স্যালভেশান অফ আ সেইন্ট
যে কোন গোয়েন্দা কিম্বা
থ্রিলার গল্পে বা উপন্যাসে হত্যাকান্ড একটা বড়ো বিষয়। হত্যার খুঁটিনাটি, এবং সেই
খুঁটিনাটিকে সূত্র হিসাবে ধরে যদি হত্যাকারীর কাছে আসা যায়, যা সাধারণত ঘটে গল্পের
শেষে, দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে হত্যাকারীর সেটি সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ড ছিল। এই
পরিকল্পনা, যা হত্যাকান্ডকে তরান্বিত করে, তা অবশ্যই কোন এক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যের
পরিণাম।
কিন্তু, এমন যদি হয়, হত্যাকান্ডের উদ্দেশ্যই ছিল হত্যাকান্ডটিকে মন্দীভূত
করা? অর্থাৎ, হত্যার উদ্দেশ্য ছিল হত্যা না করা? তাহলে?
গুলিয়ে গেল কি?
মানে, আমি বলতে চাইছি, সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ডের ছক কষে রাখা
হয়েছে। সমস্ত রকমের ফাঁদ প্রস্তুত। হত্যাকারী যে কোন মুহূর্তেই হত্যাটি ঘটিয়ে
ফেলতেই পারে। কিন্তু, যে উদ্দেশ্যে এই হত্যাকান্ড, সেই পরিণামটিকে হত্যাকারী
পিছিয়েই যাচ্ছে একটি একটি দিন করে। অর্থাৎ, হত্যাটি তার উদ্দেশ্য নয়, অথচ, হত্যা
ছাড়া আর কোন দ্বিতীয় পরিণাম হত্যাকারীর কাছে ছিল না। এক এবং অন্তিম পরিণাম।
ব্যাপারটা খুব জটিল কি?
জীবন বড়ো
জটিল, বাবুমশাই!
কিয়েগো হিগাশিনোর ‘স্যালভেশান অফ আ সেইন্ট’ এমনই এক জটিল
মনস্তত্বের উপন্যাস। এমন এক জটিল সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার, যা আমার মাথা চটকে রেখে
দিয়েছে। আমি পড়া শেষ করার পরেও বুঝতে পারছিলাম না যে, আমি ঠিক কি পড়লাম। এমন একটা
ক্রাইম থ্রিলার হওয়া সম্ভব?
সম্ভব। সেটা সম্ভব করেছেন কিয়েগো হিগাশিনো।
“কিয়েগো হিগাশিনোর রহস্যোপন্যাসগুলোকে আলাদা করা যায় তাদের গঠনে, লিখনশৈলীতে। তার লেখা প্রতিটি
বাক্যই উপন্যাসে কোন না কোন ভূমিকা রাখে। স্যালভেশন শব্দের
বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় পরিত্রাণ বা রক্ষা করা, আর সেইন্ট মানে
যে সাধু-সন্ত তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না (তারপরও বলে দিলাম)। পুরো উপন্যাস
পড়া শেষ হলেই কেবল এই নামকরণের হেতু ধরতে পারবেন বুদ্ধিমান পাঠক। আশা
করছি ডিটেক্টিভ গ্যালিলিও এবং ডিটেক্টিভ কুসানাগির এই যুগলবন্দি আপনাদের মনে আবারো
দাগ কাটতে পারবে।”
লিখছেন সালমান হক। হিগাশিনোর সার্থক অনুবাদক। আমার মনে দাগ
কেটেছে। এমন এক জটিল আবর্তের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমি ঠিক বুঝেই উঠতে পারছিলাম না যে,
আমি ঠিক কি পড়লাম। এই পরিত্রাণের অর্থ বোঝানোর চেষ্টা আমিও করেছিলাম, গল্পটার
সামান্যতম আভাস না দিয়ে। কিন্তু কতটা পারলাম, জানি না। কারণ, এই উপন্যাস একটু একটু
করে পড়ে তবেই বুঝতে হয়।
আমি থ্রিলার খুব একটা পছন্দ করি না। কিন্তু হিগাশিনোর এই উপন্যাস
দম বন্ধ করা এক আখ্যান। সে আখ্যানে খুন হন ইয়োশিতাকা। কিন্তু
খুন হওয়াটাই কি ছিল উদ্দেশ্য? না কি খুন না হওয়াটাকেই খুনী বাস্তবায়িত
করতে চাইছিল।
যদি এখনও মাথা ঘুলিয়ে যেতে থাকে, তাহলে বলব, এ বই পড়েই এ জটিলতার সমাধান করা উচিৎ। কেননা, কিছু আখ্যান, আখ্যানের মধ্যে দিয়ে গিয়েই পাঠক
/ পাঠিকাকে নিশ্চিত করতে হয় যে, অবশেষে,
সে গোটা ব্যাপারটার অন্তরাত্মায় নিজেকে অধিগম্য করতে সক্ষম হল কি না।
কিয়েগো হিগাশিনো আমার কাছে বিস্ময়। যে দুটো
উপন্যাস এযাবৎ ওনার পড়লাম, তাতে, আমি বিস্মিত। এমন
গোয়েন্দা থ্রিলার উপন্যাস একবার কেন, বারবার পড়া যায়। আমি
হয়তো, কোন এক সময়, এই উপন্যাসের কাছে আরেকবার ফিরে
আসতে চাইব। যেমন করে আমি ফিরে আসতে চাইব তার ‘ডিভোশান অফ সাসপেক্ট এক্স’–এর কাছে।
সালমান হকের অনুবাদ বড়ো চমৎকার। এক নিঃশ্বাসে
পড়ে শেষ করার মতো ঝরঝরে অনুবাদ।
======
স্যালভেশান অফ আ সেইন্ট
কিয়েগো হিগাশিনো
অনুবাদকঃ সালমান হক
বাতিঘর প্রকাশনী
মুদ্রিত মুল্যঃ ৪৫০ টাকা
Comments
Post a Comment