সন্ধ্যা কখন হল? উত্তর মেলে না



আমার কিছু সুখ আছে। আমার কিছু দুঃখ আছে।

 

সন্ধ্যা নামছে ক্ষীণতোয়া নদীতীরে। বেলাশেষের আজান ভাসে নদীজলের ঢেউএ। ঢেউ আছড়ে আছড়ে পড়ে আমার পায়ের কাছে। নীরবে। সাঁঝবেলার ছায়ায় ছায়ায় মর্মরিয়ে কী যেন এক বেদনার আভাস। ছড়িয়ে পড়ছে নদীতীরের গাছে ফেরা পাখীদের ডানার ঝাপটায়, বাতাসে। রক্তিম মরিচীকার শেষ রবিলিপিতে কি আমার ফেরার বার্তা নিয়ে কেউ এসেছে?

না। কূলে কোন নৌকা নেই আমার অপেক্ষায়। আজও কি আমার সময় হয় নি? আমার ছুটি হয় নি? না কি তা ফুরিয়ে গেছে, কখন অন্যমনে, বুঝতে পারি নি!

আমি বসে আছি নদীঘাটের শেষ সোপানে। আমার পা দুটো জলের সাথে খেলা করে। আমি কি চলে যেতে চাই? না আমি ঘরে ফিরতে চাই? না কি ওপারের ডাকের অপেক্ষায় বসে আছি। আমার জন্যে কেউ কি অপেক্ষায় নেই? কোনদিকেই তো কোন অপেক্ষমান আমায় ডাকে না! তবে কি আমি চাই নি তোমাকে?

 

এমন বেদনা তবে কীসের?

 

আমি আমার কোলের দিকে তাকাই। ছড়ানো আঁচলে সুখ-দুঃখের কিছু ঝুটো মুক্তো রক্তিম হয়ে ঝিলিক দেয় শেষবারের মতো। আলোর আড়ালে তারা চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। অন্ধকারে তাদের অস্তিত্ব নেই কোনও। মূল্যহীন। তারা যায়, চলে যায়, হারিয়ে যায়। আমায় মূল্যহীন করে দিয়ে চলে যায়। তবুও আমি এক অন্ধ আবেগে তাদের স্পর্শ করি। আমার জমানো মূল্যবান হারানিধিগুলো আজ তারার আলোয় মূল্যহীন।

নক্ষত্রের আলোয় কেবল নক্ষত্রেরাই মূল্যবান। আমি তাদের দিকে তাকাই। তারা যে বড়ো দূরের! আমার দিকে তাকিয়ে থাকে নির্নিমেষে। অলকানন্দা নীহারিকার নদীপথে আমায় নিয়ে যাবে, এমন কোন নৌকা আসে নি। সে পথে যাওয়ার পাথেয় যা ছিল আমার আঁচলে, পথের রিক্ত ধূলায় গড়াগড়ি যাচ্ছে। আমার সকল আয়োজন বিফল। তোমাকে দেওয়ার আর কিছু নেই।

 

আমি নিঃস্ব। আমি রিক্ত। আমি মলিন।

     

একটা হাত আমার হাতের আঙ্গুলগুলো নিয়ে খেলেই চলেছে কখন থেকে। আমি টের পাই নি। হঠাৎ দেখি, তুমি আমার দিকে তাকিয়ে আছ। তোমারই হাতে আমার হাত। আমার ভাগ্যের সাথে নিজের ভাগ্যকে জড়িয়ে আছে যে হতভাগ্য সে হাসে আমার দিকে তাকিয়ে। সে তুমিই। আমার হতভাগার বেশে এসেছ। আধো অন্ধকারে তোমার হাসিতে শুভ্র আলোর ঝিলিক। আমার সকল আয়োজন তবে বিফল হয় নি! যে তোমাকে আমি খুঁজেছি ঘরে, বাইরে আর নদীর পাড়ে, সেই তুমিই এখন সন্ধ্যার অন্ধকারে আমার হাত ধরে বসে রয়েছ, নীরবে। যুগযুগান্ত সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে।

আমি জানি না। আমি জানি।

আমি তোমার কাঁধে মাথা রাখি। সূর্য ডুবে গেছে। তারই অন্তিম আলোকে আমি তোমায় এক আকাশ প্রণাম জানাই।

 

রক্ত-অলক্তক-ধৌত-জলের ঢেউ বেয়ে ঘাটের দিকে কি একটা নৌকা আসছে?

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে