একটি মা-মেয়ের কথোপকথন

 



মা... ওম্মা...

কি? [গলাটা কি রাগী রাগী ঠেকছে?]

শোনো না গো...

এই ঝামেলা করিস না, দেখছিস একটা কাজ করছি...

একটা কথা ছিল... [আমার ন্যাকামীটা কি ঠিকঠাক হচ্ছে? মানে আদুরে আদুরে হচ্ছে কি?]

বল...

বলব? তুমি শুনবে তো?

তাড়াতাড়ি বলে বিদেয় হ, না হলে খুন্তির বাড়ী দেব [এই রে!]

শোন্নোই না... [এই পর্যায়ে মাতাদেবী রোষাকষিত নেত্রে তাকালেন]

বলছিলাম কি, ইয়ে... পাঁচশোটা টাকা দেবে?

কেন? টাকা নিয়ে কি করবি?

ভাইকে দেব?

কেন? তার আবার কি কাজে লাগবে?

রিচার্জ করবে... [এই পর্যায়ে মাতাদেবী হাতের কাজ অসমাপ্ত রেখে সরাসরি আমার দিকে ঘুরে গেল।]

ঝেড়ে কাশো তো বাপু, বই কেনা বাদে আর কি কাজে খরচ করবে?

উমমমমমমম... বললাম তো ভাইকে দেব। [আদুরে ন্যাকামী --- ঠিকঠাক না উতরালে কেস জন্ডিস হয়ে যাবে]

তা তিনি রিচার্জটা কিসে করবেন?

গুগল পে তে

এই ফাজলামী হচ্ছে? তুই আমার সাথে ফাজলামী করছিস?

সত্যি কথাই তো বললাম [কেস কোনদিকে গড়াচ্ছে রে বাবা!]

আমার সাথে একদম রাউন্ড এন্ড রাউন্ড খেলবি না কিন্তু বলে দিচ্ছি। গুগল পে আমি বুঝি না ভেবেছ? হ্যাঁ? অ্যামাজনে আমি দামড়াটাকে দিয়ে জিনিস অর্ডার করাই, আমি জানি না গুগল পে কি? কি করবি ঠিক করে বল, না হলে দুটোকেই বাড়ী থেকে তাড়াব আজকে... [ই ই ই ক ক ক... এবার কি করি?]

ইয়ে মানে ‘আরও আনন্দ’ অ্যাপটা সাবস্ক্রাইব করব। জানো মা, ওটা করলে অনেক টাকা বেঁচে যাবে বাবার। আবার একটা বাংলাদেশের OTT প্ল্যাটফর্ম ফ্রী দেবে, অনেক অনেক লাভ হবে আমাদের।

মানে! আমাদের বাড়ীতে আর কতো আনন্দ চাই রে? তুই কিন্তু কিছু একটা লুকাচ্ছিস। চুলের মুঠি একবার ধরলে পরে কিন্তু আর পার পাবি না বলে দিলাম---

আরে মিথ্যা বলি নি। ‘আরও আনন্দ’ একটা অ্যাপ, ওতে সানন্দা, আনন্দলোক, দেশ, আনন্দমেলা, বইয়ের দেশ আর পূজোবার্ষিকীগুলোও একদম ফ্রী-তে পড়া যাবে সারা বছর। আর সাথে আনন্দবাজার পত্রিকা পেপারটাও। আমাদের আর পেপারটা কিনতে হবে না। আর একটা OTT চ্যানেল ফ্রীতে দেখতে পাবো। তুমি ভাবো, কত লাভ হবে তাহলে? হাজার হাজার টাকা লাভ।

[একটু চুপ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে] সত্যি বলছিস, ওইসব ছাইপাশ কেনার জন্যে বাবাকে আর জ্বলিয়ে খাবি না তো।

[মাতাদেবীর কাছে বই আর কারণ – দুটোই ছাঁইপাশ, সরস্বতীর কোন কদর নেই দেখছি এই বাড়ীতে! ছ্যা ছ্যা...]

না না, বাবাকেও না, তোমাকেও না, ভাইকেও না...

কথা দে

দিব্যি করছি, আমার হতভাগার... ইয়ে... মানে মা কালীর দিব্যি, আনন্দের আর কোন ম্যাগাজিন বা পূজাবার্ষিকীর জন্যে বাবার কাছে হাত পাতব না।

সত্যিই খরচ কমছে?

অনেক অনেক। এমনিতেই লোভে পড়ে মাঝে মাঝে কিনে ফেলি, আর দেখোই তো, উনুন জ্বালানোর কাজে ছাড়া আর কোন কাজে লাগে তোমার? না হলে কেজি দরে বেঁচে আর কতই বা লাভ হয়?

উঁ উঁ উঁ... বিয়ে করে বিদেয় হ তো... লাভ-ক্ষতির হিসেব করে আমায় আর জ্বালাস নে... তুই থাকলে পুরোই ক্ষতি। বইয়ের মাঝে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তেই একদিন আমি মরে যাবো... ম্যা গো! [এ দেখি নিজের মা কে ডাকে!]

ও ম্মা... ম্মা গো... দাও না। আমার হাত একদম খালি...

চোখের বারোটা যে বাজছে সে খেয়াল আছে?

না না বেশি পড়ব না, অল্প পড়ব।

আচ্ছা আচ্ছা, যা দ্যাখ গে আমার পানের বাটার মধ্যে বোধহয় আছে। একটাই নোট নিবি কিন্তু... [গলেছে গলেছে... বরফ গলেছে!]

আমার খুব ভালো মা... এসো একটা হাম্মি দিই

আবার ন্যাকামী? থাপ্পর মারব কিন্তু... অ্যাই... অ্যাই...!!!

[অথ এই একাঙ্ক নাটক সমাপ্ত]

 

বিঃ দ্রঃ - ছবিটা সমর্পিতা তুলেছে, এতে আমার কোন হাত নেই। যে যা মানে করছেন, নিজের দায়িত্বে করুন।  

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে