ত্রে নয়), ছায়া...

আমি থতমত খেয়ে বলি, ইয়ে মানে আমার কাছে এক কপি রাখব। আগে তো প্ল্যান করি নি। তাই...

আচ্ছা দেখছি, কোন গ্যারান্টি নেই কবে আনব..., পট্‌ করে ফোন কেটে দেয় সে।

আজ বাজারে ইমিটেশানের দোকানে এক পাতা টিপ (আর একটা নেলপালিশ, আর একটা আই লাইনার, আর একটা...) কিনে নিয়ে যখন বেরোচ্ছি, দেখলাম, তিনি দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তার অপর পাড়ে। কাছে যেতে বলে, তোমার বাড়ি গেলে তোমার মা তাড়া করে, আর রাস্তায় রাস্তায় তোমায় ‘চেজ্‌’ করতে করতে আমার দম বেরিয়ে যায়। চল্লিশ মিনিট ধরে এপারে দাঁড়িয়ে আছি আর চা খাচ্ছি, তোমার আর জিনিসই কেনা হয় না... ওইক’টা জিনিস কিনতে দক্ষযজ্ঞ বাধালে দেখছি দোকানে...

টাকাটা..., আমি তাড়াতাড়ি বলি, রঙের ব্যাপারে ও ব্যাটা কি বুঝবে?

পেয়ে গেছি।

ও মা! কে দিল?

তোমার বাবা..., আমরা দুজনে অনেকক্ষণ তোমার জন্যে এখানে দাঁড়িয়েছিলাম। তোমার বাবার ধৈর্য কম। পাঁচ মিনিট বাদেই টাকাটা দিয়ে বাড়ি চলে গেছে।

আরি শ্লা... ২০০+২০০+২৭ --- ছপ্পড় ফাড় দিয়া...

ঢোক গিলে বইটা নিয়ে ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে নিই বইগুলো।

মাথার ওপরে তখন আকাশ জোড়া মেঘ। আমি তার নীচে হাঁটি। বৃষ্টি আসছে...

=================

* জেমস বন্ড – আমাদের খবরের কাগজওয়ালা। যে খবরের কাগজ দেওয়ার পাশাপাশি আমাকে বই সাপ্লাই দেয়। আমার অর্ডারগুলো না কি ওর সবচেয়ে কঠিন মিশন... হু হু বাবা...! আমি কি সহজ বান্দী না কি???

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে