এ কোন সকাল...
সাধারণ এক
গড়পড়তা মেয়ে। ফরাসী মেয়ে। দৈনন্দিন জীবনের আটপৌড়ে মেয়ে। মনে করা যাক, ষাটের দশকের ‘মেঘে
ঢাকা তারা’র নীতা যদি পরবর্তী শতকের দ্বিতীয় দশকে ফ্রান্সে জন্মায় তাহলে কি হবে?
পার্থক্য এই
তাকে পুরো পরিবারের ভার নিতে হবে না। কিন্তু দেখতে হবে, একটু একটু করে তার নিজের
জীবন, তার কাছের মানুষের জীবন কীভাবে উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছে। নীতা শেষে
বলে উঠেছিল, “দাদা, আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম”। এখানে, স্যান্ড্রা বলে ওঠে, “Promise me
you’ll help me to be euthanized before it’s too late.” জীবনের একই
দিক, দুই অভিমুখে।
আমি ঋত্বিক ঘটকের
সাথে কোনভাবেই Mia Hansen-Løve -এর তুলনা করতে চাইছি না। বলতে চাইছি, দেশ-কাল-ভেদে পাত্র বদলালেও, কোথাও না
কোথাও মানুষের মনের গঠন তো এক। যে একাকীত্বের মুখোমুখি নীতা হয়েছিল ষাটের দশকে, আজও
মানুষ সেই একাকীত্বকে বয়ে চলে অন্যধারায়, অন্যরকমভাবে।
Sandra
Kienzler (অভিনয় করেছেন Léa Seydoux) ডিভোর্সী মহিলা, সে দোভাষীর কাজ করে, তার এক কন্যা আছে স্কুলে পড়ে। মা
আরেকজনের সাথে থাকেন। আছে এক বোন। সবাই যে যার মতো করে আলাদা আলাদা থাকে। সুখেই
থাকে, নিজের মতো করে থাকে। স্যান্ড্রার নিজের প্রিয় বাবা জর্জ (Pascal
Greggory), এক সময়ের প্রতিথযশা দর্শনের শিক্ষক আজ ধীরে ধীরে Benson's
syndrome–এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। আস্তে আস্তে তাকে
তার বাড়ী ছাড়তে হয়। স্যন্ড্রার চোখের সামনে তার বাবার প্রিয় বইগুলোকে বিক্রী করে
দিতে হয়, যা সে কোনোদিনও চায় নি। তার বাবার চিকিৎসা সুলভ করার জন্য এক নার্সিং হোম
থেকে আরেক নার্সিং হোমে নিয়ে যেতে হয়। এবং দেখতে হয় কীভাবে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে
যাচ্ছে তার বাবা।
স্যান্ড্রা
ভয় পায়। তার জীবনে আসে যে, সেই Clément (অভিনয় করেছেন Melvil Poupaud) স্যান্ড্রার একাকীত্ব এবং হারিয়ে যাওয়া
সত্ত্বাটাকে ফিরিয়ে দিলেও বারবার তার স্ত্রী’র কাছে ফিরে যায়, আবার ফিরে আসে স্যান্ড্রার
কাছে। এক দ্বিধাবিভক্ত সম্পর্ক স্যান্ড্রাকে আরও দ্বন্দ্ব ও দ্বিধায় শতধাবিচ্ছিন্ন
করে দেয়।
সিনেমাটায় এর
বেশি কিছু নেই। কিন্তু আছে অনেক কিছু। আমাদের কারোরই জীবন তো আর মেলোড্রামাটিক নয়।
সম্পূর্ণ জীবনটাকে ধরলে প্রত্যেকটা মানুষেরই বোধ করি খুব ধীর স্থির পরিবর্তন ঘটে চলে।
সে পাল্টাতে থাকে। সে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগোতে থাকে।
এই নিঃশব্দ জীবনটাকেই
ধরতে চেয়েছেন পরিচালিকা Mia Hansen-Løve, কিন্তু ধরতে গিয়ে কোথাও কোথাও সিনেমাটা অনেক বেশি ধীর লয়ে চলেছে এবং ছন্দপতন
ঘটেছে বার বার। নচেৎ, একটা জীবনের এক টুকরো পোর্ট্রেট হিসাবে সিনামাটা আরও অনেক বেশি
উচ্চমানের হতে পারত।
সিনামাটোগ্রাফি
কিছু কিছু ক্ষেত্রে বড়ই চমৎকার। ক্যামেরায় রঙের ব্যবহার যেন ছবির মতো। আর সেই সাথে
Léa Seydoux এবং Pascal Greggory–র অভিনয়
অসাধারণ। Léa–কে আমার বড়ো চমৎকার লাগে। তার তাকানো, অসহায়তাকে চোখে-মুখে
নিমেশে ফুটিয়ে তোলা, এবং সারা শরীর দিয়ে, ক্যামেরার সামনে হাটাচলা দিয়ে জীবনের বার
বার ছন্দপতনগুলোকে তুলে ধরার যে ক্ষমতা, আমাকে বিস্মিত করে। Pascal Greggory–র অভিনয়ও অপূর্ব। যে রোগ তার হয়েছে, সে ভুলে যাচ্ছে, কিন্তু সারা চোখ-মুখে
কোনো মেলোড্রামা নেই। সে একবারও তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলে নি, স্যান্ড্রা, আমি
কিন্তু একটা আত্মজীবনী লিখতে চেয়েছিলাম। কেবল সময়ের সাথে সাথে তার মুখের ভাষা হারিয়ে
যেতে থাকে। চোখের দৃষ্টি হারিয়ে যেতে থাকে। চলাফেরার মধ্যে আস্তে আস্তে জড়তা আসে।
জীবন বড়ো
জটিল বাবুমশায়, সে তো আমার আপনার মতে চলে না – শাঁওলী মিত্র বলেছিলেন নাথবতী
অনাথাবৎ-এ। সেই জটিল জীবনের এক টুকরো হল One Fine Morning, মনে
দাগ না কাটলেও রেখাপাত করে যায়।
==================================
One Fine Morning
Directed By: Mia Hansen-Løve
Cast: Léa Seydoux, Melvil Poupaud, Pascal Greggory, Nicole Garcia
Time: 112 minutes
OTT Release: MOBI
Comments
Post a Comment