P = NP
খুনটা হয়ে গেছে দ্বিতীয় অধ্যায়েই। এবং নিখুঁতভাবে তার বর্ণনাও করা
হয়ে গেছে। কিন্তু তারপর থেকেই শুরু আসল খেলা। এ যেন খানিকটা ‘সোনার কেল্লা’ মনে
পড়িয়ে দেয়। আততায়ীরা ঘুরছে গোয়েন্দার পাশে পাশে, দর্শক সমস্তটাই জানেন, কিন্তু
তবুও, টান টান রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি থেকে চোখ সরানো যাচ্ছে না।
ইয়াসুকো আর তার মেয়ে মিশাতো থাকে এক মফস্বলে। মিশাতো স্কুলে পড়ে,
ইয়াসুকো একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করে। ইয়াসুকোর অতীত ছিল একটু গোলমেলে। সে কাজ করত
একটা নাইট ক্লাবে। তার স্বামীর অত্যাচার আর নিজের মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বামী
টোগাশিকে ডিভোর্স দেয় এবং চলে আসে শিনোহাসিতে। জুয়াড়ি এবং কর্মহারা টোগাশি, তাকে
খুঁজতে খুঁজতে, পাঁচ বছর পরে এসে দেখা করে, তার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য জোর
জবরদস্তি করতে থাকে। এই সময়েই মেয়ের গায়ে হাত তোলা এবং কুৎসিত চিন্তা প্রকাশের
কারনে, বাঁচার আর কোন উপায় না দেখতে পেয়ে মা-মেয়ে মিলে খুন করে ফেলে টোগাশিকে।
খুনটা জেনে যায় টিচার ইশিগামি। যিনি তাদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন।
তিনি তাদের পাশে এসে দাঁড়ান। তাদের সাহায্য করেন মৃতদেহের ‘ব্যবস্থা’ করতে। অতঃপর
দিন দুয়েক বাদে আধপোড়া মৃতদেহ আবিস্কার করে তার উৎস খুঁজতে খুঁজতে ইয়াসুকোর কাছে
হাজির হয় গোয়েন্দা কুসানাগি। আপাতদৃষ্টিতে কুশানাগি বুঝতে পারে যে এই হত্যাকান্ডের
সাথে ইয়াসুকোর যোগ আছে, কিন্তু প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে যায়, একটাই কারণ, সঠিক তিনটে
অ্যালিবাই – হত্যার দিন সন্ধ্যায় মা-মেয়ে ছিলে যথাক্রমে সিনেমায়, নুডলস শপে এবং
তারপরে কারাওকে বারে। কুশানাগিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন ইউকাওয়া, ফিজিক্সের এক
প্রফেসর, যিনি, ঘটনাক্রমে ইশিনাগির কলেজ ফ্রেন্ড। দীর্ঘ কয়েক দশক বাদে তাদের দেখা
হয়।
এবং একসময়, ইশিগামি আর ইউকাওয়া --- দুজনেই এই হত্যাকান্ডকে
কেন্দ্র করে এক বিশাল মাপের মাইন্ড গেম খেলতে শুরু করে। এ যেন দাবার খেলা। নিজের
একটি চালকে প্রতিপক্ষের আগামী দশ চাল দেখে নিয়ে খেলা।
আমি যতটা ঘটনা বললাম, তা কিন্তু এর মাত্র পাঁচটি অধ্যায়। পরবর্তী
চোদ্দটি অধ্যায় জুড়ে কেবলমাত্র দুই শিক্ষকের বৌদ্ধিক লড়াই। এর মাঝে ইয়াসুকো আর
কুসানাগির সাপ-লুডো। আমি, সমগ্র ঘটনাটাকে সূত্রাকারে এক ছকের মধ্যে ফেলেছি, তা এই
লেখাটার সাথে যোগ করলাম। কৌতুহলী পাঠক যদি এই সূত্র থেকে পড়তে উৎসাহী হন তাহলে
আমার পরিশ্রম সার্থক।
আমার যেটা সবচেয়ে আশ্চর্য লেগেছে, আমি খুনটা জানি, শুধু খুনটাই
নয়, খুনের পুঙ্খানুপুঙ্খ জানি, কিন্তু তবুও, খুন পরবর্তী চোর-পুলিশ খেলার মধ্যে
খুনটাই একটা রহস্য হয়ে পড়ে। হঠাৎ করেই বোঝা যায় টোগাশির মৃতদেহ আর যেন টোগাশির
মৃতদেহ হয়েও হচ্ছে না। আমি যা পড়ছি, আমাকে যা পড়ানো হচ্ছে, লেখক যেটা পড়াতে চাইছেন
সেটাই পড়ছি, না তো কি লেখক যেটা বলতে চাইছেন সেটা। ওই একটা খুনের মধ্যে দিয়ে ইশিগামির
প্রেমের সাথে সাথে ইশিগামির জীবনের উদ্দেশ্য সাধনের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে
যাওয়ার এক ঠান্ডা মাথার ছক, যে ছকের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন ইউকাওয়া, অথচ, ইয়াসুকো
কিম্বা কুসানাগির কাছে তার বিন্দুমাত্র আভাস নেই।
এই উপন্যাস কোথাও যেন, রহস্যের পাশাপাশি এক রোমান্টিক কাহিনীও। যে
রোমান্টিসিজমে ইশিগামি ভেসে যাচ্ছেন ইয়াসুকোর প্রতি, সেই রোমান্টিসিজমের ছাঁইচাপা
আগুনে পুড়ে অবশেষে খাঁক হয়ে যায় ইয়াসুকো নিজেই। আর আমাদের জন্যে পড়ে থাকে একটাই
তত্ত্ব, P = NP-র তত্ত্ব। তত্ত্বটা কি?
“It’s a famous one, the P = NP problem. Basically, it
asks whether it’s more difficult to think of the solution to a problem yourself
or to ascertain if someone else’s answer to the same problem is correct.”
এই উপন্যাসটির ইংরাজি অনুবাদ করেছেন আলেকজান্ডার ও. স্মিথ
এবং এলি জে. আলেকজান্ডার। সহজ সরল পাঠ্য, ঝরঝরে অনুবাদ।
সার্থক অনুবাদ কি না আমার বলার ক্ষমতা নেই। কিন্তু, বাংলাদেশের যে অনুবাদটি করেছেন
সালমান হক, চোখ বুলিয়ে বুঝলাম, সেটা আক্ষরিক এবং ভাবানুবাদের মাঝামাঝি হওয়াতে বেশ
সুখপাঠ্য।
=========================
The Devotion Of Suspect X
Author: Keigo Higashino
Little Brown Book Group
Price: 499/-
বঙ্গানুবাদঃ সালমান হক
বাতিঘর প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্যঃ ৩৫০ টাকা
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সমর্পিতা এবং
ইন্টারনেট
Comments
Post a Comment