অনুবাদ পত্রিকা জা-ফে ২০২৩


 


কিছু কিছু পত্রিকার বিষয়বস্তু আমায় খুব কৌতুহলী করে তোলে। যতই সেই বিষয়ে আমার অজ্ঞতা থাক, যতই অনাগ্রহ হোক, কৌতুহলী করে তোলেই। এই যেমন এবারের অনুবাদ পত্রিকার কথাই ধরুন না কেন? অনেকদিন ধরেই আমার কাছে পড়ে ছিল, অনেককটা বইয়ের আড়ালে। আজ আবার চোখে পড়ল।

চোখে পড়ল সুন্দর প্রচ্ছদটা। চোখে পড়ল বিষয়বস্তুটা।

‘লোকসংস্কৃতি’ ব্যাপারটা মোটামুটি আমরা সবাই বুঝি। আমাদের আশেপাশে প্রায় প্রত্যেকটা মফস্বলেই এক-আধটা সেমি কিম্বা মিনি লোকসংস্কৃতি ভবন আছে। তাতে কি হয় আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা এটা জানি কি, এমন এমন অদ্ভুত সংস্কৃতি আছে, যা কালের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে?

এই যেমন বজ্জিকা ভাষা, বিহারের এই আদিম ভাষার মান্যতাই তেমন করে নেই। অথচ তার লোকগীতি আছে, লোককথা আছে। এমনকি ‘লোকউক্তি’ আছে – “কানে কেমন ত আঁখমে গেল ঘুঁটি”, ধোঁয়ার ছলনা করে কাঁদি; কিম্বা ধরুন, ‘নিয়োলি’ নামক আরণ্যক বিষাদসঙ্গীত, কিম্বা ‘চাপোলি’ লোকসঙ্গীত। কুমায়ুন অঞ্চলের এক লোকসংস্কৃতি।

যদি দেশের বাইরে যাওয়া যায়? ‘চুনজী’ পরব। চীনের সবচেয়ে ঐতিহ্যপূর্ণ এবং শ্রেষ্ঠ ঊৎসব, যার শুরুই হয় প্রেতাত্মা নিধন যজ্ঞ দিয়ে! কিম্বা মোঙ্গল, যেখান থেকে এসেছেন মুঘলরা, তাদের বিবাহ উৎসব, চীনের তরবারি নৃত্য ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি...

এগারোটা একগুচ্ছ অন্যরকম লোকসংস্কৃতি নিয়ে এবারের অনুবাদ সাহিত্য পত্রিকা। জিপসী সাহিত্য থেকে শুরু করে, গ্রীসের প্যানঅ্যাথিনিয়া উৎসব হয়ে, সুইডেনের ‘ডোডোলা’ --- এমন এগারোটি নিবন্ধ এই পত্রিকার আকর্ষণ। যদিও লেখাগুলো বিষয়বস্তুর সূচনাপর্ব হিসাবেই এসেছে। খুব গুরুগম্ভীর আলোচনা নেই। তবে কৌতুহলী করে তোলার জন্যে মন্দ নয়।

আমার নিজের এই ‘লোকসংস্কৃতি’ বিষয়টা নিয়ে খুব একটা ইন্টারেস্ট নেই। তবুও পড়লাম। সারা বিশ্বজুড়ে কত ভাষা, কত জাতি রয়েছে নীরবে লোকগাঁথায়, কিম্বা অরণ্যমন্দিরের ছায়ায় ছায়ায় --- ভাবতেই ভালো লাগে। হোক না হোক, মাদলের আওয়াজ কি আমার রক্তে নাচন ধরায় নি? সুন্দরবনের আদিবাসীদের সাথে আমি কি কোমর দোলাই নি? হঠাৎ উদ্দামতায় নয়, কারণ, যে জিন তাদের শরীরে বাহ্যত দাপায়, সেই জিনেরই অলীক সংকেতের টান আমার জিনেও এসে ধাক্কা মারে।

মহুয়ার নেশায় মাতোয়ারা না হতে চাইলেও, গন্ধে নেশা লাগে বৈ কি। অস্বীকার করার জো নেই। মাটির টানে আমাকে ফিরতে হয়েছে বারে বারে। এখনও ফিরি... চেনা পথে...

=============================

অনুবাদ পত্রিকা

লোকসংস্কৃতি সংখ্যা

জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী সংখ্যা

মুদ্রিত মূল্যঃ ৫০ টাকা

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সমর্পিতা

Comments

Popular posts from this blog

যে বুকে আগুন জ্বলে

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পর্কে

জেরক্স কপির উন্নত ভার্সানে ‘আবার প্রলয়’ এসেছে