জুবিলি


 

ভারতীয় সিনেমার আঙ্গিক অননুকরনীয় এবং ইতিহাস বহুমাত্রিক বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এসেছে। দাদাসাহেব ফালকের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এমন এক চলমান শিল্প, যাকে তামাম ভারতীয় একটা সময় আপন করে নেয়। এই ‘আপন’ অর্থে সর্বস্তরের মানুষের কাছে বেঁচে থাকার মাধ্যম। রেডিও-র যুগও সম্ভবত এতটা জায়গা করে নিতে পারে নি। এমনকি স্বাধীনতা উত্তর ভারতবর্ষেও তার প্রভাব ছিল সাংঘাতিক। তখন কেন, এখনও আছে।

আর কোন শিল্পমাধ্যম কি এতটা মানুষের কাছে আসতে পেরেছে?

না।

একটু ভাল করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই মুহূর্তেও এই শিল্পমাধ্যম সাধারণ মানুষের মধ্যে কতটা জাঁকিয়ে বসে আছে। অতীতের ‘টিকটক’ কিম্বা অধুনা ‘রিল’ --- তা সে যেমন কোয়ালিটিরই হোক না কেন, নিজেকে প্রকাশের অপরাপর অনেক মাধ্যম থাকা স্বত্বেও এই ছোট্ট ছোট্ট ভিডিও বা বলা ভাল অনুসিনেমার প্রকাশের তাগিদ জনসাধারণের মধ্যে প্রচন্ড। সিনেমাকে যেভাবে সাধারণ ভারতীয় তাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে, আর কিছুই তেমন প্রভাব রাখতে পারে নি। এমনকি এর জয়যাত্রা অদূর ভবিষ্যতেও কমার কোন লক্ষণ নেই।

এটুকু পড়ে কেউ যদি ভাবেন আমি একটা রচনা লিখতে বসেছি ভারতীয় সিনেমা নিয়ে, তারা খুব একটা ভুল ভাববেন না। সত্যি কথা বলতে কি, দশটা এপিসোড ধরে ভারতীয় সিনেমার যে টুকরো সময়টাকে দেখানো হল আমার সামনে, লিখতে গিয়ে সেই ধারার এসেন্সটাকেই অনুসরণ করছি মাত্র।

‘জুবিলি’ একটা বিশেষ সময়ের কথা বলে, যে সময়টা হেমাংশু রায়কে ঘিরে, বম্বে টকি-কে ঘিরে বলিউড তৈরী করছে নিজেকে। তৈরী করছে এলিট সমাজের পাশাপাশি সব হারানো মানুষদের জন্যে। আমেরিকা আর সোভিয়েতের ঠান্ডা যুদ্ধে ভারতকে পাশে পাওয়ার হাতিয়ার হয়ে উঠছে সিনেমা। আর তার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে একে একে নাজিম-উল-হাসান, দেবিকারাণী, অশোক কুমার, রাজ কাপুর, নার্গিস, কিশোর কুমার... এবং হেমাংশু রায়।

যেমনভাবে সময়কে কেন্দ্র করে একটা ইতিহাস তৈরী হয়, তেমনই তৈরী হয় গল্প। ‘জুবিলি’ কোন ঐতিহাসিক দলিল নয়। ইতিহাসভিত্তিক আলেখ্য। ‘জুবিলি’ সেই সময়ের কথা বলে, যে সময়ে অনেক অকথিত কথা সত্য-মিথ্যার মায়াজালে আটকে থাকে। ছায়াছবি বোনে পর্দার তন্তুতে তন্তুতে। সঙ্গে বোনে অনেক পাওয়া-না পাওয়ার ইতিহাস...

 

আমার দেখা এটা প্রসেনজিৎ-এর তৃতীয় ছবি (প্রথম দুটো ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ আর ‘মহানায়ক’), যে ছবি দেখতে দেখতে বারবার তাকে কুর্নিশ করেছি। এমন অভিনয়ের জন্য মানুষের তাকে বহুদিন মনে রাখা উচিৎ। তার হিন্দী উচ্চারণ নিয়ে অনেক গবেষণা হতে পারে বটে, কিন্তু তিনি সেটা মিটিয়ে দিয়েছেন তার অভিনয় দিয়ে।

আর বাকিরা? কাকে ছেড়ে কাকে বলব? অদিতি রাও হায়দারি, ইয়ামিকা গাব্বি, অপারশক্তি খুরানা, সিদ্ধান্ত গুপ্তা, এমনকি নান্দিশ সিং এবং রাম কাপুর... প্রত্যেকেই ফাটিয়ে অভিনয় করেছেন। পরিচালকের নিখুঁত দৃশ্যায়ন মুন্সীয়ানার দাবী রাখে। ওই সময়কার একটা ‘পিরিয়ড ড্রামা’কে এত নিখুঁতভাবে দেখাতে গিয়ে যে কি পরিমাণ গবেষণা করতে হয়েছে, তাকে গল্পের আকারে সাজাতে হয়েছে, এবং ক্যামেরায় একটা সেপিয়া টোনের মোডকে বেস করে পুরোটা নির্মাণ! আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। সাত বছর লেগেছে এই সিরিজ বানাতে। সাত বছর!

এই সিনেমা দেখা একটা অভিজ্ঞতা। সিনেমা কেমন হতে পারে, এমন একটা শিল্পকে সেই শিল্পের মধ্যে দিয়েই দেখার অভিজ্ঞতা --- সত্যিই এক বড়ো প্রাপ্তি।

================================

“Jubilee”

Creators: Vikramaditya Motwane, Soumik Sen

Cast: Prosenjit Chatterjee, Aditi Rao Hydari, Aparshakti Khurana, Sidhant Gupta, Wamiqa Gabbi, Ram Kapoor

OTT Platform: Amazon Prime

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে