The Songs of Distant Earth By Arthur C Clarke

 


আর্থার সি ক্লার্ক --- বইপ্রেমী মাত্রেই নাম শুনেছেন, এমন দাবী করাটা একটু বাড়াবাড়ি হলেও বেশিরভাগ পড়ুয়া নাম শুনেছেন, এ আমি নিশ্চিত। আর যারা কল্পবিজ্ঞান প্রেমিক/প্রেমিকা তাদের বেশিরভাগ নিশ্চই তাকে পড়েও ফেলেছেন যারা সিনেমা দেখেন, তারা জানেন, স্পেস ওডিসি-র লেখক উদ্দিষ্ট সিনেমাটিরও চিত্রনাট্য লিখেছিলেন।

      আর্থার সি ক্লার্ক আমাদের সময়কার লেখক (1917 ~ 2008)মানে তার লেখা এক অর্থে বলতে গেলে হাল আমলের লেখা। ফলে তার কল্পবিজ্ঞানে একদম যাকে বলে মডার্নিসমের ছোঁয়া। সেই মর্ডানিসমের একটা টুকরো The Songs of Distant Earthবাংলায় যার অনুবাদ হয়েছে ‘দূর পৃথিবীর ডাক’ নামে, করেছেন বাংলাদশের অনুবাদক মিজানুর রহমান শাওন।

      বর্তমানে অনুবাদ পড়তে হলেই বাংলাদেশের দিকে তাকাতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের পাঠক ও প্রকাশক সম্প্রদায়েরা তাদের অনুবাদ পড়ে নাক কোঁচকান। অনুবাদের মান নিয়ে রীতিমতো খিল্লি হয়। আর নিজেদের পিঠ বাঁচান আইন-টাইনের কথা বলে। দুটোই সত্যি পড়তে পড়তে আমারই মনে হচ্ছিল শাওন মহাশয় যাদের উৎসর্গ করেছেন, তারা নিজেরা বইটা সম্পূর্ণ পড়তে পেরেছিলেন তো? এক-এক সময় মনে হচ্ছিল লেখাটা গুগ্‌ল ট্রান্সলেটরে ফেলা। অথচ এই বই বাংলাদেশে হটকেকের মতো না হলেও, বিক্রী হচ্ছে যথেষ্ট। আর এখানকার পাবলিকেশানেরা, ‘বাংলার স্বর্ণযুগের লেখা কল্পবিজ্ঞান পড়ুন’ বলে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন কয়েকটামাত্র লোক, যারা সেই স্বর্ণযুগের বাইরের একটা প্রগ্রেসিভ পৃথিবী আছে বলে বিশ্বাস করেন না, তারা বাহবা দিয়ে হয়তো বা কিনছেন, তারপর দুই তরফেই ঘুমিয়ে পড়ছেন আরেকটা স্বর্ণযুগের লেখা না বের হওয়া পর্যন্ত। কেউ নতুন লেখার কথা বললে, কপিরাইট ও টাকা-পয়সা ইত্যাদির কাঁদুনি গেয়ে দায় সারছেন।

      শুনেছি এবারের কলকাতা বইমেলায় নাকি ৭০০+ স্টল ছিল। অর্থাৎ, সাড়ে ছয়শোর ওপর প্রকাশক কপিরাইটের লাল সুতোর ফাঁস আলগা করার কোন পন্থা পাচ্ছেন না। আর বাংলাদেশের প্রকাশকেরা নাকি কপিরাইট ও মানের তোয়াক্কা না করে ড্যাং ড্যাং করে অনুবাদের পর অনুবাদ ছাপিয়ে চলেছে --- কি বিচিত্র দুই দেশ!

      যাই হোক, শীবের গীত অনেক হল, এবার আসল কথায় আসি ‘নিউট্রিনো’ এক অদ্ভুতুড়ে কণা ভরহীন এই কণা প্রায় সাধারণে প্রায় অস্তিত্বহীন। কিন্তু এই কণা যে নক্ষত্রের জীবনকালের এক চরম জিজ্ঞাসা হতে পারে সেটা আর্থার সি ক্লার্ক ভেবেছিলেন। আর উপন্যাসের শুরু সেখান থেকে। দেখা যাচ্ছে, এই নিউট্রিনোই সূর্যসমেত সৌরমন্ডলের ধ্বংসের কারণ হচ্ছে। নিজেদের প্রজাতিকে বাঁচাতে মহাকাশযান সমেত হাজার হাজার মানুষ ছড়িয়ে পড়ছে মহাবিশ্বের কোনে কোনে শত শত বছর ধরে, মানবভ্রুণ সমৃদ্ধ মহাকাশযান, ডি এন এ কাঠামো সমৃদ্ধ মহাকাশযানে করেকয়েকশো কিম্বা কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরের অজ্ঞাত সৌরজগৎগুলোতে পৌছানোর উপায়? কোয়ান্টাম ড্রাইভ। সম্ভবত, এই কোয়ান্টাম ড্রাইভ সম্পর্কে লেখকের নিজেরও খুব একটা স্পষ্ট ধারণা ছিল না বলে তিনি এড়িয়ে গেছেন এই বলে, “এ মানব মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ আবিষ্কার”অথচ কীভাবে এই আবিস্কার হয়েছে, উপন্যাসে বলা নেই।

      এখন প্রথম দিকের মহাকাশযানগুলো স্বভাবতই কাছের গ্রহগুলোকে বেছে নেয়। সেখানে আস্তে আস্তে বসতি স্থাপন করে। এমনই একটা গ্রহ থ্যালসা। এই থ্যালসায় একদিন নেমে আসে পৃথিবীর শেষ মহাকাশযান ‘ম্যাগেলান’। উদ্দেশ্য বরফের বর্মটাকে ঠিক করা। আমার এই কনসেপ্টটা দারুন লাগল। যখন কোন মহাকাশযান স্পেসে ঘুরে বেড়ায় তখন উল্কা বা ছোটোখাটো সেলেস্টিয়াল ম্যাটারের সাথে ধাক্কার হাত থেকে বাঁচানোর এক অমোঘ বর্ম হল বরফ। যত সে ঠান্ডা, ততই সে শক্ত। ফলে, ততই নিরাপদও বটে। ক্ষতিগ্রস্থ বর্মটিকে সারাতে ম্যাগেলান নামল থ্যালসায়। আর থ্যালসার মানুষ মুখোমুখি হল পৃথিবীর মানুষের। মানুষ, কিন্তু দুই গ্রহের মানুষ। ম্যাগেলানের উদ্দেশ্য আরোও দূরের এক গ্রহ সাগানে পাড়ি দেওয়া। তারা থ্যালসার কাছে সাহায্য চায় বরফের বর্ম ঠিক করার জন্য।

      মানুষ যখন মানুষেরই মুখোমুখি হয় তখন আসলেই জ্ঞান জ্ঞানের মুখোমুখি হয়। এখন তো আর মধ্যযুগীয় বর্বরতা নেই, যে হইহই করে আক্রমণ শুরু হবে। ফলে যারা ভেবে থাকবেন এটা একটা স্টার ওয়ার্স জাতীয় মুচমুচে গল্প তারা হতাশ হবেন। এটা আসলেই কৌতুহলের গল্প। দুই সময়ের মানুষকে মুখোমুখি করেছেন আর্থার সি ক্লার্ক। পৃথিবীর মানুষ জানে কীভাবে সায়েন্স এবং টেকনোলজিকে ব্যবহার করে বেঁচে থাকতে হয়, আর থ্যালসার মানুষ জানে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয় আনন্দে। এই দুই প্রয়োজনের মুখোমুখি দুই মানুষ। প্রশ্নটা চিরকালীন। চালাক মানুষ বলবে, দুটোরই দরকার। দুটোর ব্যালেন্স করাতেই পুর্ণতা। লেখক সেটাই কি দেখতে চেয়েছেন?

      আর্থার সি ক্লার্কের স্পেস ওডিসিসিরিজ যখন পড়ব তখন না হয় বুঝে নেব কেন তিনি এত বিখ্যাত। কিন্তু এই উপন্যাস এত শান্ত, ধীর-স্থির, পড়তে পড়তে কখন যে নিজের চারপাশের সময়টাও ধীর-স্থির হতে শুরু করে খেয়াল হয় না। আস্তে আস্তে মনেই থাকে না, আমি পৃথিবীতেই আছি এবং তাদের কথা পড়ছি। এমনিভাবেই আস্তে আস্তে উপন্যাসটা শেষ হয়ে যায়।

      অথচ, প্রশ্নটা থেকেই যায়...

==============================

The Songs of Distant Earth
Arthur C Clarke

Del Rey Publication

Printed price: 850/-

দূর পৃথিবীর ডাক

অনুবাদকঃ মিজানুর রহমান শাওন

সন্দেশ পাবলিকেশান

মুদ্রিত মূল্যঃ ১২৫ টাকা

[ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সমর্পিতা]

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে