সানন্দা ১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২৩
বয়স্ক
লোকেদের বলতে শুনি, “আমাদের কি সময় ছিল! কী সব লেখক ছিল, কি সব বই ছিল, আর কি সব
পত্রিকা ছিল, এখন আর কিস্যু নেই...”
মনে হত ভুল
কথা বলতেন, তারা বুড়িয়ে গেছেন, নতুন কোন কিছুর সঙ্গেই খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা নেই।
এতএব, বদনাম করছেন। কিন্তু, এখন মনে হয়, না, কথাটা ফেলে দেওয়ার মত নয়। আমি যে বয়সে
আছি, সে বয়সেই মাঝে মাঝেই মনে হয় এই কথাটা, অন্তত, বাংলা পত্রিকার দিকে তাকালে।
এই যেমন
ধরুন, সানন্দার কথা। প্রায় এক বছর পর আবার পড়লাম। শুরুতেই সানন্দার সম্পাদিকা
বললেন, একুশে ফেব্রুয়ারী কি তারা ভুলতে পারেন? না। পারেন না। সেই কারণেই এবারের
নিবেদন --- বাঙালীর বুকে বাংলাদেশ।
তা কি আছে
এই সংখ্যায়?
ইমদাদুল হক
মিলনের লেখা থেকে বোঝা যায়, তিনি এপার বাংলার মহিলাদের গন্ডমূর্খ ঠাউরেছেন। তিনি
যা লিখলেন, এসব গুগ্ল করেই পড়া যায় তো দূর অস্ত, আমাদের মতো অজ পাড়া-গাঁ মেয়েরাও
ইতিহাসের বই থেকে বা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স থেকে যা জানে তা এর থেকে বেশি জানে।
দেবলীনা
অধিকারী কোন ক্লাসে পড়েন? তার লেখা পড়ে মনে হল অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীকে ‘বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধে মেয়েদের অবদান’ নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখতে দিয়েছিল দশ নম্বরের, সেটাকেই
এখানে ছাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রচেত
গুপ্তের লেখা তুলনামূলক সমৃদ্ধ লাগল, যদিও, পোড় খাওয়া পাঠকদের কাছে ‘থোড় বড়ি খাড়া’
আর ‘খাড়া বড়ি থোর’। যেসব লেখক লেখিকাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন তা অনেকটা বইয়ের শেষে
ব্যক্তি পরিচিতি ধাঁচের। উদ্বোধনে ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’ অখন্ড বইটার শেষে যে ‘ব্যক্তি
পরিচয়’ আছে হুবহু সেটাই মনে পড়ে গেল।
দেবলীনা অধিকারী
আবার পৃথা বসুকে নিয়ে ফেরত এলেন ‘রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যা’ টাইপের লেখা নিয়ে। পৃথা
বসু’র কারণেই কি না জানি না, এক্ষেত্রে খানিকটা প্রবন্ধ থেকে সরে এসে কিছু বক্তব্য
দিয়েছেন, ফলে দু-একটা নতুন কথা পাওয়া যায়, যার পেছনের বক্তব্য অপরিচিত নয়, অন্তত রবীন্দ্রসঙ্গীত
মহলে।
পৃথা বসুই
আবার সংবেত্তা চক্রবর্তীকে নিয়ে এসে লিখলেন বাংলাদেশের ব্যান্ডের গান নিয়ে।
ইন্টারনেট ঘেটে ঘেটে পড়াশোনা করে রচনাটাকে দাঁড় করিয়েছেন। এর অধিক আর কি লিখি?
মধুরিমা
সিংহ রায় জানিয়েছেন বাংলাদেশের সিনেমা আর বাংলার সিনেমা কীভাবে একে অপরকে সাহায্য
করেছে। আমি পড়ে মোহিত হওয়ার মতন কিছু পেলাম না।
বাংলাদেশের বর্ষণ
কবির নামক সাংবাদিক বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে লিখেছেন চেনাপরিচিত তথ্যসমৃদ্ধ কভার
কথা।
বরং সায়নী
দাশশর্মা আর মৌমিতা সরকার চমকে দিয়েছেন। বাংলাদেশে গামছাকে শাড়ী বানানো হচ্ছে,
সালোয়ার কুর্তা বানানো হচ্ছে, এমনকি ছেলেদের ধুতি-শার্ট বানানো হচ্ছে। ভাইকে একটা গামছা-ধুতি
দেখিয়ে বললাম, পরবি? ভাই তা দেখে যা বলল, তাতে করে বুঝলাম, আজকালকার ছেলেদের
ড্রেসিং সেন্স নেই, এমন সুন্দর গামছা-ধুতি, কোথায় বন্ধুদের সাথে এগুলো পরে আড্ডা
দেবে, তা নয়...!
তবে
সত্যিকারের লেখা লিখেছেন সংবেত্তা চক্রবর্তী, মধুরিমা সিংহ রায়, সায়নী দাশশর্মা
--- যথাক্রমে বাহারি মাছের পদ, মাংস-ভোজের বড়ো তালিকা, আর বিভিন্ন মিস্টির
সাতকাহন। মা-কে দেখিয়ে বললাম, এসব তো একটু-আধটু রাঁধতে পারো। বলেই সরে এলাম। না হলে
বেলনের ঘা পিঠে অবধারিত ছিল। চেঁচিয়ে বললে, এসব
বানাই, তুমি শুয়ে-বসে গেলো আর তারপরে আরও ধুমসী হও – এছাড়া তো আর কোন কাজ নেই
তোমার! দেখলাম, মায়ের বেশ পছন্দ হয়ে পত্রিকাটা। অনেকক্ষণ ওইকটা পাতা নিয়ে নাড়াচাড়া
করে রেখে দিল নিজের কাছে যত্ন করে। বুঝলাম, সানন্দা আস্তে আস্তে মা-মাসীদের পত্রিকা
হয়ে যাচ্ছে। আমাদের অন্য কিছু খুঁজে নিতে হবে।
আচ্ছা, কলকাতার
শহুরে মেয়েরা এইসব পড়ে? যদি তাই হয়, তাহলে বলতে হবে কলকাতার তামাম মেয়েরা মা-মাসী
টাইপ হয়ে গেছে। এক্কেবারে বুড্ডী অউরত। নচেৎ, তারা সানন্দা পড়ে না। অন্তত ওই ক’টা
ফ্যসান, সেলফ কেয়ার, খাওয়া দাওয়া আর বিউটি বৃত্তান্তের জন্যে কেউ একটা পত্রিকার
পিছনে এককাড়ি টাকা খরচ করবে না। ভালো বিউটিশিয়ান দেখাবে।
আর অভিজিৎ
রায়ের গল্পটা সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভাল। না না। লেখাটা খারাপ নয়। তবে এমন
লেখা হরদম হয়। বাজে বউমা, যারা শাশুড়ীকে নিজেদের সংসারে ঢুকতে দিতে বিরক্ত বোধ
করে, এমন শাশুড়ী তার ওপর পাগল হলে ভয়ানক ব্যাপার স্যাপার। ছেলেদের স্যান্ডুইচ অবস্থা যেন আর কাটতেই চায় না, সিরিয়ালেও, এখানেও। একদম শেষের
টুইস্টটা পড়ে যদি মনে হয়, আরিব্বাস! আমি বলব, চলে গা!
==============================
১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২৩
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সমর্পিতা
Comments
Post a Comment